মিয়ানমার সীমান্তে গুলিবিনিময়
মাস দুই ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষীদের গুলিবর্ষণের খবর পাওয়া যাচ্ছিল। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) পক্ষ থেকে এর কারণ জানতে চাওয়া হলে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) গুলিবর্ষণের ঘটনা অস্বীকার করে। কিন্তু সর্বশেষ গত বুধবার তাদের গুলিতে বিজিবির এক সদস্য আহত হওয়ার পর তাঁকে বিজিপির সদস্যরা মিয়ানমারে নিয়ে গেছেন—এ খবর প্রকাশের পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওই অংশে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এর জের ধরে শুক্রবারও দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে গুলিবিনিময় ঘটেছে। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এ রকম ঘটনা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। ঢাকায় মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি মিয়ানমারের প্রতি বিজিবির ওই সদস্যকে িফরিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে, যিনি ইতিমধ্যে মারা গেছেন৷ অনেক টালবাহানার পর তারা লাশ ফেরত দিয়েছে, কিন্তু এই মৃত্যুর ব্যাখ্যা কী? তাদের গুলিবর্ষণের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা চাওয়া এবং ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, সে ব্যাপারেও তাদের অঙ্গীকার দাবি করা উচিত৷ আর নাইক্ষ্যংছড়ির ওপাশে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় ভীতসন্ত্রস্ত কিছু মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে জানা গেছে৷ তারাসহ ব্যবসার কাজে যাদের মিয়ানমার যাতায়াত আছে, তাদের অনেকের ভাষ্য অনুযায়ী, মিয়ানমার তাদের সীমান্তের ওই অংশে সৈন্য সমাবেশ ঘটাচ্ছে। কিন্তু আইনত দেশটি তা করতে পারে না। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বাংলাদেশের উচিত সৈন্যদের সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো।
আমরা সব প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী৷ মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষা কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় অভিযোগ করে, রাখাইন রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে ওই অঞ্চলে গিয়ে মাঝেমধ্যেই সহিংসতা চালায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এভাবে সমস্যাটির সমাধান হবে না; আমাদের দিক থেকে সীমান্তে প্রহরা আরও কঠোর করা উচিত, যাতে করে অবৈধ পারাপারের সুযোগ না থাকে৷ আর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া উচিত, রাখাইন রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, সেটার সমাধান তাদেরই করতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশ কোনো ধরনের ক্ষতির শিকার হতে রাজি নয়। মানবিক কারণে আমরা ইতিমধ্যেই বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছি৷ মিয়ানমারের শাসকেরা যদি ভেবে থাকেন যে তাঁদের রাখাইন রাজ্যে উত্তেজনা সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁরা আরও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে প্রবেশে বাধ্য করবেন, আর বাংলাদেশ তা মেনে নেবে, তবে তাঁদের সেই ভুল ধারণা ভেঙে দেওয়া উচিত৷ তবে সীমান্তে চোরাচালানসহ যেসব অপরাধবৃত্তির খবর পাওয়া যায়, সেগুলো বন্ধ করতে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে পারে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যকার সব সমস্যার সামগ্রিক সমাধানের ব্যাপারে উভয় পক্ষের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক আলোচনা জরুরি হয়ে উঠেছে।
No comments