যুক্তরাষ্ট্র-সৌদি আরব মতপার্থক্য কমেনি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা গত শুক্রবার সৌদি আরবের বাদশা আবদুল্লাহর সঙ্গে রাজধানী রিয়াদে বৈঠক করেছেন। ইরান ও সিরিয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য তুঙ্গে থাকার মধ্যেই ওবামা এই সফরে যান। সৌদি কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা ছিল, ওবামার এই সফরের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য নীতি নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কের বরফ হয়তো গলতে শুরু করবে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রশ্নে দুই নেতার মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপাড়া ভালো হবে। তবে গত শুক্রবার ওই বৈঠকের পর যৌথ কোনো ঘোষণা আসেনি। এমনকি নীতি পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিতও মেলেনি। এতে করে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ ও ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিনের মিত্র সৌদি ও যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য আদৌ কমেছে কি না, তা ধোঁয়াশায় থেকে গেছে। তবে কূটনীতিকেরা বলছেন, ওবামার এই সফরের মূল লক্ষ্য ছিল, ‘খোলামেলা’ আলোচনা এবং দুই দেশের সম্পর্কে আস্থা ফিরিয়ে আনা। ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ওয়াশিংটনসহ বিভিন্ন পরাশক্তির সমঝোতা চুক্তির বিষয়ে সৌদি আরবের ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। পাশাপাশি সিরিয়ার বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়া থেকে গত বছর শেষ মুহূর্তে ওবামা পিছু হটায় ক্ষুব্ধ সৌদি আরব।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান গালফ রিসার্চ সেন্টারের সৌদি গবেষক আজিজ আল-সাগর মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে, বিশেষ করে ইরানের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের অবস্থানের কারণেই সৌদি-মার্কিন সাত দশকের সম্পর্কে এখন ‘টান টান উত্তেজনা’। রিয়াদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ককে জলাঞ্জলি দিয়ে তেহরান-ওয়াশিংটন সাম্প্রতিক মাখামাখি ঠিক হয়নি। আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারে শিয়াপন্থী ইরানের উচ্চাভিলাষ কখনোই ভালো চোখে দেখেনি সুন্নিপন্থী সৌদি আরব। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রসহ ছয়টি প্রভাবশালী দেশ গত বছরের নভেম্বরে যে চুক্তি করেছে, তা তেহরানকে আরও সাহসী করে তুলবে বলেই মনে করে রিয়াদ। অন্তর্বর্তী ওই চুক্তির আওতায় ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি কমিয়ে আনবে। বিনিময়ে তেহরানের ওপর থেকে সীমিত আকারে অবরোধ তুলে নেওয়া হবে। প্রেসিডেন্ট ওবামার এই সফরে সিরিয়ার সরকারবিরোধীদের অস্ত্র দেওয়ার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে বলেও মনে করেন গবেষক সাগর। আরেক বিশ্লেষক খালেদ আল-দাখিল মনে করেন, সৌদি-মার্কিন ‘প্রধান প্রধান মতপার্থক্য’ সামাল দিতেই ওবামার এই সফর। সৌদি আরবের আশঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন বাহিনী সরে গেলে এবং ওয়াশিংটন-তেহরানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হলে ইরানের আঞ্চলিক মোড়ল হওয়ার অভিলাষ আরও জোরালো হবে। জেদ্দাভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘মিডল ইস্ট সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড লিগাল স্টাডিজ’-এর প্রধান আনওয়ার ইশাকি বলেন, এই অঞ্চলকে ঢেলে সাজানোর বিষয়ে ওবামার অবস্থান সৌদি-মার্কিন সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তবে তা একেবারে ভেঙে পড়েনি।
No comments