ও ক্রিকেট, ভালোবাসা ফিরিয়ে দাও by শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া
এ চ্যানেল সে চ্যানেল ঘুরে বিটিভি
ওয়ার্ল্ডে আটকে গেল চোখ। চিরচেনা জার্সি পরে বল নিয়ে ছুটোছুটি করছে দুই
দলের খেলোয়াড়েরা। নিমেষে আবিষ্কার করলাম, দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রতিদ্বন্দ্বী
দুই দল আবাহনী ও মোহামেডানের খেলা চলছে। কিন্তু গ্যালারিতে দর্শক কোথায়?
>>এমন দৃশ্য দেখতে দেখতে ক্লান্ত ক্রিকেটপ্রেমীরা ছবি: প্রথম আলো
ক্যামেরা যতবারই গ্যালারিতে ঘোরাফেরা করে, দেখি আসন সব ফাঁকা। শৈশবে, সেই আশির দশকের আবাহনী-মোহামেডানের স্মৃতিকাতর দিনগুলোতে ফিরে যাই। বুকটা কেমন চিনচিন করে ওঠে। ওই সময় আবাহনী-মোহামেডানের খেলা মানেই ছিল গোটা দেশজুড়ে সাজ সাজ রব। খেলার নির্দিষ্ট তারিখের কয়েক দিন আগে থেকে শুরু হতো উত্তেজনা। ছেলে-বুড়ো-নির্বিশেষে ঘরে ঘরে, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায়, হোটেল-রেস্তোরাঁয়, স্কুল-কলেজে, ট্রেন-বাসে—সব খানে খেলা নিয়ে শুরু হতো জল্পনা-কল্পনা। কে জিতবে কে হারবে, তা নিয়ে কথার তুবড়ি ছোটাত ভক্তরা। বাজি এবং তর্কাতর্কি থেকে মারপিটের ঘটনাও কম ঘটেনি। আর খেলার দিন গ্যালারি সব দর্শকে এমনভাবে ঠাসা থাকত, স্টেডিয়াম ফেটে পড়া বাকি থাকত শুধু।
ওই সময় আবাহনী ও মোহামেডানের ফুটবল তারকাদের নাম দেশের ফুটবল প্রেমীদের মুখে মুখে ফিরত। এখনো তাঁরা সালাহউদ্দিন, এনায়েত, নান্নু, চুন্নু, সান্টু, মঞ্জু, আনোয়ার, ছোট বাদল, সালাম, সাব্বির, হেলাল, টুটুল, আবুল, স্বপন, আশিস প্রমুখ তারকার খেলার স্মৃতিচারণা করে নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন হন। কিন্তু এখন যুগ পাল্টেছে। দেশের প্রায় সব মানুষের ফুটবল উন্মাদনা ঠাঁই নিয়েছে ক্রিকেটে।
কথাটা রূঢ় শোনালেও এটা বাস্তব সত্য যে ফুটবলকে দেশের মানুষ এক সময় যেমন বুক উজাড় করে ভালোবাসা দিয়েছে, প্রতিদানে ফুটবল কাঙ্ক্ষিত কিছু দিতে পারেনি। সাফ গেমস, এশিয়ান কাপ, এশীয় যুব ফুটবল, বিশ্বকাপ বাছাই বা ভিনদেশি কোনো টুর্নামেন্ট—গুরুত্বপূর্ণ যে প্রতিযোগিতার কথাই বলা হোক না কেন, একের পর এক ব্যর্থতার জ্বালা ছাড়া কিছুই পায়নি এ দেশের ফুটবল অনুরাগীরা। ফুটবলকে ভালোবাসা দিতে দিতে বুক খালি করে ফেলেছে তারা, বিনিময়ে পেয়েছে কাঁটার আঘাত।
এভাবে এ শূন্য বুকে ঠাঁই নিয়েছে ক্রিকেট। ভালোবাসার দৌড়ে আশির দশকে যে ক্রিকেট ছিল ফুটবলের অনেক পেছনে, এখন সে ক্রিকেট এ দেশে বীর দর্পে ফুটবলের চেয়ে কয়েক ক্রোশ এগিয়ে। সম্প্রতি এখানেও দেখা যাচ্ছে হতাশার ছায়া। ক্রিকেট যতই অনিশ্চয়তার খেলা হোক না কেন, আফগানিস্তান বা হংকংয়ের মতো ছোট দলের কাছে টেস্ট খেলিয়ে বাংলাদেশের পরাজয় মেনে নেওয়া যায় না। মেনে নেওয়া যায় না সাকিব-তামিমের পটাপট উইকেট খুইয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরা। ক্রিকেটপাগল চেনাজানা কয়েকজন জানালেন, বাংলাদেশ দলের খেলা দেখতে বসলেই এখন আতঙ্কে ভোগেন তাঁরা। তামিম-সাকিব ব্যাট নিয়ে দাঁড়ালে মনটা দুরু দুরু করে—এই দুটো চার, একটা ছক্কা আর কয়েকটা এক-দুই, তারপর শেষ! হচ্ছেও কিন্তু তা-ই।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আসলে সমস্যা কোথায়, কীভাবে এ সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটবে, কীভাবে দলের সাফল্য আসবে—সেটা ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ, হর্তাকর্তা ও খেলোয়াড়দের ব্যাপার। তবে দেশের বিপুলসংখ্যক ক্রিকেটপাগল মানুষের মনঃকষ্টের একমাত্র দাওয়াই কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের মধ্যেই। ক্রিকেটকে তারা সব সময় বুক উজাড় করে ভালোবাসা দিয়ে যাবে, বিনিময়ে কিছু পাবে না, প্রকৃতির নিয়মেই তা সম্ভব নয়। একতরফা ভালোবাসার স্থায়িত্ব কম। এ ভালোবাসা ফুরালে ফাঁকা বুক নিয়ে বসে থাকবে না কেউ। ক্রিকেট না পারলে অন্য কোনো ভালোবাসা সে বুক ভরাবে।
No comments