সংঘাত নয় সংলাপ by আদিত্য আরাফাত, ইলিয়াস সরকার ও মেহেদী হাসান পিয়াস
সহিংস রাজনীতির পথে বাংলাদেশ। মহাজোট
সরকারের শেষবছরে উত্তাল রাজনীতির ময়দান। বহুমাত্রিক ইস্যুতে রাজনৈতিক
পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে, থমকে যাচ্ছে অর্থনীতির চাকা।
সরকার
ও বিরোধী দলের কঠোর অবস্থানে সংঘাতের চিরচেনা পথেই ধাবিত হচ্ছে দেশ। ক্রমশ
ঘোলাটে হচ্ছে দেশের পরিস্থিতি। কোথায় যাচ্ছে দেশ? এমন প্রশ্ন এখন দেখা
দিয়েছে।
এমন
অস্থির অবস্থায় আবারও ১৮ ও ১৯ মার্চ সারাদেশে ও ২১ মার্চ ঢাকায় হরতালের
ডাক দিয়েছে বিরোধী দল। ২৪ মার্চও হরতাল দেওয়ার ইস্যু খোঁজা হচ্ছে বলে
রাজনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে। লাগাতার হরতাল আর সহিংষ রাজনীতির বলি হচ্ছে
দেশের সাধারণ মানুষ। প্রতিহিংসা আর হানাহানির এ রাজনীতি থেকে উত্তরণেরই বা
উপায় কি? কী ভাবছেন বিশিষ্টজনরা? বাংলানিউজ কথা বলেছে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে।
সংকটময় এ পরিস্থিতি থেকে সমাধানের পথ বাতলে দিয়েছেন তারা।
সংঘাত এড়াতে জাতীয় ঐক্যমত জরুরি: ড. কামাল হোসেন
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ‘সংঘাত এড়াতে সংলাপ কতটা জরুরি’ প্রশ্নে মতামত দিতে গিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, “আমরা একটি সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থার মধ্যে আছি। তাই সংঘাত এড়াতে জাতীয় ঐক্যমত গঠন করা জরুরি। বহুদলীয় গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সহনশীলতা অপরিহার্য একটি বিষয়। সকল রাজনৈতিক দলের চিন্তা, দর্শনই জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ’’
তিনি বলেন, ‘‘শুধু রাজনৈতিক সংঘাতই নয়, যে কেনো ধরণের সংঘাত এড়াতে অবশ্যই সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে তা প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে হলেই চলবে না। অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোকেও এর মধ্যে সম্পৃক্ত করতে হবে।”
প্রবীণ এই আইনজ্ঞের মতে শুধু রাজনৈতিক দল নয়, সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিশেষ করে মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়ে এ সংলাপ হওয়াটাও জরুরি। পাশাপাশি নারী, ছাত্র, যুব এমনকি শ্রমিক সংগঠনগুলোর সাথে এ বিষয়ে সরকারের অথবা পরস্পর সংলাপ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়াও জাগরণ মঞ্চে আন্দোলনরত তরুণ প্রজন্মের সঙ্গেও রাজনৈতিক বোঝাপড়ার জন্য সরকার এবং বিরোধী দলের সংলাপ হতে পারে।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, যে দাবি নিয়ে এ আন্দোলনের সূত্রপাত এটিই তরুণ প্রজন্মের একমাত্র দাবি নয়। সকল ধরণের অন্যায়-অবিচার, সন্ত্রাস, দুর্নীতি অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মকে প্রতিবাদী হতে হবে। তরুণ প্রজন্ম সমাজের সচেতন একটি অংশ। তাই একটি স্বাধীন সাংবিধানিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে কোনো ধরণের সংঘাত বা অস্থিতিশীলতা এড়াতে দলনিরপেক্ষভাবে এই সচেতন অংশটির সঙ্গেও সংলাপ জরুরি।”
বুধবার টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলানিউজের কাছে এ মত ব্যক্ত করেন ড. কামাল হোসেন।
নির্দিষ্ট রূপরেখা নিয়ে সংলাপে বসতে হবে-ব্যারিস্টার রফিক-উল হক
দেশের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক মনে করেন, সংকটকালীন এ সময়ে দু`দলকেই দেশের স্বার্থে আলোচনায় আসতে হবে।
তিনি বলেন, ‘‘দেশের এখন খারাপ সময় যাচ্ছে। এ সময় নেতা নেত্রীদের একসাথ হওয়ার দরকার। মীমাংসা দরকার। এভাবেতো চলতে পারে না। সবাইকে মিলেমিশে এ প্রক্রিয়া থেকে বের হতে হবে। সমস্যা সামাধানের জন্য আলোচনা-সংলাপ করতে হবে।’’
এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী দলকে সংসদে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বিরোধী দলকে সংসদে গিয়ে কথা বলতে হবে। সংসদে না গেলে সমস্যার সমাধান হবে না।’’
‘‘তারা সংসদে যায় না কেনো?’’ বিরোধী দলের প্রতি এমন প্রশ্ন রাখের এ আইনজ্ঞ।
সংলাপ কোথায় হবে এ প্রশ্নের জবাবে রফিক-উল হক বলেন, ‘‘সংসদে হতে পারে আবার বাইরেও হতে পারে। যে কোনো স্থানে আলোচনা হতে পারে।’’
সংলাপের জন্য কোন পক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘অবশ্যই সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। আর বিরোধী দলকেও এগিয়ে আসতে হবে।’’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘বার বার তারা (বিরোধী দল) কেয়ারটেকার সরকারের কথা বলে। কিন্তু তারা কোনো স্পষ্ট বক্তব্য দেয়নি। তারা কী এখন পর্যন্ত কোনা রূপরেখা দিয়েছে? দেয়নি। যে যাই বলুক, নির্দিষ্টভাবে রূপরেখা নিয়ে সংলাপ না করলে কোনো সমস্যারই সামাধান হবে না।’’
সংলাপ, সংলাপ এবং সংলাপ: আকবর আলি খান
‘‘সংলাপ, সংলাপ এবং সংলাপ। বর্তমানে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে সরকার এবং বিরোধী দলকে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। দু`পক্ষকে দলের চাইতে দেশের স্বার্থ দেখতে হবে।’’ বললেন তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলী খান।
তিনি বলেন, ‘‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যে যত সহিংস ঘটনায় সাধারণ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়াসহ যত সহিংস ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত এবং তদন্তের ভিত্তিতে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। সারাদেশে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধান করতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকেই উদ্যোগ নিতে হবে এবং রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে কিভাবে এই উদ্যোগ নেবে।
রাজনীতিবিদদেরই এই উদ্যোগ নিতে হবে। দেশব্যাপী যে তাণ্ডব চলছে এর কোনো সমাধান বের করতে না পারলে তা পুরো জাতির জন্য অমঙ্গল বয়ে আনবে।’’
সংলাপ কোথায় হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সংলাপ যেকোনো জায়গায় হতে পারে। তবে তাও আলোচনার ভিত্তিতে হতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘ভেদাভেদ ভুলে সরকার ও বিরোধী দল এ সময়ে সংলাপে বসলে তা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ সে যে দলের সমর্থকই হোন তা ইতিবাচকভাবে দেখবেন।’’
সংলাপের জন্য দু`পক্ষকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
উত্তরণের পথ হচ্ছে আলোচনা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘‘সংঘাতময় রাজনীতি একদিকে যেমন জনমনে ভীতির সঞ্চার করেছে, অন্যদিকে ক্রমেই স্থবির হয়ে পড়ছে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।’’
‘‘ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হলেও এখন তা বহুমাত্রিকতা পেয়েছে। এ সংকট কাটাতে আলোচনায় বসে সমস্যা নিরসন প্রয়োজন।’’ মন্তব্য এই শিক্ষাবিদের।
তিনি বলেন, ‘সমাজে সমস্যা থাকে সমস্যা থেকে উত্তরণের পথও থাকে। দেশের উন্নয়নে সেই উত্তরণে পথেই হাঁটতে হবে। আর সেই উত্তরণের পথ হচ্ছে আলোচনা। আলোচনাই পারে সংকট কাটাতে।’’
দেশের উন্নয়নে সকলকে সংঘাতের পথ পরিহার করে আলোচনায় বসার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রয়োজন অনতিবিলম্বে সংলাপের সূচনা: ড. ইফতেখারুজ্জামান
রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রতি সংঘাতের পথ পরিহার করে অনতিবিলম্বে সংলাপের সূচনার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘‘ক্রমবর্ধমান সংঘাত, বিশৃঙ্খলা এবং উচ্ছৃঙ্খলতা গভীর উদ্বেগজনক, দুঃখজনক এবং যে কোন মানদণ্ডেই অগ্রহণযোগ্য। এ সকল ঘটনার মূলে রয়েছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব যেখানে জনস্বার্থ এবং নাগরিকের জীবন ও জীবিকার মৌলিক অধিকার, বিশেষ করে শিশু, নারী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও পশ্চাদপদ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার এবং নিরাপত্তা কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। এই নেতিবাচক, সংঘাতময় ও আত্মঘাতী রাজনৈতিক খেলা বন্ধ করে সংযম ও গণতান্ত্রিক আচরণে ফিরে আসতে ব্যর্থ হলে তা গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ক্ষেত্রে বড় ধরণের ঝুঁকি তৈরি করবে।”
তিনি বলেন, ‘‘দুই বৃহত্তম দলের অবিসংবাদিত নেতা, জনগণের পক্ষে, জনস্বার্থেই রাজনীতিতে রয়েছেন। অতএব, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাই পারেন জনগণের তথা জাতীয় স্বার্থকে পারস্পরিক বিভেদ, দ্বন্দ্ব ও আস্থাহীনতাসহ সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে সংঘাতময় অবস্থান থেকে সরে এসে গণতান্ত্রিক আচরণের দৃষ্টান্ত হিসেবে আলোচনার টেবিলে সমাধান বের করতে।’’
সংলাপ সংসদের বাইরে হওয়াই ভালো: ড. এম জহির
চলমান সংকট উত্তরণে সংলাপের বিকল্প নেই বললেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. এম জহির।
তিনি বলেন, ‘‘সংলাপ অবশ্যই হতে হবে। সংলাপ না হলে এখন হবে না।’’
যদি সংলাপ না হয় তাহলে কী হবে? এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘‘সংলাপ না হলে জ্বালাও পোড়াও চলবে। সহিংসতা হবে। আর এতে আমরাতো মরেই যাচ্ছি।’’
‘‘এ অবস্থায় যদি সংলাপ না হয় তাহলে সরকারও ঠকবে বিরোধী দলও ঠকবে।’’ মন্তব্য এ সংবিধান বিশেষজ্ঞের।
তিনি বলেন, ‘‘কে আগে এগিয়ে আসবে এটা নিয়েও সমস্যা। আমার মতে, দুইপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে সংলাপের জন্য। আর এ সংলাপ সংসদেও হতে পারে আবার বাইরেও হতে পারে। তবে সংসদের বাইরে হলে বেশি ভালো হবে।’’
সংঘাত এড়াতে জাতীয় ঐক্যমত জরুরি: ড. কামাল হোসেন
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ‘সংঘাত এড়াতে সংলাপ কতটা জরুরি’ প্রশ্নে মতামত দিতে গিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, “আমরা একটি সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থার মধ্যে আছি। তাই সংঘাত এড়াতে জাতীয় ঐক্যমত গঠন করা জরুরি। বহুদলীয় গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সহনশীলতা অপরিহার্য একটি বিষয়। সকল রাজনৈতিক দলের চিন্তা, দর্শনই জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ’’
তিনি বলেন, ‘‘শুধু রাজনৈতিক সংঘাতই নয়, যে কেনো ধরণের সংঘাত এড়াতে অবশ্যই সংলাপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে তা প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে হলেই চলবে না। অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোকেও এর মধ্যে সম্পৃক্ত করতে হবে।”
প্রবীণ এই আইনজ্ঞের মতে শুধু রাজনৈতিক দল নয়, সকল সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিশেষ করে মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়ে এ সংলাপ হওয়াটাও জরুরি। পাশাপাশি নারী, ছাত্র, যুব এমনকি শ্রমিক সংগঠনগুলোর সাথে এ বিষয়ে সরকারের অথবা পরস্পর সংলাপ হতে পারে বলে তিনি মনে করেন। এছাড়াও জাগরণ মঞ্চে আন্দোলনরত তরুণ প্রজন্মের সঙ্গেও রাজনৈতিক বোঝাপড়ার জন্য সরকার এবং বিরোধী দলের সংলাপ হতে পারে।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, যে দাবি নিয়ে এ আন্দোলনের সূত্রপাত এটিই তরুণ প্রজন্মের একমাত্র দাবি নয়। সকল ধরণের অন্যায়-অবিচার, সন্ত্রাস, দুর্নীতি অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মকে প্রতিবাদী হতে হবে। তরুণ প্রজন্ম সমাজের সচেতন একটি অংশ। তাই একটি স্বাধীন সাংবিধানিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যে কোনো ধরণের সংঘাত বা অস্থিতিশীলতা এড়াতে দলনিরপেক্ষভাবে এই সচেতন অংশটির সঙ্গেও সংলাপ জরুরি।”
বুধবার টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলানিউজের কাছে এ মত ব্যক্ত করেন ড. কামাল হোসেন।
নির্দিষ্ট রূপরেখা নিয়ে সংলাপে বসতে হবে-ব্যারিস্টার রফিক-উল হক
দেশের প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিকুল হক মনে করেন, সংকটকালীন এ সময়ে দু`দলকেই দেশের স্বার্থে আলোচনায় আসতে হবে।
তিনি বলেন, ‘‘দেশের এখন খারাপ সময় যাচ্ছে। এ সময় নেতা নেত্রীদের একসাথ হওয়ার দরকার। মীমাংসা দরকার। এভাবেতো চলতে পারে না। সবাইকে মিলেমিশে এ প্রক্রিয়া থেকে বের হতে হবে। সমস্যা সামাধানের জন্য আলোচনা-সংলাপ করতে হবে।’’
এমন পরিস্থিতিতে বিরোধী দলকে সংসদে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বিরোধী দলকে সংসদে গিয়ে কথা বলতে হবে। সংসদে না গেলে সমস্যার সমাধান হবে না।’’
‘‘তারা সংসদে যায় না কেনো?’’ বিরোধী দলের প্রতি এমন প্রশ্ন রাখের এ আইনজ্ঞ।
সংলাপ কোথায় হবে এ প্রশ্নের জবাবে রফিক-উল হক বলেন, ‘‘সংসদে হতে পারে আবার বাইরেও হতে পারে। যে কোনো স্থানে আলোচনা হতে পারে।’’
সংলাপের জন্য কোন পক্ষকে উদ্যোগ নিতে হবে এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘অবশ্যই সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। আর বিরোধী দলকেও এগিয়ে আসতে হবে।’’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘বার বার তারা (বিরোধী দল) কেয়ারটেকার সরকারের কথা বলে। কিন্তু তারা কোনো স্পষ্ট বক্তব্য দেয়নি। তারা কী এখন পর্যন্ত কোনা রূপরেখা দিয়েছে? দেয়নি। যে যাই বলুক, নির্দিষ্টভাবে রূপরেখা নিয়ে সংলাপ না করলে কোনো সমস্যারই সামাধান হবে না।’’
সংলাপ, সংলাপ এবং সংলাপ: আকবর আলি খান
‘‘সংলাপ, সংলাপ এবং সংলাপ। বর্তমানে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে সরকার এবং বিরোধী দলকে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। দু`পক্ষকে দলের চাইতে দেশের স্বার্থ দেখতে হবে।’’ বললেন তত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলী খান।
তিনি বলেন, ‘‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি খুবই উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যে যত সহিংস ঘটনায় সাধারণ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়াসহ যত সহিংস ঘটনা ঘটেছে তার সুষ্ঠু তদন্ত এবং তদন্তের ভিত্তিতে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। সারাদেশে যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এর সমাধান করতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকেই উদ্যোগ নিতে হবে এবং রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে কিভাবে এই উদ্যোগ নেবে।
রাজনীতিবিদদেরই এই উদ্যোগ নিতে হবে। দেশব্যাপী যে তাণ্ডব চলছে এর কোনো সমাধান বের করতে না পারলে তা পুরো জাতির জন্য অমঙ্গল বয়ে আনবে।’’
সংলাপ কোথায় হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সংলাপ যেকোনো জায়গায় হতে পারে। তবে তাও আলোচনার ভিত্তিতে হতে হবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘ভেদাভেদ ভুলে সরকার ও বিরোধী দল এ সময়ে সংলাপে বসলে তা দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ সে যে দলের সমর্থকই হোন তা ইতিবাচকভাবে দেখবেন।’’
সংলাপের জন্য দু`পক্ষকে এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
উত্তরণের পথ হচ্ছে আলোচনা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘‘সংঘাতময় রাজনীতি একদিকে যেমন জনমনে ভীতির সঞ্চার করেছে, অন্যদিকে ক্রমেই স্থবির হয়ে পড়ছে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।’’
‘‘ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হলেও এখন তা বহুমাত্রিকতা পেয়েছে। এ সংকট কাটাতে আলোচনায় বসে সমস্যা নিরসন প্রয়োজন।’’ মন্তব্য এই শিক্ষাবিদের।
তিনি বলেন, ‘সমাজে সমস্যা থাকে সমস্যা থেকে উত্তরণের পথও থাকে। দেশের উন্নয়নে সেই উত্তরণে পথেই হাঁটতে হবে। আর সেই উত্তরণের পথ হচ্ছে আলোচনা। আলোচনাই পারে সংকট কাটাতে।’’
দেশের উন্নয়নে সকলকে সংঘাতের পথ পরিহার করে আলোচনায় বসার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রয়োজন অনতিবিলম্বে সংলাপের সূচনা: ড. ইফতেখারুজ্জামান
রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের প্রতি সংঘাতের পথ পরিহার করে অনতিবিলম্বে সংলাপের সূচনার আহ্বান জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘‘ক্রমবর্ধমান সংঘাত, বিশৃঙ্খলা এবং উচ্ছৃঙ্খলতা গভীর উদ্বেগজনক, দুঃখজনক এবং যে কোন মানদণ্ডেই অগ্রহণযোগ্য। এ সকল ঘটনার মূলে রয়েছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব যেখানে জনস্বার্থ এবং নাগরিকের জীবন ও জীবিকার মৌলিক অধিকার, বিশেষ করে শিশু, নারী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ও পশ্চাদপদ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার এবং নিরাপত্তা কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। এই নেতিবাচক, সংঘাতময় ও আত্মঘাতী রাজনৈতিক খেলা বন্ধ করে সংযম ও গণতান্ত্রিক আচরণে ফিরে আসতে ব্যর্থ হলে তা গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা ও গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের ক্ষেত্রে বড় ধরণের ঝুঁকি তৈরি করবে।”
তিনি বলেন, ‘‘দুই বৃহত্তম দলের অবিসংবাদিত নেতা, জনগণের পক্ষে, জনস্বার্থেই রাজনীতিতে রয়েছেন। অতএব, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতাই পারেন জনগণের তথা জাতীয় স্বার্থকে পারস্পরিক বিভেদ, দ্বন্দ্ব ও আস্থাহীনতাসহ সবকিছুর ঊর্ধ্বে গিয়ে সংঘাতময় অবস্থান থেকে সরে এসে গণতান্ত্রিক আচরণের দৃষ্টান্ত হিসেবে আলোচনার টেবিলে সমাধান বের করতে।’’
সংলাপ সংসদের বাইরে হওয়াই ভালো: ড. এম জহির
চলমান সংকট উত্তরণে সংলাপের বিকল্প নেই বললেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. এম জহির।
তিনি বলেন, ‘‘সংলাপ অবশ্যই হতে হবে। সংলাপ না হলে এখন হবে না।’’
যদি সংলাপ না হয় তাহলে কী হবে? এ প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘‘সংলাপ না হলে জ্বালাও পোড়াও চলবে। সহিংসতা হবে। আর এতে আমরাতো মরেই যাচ্ছি।’’
‘‘এ অবস্থায় যদি সংলাপ না হয় তাহলে সরকারও ঠকবে বিরোধী দলও ঠকবে।’’ মন্তব্য এ সংবিধান বিশেষজ্ঞের।
তিনি বলেন, ‘‘কে আগে এগিয়ে আসবে এটা নিয়েও সমস্যা। আমার মতে, দুইপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে সংলাপের জন্য। আর এ সংলাপ সংসদেও হতে পারে আবার বাইরেও হতে পারে। তবে সংসদের বাইরে হলে বেশি ভালো হবে।’’
No comments