থানায় হয়রানির শিকার মানুষ-পুলিশের সেবার মান বাড়াতে হবে

পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী দিনেই আলোচনায় চলে এসেছে এই সেবা সংস্থা। দেশের মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ বিভাগের সেবা নিয়ে নিজেদের মধ্যেই যে আস্থার অভাব আছে, তা স্পষ্ট হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ভাষণে উঠে এসেছে মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, পুলিশ কি জনগণকে কাঙ্ক্ষিত সেবা দিচ্ছে না? পুলিশের সেবার মান বাড়েনি, দুর্নীতি বেড়েছে, পুলিশের কাছে গিয়ে মানুষকে


হয়রানির শিকার হতে হয়, প্রতিকার পাওয়া যায় না-এসব অভিযোগ অনেক পুরনো। সেই পুরনো অভিযোগই এবার নতুন করে তুললেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের 'পুলিশ সমন্বয়ক'। পুলিশ কর্মকর্তাদের একান্ত বৈঠকে পুলিশ সমন্বয়ক যে মন্তব্য করেছেন, তা একেবারেই ভিত্তিহীন নয়। তিনি নিজেই বলেছেন, তাঁর ওই অভিযোগ জনগণেরই অভিযোগ। এটাও ঠিক যে সারা দেশে পুলিশের কাছে সেবা চেয়ে অনেককেই বঞ্চিত হতে হয়। পুলিশ বিভাগে দুর্নীতি আছে, এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই। এর সঙ্গে এটাও স্বীকার করতে হবে, সেবা সংস্থা হওয়ার পরও এই বিভাগের সদস্যরা অনেকটাই বঞ্চিত। পুলিশের ট্র্যাফিক বিভাগের প্রতিটি সদস্যকে রাস্তায় যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, সেটা অনুমান করা যায়। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক পুলিশ সদস্যই দেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেবা যাচ্ছে না সাধারণের কাছে। পুলিশ সমন্বয়ক বৈঠকে যে অভিযোগগুলো তুলেছেন, তাতে নানা হয়রানির কথা আছে। তিনি বলেছেন, বিগত বছরে পুলিশের সেবার মান অনেকাংশে কমে গেছে। পুলিশ সমন্বয়ক তাঁর বক্তব্যে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, থানায় সেবার মান কমছে। থানায় গিয়ে মানুষ ভালো ব্যবহার পাচ্ছে না, প্রতিকার পাচ্ছে না-এমন অভিযোগ স্বয়ং পুলিশ কর্মকর্তার। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে যে থানায় মামলা বা জিডি নিতে অনীহা প্রকাশ করা হয়, এ বিষয়েও আলোকপাত করেছেন তিনি। পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনেও এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা আছে। এটাও ঠিক যে পুলিশ বাহিনীর সব সদস্যের ভূমিকা খারাপ নয়। কিন্তু একটি সুসজ্জিত বাহিনীর ভাবমূর্তির এ ধরনের অবনতি মোটেও প্রত্যাশিত নয়। তাই পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে এবং সবার আগে পরিবর্তন করতে হবে পুলিশের মানসিকতা।
পুলিশ বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য প্রথম যে কাজটি করতে হবে, তা হলো মানসিকতার পরিবর্তন। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সে জন্য জনসংখ্যা ও অপরাধ বৃদ্ধির অনুপাতে পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আবার পুলিশ এমন একটি বিভাগ, যে বিভাগটি জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। স্বাভাবিকভাবেই জনসম্পৃক্ত এই বিভাগকে গণমুখী করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী পুলিশের কাঠামো বদলের ঘোষণা দিয়েছেন। পুলিশের পাঁচটি পদ গ্রেড ওয়ান করার ঘোষণা দিয়েছেন, বর্তমান বেতন কাঠামোতে যা ভোগ করেন কেবল পুলিশ মহাপরিদর্শক। একই সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের দীর্ঘদিনের দাবি, পরিদর্শক পদকে দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম এবং উপপরিদর্শক পদকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশের কাঠামো শুধু নয়, বেতন কাঠামোতেও পরিবর্তন আনা দরকার। বেতন কাঠামো এমন মানের হতে হবে, যাতে পুলিশের সব সদস্যই সততার সঙ্গে কাজ করতে উৎসাহিত হন। পুলিশকে যে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়, অন্য কোনো বিভাগকে এভাবে ঝুঁকি নিতে হয় না। বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে।
পুলিশের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আস্থার সংকট আছে। সেই আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে। কেবল সেবার মান বৃদ্ধির ভেতর দিয়েই পুলিশের ভাবমূর্তি অনেকটা ইতিবাচক হবে। কাজেই সবার আগে সেবার মান বাড়াতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.