একচিলতে সুখের উল্টো পিঠের কিছু গল্প
নিউইয়র্ক শহরের একটি এলাকা |
কয়েক দিন আগের কথা। শীতের সকাল। আগের দিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলো। টান টান উত্তেজনায় রাত জেগে ফলাফল জানল শহরের মানুষজন। অথচ বাইরের জনজীবন ঠিক প্রতিদিনকার মতোই স্বাভাবিক। স্বাভাবিক নেই শুধু প্রকৃতি। শহর জুড়ে অন্ধকার। হালকা বৃষ্টির মাঝে হাঁটছি ওয়েস্ট ফোর স্ট্রিট ধরে। একে একে পেরোচ্ছি অ্যাভিনিউ নাইন, টেন...। অতঃপর নির্দিষ্ট ঠিকানার সামনে এসে দাঁড়াই। ছাইরঙা ইটের দালান। সামনে প্রশস্ত ফুটপাতে ছাইরঙা একটি একলা কবুতর আর মাথার ওপরেও সেই ছাইরঙা মেঘলা আকাশ। গেট পেরিয়ে ইনফরমেশন ডেস্কে বসা নারীকে ফাইলটি বুঝিয়ে দিয়ে ফিরছি আমি আর আমার প্রতিবেশী এক দাদা।
আমরা দুজনই এসেছিলাম আমাদের সন্তানদের হাইস্কুলে ভর্তির কাগজপত্র জমা দিতে। ট্রেন স্টেশনের উদ্দেশে হেঁটে যেতে যেতে দাদা পুরোনো দিনের গল্প করছিলেন। সুউচ্চ বাড়িগুলোর মাঝে দু-একটি ছোট দোতলা পুরোনো বাড়ি এখনো রয়ে গেছে। এখানেই ৫০৯ নম্বর বাড়িটির সামনে এসে দাঁড়ালেন ক্ষণিক। যে বাড়িটিতে তিনি বসবাস করেছেন আজ থেকে অনেক বছর আগে। ব্যাচেলর বাঙালিরা থাকতেন বাড়িটিতে সেই সময়ে। বাদ বাকি সকলেই শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান। বললেন, সেই সময়কার যাপিত জীবনের কথা। সাদারা কেবলই ম্যানেজমেন্টে অভিযোগ করত জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার প্রাণান্তকর চেষ্টারত কিছু যুবকের বিরুদ্ধে। তাঁদের অপরাধ, তাঁরা রোজ বাঙালি মসলাযুক্ত খাবার রান্না করে। রান্নার সেই সব গন্ধ অ্যাপার্টমেন্টটিতে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁদের অপরাধ সারা দিন কাজের শেষে পরিবার পরিজনহীন এই শহরে বাড়ি ফিরে তাঁরা গল্পে মশগুল হয়, উচ্চস্বরে হেসে ওঠে কিংবা শব্দ করে হাঁটে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝেও আমার বাড়ি ফিরবার তাড়া নেই। গল্প শুনছি। শুনতে শুনতে আমি যেন সেই সময়ে ফিরে যাচ্ছি। কারও পেছনের কালের গল্প শুনে কেউ কি সেই সময়কে ধারণ করতে পারে? কিন্তু আমি যেন সেই সময়কেই ধারণ করছিলাম। দাদা একটি সুউচ্চ দালান দেখিয়ে বললেন, এই যে দালান, এটি সেই সময়ে ছিল না। এখানে একটি পার্ক ছিল।
আমরা দুজনই এসেছিলাম আমাদের সন্তানদের হাইস্কুলে ভর্তির কাগজপত্র জমা দিতে। ট্রেন স্টেশনের উদ্দেশে হেঁটে যেতে যেতে দাদা পুরোনো দিনের গল্প করছিলেন। সুউচ্চ বাড়িগুলোর মাঝে দু-একটি ছোট দোতলা পুরোনো বাড়ি এখনো রয়ে গেছে। এখানেই ৫০৯ নম্বর বাড়িটির সামনে এসে দাঁড়ালেন ক্ষণিক। যে বাড়িটিতে তিনি বসবাস করেছেন আজ থেকে অনেক বছর আগে। ব্যাচেলর বাঙালিরা থাকতেন বাড়িটিতে সেই সময়ে। বাদ বাকি সকলেই শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান। বললেন, সেই সময়কার যাপিত জীবনের কথা। সাদারা কেবলই ম্যানেজমেন্টে অভিযোগ করত জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার প্রাণান্তকর চেষ্টারত কিছু যুবকের বিরুদ্ধে। তাঁদের অপরাধ, তাঁরা রোজ বাঙালি মসলাযুক্ত খাবার রান্না করে। রান্নার সেই সব গন্ধ অ্যাপার্টমেন্টটিতে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁদের অপরাধ সারা দিন কাজের শেষে পরিবার পরিজনহীন এই শহরে বাড়ি ফিরে তাঁরা গল্পে মশগুল হয়, উচ্চস্বরে হেসে ওঠে কিংবা শব্দ করে হাঁটে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মাঝেও আমার বাড়ি ফিরবার তাড়া নেই। গল্প শুনছি। শুনতে শুনতে আমি যেন সেই সময়ে ফিরে যাচ্ছি। কারও পেছনের কালের গল্প শুনে কেউ কি সেই সময়কে ধারণ করতে পারে? কিন্তু আমি যেন সেই সময়কেই ধারণ করছিলাম। দাদা একটি সুউচ্চ দালান দেখিয়ে বললেন, এই যে দালান, এটি সেই সময়ে ছিল না। এখানে একটি পার্ক ছিল।
একদল মাতাল এই পার্কটিতে জটলা করে থাকত দিনভর। তিনি আঙুল উঁচিয়ে দূরে দেখালেন। তাঁকে অনুসরণ করে সেদিকে তাকাই। বললেন, ওই যে রাস্তার মোড়, ওখানে বসে আমি বই বিক্রি করতাম কনকনে শীতের দিনে, কখনো তুষারের মাঝে। আয়কৃত ডলার দেশে পাঠাতাম। পুরোনো সেই সব গল্প করতে গিয়ে তিনি বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে উঠছিলেন। হবেনই বা না কেন! এই জায়গাটায় কেটেছে তাঁর বিগত সময়ের অনেকটাই। এখানেই যে মায়ায় জড়িয়ে থাকা স্ট্রিট, অ্যাভিনিউ আর শেওলা পড়া বাড়িটি। তিনি এ দেশে এসেছেন গত শতকের সাতের দশকে। ১৯৭৭ সালে। স্টুডেন্ট ভিসায় এলেও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি অর্থ সংকটে। অনেক চড়াই উতরাই শেষে বৈধ কাগজপত্র পেয়েছেন। দুটো বাড়ি কিনেছেন। এখন পরিবার নিয়ে ভালো আছেন। প্রতিযোগিতার পৃথিবীতে টিকে থাকতে কত মানুষ কতভাবেই না শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন ভিনদেশে। পরিবারের একচিলতে সুখের উল্টো পিঠে কিছু গল্প থাকে। সাহসী সেই সব মানুষদের গল্পগুলো ভিন্ন ভিন্ন যদিও, কিন্তু আবেগে ভিন্নতা নেই কারওরই।
No comments