বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যান পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত ৪
নরসিংদীর রায়পুরার নীলক্ষা ইউনিয়নে গতকাল দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় টেঁটা হাতে লোকজন। দুপুরে নীলক্ষা মাঠ থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো |
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নীলক্ষা ইউনিয়নের বর্তমান ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ৪৫ জন। এ ছাড়া বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। নির্বাচনী বিরোধ এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। নিহত ব্যক্তিরা হলেন নীলক্ষা ইউনিয়নের আমিরাবাদ গ্রামের শাহজাহান মিয়া (২৭) ও মানিক মিয়া (৪৫) এবং সোনাকান্দী গ্রামের মোমেন মিয়া (২২) ও খোকন মিয়া (৩২)।
তাঁরা সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক সরকারের সমর্থক ছিলেন। এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নীলক্ষা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক সরকার রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরে তাজুল ইসলাম ও আবদুল হক সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলছে। সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে তাজুল ও আবদুল হক চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন চান। শেষে তাজুলকে দলীয় প্রার্থী মনোনীত করা হয়। মনোনয়নবঞ্চিত হলেও আবদুল হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে না গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে তাজুল বিজয়ী হন। নির্বাচনের পর দুই পক্ষে বিরোধ আরও বাড়ে। দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে গত সাত মাসে ১৫ বার সংঘর্ষ হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে তিন শ লোক আহত হন। ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে শতাধিক বাড়িঘর। এসব ঘটনায় পাল্টাপাল্টি একাধিক মামলাও হয়েছে। এলাকাবাসী বলেন, গত শনিবার সন্ধ্যায় নীলক্ষা ইউনিয়নের বীরগাঁও গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। শনিবারের সংঘর্ষের সূত্র ধরে রোববার দুপুরেও টেঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উভয় পক্ষ। সংঘর্ষ নীলক্ষা, বীরগাঁও, দড়িগাঁও এবং হরিপুর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে উভয় পক্ষের অর্ধশত লোক আহত হন। এর জেরে গতকাল সকাল থেকে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয়। সকাল থেকে উভয় পক্ষের সহস্রাধিক সমর্থক টেঁটা, বল্লম, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হরিপুর,
গোপীনাথপুর, কান্দাপাড় ও বীরগাঁও গ্রামে ছড়িয়ে পড়েন। স্থানীয় ব্যক্তিরা আরও বলেন, দুপুরের দিকে প্রথমে মানিক মিয়া টেঁটাবিদ্ধ হন। এরপর হন মোমেন ও খোকন। বিকেলে টেঁটাবিদ্ধ হন শাহজাহান। তাঁরা প্রত্যেকে ঘটনাস্থলে মারা যান। নিহত চারজনকেই নিজের সমর্থক দাবি করে সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হক সরকার প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে তাজুল সমর্থকেরা টেঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পুরো ইউনিয়নে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। পুলিশ থাকলেও কিছুই করতে পারেনি। শেষে তাজুল পক্ষ তাঁর পক্ষের লোকজন ওপর চড়াও হয়। যোগাযোগ করা হলে বর্তমান চেয়ারম্যান তাজুল ইসলামের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এ জন্য তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তাঁর সমর্থকদের অভিযোগ, আবদুল হক পাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন ও অস্ত্র ভাড়া করে এনে তাদের ওপর হামলা চালান। দড়িগাঁও গ্রামে চেয়ারম্যান তাজুলের পক্ষের লোকজনের অর্ধশত বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। চেয়ারম্যান তাজুলের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গোপীনাথপুরের আবদুল জব্বার মিয়া অভিযোগ করেন, নিহত চারজনই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়ে থাকতে পারেন। এ বিষয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) আমেনা বেগম বলেন, পুলিশ একটি লাশ নিজেদের হেফাজতে নিতে পেরেছে। মরদেহের শরীরে টেঁটার আঘাত রয়েছে। বাকিগুলো গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত হেফাজতে নেওয়া সম্ভব হয়নি বলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি বলেন, সকাল থেকে পুলিশকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়। পুলিশ সদস্যরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। এসপি আমেনা বেগম বলেন, সংঘর্ষের সময় ঢিলের আঘাতে রায়পুরা থানার ওসি আজহার উদ্দিনসহ পুলিশের আরও পাঁচ সদস্য আহত হন। ঘটনা তদন্তে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসিবুল আলমকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) বশির উদ্দিন বলেন, সংঘর্ষের পর উভয় পক্ষের ১৩ জনকে আটক করা হয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
No comments