ট্রেনে সাজতে মানা!
‘সব নারীই সুন্দর। তবে কখনো কখনো তাঁদের বিশ্রী দেখায়।’—গানের কথাগুলো এ রকম। চলন্ত ট্রেনে এ গান যখন বাজছে, তখন দেখা গেল যে দুই তরুণী লিপস্টিক আর মাশকারা নিয়ে নিজেদের সাজাতে ব্যস্ত। পরের দৃশ্যে হাজির অভিনেত্রী সাওয়া নিমুরা। তিনি ওই দুজনকে বলেন, ‘চলন্ত ট্রেনে এমন আচরণ থেকে দয়া করে বিরত থাকুন।’ জাপানের রেলওয়ে কোম্পানি তোকু করপোরেশন এমনই একটি মিউজিক ভিডিও বানিয়েছে। গত মাসে প্রকাশ করা ৩০ সেকেন্ডের ভিডিওটি নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। কেউ কেউ বলছেন, এই ভিডিও প্রচার করা উচিত। রেলগাড়িতে বিরক্তিকর সাজগোজ এবার যদি বন্ধ হয়! আবার আরেক দল বলছে, বড্ড বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণের এই উদ্যোগ মেনে নেওয়া যায় না। টুইটারে একজন লিখেছেন, ‘ট্রেনে সাজতে গেলে পাউডার বা প্রসাধনসামগ্রী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়তে পারে। এতে অন্য যাত্রীদের পোশাক নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। প্রসাধনের তীব্র গন্ধও হয়তো কারও বিরক্তির উদ্রেক করবে।
তাই বলে রেলওয়ে কোম্পানি তো আমাকে বলতে পারে না—আমি সুন্দর নাকি অসুন্দর।’ আরেকজনের মতে, ‘এই সমাজ নানাভাবে নারীবিদ্বেষকে ঠিক বলে দেখাতে চায়। আর এভাবেই তারা নারীর প্রতি নিপীড়ন চালিয়ে যেতে চায়। ট্রেনে সাজগোজে মানা করলে তো কেউ খেপছে না। বরং তারা এ ধরনের অবমাননাকর মিউজিক ভিডিওর প্রতিবাদ করছে।’ যাঁরা পক্ষে আছেন তাঁরা বলছেন, ট্রেনে লোকের সামনে সাজগোজের মতো আচরণ সুরুচির প্রকাশ নয়। বিরোধীরাও পাল্টা জবাব দিচ্ছেন। একজন বলেছেন, পশ্চিমা দেশে জনসমক্ষে কোনো নারী সাজগোজ করলে তাঁকে নিয়ে নেতিবাচক ধারণা করা হয়। কিন্তু ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথকে তো প্রায়ই দেখা যায় যে সবার সামনে লিপস্টিক বের করে ঠোঁটে দিচ্ছেন। তখন লোকে তো কোনো ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করে না! বরং তিনি কোন ব্র্যান্ডের লিপস্টিক মাখছেন, সেটাই আলোচনা করে। দুই পক্ষে যখন এমন পাল্টাপাল্টি চলছে, তখন তোকু করপোরেশন জানিয়েছে, তারা এ রকম আরও কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করতে যাচ্ছে। রেলযাত্রীদের আদবকায়দা শেখানোই তাদের উদ্দেশ্য। বাকি ভিডিওগুলোয় আছে, ট্রেনে স্মার্টফোন ব্যবহার করলে কীভাবে অন্য যাত্রীরা বিরক্ত হন অথবা ভিড়ের মধ্যে ভারী ব্যাগ নিয়ে চলাফেরা করলে সহযাত্রীদের কতটা কষ্ট হয়—সেসব বিষয়ে লোকজনকে সচেতন করা। জাপানের বেসরকারি রেলওয়ে সমিতির জরিপ ও যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতেই ভিডিওগুলোর বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে।
No comments