মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের বচন সমাচার by মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার
কতিপয়
ব্যতিক্রম বাদ দিলে বাংলাদেশের মন্ত্রী মহোদয়রা কোনো সরকারের আমলেই তাদের
বক্তব্য-বিবৃতিতে সুরুচি, শালীনতা, যৌক্তিকতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় রাখতে
পারেননি। সাবেক বিএনপি শাসনামলে জামায়াতের একজন মন্ত্রী জঙ্গিনেতা
সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইকে ‘মিডিয়ার সৃষ্টি’ বলে ব্যাপকভাবে সমালোচিত
হয়েছিলেন। ওই সময় বিএনপির আরও অনেক মন্ত্রী এ ব্যাপারে পেশাদারিত্বের পরিচয়
দিতে ব্যর্থ হন। বিশেষ করে চারদলীয় জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর
বক্তব্য এবং তার ইংরেজি ব্যবহার প্রায়শই নাগরিক সম্প্রদায়ের মধ্যে
হাস্যরসের সৃষ্টি করত। একবার তার ব্যবহৃত একটি বাক্য ‘উই আর লুকিং ফর
শত্র“জ’ মন্ত্রীদের বেফাঁস কথাবার্তার আলোচনায় প্রসিদ্ধি পেয়েছিল। তবে
বর্তমান মহাজোট সরকার আমলে মন্ত্রীদের হাস্যকর, বেফাঁস ও অপেশাদার
কথাবার্তা সর্বকালের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত ১৬ আগস্ট রাজধানীর আন্তর্জাতিক
সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায়
প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর
বক্তব্য আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। ওই বক্তব্যে বিরোধী দলগুলোর হরতালের
সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘আর বসে থাকার সময় নেই। আর কেউ হরতাল করলে
তাদের বাড়িতে ঢুকে হত্যা করতে হবে।’ স্বদলীয় নেতাকর্মীদের সহিংস হতে
উস্কানি দিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত হরতাল
করে। আর রাস্তায় শুধু পুলিশ থাকে। আমাদের নেতাকর্মীরা নেতার হুকুমের
অপেক্ষায় বসে থাকে। সবকিছুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ লাগবে কেন? যখন
গাড়ি-বাড়ি করেন তখন কোথায় থাকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ।’ সাংবিধানিক অধিকার
হিসেবে ‘হরতাল’ পালনকারীদের ঘরে ঢুকে হত্যা করার কথা বলে মন্ত্রী সবাইকে
অবাক করে দেন। অনেকে প্রশ্ন করেন, আওয়ামী লীগ যখন ১৯৯৪-১৯৯৬ সালে
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল, তখন ওই দলের হরতাল
পালনকারী নেতাদের ঘরে ঘরে ঢুকে হত্যা করলে কি আজ তারা মন্ত্রিত্ব করতে
পারতেন? মন্ত্রীর আলোচ্য বক্তব্য সর্বমহলে ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়।
মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের অশোভন বক্তব্য দেয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে। প্রথমত, মন্ত্রিসভা গঠনকালে দলীয় সিনিয়র নেতাদের মন্ত্রিসভার বাইরে রেখে কেবিনেটে অনেক অনভিজ্ঞ নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত করে একে ‘চমক সৃষ্টিকারী মন্ত্রিসভা’ আখ্যা দেয়া হয়। রাজনৈতিক দূরদর্শীরা তখনই ভেবেছিলেন, গুরুদের বাদ দিয়ে শিষ্যদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রিসভা কাজকর্ম ও কথাবার্তায় প্রত্যাশিত পেশাদারিত্ব দেখাতে পারবে না। পরবর্তী সময়ে তাদের এ ভাবনা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কারণ, এ সরকারের মন্ত্রীদের প্রায় সবাই প্রথম থেকেই অযাচিত ও বেফাঁস কথাবার্তা বলে সমালোচিত হয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় পাটমন্ত্রী সংবিধানে প্রদত্ত অধিকার ‘হরতাল’ পালনকারীদের ঘরে ঢুকে হত্যা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে চমক সৃষ্টি করেন। এই মন্ত্রী এর আগেও একাধিকবার এ ধরনের বেফাঁস উক্তি করেছেন। উল্লেখ্য, সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রথম বছরেই ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তিবাণিজ্য ও অন্যান্য অপকর্মে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতারাসহ অন্য সবাই যখন অতিষ্ঠ সে সময়, ২০১০ সালের ১০ জুলাই, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম আয়োজিত ‘যুদ্ধাপরাধীদের অতি দ্রুত বিচার ও জাতীয় উন্নয়নে বিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে এই মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বিগত ৭ বছর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মার খেয়েছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, চক্রান্তকারীরা সংগঠনে ঢুকে নাশকতা চালাচ্ছে। ছাত্রলীগের মতো একটি আদর্শিক সংগঠনের কর্মীরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে পারে না।’ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসে উস্কানি দিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে মারামারি কর। এটা না করে ওদের (যুদ্ধাপরাধীদের) মারতে পার না?’ মন্ত্রী ওয়ান-ইলেভেনের সময় সাংবাদিকদের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘ঘটনার হোতাদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে সাংবাদিকরা ওয়ান-ইলেভেনকে আশীর্বাদ জানিয়েছিল।’ বরেণ্য আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হকের সমালোচনা করতেও মন্ত্রী কুণ্ঠাবোধ না করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, বিএনপি সবার কাছ থেকেই তিনি সুবিধা ভোগ করেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারে জামায়াত নেতাদের আইনি সহায়তা দিতেও ব্যারিস্টার রফিক উল হক কুণ্ঠাবোধ করবেন না।’ এ মন্ত্রীর আরও অনেক বেফাঁস বক্তব্য আছে যার উল্লেখ আপাতত স্থগিত রেখে ‘চমক সৃষ্টিকারী মন্ত্রিসভা’র অন্য ক’জন সদস্যের বক্তব্য তুলে ধরা প্রাসঙ্গিক হবে।
খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক সেনাসমর্থিত অসাংবিধানিক ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন জরুরি সরকারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বিতর্কিত হন। সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচনের ভালো-মন্দের জন্য প্রশংসা বা নিন্দা করা উচিত নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু এই মন্ত্রী নবম সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে জেনারেল মইন ও সেনাবাহিনীকে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অনেক ভুলভ্রান্তি থাকা সত্ত্বেও জেনারেল মইন উ আহমেদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী দেশে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিয়ে বিরল কাজ সম্পন্ন করেছে।’ খাদ্যমন্ত্রী ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এই উচ্চাভিলাষী জেনারেলকে ‘যুগে যুগে আবির্ভূত মহামানবদের একজন’ বলে অভিহিত করে তাকে আব্রাহাম লিংকনের সঙ্গে তুলনা করেন।
পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের বেফাঁস বক্তব্যে রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ নেই। বেশ অবলীলায় তিনি মনের অভ্যন্তরের সত্য কথাগুলো সবার সামনে বলে দেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ তৈরির উদ্যোগ যখন সর্বমহলে নিন্দিত ও সমালোচিত হয় তখন, ২০০৯ সালের ২৯ এপ্রিল, এ মন্ত্রী ভারতীয় হাইকমিশনারকে খুশি করে বলেন, ‘ভারত আগে টিপাইমুখ ড্যাম চালু করুক। ড্যামের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে কী ধরনের ও কী পরিমাণের ক্ষয়ক্ষতি হয়-সেসব দেখার পর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, ভারতের কাছে প্রতিবাদ জানানো হবে কি-না।’ বিশেষজ্ঞসহ সবাই যখন আলোচ্য বাঁধ হলে বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে মনে করেন, এ বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে প্রতিবাদ করতে গিয়ে যখন পুলিশের আক্রমণে ছাত্রদের মাথা ফাটে, তখন এ মন্ত্রী এ বিষয়ের একজন বিশেষজ্ঞ না হয়েও ৬ জুলাই, ডাচ পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ভাইস মিনিস্টারের সঙ্গে বৈঠকের পর বলেন, ‘পৃথিবীর সব বাঁধই যে ক্ষতিকর তা ঠিক নয়, টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের উপকারেও আসতে পারে।’ লোক নিয়োগের ব্যাপারে সরকারি অস্বচ্ছতাও মন্ত্রীর অকপট স্বীকৃতিতে স্পষ্ট হয়। ২০১০ সালের ১২ মে ঠাকুরগাঁও জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে অকপট সত্য উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগে দলীয় লোকজন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও পুলিশ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য দলীয় ছেলেমেয়েদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
আপত্তিকর বক্তব্য প্রদানের ব্যাপারে আইন প্রতিমন্ত্রী মহোদয় কিছুটা আক্রমণাত্মক। রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত কমিটি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের নেতাদের হাজার হাজার মামলা প্রত্যাহার করলেও বিরোধী দলের একই চরিত্রসম্পন্ন একটি মামলাও কেন প্রত্যাহার করা হল না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের মামলা প্রত্যাহার করতে আমরা চেয়ারে বসেছি নাকি? বিরোধী দলের নেতাদের মামলা বাতিলের জন্য এ কমিটি করা হয়নি। ২০১০ সালের ১৬ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাম্প্রদায়িকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। জিয়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না।’ তার এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জিয়াউর রহমান চর হলে পাকিস্তানের কাছে আÍসমর্পণ করে শেখ মুজিবুর রহমান কোন দেশের চর বলে বিবেচিত হবেন?’ প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্য সরকারি দলেরও অনেকে সমালোচনা করলেও মন্ত্রী তার অবস্থানে অনড় থেকে আবার একই বছর ১২ আগস্ট বিলিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় একই সুরে বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু খুনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি বাঙালিদের মাঝে পাকিস্তানের চর হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন।’
মৎস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রীর বক্তব্যে মহাজোট সরকারের নিয়োগের ব্যাপারে অন্ধ দলীয়করণ নীতি অনুসরণের ব্যাপারটি ধরা পড়ে। মন্ত্রী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সে মৎস্য ও পানিসম্পদ তথ্যসেবা জোরদারকরণ কর্মসূচির উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াতের কোনো লোককে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা করা যাবে না। যে কর্মকর্তারা বিএনপি ও জামায়াতের লোককে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দেবে তাদের লাল নোটিশ দিয়ে বিদায় করা হবে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অত্যাচার-নির্যাতন করে বাড়িঘর ছাড়া করেছিল। আমার মন্ত্রণালয় থেকে অত্যাচারী-নির্যাতনকারীদের সহায়তা করা চলবে না।’
সিনিয়র মন্ত্রীদের মধ্যে কথায় কথায় ‘স্টুপিড’, ‘বোগাস’ ও ‘রাবিশ’ উচ্চারণে অভ্যস্ত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতেরও অনেক অনভিপ্রেত বক্তব্য রয়েছে। শেয়ারবাজারের ৩৩ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর অর্থ লুটপাটকারীদের তদন্ত কমিটি করে চিহ্নিত করা সম্ভব হলেও তাদের শাস্তির ব্যবস্থা না করে মন্ত্রী শেয়ারবাজারকে কখনও ‘দুষ্ট বাজার’, কখনও ‘ফটকা বাজার’ বলে অভিহিত করেন। এ সরকারের আমলে ব্যাংকিং সেক্টরের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনায় বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেংকারিতে শুধু সোনালী ব্যাংক থেকেই চার সহস্রাধিক কোটি টাকা লুটপাট হলে অর্থমন্ত্রী বিষয়টিকে হালকা করে বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে আমরা ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেই। অথচ মাত্র চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে যা প্রচার হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, পুরো ব্যাংকিং খাতেই ধস নেমেছে। এই প্রচারণা ব্যাংকিং খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’ নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের বিরোধীদলীয় দাবি যখন দেশের অধিকাংশ মানুষ সমর্থন করছেন তেমন সময়ে, গত ২১ আগস্ট, এ মন্ত্রী সিলেটে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে বলেন, ‘বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি খামোখা।’
সরকারের উপদেষ্টারাও যে বক্তব্য-বচনে খুব একটা শালীন তা নয়। বেশি উদাহরণ না দিয়ে এখানে অর্থবিষয়ক উপদেষ্টার ‘ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে বিনিময়ে ফি চাইলে অসভ্যতা হবে’ এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টার ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে ১৩ হাজার ৩৫০ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হবে। দলের পরীক্ষিত কর্মী ছাড়া বাইরের কাউকে এ চাকরি দেয়া হবে না।’ এ দুটি উদাহরণই উপদেষ্টাদের বক্তব্যের শালীনতা উপলব্ধির জন্য যথেষ্ট। অন্যান্য মন্ত্রী-উপদেষ্টার বেফাঁস বক্তব্যের উল্লেখ করে প্রবন্ধের কলেবর বাড়াব না।
একটি গণতান্ত্রিক সরকারের ইতিবাচক ভাবমূর্তি নির্মাণে ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের কাজকর্ম ও কথাবার্তা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সরকারের পলিসি এবং তাদের কাজের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে সতর্কতার সঙ্গে কথা বলতে হয়। একটি গণতান্ত্রিক সরকার এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করে গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে মন্ত্রিসভার সব সদস্যকে কথা বলতে নিরুৎসাহিত করে এসব বিষয়ে অধিকতর পেশাদার কাউকে সরকারি দলের মুখপাত্র নিয়োগ করে তাকে দিয়ে বক্তব্য প্রদান করিয়ে থাকে। তবে মহাজোট সরকার এক্ষেত্রে ন্যূনতম শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। কে যে এ সরকারের মুখপাত্র আর কে যে মুখপাত্র নন, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়। গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোতে এ সরকারের মন্ত্রীরা তাদের ইচ্ছামতো ঢালাওভাবে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, যার সঙ্গে অনেকক্ষেত্রেই জনস্বার্থ ও সরকারি নীতির সাদৃশ্য নেই। এ সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নামার পেছনে যেসব কারণ সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে এবং করছে, তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের সরকারি নীতিবিরোধী, জনস্বার্থবিরোধী, খেয়ালখুশিমতো বেফাঁস ও অযাচিত বক্তব্য প্রদানকে একটি অন্যতম কারণ বিবেচনা করা যায়।
ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের অশোভন বক্তব্য দেয়ার পেছনে অনেক কারণ আছে। প্রথমত, মন্ত্রিসভা গঠনকালে দলীয় সিনিয়র নেতাদের মন্ত্রিসভার বাইরে রেখে কেবিনেটে অনেক অনভিজ্ঞ নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত করে একে ‘চমক সৃষ্টিকারী মন্ত্রিসভা’ আখ্যা দেয়া হয়। রাজনৈতিক দূরদর্শীরা তখনই ভেবেছিলেন, গুরুদের বাদ দিয়ে শিষ্যদের নিয়ে গঠিত মন্ত্রিসভা কাজকর্ম ও কথাবার্তায় প্রত্যাশিত পেশাদারিত্ব দেখাতে পারবে না। পরবর্তী সময়ে তাদের এ ভাবনা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কারণ, এ সরকারের মন্ত্রীদের প্রায় সবাই প্রথম থেকেই অযাচিত ও বেফাঁস কথাবার্তা বলে সমালোচিত হয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় পাটমন্ত্রী সংবিধানে প্রদত্ত অধিকার ‘হরতাল’ পালনকারীদের ঘরে ঢুকে হত্যা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে চমক সৃষ্টি করেন। এই মন্ত্রী এর আগেও একাধিকবার এ ধরনের বেফাঁস উক্তি করেছেন। উল্লেখ্য, সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রথম বছরেই ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ভর্তিবাণিজ্য ও অন্যান্য অপকর্মে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতারাসহ অন্য সবাই যখন অতিষ্ঠ সে সময়, ২০১০ সালের ১০ জুলাই, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম আয়োজিত ‘যুদ্ধাপরাধীদের অতি দ্রুত বিচার ও জাতীয় উন্নয়নে বিরোধী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পক্ষে সাফাই গেয়ে এই মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বিগত ৭ বছর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মার খেয়েছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, চক্রান্তকারীরা সংগঠনে ঢুকে নাশকতা চালাচ্ছে। ছাত্রলীগের মতো একটি আদর্শিক সংগঠনের কর্মীরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে পারে না।’ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসে উস্কানি দিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে মারামারি কর। এটা না করে ওদের (যুদ্ধাপরাধীদের) মারতে পার না?’ মন্ত্রী ওয়ান-ইলেভেনের সময় সাংবাদিকদের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘ঘটনার হোতাদের কাছ থেকে টাকা খেয়ে সাংবাদিকরা ওয়ান-ইলেভেনকে আশীর্বাদ জানিয়েছিল।’ বরেণ্য আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হকের সমালোচনা করতেও মন্ত্রী কুণ্ঠাবোধ না করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, বিএনপি সবার কাছ থেকেই তিনি সুবিধা ভোগ করেন। যুদ্ধাপরাধের বিচারে জামায়াত নেতাদের আইনি সহায়তা দিতেও ব্যারিস্টার রফিক উল হক কুণ্ঠাবোধ করবেন না।’ এ মন্ত্রীর আরও অনেক বেফাঁস বক্তব্য আছে যার উল্লেখ আপাতত স্থগিত রেখে ‘চমক সৃষ্টিকারী মন্ত্রিসভা’র অন্য ক’জন সদস্যের বক্তব্য তুলে ধরা প্রাসঙ্গিক হবে।
খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক সেনাসমর্থিত অসাংবিধানিক ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন জরুরি সরকারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বিতর্কিত হন। সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করে নির্বাচন কমিশন। এ নির্বাচনের ভালো-মন্দের জন্য প্রশংসা বা নিন্দা করা উচিত নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু এই মন্ত্রী নবম সংসদ নির্বাচনের পর নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে জেনারেল মইন ও সেনাবাহিনীকে ওই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অনেক ভুলভ্রান্তি থাকা সত্ত্বেও জেনারেল মইন উ আহমেদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী দেশে একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দিয়ে বিরল কাজ সম্পন্ন করেছে।’ খাদ্যমন্ত্রী ২০০৯ সালের ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এই উচ্চাভিলাষী জেনারেলকে ‘যুগে যুগে আবির্ভূত মহামানবদের একজন’ বলে অভিহিত করে তাকে আব্রাহাম লিংকনের সঙ্গে তুলনা করেন।
পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেনের বেফাঁস বক্তব্যে রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ নেই। বেশ অবলীলায় তিনি মনের অভ্যন্তরের সত্য কথাগুলো সবার সামনে বলে দেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ তৈরির উদ্যোগ যখন সর্বমহলে নিন্দিত ও সমালোচিত হয় তখন, ২০০৯ সালের ২৯ এপ্রিল, এ মন্ত্রী ভারতীয় হাইকমিশনারকে খুশি করে বলেন, ‘ভারত আগে টিপাইমুখ ড্যাম চালু করুক। ড্যামের প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে কী ধরনের ও কী পরিমাণের ক্ষয়ক্ষতি হয়-সেসব দেখার পর সরকার সিদ্ধান্ত নেবে, ভারতের কাছে প্রতিবাদ জানানো হবে কি-না।’ বিশেষজ্ঞসহ সবাই যখন আলোচ্য বাঁধ হলে বাংলাদেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে মনে করেন, এ বাঁধ নির্মাণের বিরুদ্ধে ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে প্রতিবাদ করতে গিয়ে যখন পুলিশের আক্রমণে ছাত্রদের মাথা ফাটে, তখন এ মন্ত্রী এ বিষয়ের একজন বিশেষজ্ঞ না হয়েও ৬ জুলাই, ডাচ পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক ভাইস মিনিস্টারের সঙ্গে বৈঠকের পর বলেন, ‘পৃথিবীর সব বাঁধই যে ক্ষতিকর তা ঠিক নয়, টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের উপকারেও আসতে পারে।’ লোক নিয়োগের ব্যাপারে সরকারি অস্বচ্ছতাও মন্ত্রীর অকপট স্বীকৃতিতে স্পষ্ট হয়। ২০১০ সালের ১২ মে ঠাকুরগাঁও জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনে অকপট সত্য উচ্চারণ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগে দলীয় লোকজন নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতেও পুলিশ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য দলীয় ছেলেমেয়েদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
আপত্তিকর বক্তব্য প্রদানের ব্যাপারে আইন প্রতিমন্ত্রী মহোদয় কিছুটা আক্রমণাত্মক। রাজনৈতিক নেতাদের হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত কমিটি প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারি দলের নেতাদের হাজার হাজার মামলা প্রত্যাহার করলেও বিরোধী দলের একই চরিত্রসম্পন্ন একটি মামলাও কেন প্রত্যাহার করা হল না- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের মামলা প্রত্যাহার করতে আমরা চেয়ারে বসেছি নাকি? বিরোধী দলের নেতাদের মামলা বাতিলের জন্য এ কমিটি করা হয়নি। ২০১০ সালের ১৬ এপ্রিল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও সাম্প্রদায়িকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। জিয়া প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না।’ তার এ বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে বিএনপির একজন যুগ্ম মহাসচিব স্বাক্ষরিত প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জিয়াউর রহমান চর হলে পাকিস্তানের কাছে আÍসমর্পণ করে শেখ মুজিবুর রহমান কোন দেশের চর বলে বিবেচিত হবেন?’ প্রতিমন্ত্রীর এ বক্তব্য সরকারি দলেরও অনেকে সমালোচনা করলেও মন্ত্রী তার অবস্থানে অনড় থেকে আবার একই বছর ১২ আগস্ট বিলিয়া মিলনায়তনে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় একই সুরে বলেন, ‘জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু খুনের ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি বাঙালিদের মাঝে পাকিস্তানের চর হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন।’
মৎস্য ও পানিসম্পদ মন্ত্রীর বক্তব্যে মহাজোট সরকারের নিয়োগের ব্যাপারে অন্ধ দলীয়করণ নীতি অনুসরণের ব্যাপারটি ধরা পড়ে। মন্ত্রী গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় দারিদ্র্য বিমোচন প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্সে মৎস্য ও পানিসম্পদ তথ্যসেবা জোরদারকরণ কর্মসূচির উদ্বুদ্ধকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াতের কোনো লোককে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা করা যাবে না। যে কর্মকর্তারা বিএনপি ও জামায়াতের লোককে প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দেবে তাদের লাল নোটিশ দিয়ে বিদায় করা হবে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অত্যাচার-নির্যাতন করে বাড়িঘর ছাড়া করেছিল। আমার মন্ত্রণালয় থেকে অত্যাচারী-নির্যাতনকারীদের সহায়তা করা চলবে না।’
সিনিয়র মন্ত্রীদের মধ্যে কথায় কথায় ‘স্টুপিড’, ‘বোগাস’ ও ‘রাবিশ’ উচ্চারণে অভ্যস্ত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতেরও অনেক অনভিপ্রেত বক্তব্য রয়েছে। শেয়ারবাজারের ৩৩ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর অর্থ লুটপাটকারীদের তদন্ত কমিটি করে চিহ্নিত করা সম্ভব হলেও তাদের শাস্তির ব্যবস্থা না করে মন্ত্রী শেয়ারবাজারকে কখনও ‘দুষ্ট বাজার’, কখনও ‘ফটকা বাজার’ বলে অভিহিত করেন। এ সরকারের আমলে ব্যাংকিং সেক্টরের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাটের ঘটনায় বহুল আলোচিত হলমার্ক কেলেংকারিতে শুধু সোনালী ব্যাংক থেকেই চার সহস্রাধিক কোটি টাকা লুটপাট হলে অর্থমন্ত্রী বিষয়টিকে হালকা করে বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে আমরা ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেই। অথচ মাত্র চার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে যা প্রচার হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, পুরো ব্যাংকিং খাতেই ধস নেমেছে। এই প্রচারণা ব্যাংকিং খাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’ নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের বিরোধীদলীয় দাবি যখন দেশের অধিকাংশ মানুষ সমর্থন করছেন তেমন সময়ে, গত ২১ আগস্ট, এ মন্ত্রী সিলেটে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে বলেন, ‘বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি খামোখা।’
সরকারের উপদেষ্টারাও যে বক্তব্য-বচনে খুব একটা শালীন তা নয়। বেশি উদাহরণ না দিয়ে এখানে অর্থবিষয়ক উপদেষ্টার ‘ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে বিনিময়ে ফি চাইলে অসভ্যতা হবে’ এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টার ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে ১৩ হাজার ৩৫০ জন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হবে। দলের পরীক্ষিত কর্মী ছাড়া বাইরের কাউকে এ চাকরি দেয়া হবে না।’ এ দুটি উদাহরণই উপদেষ্টাদের বক্তব্যের শালীনতা উপলব্ধির জন্য যথেষ্ট। অন্যান্য মন্ত্রী-উপদেষ্টার বেফাঁস বক্তব্যের উল্লেখ করে প্রবন্ধের কলেবর বাড়াব না।
একটি গণতান্ত্রিক সরকারের ইতিবাচক ভাবমূর্তি নির্মাণে ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের কাজকর্ম ও কথাবার্তা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সরকারের পলিসি এবং তাদের কাজের সঙ্গে সাদৃশ্য রেখে সতর্কতার সঙ্গে কথা বলতে হয়। একটি গণতান্ত্রিক সরকার এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করে গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে মন্ত্রিসভার সব সদস্যকে কথা বলতে নিরুৎসাহিত করে এসব বিষয়ে অধিকতর পেশাদার কাউকে সরকারি দলের মুখপাত্র নিয়োগ করে তাকে দিয়ে বক্তব্য প্রদান করিয়ে থাকে। তবে মহাজোট সরকার এক্ষেত্রে ন্যূনতম শৃংখলা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। কে যে এ সরকারের মুখপাত্র আর কে যে মুখপাত্র নন, তা জনগণের কাছে স্পষ্ট নয়। গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোতে এ সরকারের মন্ত্রীরা তাদের ইচ্ছামতো ঢালাওভাবে বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, যার সঙ্গে অনেকক্ষেত্রেই জনস্বার্থ ও সরকারি নীতির সাদৃশ্য নেই। এ সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নামার পেছনে যেসব কারণ সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে এবং করছে, তার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের সরকারি নীতিবিরোধী, জনস্বার্থবিরোধী, খেয়ালখুশিমতো বেফাঁস ও অযাচিত বক্তব্য প্রদানকে একটি অন্যতম কারণ বিবেচনা করা যায়।
ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
No comments