বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের সর্বশেষ অভিযান… by ওয়াসীম সোবহান চৌধুরী
অক্টোবরের
২৮ তারিখ, সাল ১৯৭১। সময় রাত সাড়ে তিনটা। সিপাহী হামিদুর রহমান একটা
রাইফেল স্থির তাক করে আছে পাকিস্তান আর্মির ৩০ এ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের
সীমান্ত ফাঁড়ি বরাবর। তার ঠিক পাশেই এল এম জি নিয়ে আছে কোম্পানি
কম্যান্ডার। ঘন কুয়াশা ও নিবিঢ় অন্ধকারের জন্য সামনের সব কিছু অস্পষ্ট। তবে
লক্ষ স্পষ্ট তাদের – সীমান্ত ফাঁড়িটি দখল নিতে হবে।
তারা আছে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে। সীমান্ত ফাঁড়িটি একটা টিলার উপরে।
অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে হামিদের ব্যাটালিয়ান এসেছে ত্রিপুরা রাজ্যের আমবাসা এলাকায়। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক মনে করেন সিলেটে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা কম যার ফলে পাকিস্তান প্রশাসন অবাধে চা রপ্তানী করে বৈদেশিক অর্থ আয় করতে পারছে। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন এখান থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যেন চা বাগানগুলোতে আঘাত হানে। সে জন্য তাদের ত্রিপুরার আমবাসায় আসা। এখান থেকে সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তান আর্মির বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালিত হবে। ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি থেকে একটি রাস্তা কমলগঞ্জ হয়ে শ্রীমঙ্গল এবং শ্রীমঙ্গল হয়ে সিলেটের অন্য সব এলাকায় যায়। এ কারণে ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি পাকিস্তান আর্মির কাছ থেকে দখল নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। তাতে একটি বিস্তৃত এলাকার দ্বার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উন্মুক্ত হবে। কিন্তু এ অঞ্চলে পাকবাহিনীর সবচেয়ে দুর্ভেদ্য ঘাঁটি এটা। দুই কোম্পানি সেনা এই ফাঁড়িতে নিয়োজিত রয়েছে। তারা এখানে শক্ত একটি রক্ষণব্যুহ গড়ে তুলেছে, দিয়েছে কাঁটাতার, গড়েছে কংক্রিটের বাঙ্কার ও পুঁতেছে মাইন। সীমান্ত ফাঁড়ির উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমে চা বাগান ও জঙ্গল। শুধু দক্ষিণ দিক একটু খোলা, যদিও কিছু বাঁশঝাড় আছে এখানে সেখানে এবং আছে একটি ক্যানাল যা ধলই নদী নামে পরিচিত।
ভোর চারটা বাজার দশ মিনিট আগে শুরু হবে মর্টার হামলা, চলবে চারটা পর্যন্ত, এরপর এগিয়ে যাবে পদাতিক বাহিনী – এই হলো প্ল্যান। প্রচলিত যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী কোন ঘাঁটি দখল করতে হলে রক্ষণাত্মক বাহিনীর চাইতে অন্তত তিনগুণ শক্তি নিয়ে আক্রমন করতে হয়; কিন্তু এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যায় কম। তবে রয়েছে আসীম মনোবল। সেই মনোবলের উপর ভরসা করে ফার্স্ট ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ঠিক করেছে ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি তারা দখল করবে। দায়িত্ব পড়েছে ব্যাটালিয়ানের সর্বকনিষ্ঠ অফিসার ক্যাপ্টেন কাইয়ুম চৌধুরীর চার্লি কোম্পানির উপর। সিপাহী হামিদ এই কোম্পানির একজন অদম্য যোদ্ধা, সৈনিক নাম্বার ৩৯৪৩০১৪।
হামিদের কোম্পানি কম্যান্ডার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দক্ষিণদিকের ক্যানালটি পার হয়েই আক্রমণ করবেন সীমান্ত ফাঁড়ি। ক্যানেলের ওপারে হবে তাদের ‘ফর্মিং আপ প্লেইস’। শুকনো মৌসুম হওয়াতে ক্যানালে পানি বেশী নেই। এই ক্যানাল থেকে সীমান্ত ফাঁড়ির দূরত্ব ৩০০ গজ। গত দুইদিন তিনি এই এলাকা রেকি করে গেছেন, রানার হিসেবে হামিদ সর্বক্ষণ সাথে ছিল। রেকি করে কোম্পানি কম্যান্ডার ঠিক করেছেন তিন দলে ভাগ হয়ে আক্রমন করবেন। তিনি তিনটি প্লাটুন ঠিক করেছেন – সাত, আট, নয়। সাত নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন থাকবে বামে, আট নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন থাকবে মাঝে ও নয় নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন থাকবে ডানে। তিনি থাকবেন আট নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুনে। মর্টার হামলার পর ও রিকয়েললেস রাইফেল থেকে ফায়ার করে বাঙ্কার ধ্বংস করার পর, কোম্পানি কামান্ডার চার্জ বলার সাথে সাথে তিন প্লাটুন দ্রুত এগিয়ে যাবে টার্গেট বরাবর।
২৭ তারিখ সকালে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এসেছিলেন আমবাসা ক্যাম্পে। সর্বাধিনায়ক এই অপারেশনের গুরুত্ব ও ঝুঁকি বোঝেন। তিনি ব্যাটালিয়ান কম্যান্ডার ও কোম্পানি কম্যান্ডারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ফাইনাল অপারেশনাল প্ল্যানিং। ব্রিফ শুনে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং চার্লি কোম্পানির সৈনিকদের সাথে কথা বলে তাদের উজ্জীবিত করেন। হামিদের এই প্রথম মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ককে দেখা। সে ব্যাটালিয়ানের কনিষ্ঠ সৈনিকদের একজন, বয়স ১৮। রাশভারী সর্বাধিনায়ককে দেখে সে পুলকিত হয়েছিল।
আজ কয়েক ধাপে তারা ফর্মিং আপ প্লেইসে এসে অবস্থান নিয়েছে। আমবাসার ক্যাম্প থেকে কমলপুর এসেছে রাত দশটায়। সংখ্যায় তারা ১৭০ জন। সেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি এয়ারফিল্ড আছে। এয়ারফিল্ডের এক কোনায় পুরো কোম্পানিকে আবার যুদ্ধ পরিকল্পনা বুঝিয়ে দেয় এবং ব্যাটেল অর্ডারে ফল-ইন করায় কোম্পানি কম্যান্ডার। তারপর দলটি দুই মাইল হেঁটে টার্গেটের কাছে আসে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে ধলই নদী পার হয়ে ফর্মিং আপ প্লেইসে অবস্থান নিয়েছে তারা – সাত নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন বামে, আট নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন মাঝ বরাবর ও নয় নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন ডানে।
সিপাহী হামিদ প্রস্তুত। কোম্পানি কম্যান্ডার চার্জ বলার সাথে সাথে ছুটে এগিয়ে যাবে সে এবং সাথের সবাই। উদ্দেশ্য পাকিস্তান আর্মির কাছ থেকে ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি দখল করা। সে কোম্পানি কম্যান্ডারের রানার। কম্যান্ডার ক্রল করে সামনে গেলে সে-ও সামনে যায়, বামে গেলে সে বামে যায়, ডানে গেলে ডানে যায়। তাদের অবস্থান থেকে সীমান্ত ফাঁড়ির দূরত্ব ৩০০ গজ।
সময় রাত ৩ টা ৫০ মিনিট। এইচ আওয়ার। পরিকল্পনা মোতাবেক মর্টার দিয়ে গোলা ছোঁড়া শুরু হলো। সুনসান রাতের নিস্তব্ধতা চুরমার হলো নিমিষেই। দশ মিনিট অনবরত সীমান্ত ফাঁড়ি বরাবর গোলা নিক্ষেপ হলো ফর্মিং আপ প্লেইস থেকে। রিকয়েললেস রাইফেল থেকে কয়েকটি গোলা মারা হলো ফাঁড়ির বাঙ্কার বরাবর। হিসাবে পাকিস্তান আর্মির ৩০-এ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের অনেক সৈন্যের হতাহত হবার কথা। কোম্পানি কম্যান্ডার এবার আদেশ দিলো- চার্জ! প্রত্যেকটি প্লাটুন এগিয়ে গেলো টার্গেট বরাবর। কিন্তু ১০০ গজ এগুবার পরই আট নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন ও নয় নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন আটকে গেলো কাদামাটিতে। পা দেবে গেল সবার, কেউ কেউ একটু এগিয়ে গেল কিন্তু পাকিস্তান আর্মির পেতে রাখা বাঁশের পাঞ্জিতে আটকে গেল তারা। সাত নম্বর প্লাটুন সীমান্ত ফাঁড়ির ১০০ গজের মধ্যে চলে গেল কিন্তু এর মধ্যে তাদের প্লাটুন কম্যান্ডার পাকিস্তানী আর্মির গুলিতে আহত হল। হিসেব হয়ে গেল ওলটপালট। সবাই কাদায় শুয়ে পড়তে বাধ্য হলো। উপর থেকে অনবরত গুলি আসছে। কিন্তু পাহাড়ের ঢালে শুয়ে থাকার কারণে গুলি মাথার বেশ উপর দিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের।
কোম্পানি কম্যান্ডার প্রমোদ গুনলেন। কোম্পানির ১৭০ জন সৈনিকের প্রাণ বাঁচা-মরার মাঝে দোদুল্যমান। সীমান্ত ফাঁড়ির ডান দিকে দুইটি আম গাছের ঠিক মাঝে এর মধ্যে পাকিস্তান আর্মি একটি লাইট মেশিনগান বসিয়েছে। মুক্তিবাহিনী ক্রল করে এগিয়ে গেলে একদম পাকিস্তান আর্মির মুখে পড়বে আর পিছিয়ে গেলে মেশিনগানের সহজ লক্ষে পরিণত হবে। নয় নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন চেষ্টা করলো লাইট মেশিনগান পোস্টটিকে আঘাত হানতে, কিন্তু রাতের অন্ধকারে আর গাছের পেছনে থাকাতে লক্ষ ভেদ হলো না। সময় গড়াতে লাগলো। কোম্পানি কম্যান্ডার বুঝলো তারা যা ভেবেছিল তার থেকে অনেক বেশী পাকিস্তানী সৈনিক সীমান্ত ফাঁড়িতে রয়েছে। এ জন্য মর্টারের আঘাতে কিছু হতাহত হলেও অন্যরা এসে বাঙ্কার ও মেশিনগান পোস্টে অবস্থান নিয়েছে। একটু পর ভোর হবে। তখন পাকিস্তান আর্মি ফাঁড়ি থেকে বেরিয়ে এসে পাল্টা-আক্রমণ করবে, কিছুই করার উপায় থাকবে না মুক্তিবাহিনীর। কোম্পানি কম্যান্ডার হামিদকে কাছে ডাকলো। বললো – তুমি পারবে মেশিনগান পোস্টে গ্রেনেড ছুড়তে? কম্যান্ডারের কথা শেষ কবার আগেই হামিদ উত্তর দেয় – “পারবো স্যার।”
হামিদ পরিস্থিতি বোঝে। সে বোঝে ভোরের আলো ফুটবার আগে যদি মেশিনগান পোস্ট নিষ্ক্রিয় করা না যায় তাহলে পুরো কোম্পানির সবাই মারা পড়বে। তার কাছে আছে একটি গ্রেনেড। সে আর একটি চেয়ে নেয়। দুটি গ্রেনেড নিয়ে সে ক্রল করে এগিয়ে যেতে থাকে মেশিনগান পোস্ট বরাবর। তখনো থেকে থেকে গুলি আসছে। বাঁশের পাঞ্জি ও মাইন এড়িয়ে কাদামাটির ভেতরে ক্রল করা প্রায় অসম্ভব, কিন্তু সেপাহী হামিদ ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। ভোরের আলো তখন ফুটতে শুরু করেছে কিন্তু কুয়াশায় তা পূর্ণ রুপ নেয়নি। হামিদ ক্রল করে করে এসে পড়েছে ২০ গজের মধ্যে। মেশিনগান পোস্টের অবয়ব সে দেখতে পাচ্ছে। সেখানে আছে বেশ কজন পাকিস্তানী সৈন্য। শুয়ে থেকেই হামিদ হাতের রাইফেল মাটিতে রাখে। বের করে গ্রেনেড। পিন দাঁত দিয়ে খুলে ছুঁড়ে দেয় মেশিনগান পোস্ট বরাবর। গ্রেনেড গিয়ে লাগে আম গাছে। হামিদ এবার দ্বিতীয় গ্রেনেডটির পিন দাঁত দিয়ে খুলে ছুঁড়ে মারে। এবার গ্রেনেড আঘাত হানে পোস্টের ভেতর। আর্তনাদ করে উঠে পাকিস্তানী সৈন্যরা।
কিন্তু সবাই হতাহত হয় না। একজন রাইফেল নিয়ে বেরিয়ে আসে পোস্ট থেকে। হামিদ ততক্ষণে তার রাইফেল হাতে নিয়ে নিয়েছে। পাকিস্তানী সৈন্যের গুলি এসে লাগে হামিদের গায়ে। হামিদও গুলি করে, পাকিস্তানী সৈন্য ছিটকে পড়ে যায়। হামিদ এগিয়ে যায় ক্রল করে। সে এখন একদম মেশিনগান পোস্টের সামনে। সেখানে ততক্ষণে পোস্টের শেষ পাকিস্তানি সৈন্য এসে হেভি মেশিনগানের দখল নিয়েছে। হামিদ শরীরে গুলি নিয়ে তার যুদ্ধজীবনের শেষ গুলিটি করে। সেই গুলিতে মেশিনগান থেকে ছিটকে পড়ে পোস্টে থাকা শেষ পাকিস্তানী সৈন্য। থেমে যায় মেশিনগানের গুলি।
হামিদ জানে কেউ তাকে নিতে আসবে না নীচ থেকে। বরং পোস্টের ভেতরে কোন পাকিস্তানী সৈন্য বেঁচে থাকতে পারে। সে এগিয়ে গিয়ে মেশিনগান পোস্টে লাফিয়ে পড়ে, দেখে কেউ নেই বেঁচে। এটা দেখে হামিদের স্বস্তি হয়। কিন্তু তার শরীর ততক্ষণে নিস্তেজ হয়ে আসে। এক কদম চলবার শক্তিও আর নেই। সে হেলান দেয় পোস্টের দেয়ালে। মাথা হেলিয়ে দেয়। শীতের কুয়াশা ভেদ করে ভোরের আলো তখন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। হামিদ নিজ জন্মভূমিতে প্রাণ ভরে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস নেয়।
পরিশিষ্টঃ মেশিনগান পোস্ট নিস্তব্ধ হওয়াতে কোম্পানি কম্যান্ডার তিন প্লাটুনকেই নির্দেশ দেন পেছনে যেয়ে ক্যানালের ওপারে পজিশন নিতে। সবাই একে একে ফেরত গেল ফর্মিং আপ প্লেইসে। ডাক্তার আহতদের চিকিৎসা শুরু করলেন। সারা দিন চার্লি কোম্পানির সবাই বন্দুক তাক করে রাখল ফাঁড়ি বরাবর। অপেক্ষা করতে লাগলো পাকিস্তান আর্মির পাল্টা-আক্রমণের। কিন্তু পাকিস্তান আর্মি আর ফাঁড়ির বাইরে এলো না।
চিড়ে-গুড় আর নালার পানি খেয়ে সেখানে চার্লি কোম্পানির ১৬৯ মুক্তিযোদ্ধা তিনদিন পার করলো। সিপাহী হামিদুর রহমান তখনও নিথর পড়ে আছে মেশিনগান পোস্টের ভেতর। ৩১ তারিখ ইন্ডিয়ান আর্মির ৬১ মাউন্টেইন ব্রিগেড এসে পজিশন নেয় ফর্মিং আপ প্লেইসে। চালানো হয় আবার আক্রমন। এ যুদ্ধে দুই পক্ষেই হতাহতের ঘটনা ঘটে। আহত হন ব্রিগেড কম্যান্ডার ইয়াদব নিজে। নভেম্বরের ১ তারিখ সকালে ফর্মিং আপ প্লেইসে এসে পৌঁছায় ডিভিশনাল আর্টিলারি সাপোর্ট। শুরু করে বোমা বৃষ্টি। আধঘণ্টা শেলিং-এর পর চার্লি কোম্পানি কম্যান্ডার তিন প্লাটুনকে আদেশ দেন দ্রুত এগিয়ে যেতে। তারা এগিয়ে গিয়ে দখল নেয় ধলই সীমান্ত ফাঁড়িটি। লাইট মেশিনগান পোস্টের ভেতর থেকে বের করে হামিদুর রহমানের অর্ধগলিত দেহ।
হামিদুর রহমানকে সেই দিন বিকেলে আমবাসার হাতিমেরছড়া গ্রামে দাফন করা হয়।
১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার সিপাহী হামিদুর রহমানকে বীরশ্রেষ্ঠ পদক প্রদান করে।
তারা আছে কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সীমান্তে। সীমান্ত ফাঁড়িটি একটা টিলার উপরে।
অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে হামিদের ব্যাটালিয়ান এসেছে ত্রিপুরা রাজ্যের আমবাসা এলাকায়। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক মনে করেন সিলেটে মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা কম যার ফলে পাকিস্তান প্রশাসন অবাধে চা রপ্তানী করে বৈদেশিক অর্থ আয় করতে পারছে। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন এখান থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা যেন চা বাগানগুলোতে আঘাত হানে। সে জন্য তাদের ত্রিপুরার আমবাসায় আসা। এখান থেকে সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় পাকিস্তান আর্মির বিরুদ্ধে আক্রমণ পরিচালিত হবে। ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি থেকে একটি রাস্তা কমলগঞ্জ হয়ে শ্রীমঙ্গল এবং শ্রীমঙ্গল হয়ে সিলেটের অন্য সব এলাকায় যায়। এ কারণে ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি পাকিস্তান আর্মির কাছ থেকে দখল নেয়া গুরুত্বপূর্ণ। তাতে একটি বিস্তৃত এলাকার দ্বার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য উন্মুক্ত হবে। কিন্তু এ অঞ্চলে পাকবাহিনীর সবচেয়ে দুর্ভেদ্য ঘাঁটি এটা। দুই কোম্পানি সেনা এই ফাঁড়িতে নিয়োজিত রয়েছে। তারা এখানে শক্ত একটি রক্ষণব্যুহ গড়ে তুলেছে, দিয়েছে কাঁটাতার, গড়েছে কংক্রিটের বাঙ্কার ও পুঁতেছে মাইন। সীমান্ত ফাঁড়ির উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমে চা বাগান ও জঙ্গল। শুধু দক্ষিণ দিক একটু খোলা, যদিও কিছু বাঁশঝাড় আছে এখানে সেখানে এবং আছে একটি ক্যানাল যা ধলই নদী নামে পরিচিত।
ভোর চারটা বাজার দশ মিনিট আগে শুরু হবে মর্টার হামলা, চলবে চারটা পর্যন্ত, এরপর এগিয়ে যাবে পদাতিক বাহিনী – এই হলো প্ল্যান। প্রচলিত যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী কোন ঘাঁটি দখল করতে হলে রক্ষণাত্মক বাহিনীর চাইতে অন্তত তিনগুণ শক্তি নিয়ে আক্রমন করতে হয়; কিন্তু এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যায় কম। তবে রয়েছে আসীম মনোবল। সেই মনোবলের উপর ভরসা করে ফার্স্ট ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ঠিক করেছে ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি তারা দখল করবে। দায়িত্ব পড়েছে ব্যাটালিয়ানের সর্বকনিষ্ঠ অফিসার ক্যাপ্টেন কাইয়ুম চৌধুরীর চার্লি কোম্পানির উপর। সিপাহী হামিদ এই কোম্পানির একজন অদম্য যোদ্ধা, সৈনিক নাম্বার ৩৯৪৩০১৪।
হামিদের কোম্পানি কম্যান্ডার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দক্ষিণদিকের ক্যানালটি পার হয়েই আক্রমণ করবেন সীমান্ত ফাঁড়ি। ক্যানেলের ওপারে হবে তাদের ‘ফর্মিং আপ প্লেইস’। শুকনো মৌসুম হওয়াতে ক্যানালে পানি বেশী নেই। এই ক্যানাল থেকে সীমান্ত ফাঁড়ির দূরত্ব ৩০০ গজ। গত দুইদিন তিনি এই এলাকা রেকি করে গেছেন, রানার হিসেবে হামিদ সর্বক্ষণ সাথে ছিল। রেকি করে কোম্পানি কম্যান্ডার ঠিক করেছেন তিন দলে ভাগ হয়ে আক্রমন করবেন। তিনি তিনটি প্লাটুন ঠিক করেছেন – সাত, আট, নয়। সাত নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন থাকবে বামে, আট নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন থাকবে মাঝে ও নয় নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন থাকবে ডানে। তিনি থাকবেন আট নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুনে। মর্টার হামলার পর ও রিকয়েললেস রাইফেল থেকে ফায়ার করে বাঙ্কার ধ্বংস করার পর, কোম্পানি কামান্ডার চার্জ বলার সাথে সাথে তিন প্লাটুন দ্রুত এগিয়ে যাবে টার্গেট বরাবর।
২৭ তারিখ সকালে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এসেছিলেন আমবাসা ক্যাম্পে। সর্বাধিনায়ক এই অপারেশনের গুরুত্ব ও ঝুঁকি বোঝেন। তিনি ব্যাটালিয়ান কম্যান্ডার ও কোম্পানি কম্যান্ডারের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ফাইনাল অপারেশনাল প্ল্যানিং। ব্রিফ শুনে তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং চার্লি কোম্পানির সৈনিকদের সাথে কথা বলে তাদের উজ্জীবিত করেন। হামিদের এই প্রথম মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ককে দেখা। সে ব্যাটালিয়ানের কনিষ্ঠ সৈনিকদের একজন, বয়স ১৮। রাশভারী সর্বাধিনায়ককে দেখে সে পুলকিত হয়েছিল।
আজ কয়েক ধাপে তারা ফর্মিং আপ প্লেইসে এসে অবস্থান নিয়েছে। আমবাসার ক্যাম্প থেকে কমলপুর এসেছে রাত দশটায়। সংখ্যায় তারা ১৭০ জন। সেখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি এয়ারফিল্ড আছে। এয়ারফিল্ডের এক কোনায় পুরো কোম্পানিকে আবার যুদ্ধ পরিকল্পনা বুঝিয়ে দেয় এবং ব্যাটেল অর্ডারে ফল-ইন করায় কোম্পানি কম্যান্ডার। তারপর দলটি দুই মাইল হেঁটে টার্গেটের কাছে আসে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে ধলই নদী পার হয়ে ফর্মিং আপ প্লেইসে অবস্থান নিয়েছে তারা – সাত নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন বামে, আট নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন মাঝ বরাবর ও নয় নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন ডানে।
সিপাহী হামিদ প্রস্তুত। কোম্পানি কম্যান্ডার চার্জ বলার সাথে সাথে ছুটে এগিয়ে যাবে সে এবং সাথের সবাই। উদ্দেশ্য পাকিস্তান আর্মির কাছ থেকে ধলই সীমান্ত ফাঁড়ি দখল করা। সে কোম্পানি কম্যান্ডারের রানার। কম্যান্ডার ক্রল করে সামনে গেলে সে-ও সামনে যায়, বামে গেলে সে বামে যায়, ডানে গেলে ডানে যায়। তাদের অবস্থান থেকে সীমান্ত ফাঁড়ির দূরত্ব ৩০০ গজ।
সময় রাত ৩ টা ৫০ মিনিট। এইচ আওয়ার। পরিকল্পনা মোতাবেক মর্টার দিয়ে গোলা ছোঁড়া শুরু হলো। সুনসান রাতের নিস্তব্ধতা চুরমার হলো নিমিষেই। দশ মিনিট অনবরত সীমান্ত ফাঁড়ি বরাবর গোলা নিক্ষেপ হলো ফর্মিং আপ প্লেইস থেকে। রিকয়েললেস রাইফেল থেকে কয়েকটি গোলা মারা হলো ফাঁড়ির বাঙ্কার বরাবর। হিসাবে পাকিস্তান আর্মির ৩০-এ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের অনেক সৈন্যের হতাহত হবার কথা। কোম্পানি কম্যান্ডার এবার আদেশ দিলো- চার্জ! প্রত্যেকটি প্লাটুন এগিয়ে গেলো টার্গেট বরাবর। কিন্তু ১০০ গজ এগুবার পরই আট নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন ও নয় নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন আটকে গেলো কাদামাটিতে। পা দেবে গেল সবার, কেউ কেউ একটু এগিয়ে গেল কিন্তু পাকিস্তান আর্মির পেতে রাখা বাঁশের পাঞ্জিতে আটকে গেল তারা। সাত নম্বর প্লাটুন সীমান্ত ফাঁড়ির ১০০ গজের মধ্যে চলে গেল কিন্তু এর মধ্যে তাদের প্লাটুন কম্যান্ডার পাকিস্তানী আর্মির গুলিতে আহত হল। হিসেব হয়ে গেল ওলটপালট। সবাই কাদায় শুয়ে পড়তে বাধ্য হলো। উপর থেকে অনবরত গুলি আসছে। কিন্তু পাহাড়ের ঢালে শুয়ে থাকার কারণে গুলি মাথার বেশ উপর দিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের।
কোম্পানি কম্যান্ডার প্রমোদ গুনলেন। কোম্পানির ১৭০ জন সৈনিকের প্রাণ বাঁচা-মরার মাঝে দোদুল্যমান। সীমান্ত ফাঁড়ির ডান দিকে দুইটি আম গাছের ঠিক মাঝে এর মধ্যে পাকিস্তান আর্মি একটি লাইট মেশিনগান বসিয়েছে। মুক্তিবাহিনী ক্রল করে এগিয়ে গেলে একদম পাকিস্তান আর্মির মুখে পড়বে আর পিছিয়ে গেলে মেশিনগানের সহজ লক্ষে পরিণত হবে। নয় নম্বর ফরওয়ার্ড প্লাটুন চেষ্টা করলো লাইট মেশিনগান পোস্টটিকে আঘাত হানতে, কিন্তু রাতের অন্ধকারে আর গাছের পেছনে থাকাতে লক্ষ ভেদ হলো না। সময় গড়াতে লাগলো। কোম্পানি কম্যান্ডার বুঝলো তারা যা ভেবেছিল তার থেকে অনেক বেশী পাকিস্তানী সৈনিক সীমান্ত ফাঁড়িতে রয়েছে। এ জন্য মর্টারের আঘাতে কিছু হতাহত হলেও অন্যরা এসে বাঙ্কার ও মেশিনগান পোস্টে অবস্থান নিয়েছে। একটু পর ভোর হবে। তখন পাকিস্তান আর্মি ফাঁড়ি থেকে বেরিয়ে এসে পাল্টা-আক্রমণ করবে, কিছুই করার উপায় থাকবে না মুক্তিবাহিনীর। কোম্পানি কম্যান্ডার হামিদকে কাছে ডাকলো। বললো – তুমি পারবে মেশিনগান পোস্টে গ্রেনেড ছুড়তে? কম্যান্ডারের কথা শেষ কবার আগেই হামিদ উত্তর দেয় – “পারবো স্যার।”
হামিদ পরিস্থিতি বোঝে। সে বোঝে ভোরের আলো ফুটবার আগে যদি মেশিনগান পোস্ট নিষ্ক্রিয় করা না যায় তাহলে পুরো কোম্পানির সবাই মারা পড়বে। তার কাছে আছে একটি গ্রেনেড। সে আর একটি চেয়ে নেয়। দুটি গ্রেনেড নিয়ে সে ক্রল করে এগিয়ে যেতে থাকে মেশিনগান পোস্ট বরাবর। তখনো থেকে থেকে গুলি আসছে। বাঁশের পাঞ্জি ও মাইন এড়িয়ে কাদামাটির ভেতরে ক্রল করা প্রায় অসম্ভব, কিন্তু সেপাহী হামিদ ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। ভোরের আলো তখন ফুটতে শুরু করেছে কিন্তু কুয়াশায় তা পূর্ণ রুপ নেয়নি। হামিদ ক্রল করে করে এসে পড়েছে ২০ গজের মধ্যে। মেশিনগান পোস্টের অবয়ব সে দেখতে পাচ্ছে। সেখানে আছে বেশ কজন পাকিস্তানী সৈন্য। শুয়ে থেকেই হামিদ হাতের রাইফেল মাটিতে রাখে। বের করে গ্রেনেড। পিন দাঁত দিয়ে খুলে ছুঁড়ে দেয় মেশিনগান পোস্ট বরাবর। গ্রেনেড গিয়ে লাগে আম গাছে। হামিদ এবার দ্বিতীয় গ্রেনেডটির পিন দাঁত দিয়ে খুলে ছুঁড়ে মারে। এবার গ্রেনেড আঘাত হানে পোস্টের ভেতর। আর্তনাদ করে উঠে পাকিস্তানী সৈন্যরা।
কিন্তু সবাই হতাহত হয় না। একজন রাইফেল নিয়ে বেরিয়ে আসে পোস্ট থেকে। হামিদ ততক্ষণে তার রাইফেল হাতে নিয়ে নিয়েছে। পাকিস্তানী সৈন্যের গুলি এসে লাগে হামিদের গায়ে। হামিদও গুলি করে, পাকিস্তানী সৈন্য ছিটকে পড়ে যায়। হামিদ এগিয়ে যায় ক্রল করে। সে এখন একদম মেশিনগান পোস্টের সামনে। সেখানে ততক্ষণে পোস্টের শেষ পাকিস্তানি সৈন্য এসে হেভি মেশিনগানের দখল নিয়েছে। হামিদ শরীরে গুলি নিয়ে তার যুদ্ধজীবনের শেষ গুলিটি করে। সেই গুলিতে মেশিনগান থেকে ছিটকে পড়ে পোস্টে থাকা শেষ পাকিস্তানী সৈন্য। থেমে যায় মেশিনগানের গুলি।
হামিদ জানে কেউ তাকে নিতে আসবে না নীচ থেকে। বরং পোস্টের ভেতরে কোন পাকিস্তানী সৈন্য বেঁচে থাকতে পারে। সে এগিয়ে গিয়ে মেশিনগান পোস্টে লাফিয়ে পড়ে, দেখে কেউ নেই বেঁচে। এটা দেখে হামিদের স্বস্তি হয়। কিন্তু তার শরীর ততক্ষণে নিস্তেজ হয়ে আসে। এক কদম চলবার শক্তিও আর নেই। সে হেলান দেয় পোস্টের দেয়ালে। মাথা হেলিয়ে দেয়। শীতের কুয়াশা ভেদ করে ভোরের আলো তখন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। হামিদ নিজ জন্মভূমিতে প্রাণ ভরে জীবনের শেষ নিঃশ্বাস নেয়।
পরিশিষ্টঃ মেশিনগান পোস্ট নিস্তব্ধ হওয়াতে কোম্পানি কম্যান্ডার তিন প্লাটুনকেই নির্দেশ দেন পেছনে যেয়ে ক্যানালের ওপারে পজিশন নিতে। সবাই একে একে ফেরত গেল ফর্মিং আপ প্লেইসে। ডাক্তার আহতদের চিকিৎসা শুরু করলেন। সারা দিন চার্লি কোম্পানির সবাই বন্দুক তাক করে রাখল ফাঁড়ি বরাবর। অপেক্ষা করতে লাগলো পাকিস্তান আর্মির পাল্টা-আক্রমণের। কিন্তু পাকিস্তান আর্মি আর ফাঁড়ির বাইরে এলো না।
চিড়ে-গুড় আর নালার পানি খেয়ে সেখানে চার্লি কোম্পানির ১৬৯ মুক্তিযোদ্ধা তিনদিন পার করলো। সিপাহী হামিদুর রহমান তখনও নিথর পড়ে আছে মেশিনগান পোস্টের ভেতর। ৩১ তারিখ ইন্ডিয়ান আর্মির ৬১ মাউন্টেইন ব্রিগেড এসে পজিশন নেয় ফর্মিং আপ প্লেইসে। চালানো হয় আবার আক্রমন। এ যুদ্ধে দুই পক্ষেই হতাহতের ঘটনা ঘটে। আহত হন ব্রিগেড কম্যান্ডার ইয়াদব নিজে। নভেম্বরের ১ তারিখ সকালে ফর্মিং আপ প্লেইসে এসে পৌঁছায় ডিভিশনাল আর্টিলারি সাপোর্ট। শুরু করে বোমা বৃষ্টি। আধঘণ্টা শেলিং-এর পর চার্লি কোম্পানি কম্যান্ডার তিন প্লাটুনকে আদেশ দেন দ্রুত এগিয়ে যেতে। তারা এগিয়ে গিয়ে দখল নেয় ধলই সীমান্ত ফাঁড়িটি। লাইট মেশিনগান পোস্টের ভেতর থেকে বের করে হামিদুর রহমানের অর্ধগলিত দেহ।
হামিদুর রহমানকে সেই দিন বিকেলে আমবাসার হাতিমেরছড়া গ্রামে দাফন করা হয়।
১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার সিপাহী হামিদুর রহমানকে বীরশ্রেষ্ঠ পদক প্রদান করে।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধ |
তথ্যসূত্রঃ>>>
রক্তে ভেজা একাত্তর – মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা – মেজর (অবঃ) এম এ কাইয়ুম চৌধুরী পি এস সি
কথোপকথন – মেজর (অবঃ) এম এ কাইয়ুম চৌধুরী পি এস সি
রক্তে ভেজা একাত্তর – মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা – মেজর (অবঃ) এম এ কাইয়ুম চৌধুরী পি এস সি
কথোপকথন – মেজর (অবঃ) এম এ কাইয়ুম চৌধুরী পি এস সি
No comments