গ্রামবাসীর সংঘর্ষ-বিচারহীনতা নৈরাজ্য আনে

শীতকালে বাতুলতা বৃদ্ধি পায় বলে গ্রামাঞ্চলে জনশ্রুতি রয়েছে। এই ঋতুতে স্বাভাবিক মানুষেরও মেজাজ ঊর্ধ্বগামী হয় কি-না, তা অবশ্য জানা যায় না। কিন্তু রোববারের সমকালে একই সঙ্গে চার জেলায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পড়ে কারও এমন ধারণা হলেও হতে পারে। দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রের এমন যূথবদ্ধ ব্যবহার এর আগেও বিভিন্ন এলাকায় আমরা দেখেছি। আমাদের দেশে তুচ্ছ কারণে দলবদ্ধ মারামারির নজির বলা চলে অহরহ। ফুটবল খেলার মতো প্রীতিকর


আয়োজনেও পান থেকে চুন খসা নিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে টানা কয়েক দিন সংঘর্ষ চলার ঘটনা সংবাদ শিরোনাম হয়। এ ক্ষেত্রে ন্যায্যতার চেয়ে গোষ্ঠীগত 'সম্মান' রক্ষাই মুখ্য বিবেচ্য। গত অক্টোবরেও সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ ও সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ১৫ গ্রামের বাসিন্দার মধ্যে গণসংঘর্ষে শতাধিক আহত ও একাধিক নিহতের ঘটনা ঘটেছিল। এবারেরগুলোও যথেষ্ট গুরুতর। জামালপুরের বকশীগঞ্জ, ময়মনসিংহের নান্দাইল, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল এবং নওগাঁর ধামইরহাটের এসব অঘটনে দু'জন নিহত ও ২০ জনের বেশি আহত হয়েছে। এই চার জনপদে সংঘর্ষের কারণ অবশ্য 'তুচ্ছ' নয়। চারটি সংঘর্ষের নেপথ্যেই রয়েছে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ। বস্তুত যত দিন যাচ্ছে স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত জটিলতা যে বেড়ে চলছে, এই চারটি সংঘর্ষ তারও সূচক হতে পারে। এটাও অনুমান করা যেতে পারে, গ্রহণযোগ্য বিচার ও সালিশি ব্যবস্থা থাকলে এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা কমত। আমরা দেখছি, ভূমি অফিসগুলোতে দায়-দাবি সংক্রান্ত ফাইল বছরের পর বছর আটকে থাকে। সেখানে ঘুষ লেনদেনও এখন ওপেন সিক্রেট। আবার উচ্চ ও নিম্ন আদালতেও জমছে মামলার পাহাড়। ভূমি সংক্রান্ত সেবা ও বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থায় স্থবিরতা যদি বাড়তেই থাকে, এ ধরনের সংঘর্ষ নতুন নতুন মাত্রা পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই বলে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা অগ্রাহ্য করার অবকাশ নেই। দশকের পর দশক ধরে জমা ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা কাটিয়ে উঠতে নিশ্চয়ই দীর্ঘ সময় প্রয়োজন হবে। তার আগ পর্যন্ত যে কোনো সংঘর্ষের ঘটনাই দমন করতে হবে কড়া হস্তে।

No comments

Powered by Blogger.