অতঃপর পেরি
কেটি পেরি নিজের সম্পর্কে মজা করে বলেন, ‘আমি নিরামিষাশী তবে চালাই হাইব্রিড!’ খাবারের বেলায় কেবল নিরামিষাশী হলেও জীবনের বহু স্বাদের সঙ্গেই পরিচিত পেরি। কী গানের বেলায় কী জীবনযাপন কিংবা সম্পর্কের রসায়নে। ২০১০ সালের ২৩ অক্টোবর বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন তিনি।
আক্ষরিক অর্থেই বিয়ের পিঁড়িতে! হিন্দু ধর্মের যাবতীয় আচার পালন করেই গাটছড়া বাঁধলেন রাসেল ব্রান্ডের সঙ্গে, ভারতের রাজস্থানে! এই নিয়ে কী তুমুল আলোচনাই না হলো বিশ্বের প্রচারমাধ্যমগুলোতে। এরপর তাদের বর্ণিল মধুচন্দ্রিমা, তারকাদীপ্ত জীবনযাপন, পাশাপাশি ক্যারিয়ারের পথে মসৃণ হাঁটা-চলা—সব মিলিয়ে রঙধনুর সাত রং যেন ঘিরে ছিল কেটি পেরিকে! যেমনটা দেখা যায় তাঁর চুলের অরণ্যে। এই দেখা যায় নীল, এই দেখা গেল গোলাপি, কদিন বাদেই হয়তো একদম মেঘ কালো চুল নিয়ে আবির্ভূত পেরি।
অথচ জীবনের শুরুটা ততটা বর্ণিল ছিল না তাঁর। ছেলেবেলায় কেবল গির্জাতেই গান করতেন, শুনতেন কেবল ধর্মীয় গান। ২০০১ সালে, নিজের ১৭তম জন্মদিনের দুদিন আগে একটা অ্যালবাম বাজারে ছেড়েছিলেন পেরি। অ্যালবামের গানগুলো ছিল ধর্মীয় কিছু গান দিয়ে সাজানো। হতাশ হতে হয়েছিল অ্যালবামের কাটতি দেখে। বুঝে নিয়েছিলেন, নতুন পথে হাঁটা ছাড়া গতি নেই। ২০০৭ সালে সেটাই করলেন, কেটি হাডসন নামটা পাল্টে নিজেকে সবার সামনে মেলে ধরলেন কেটি পেরি নামে। ‘ইউ আর সো গে’ নামের একটা গান মুক্তি পেল অনলাইনে। উল্লেখযোগ্য কোনো চার্টে নাম না লেখাতে পারলেও, মানুষ গানটা শুনল এবং আলোচনা করল। ব্যস, তাতেই যা হওয়ার হলো। পরের বছরই আরেক আলোচিত গান ‘আই কিসড আ গার্ল’ মুক্তি পেল ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। বিলবোর্ড হট হান্ড্রেডে এই গান দাপটের সঙ্গে অবস্থান করল পরপর সাত সপ্তাহ। গানটির কথা নিয়ে চলল তুমুল সমালোচনাও!
পরের বছরই মুক্তি পেল ‘ওয়ান অব দ্য বয়েজ’ অ্যালবামটি। ২০০৮ সালে গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বিক্রিত অ্যালবামের তালিকায় এটি দখল করে নিল ৩৩তম আসনটি। এর পরের বছরই পেরি দেখলেন বিশাল এক সাফল্যের মুখ। ‘বিলবোর্ড’ ম্যাগাজিন এক দশকে (২০০০-২০০৯) সবচেয়ে বেশি বিক্রিত মিউজিক অ্যালবাম আর্টিস্টের তালিকায় পেরিকে রাখল ৫১তম ঘরে! এত অল্প সময়ে এত বড় প্রাপ্তি কম শিল্পীর বরাতেই জুটেছে তার আগে। নিয়েলসেন সাউন্ডস্ক্যান নামের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এক প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে, কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই এ পর্যন্ত পেরির ডিজিটাল ট্র্যাক বিক্রি হয়েছে ৩৭,৬২০,০০০ মিলিয়নের বেশি! আর বিশ্বজুড়ে তাঁর অ্যালবাম মানুষ কিনেছে ১১ মিলিয়ন কপি! কেবল বিক্রিই তো নয়, গ্রেমিসহ আরও বেশ কিছু নামজাদা সম্মাননা-পুরস্কার ঘরে তুলেছেন এই তারকা। তবে সবচেয়ে বড় যে প্রাপ্তি সেটা আর কোনো নারী শিল্পী তাঁর আগে পায়নি কখনো। ২০১১ সালে ‘টিনেজ ড্রিম’ নামের অ্যালবামটি এনে দিয়েছিল সেই স্বপ্নময় প্রাপ্তিটা। ওই অ্যালবামটির পাঁচটি গান ছিল বিলবোর্ড হট হান্ড্রেড তালিকায়। বিলবোর্ডের ৫৩ বছরের ইতিহাসে অমন কীর্তি ছিল কেবল মাইকেল জ্যাকসনেরই।
তবে এত যে সাফল্য, এত যে রং, তাতে কালো রঙের পোচ দিয়ে গেলেন রাসেল ব্রান্ড। ব্রিটিশ এই কমেডিয়ানের সঙ্গে পেরি ঘর করলেন মোটে ১৪ মাস। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর একটা তালাকপত্র পাঠিয়েই পেরির রঙিন ভুবনে কালো রং মেখে দিলেন রাসেল। অথচ শুরুটা কী নাটকীয়ই না ছিল! ২০০৯ সালের কথা। এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডের সঞ্চালক ছিলেন রাসেল। পেরির সঙ্গে সেদিন তাঁর দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। মজা করে বলেছিলেন, ‘কেটি কোনো অ্যাওয়ার্ড জেতেনি, তো এখন তাঁর জন্য একটা কাঁধ দরকার, যেখানে সে চোখের পানি ফেলতে পারে। এদিকে আমি যে হোটেলে উঠেছি, সেই হোটেলেই উঠেছে ও। তো এক দিক দিয়ে আজ রাতে আমিই সত্যিকারের বিজয়ী!’
শেষমেশ বিচ্ছেদ ডেকে এনেও কি নিজেকে বিজয়ীর আসনে বসাতে চেয়েছেন রাসেল? ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর পেরির যা মানসিক অবস্থা ছিল, তাতে করে অবশ্য সেটাই মনে হয়েছিল। তবে গেল ২৭ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে দেখা গেল পেরিকে। মুখে ছিল সেই চিরচেনা হাসি। তার আগে হাইতির ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গান গেয়ে এসেছেন ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়ায়। এদিকে ‘টিনেজ ড্রিমের’ দ্য ওয়ান দ্যাট গট অ্যাওয়ে গানটি এখনো দাপটের সঙ্গে দখল করে আছে বিলবোর্ডে পঞ্চম আসনটি। সবমিলিয়ে কেটি পেরি পারছেন, পারছেন পুরোনো রঙের ভুবনে ফিরে যেতে।
মাহফুজ রহমান
সূত্র: বিলবোর্ড, উইকিপিডিয়া, ট্রিবিউন এবং কেটি পেরির ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
অথচ জীবনের শুরুটা ততটা বর্ণিল ছিল না তাঁর। ছেলেবেলায় কেবল গির্জাতেই গান করতেন, শুনতেন কেবল ধর্মীয় গান। ২০০১ সালে, নিজের ১৭তম জন্মদিনের দুদিন আগে একটা অ্যালবাম বাজারে ছেড়েছিলেন পেরি। অ্যালবামের গানগুলো ছিল ধর্মীয় কিছু গান দিয়ে সাজানো। হতাশ হতে হয়েছিল অ্যালবামের কাটতি দেখে। বুঝে নিয়েছিলেন, নতুন পথে হাঁটা ছাড়া গতি নেই। ২০০৭ সালে সেটাই করলেন, কেটি হাডসন নামটা পাল্টে নিজেকে সবার সামনে মেলে ধরলেন কেটি পেরি নামে। ‘ইউ আর সো গে’ নামের একটা গান মুক্তি পেল অনলাইনে। উল্লেখযোগ্য কোনো চার্টে নাম না লেখাতে পারলেও, মানুষ গানটা শুনল এবং আলোচনা করল। ব্যস, তাতেই যা হওয়ার হলো। পরের বছরই আরেক আলোচিত গান ‘আই কিসড আ গার্ল’ মুক্তি পেল ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। বিলবোর্ড হট হান্ড্রেডে এই গান দাপটের সঙ্গে অবস্থান করল পরপর সাত সপ্তাহ। গানটির কথা নিয়ে চলল তুমুল সমালোচনাও!
পরের বছরই মুক্তি পেল ‘ওয়ান অব দ্য বয়েজ’ অ্যালবামটি। ২০০৮ সালে গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বিক্রিত অ্যালবামের তালিকায় এটি দখল করে নিল ৩৩তম আসনটি। এর পরের বছরই পেরি দেখলেন বিশাল এক সাফল্যের মুখ। ‘বিলবোর্ড’ ম্যাগাজিন এক দশকে (২০০০-২০০৯) সবচেয়ে বেশি বিক্রিত মিউজিক অ্যালবাম আর্টিস্টের তালিকায় পেরিকে রাখল ৫১তম ঘরে! এত অল্প সময়ে এত বড় প্রাপ্তি কম শিল্পীর বরাতেই জুটেছে তার আগে। নিয়েলসেন সাউন্ডস্ক্যান নামের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এক প্রতিষ্ঠানের জরিপে দেখা গেছে, কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই এ পর্যন্ত পেরির ডিজিটাল ট্র্যাক বিক্রি হয়েছে ৩৭,৬২০,০০০ মিলিয়নের বেশি! আর বিশ্বজুড়ে তাঁর অ্যালবাম মানুষ কিনেছে ১১ মিলিয়ন কপি! কেবল বিক্রিই তো নয়, গ্রেমিসহ আরও বেশ কিছু নামজাদা সম্মাননা-পুরস্কার ঘরে তুলেছেন এই তারকা। তবে সবচেয়ে বড় যে প্রাপ্তি সেটা আর কোনো নারী শিল্পী তাঁর আগে পায়নি কখনো। ২০১১ সালে ‘টিনেজ ড্রিম’ নামের অ্যালবামটি এনে দিয়েছিল সেই স্বপ্নময় প্রাপ্তিটা। ওই অ্যালবামটির পাঁচটি গান ছিল বিলবোর্ড হট হান্ড্রেড তালিকায়। বিলবোর্ডের ৫৩ বছরের ইতিহাসে অমন কীর্তি ছিল কেবল মাইকেল জ্যাকসনেরই।
তবে এত যে সাফল্য, এত যে রং, তাতে কালো রঙের পোচ দিয়ে গেলেন রাসেল ব্রান্ড। ব্রিটিশ এই কমেডিয়ানের সঙ্গে পেরি ঘর করলেন মোটে ১৪ মাস। গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর একটা তালাকপত্র পাঠিয়েই পেরির রঙিন ভুবনে কালো রং মেখে দিলেন রাসেল। অথচ শুরুটা কী নাটকীয়ই না ছিল! ২০০৯ সালের কথা। এমটিভি ভিডিও মিউজিক অ্যাওয়ার্ডের সঞ্চালক ছিলেন রাসেল। পেরির সঙ্গে সেদিন তাঁর দ্বিতীয় সাক্ষাৎ। মজা করে বলেছিলেন, ‘কেটি কোনো অ্যাওয়ার্ড জেতেনি, তো এখন তাঁর জন্য একটা কাঁধ দরকার, যেখানে সে চোখের পানি ফেলতে পারে। এদিকে আমি যে হোটেলে উঠেছি, সেই হোটেলেই উঠেছে ও। তো এক দিক দিয়ে আজ রাতে আমিই সত্যিকারের বিজয়ী!’
শেষমেশ বিচ্ছেদ ডেকে এনেও কি নিজেকে বিজয়ীর আসনে বসাতে চেয়েছেন রাসেল? ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর পেরির যা মানসিক অবস্থা ছিল, তাতে করে অবশ্য সেটাই মনে হয়েছিল। তবে গেল ২৭ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানের উপস্থাপক হিসেবে দেখা গেল পেরিকে। মুখে ছিল সেই চিরচেনা হাসি। তার আগে হাইতির ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য গান গেয়ে এসেছেন ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়ায়। এদিকে ‘টিনেজ ড্রিমের’ দ্য ওয়ান দ্যাট গট অ্যাওয়ে গানটি এখনো দাপটের সঙ্গে দখল করে আছে বিলবোর্ডে পঞ্চম আসনটি। সবমিলিয়ে কেটি পেরি পারছেন, পারছেন পুরোনো রঙের ভুবনে ফিরে যেতে।
মাহফুজ রহমান
সূত্র: বিলবোর্ড, উইকিপিডিয়া, ট্রিবিউন এবং কেটি পেরির ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
No comments