নতুন টাকা নিয়ে হ-য-ব-র-ল by হামিদ বিশ্বাস
ঈদে
নতুন টাকা বিতরণ নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের
সংশ্লিষ্ট শাখা এবারের ঈদে নতুন টাকা ছাড়া নিয়ে শুরু থেকেই দ্বিধায় ছিল।
শুরুতে অনীহা থাকলেও শেষ মুহূর্তে টাকা ছাপানোরও উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে সময়
মতো টাকা না ছাপায় এবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী টাকা সরবরাহ
করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে গ্রাহকদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে বিপাকে
পড়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এছাড়া, নতুন নোটের সঙ্গে কয়েন নেয়ার শর্ত
দেয়ায় গ্রাহকরা নতুন টাকা না নিয়েই ক্ষুব্ধ হয়ে ফিরছেন। এদিকে বাংলাদেশ
ব্যাংকে নতুন নোট দেয়ার বুথগুলোতেও চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। মতিঝিল অফিসে ৬
থেকে ৭টি কাউন্টারে টাকা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ টাকা যাচ্ছে দালালের
পকেটে। দালালের দাপটে কোন সাধারণ মানুষ টাকা নিতে পারছে না। আবার দালালদের
সহযোগিতা করছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী।
যারা গলায় ব্যাংকের ফিতা লাগিয়ে টাকা বের করে নিচ্ছেন। বিনিময়ে পাচ্ছেন
কমিশন। অথচ সাধারণ মানুষ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
নতুন টাকার চাহিদা দুই ঈদে বেড়ে যায়। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি বছর নতুন টাকা বিনিময়ের বিশেষ সুযোগ রাখে। এবারও বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফে ২২ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়া হয়। যদিও ঘোষণায় ছিল নানা নাটকীয়তা। যা আসতেও কেটে যায় রমজানের প্রথম সপ্তাহ। ফলে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী আর নোট সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। একটি বেসরকারি ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার অভিযোগ করে বলেন, মাত্র ৬ লাখ টাকার নতুন নোট পেয়েছি। যা গত বছর ছিল ২৮ লাখ টাকা। চরম দুশ্চিন্তায় থাকা ওই ব্যাংকার বলেন, প্রতিদিন গ্রাহকের সঙ্গে মনোমালিন্য হচ্ছে। তিনি বলেন, সামান্য টাকা দিয়ে গ্রাহকের মন রক্ষা করা যাচ্ছে না। আবার যে টাকা দেয়া হয়েছে তার এক- তৃতীয়াংশ কয়েন। যার চাহিদা একদমই নেই। তবুও বাংলাদেশ ব্যাংক চাপিয়ে দিচ্ছে বলে তার অভিযোগ। অপর একটি বেসরকারি ব্যাংকের কাওরান বাজার শাখার প্রধান অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া নতুন নোটের প্যাকেজ দৈনিক চাহিদা ৩০০টি। কিন্তু সংকটের কারণে দৈনিক ৮০টির বেশি দেয়া যাচ্ছে না। এতে গ্রাহকরা মন খারাপ করে চলে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বলেন, ২২ হাজার কোটি টাকা বিনিময় করা হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক সব নতুন টাকা চাইলে তো আর দেয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, রাত তিনটা পর্যন্ত লেনদেন করে যাচ্ছি; তবুও অভিযোগ। কিছুই করার নেই। দালালের মাধ্যমে টাকা বাইরে চলে যাওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, শুনেছি। হয় লাইনে দাঁড়িয়ে না হয় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে এ টাকা বের হচ্ছে। ধরা পড়লে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিময় হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরাসরি কাউন্টারের মাধ্যমে এসব টাকা দেয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে গাজীপুরের দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমে ভেবেছে নতুন টাকার পরিবর্তে কয়েন ছাড়বে। যে পরিমাণ কয়েন আছে তা আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরেও শেষ হবে না। সে কারণে সময় মতো নতুন টাকা ছাপানোর অর্ডার দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সাবেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, নতুন টাকা চেয়েও পাইনি। কারণ নতুন টাকার সংকট। ছাপানো হয়নি। এর জন্য সংশ্লিষ্ট তিন ডিপার্টমেন্ট দায়ী। তাদের কাজের অভিজ্ঞতা বা আন্তরিকতা কিছুই নেই। অতীতে এমন পরিস্থিতির মুখে কোন গ্রাহক পড়েনি। বিশেষত দুই ঈদকে ঘিরে মানুষের আনন্দের শেষ নেই। আর এই আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে প্রয়োজন নতুন টাকা। সে আনন্দ মানুষ এবার পাবে না। কারণ একদিকে নতুনের মোড়কে পুরোনো টাকা অন্যদিকে দেয়া হবে প্রচুর কয়েন। যা বহনেও অসুবিধা বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, নতুন-পুরানো কোন কথা নয়, পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা ছাপানো আছে এবং দেয়া হচ্ছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, কয়েন নিয়ে বেকায়দায় পড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ভেবেছিল এবার নতুন টাকা না ছাপিয়ে কয়েন দেয়া হবে। এসব কয়েন দীর্ঘ দিন সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের উপর চাপিয়ে দিলেও ট্রানজেকশন ভাল যাচ্ছে না। গ্রাহক না নেয়ার কারণে ব্যাংকও কয়েন নিতে অনীহা প্রকাশ করছে। ঈদ এলে টাকার চাহিদা বাড়ে। সে সুযোগটি কাজে লাগাতে চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সার্বিক চাপের মুখে তাদের সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়। সে কারণে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ২রা জুলাই থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৮টি ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে ১ ও ২ টাকার কয়েন থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকার নোট পর্যন্ত ছাড়া শুরু হয়। কিন্তু বর্তমানে বেশির ভাগ ব্যাংক নতুন টাকার সংকট দেখিয়ে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে গ্রাহক টাকা না পেলেও বাইরে চলছে নতুন টাকার রমরমা ব্যবসা। এ ধরনের ব্যবসা বেশি চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে। এছাড়া, খোলা বাজারের মধ্যে গুলিস্তান বিখ্যাত। সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, ১০ টাকার এক বান্ডিলে থাকে ১০০০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ১১২০ টাকা। ২০ টাকার এক বান্ডিলে থাকে ২০০০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ২১০০ টাকা। ৫ টাকার এক বান্ডিলে থাকে ৫০০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা। ২ টাকার এক বান্ডিলে থাকে ২০০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা। সেনাকল্যাণের সামনে নতুন টাকা বিক্রেতা আছিয়া খাতুন বলেন, ঈদে বিক্রি বেড়েছে। দৈনিক তার বিক্রি হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। কোথায় পান নতুন টাকা-জানতে চাইলে আছিয়া বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ টাকা দেন। তাদেরকে কিছু কমিশন দিতে হয় বলে জানান আছিয়া।
নতুন টাকার চাহিদা দুই ঈদে বেড়ে যায়। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি বছর নতুন টাকা বিনিময়ের বিশেষ সুযোগ রাখে। এবারও বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফে ২২ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়া হয়। যদিও ঘোষণায় ছিল নানা নাটকীয়তা। যা আসতেও কেটে যায় রমজানের প্রথম সপ্তাহ। ফলে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী আর নোট সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। একটি বেসরকারি ব্যাংকের সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার অভিযোগ করে বলেন, মাত্র ৬ লাখ টাকার নতুন নোট পেয়েছি। যা গত বছর ছিল ২৮ লাখ টাকা। চরম দুশ্চিন্তায় থাকা ওই ব্যাংকার বলেন, প্রতিদিন গ্রাহকের সঙ্গে মনোমালিন্য হচ্ছে। তিনি বলেন, সামান্য টাকা দিয়ে গ্রাহকের মন রক্ষা করা যাচ্ছে না। আবার যে টাকা দেয়া হয়েছে তার এক- তৃতীয়াংশ কয়েন। যার চাহিদা একদমই নেই। তবুও বাংলাদেশ ব্যাংক চাপিয়ে দিচ্ছে বলে তার অভিযোগ। অপর একটি বেসরকারি ব্যাংকের কাওরান বাজার শাখার প্রধান অভিযোগ করে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া নতুন নোটের প্যাকেজ দৈনিক চাহিদা ৩০০টি। কিন্তু সংকটের কারণে দৈনিক ৮০টির বেশি দেয়া যাচ্ছে না। এতে গ্রাহকরা মন খারাপ করে চলে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভংকর সাহা বলেন, ২২ হাজার কোটি টাকা বিনিময় করা হচ্ছে। কিন্তু ব্যাংক সব নতুন টাকা চাইলে তো আর দেয়া সম্ভব নয়। তিনি বলেন, রাত তিনটা পর্যন্ত লেনদেন করে যাচ্ছি; তবুও অভিযোগ। কিছুই করার নেই। দালালের মাধ্যমে টাকা বাইরে চলে যাওয়ার বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, শুনেছি। হয় লাইনে দাঁড়িয়ে না হয় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে এ টাকা বের হচ্ছে। ধরা পড়লে উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিনিময় হয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সরাসরি কাউন্টারের মাধ্যমে এসব টাকা দেয়া হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে গাজীপুরের দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমে ভেবেছে নতুন টাকার পরিবর্তে কয়েন ছাড়বে। যে পরিমাণ কয়েন আছে তা আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরেও শেষ হবে না। সে কারণে সময় মতো নতুন টাকা ছাপানোর অর্ডার দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সাবেক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, নতুন টাকা চেয়েও পাইনি। কারণ নতুন টাকার সংকট। ছাপানো হয়নি। এর জন্য সংশ্লিষ্ট তিন ডিপার্টমেন্ট দায়ী। তাদের কাজের অভিজ্ঞতা বা আন্তরিকতা কিছুই নেই। অতীতে এমন পরিস্থিতির মুখে কোন গ্রাহক পড়েনি। বিশেষত দুই ঈদকে ঘিরে মানুষের আনন্দের শেষ নেই। আর এই আনন্দকে বাড়িয়ে দিতে প্রয়োজন নতুন টাকা। সে আনন্দ মানুষ এবার পাবে না। কারণ একদিকে নতুনের মোড়কে পুরোনো টাকা অন্যদিকে দেয়া হবে প্রচুর কয়েন। যা বহনেও অসুবিধা বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, নতুন-পুরানো কোন কথা নয়, পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা ছাপানো আছে এবং দেয়া হচ্ছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, কয়েন নিয়ে বেকায়দায় পড়া বাংলাদেশ ব্যাংক ভেবেছিল এবার নতুন টাকা না ছাপিয়ে কয়েন দেয়া হবে। এসব কয়েন দীর্ঘ দিন সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের উপর চাপিয়ে দিলেও ট্রানজেকশন ভাল যাচ্ছে না। গ্রাহক না নেয়ার কারণে ব্যাংকও কয়েন নিতে অনীহা প্রকাশ করছে। ঈদ এলে টাকার চাহিদা বাড়ে। সে সুযোগটি কাজে লাগাতে চেয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে সার্বিক চাপের মুখে তাদের সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়। সে কারণে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গত ২রা জুলাই থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৮টি ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে ১ ও ২ টাকার কয়েন থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকার নোট পর্যন্ত ছাড়া শুরু হয়। কিন্তু বর্তমানে বেশির ভাগ ব্যাংক নতুন টাকার সংকট দেখিয়ে গ্রাহকদের ফিরিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে গ্রাহক টাকা না পেলেও বাইরে চলছে নতুন টাকার রমরমা ব্যবসা। এ ধরনের ব্যবসা বেশি চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সেনাকল্যাণ ভবনের সামনে। এছাড়া, খোলা বাজারের মধ্যে গুলিস্তান বিখ্যাত। সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, ১০ টাকার এক বান্ডিলে থাকে ১০০০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ১১২০ টাকা। ২০ টাকার এক বান্ডিলে থাকে ২০০০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ২১০০ টাকা। ৫ টাকার এক বান্ডিলে থাকে ৫০০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা। ২ টাকার এক বান্ডিলে থাকে ২০০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকা। সেনাকল্যাণের সামনে নতুন টাকা বিক্রেতা আছিয়া খাতুন বলেন, ঈদে বিক্রি বেড়েছে। দৈনিক তার বিক্রি হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। কোথায় পান নতুন টাকা-জানতে চাইলে আছিয়া বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ টাকা দেন। তাদেরকে কিছু কমিশন দিতে হয় বলে জানান আছিয়া।
No comments