রাজনের জন্য কাঁদছে বাংলাদেশ
কাঁদছে
বাংলাদেশ। ক্ষুব্ধ, স্তব্ধ পুরো দেশবাসী। শিশু সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে
হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে বাংলাদেশীরা। রাজপথে নেমে এর ন্যায়বিচার
দাবি করছে তারা। ১৩ বছরের শিশু রাজন হত্যার ঘটনা এভাবেই উঠে এসেছে বিশ্ব
গণমাধ্যমে। বিবিসির খবরে বলা হয়, রাজন হত্যার প্রতিবাদে পুরো সিলেটজুড়ে
চলছে প্রতিবাদ। হাজার হাজার বাংলাদেশী ন্যায়বিচারের জোর দাবি জানাচ্ছে।
টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৩ বছরের সামিউলের নির্মম হত্যার পর
বাংলাদেশ জুড়ে প্রতিবাদ দানা বেঁধে উঠেছে। সিলেটে রাজপথে নেমেছে শত শত
মানুষ। ময়নাতদন্তে রাজনের শরীরে ৬০টিরও বেশি আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।
ডাক্তাররা বলেছেন, আঘাতের কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা গেছে শিশু
রাজন। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়, রাজন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি
কামরুল সৌদি আরবে গ্রেপ্তার হয়েছে। আর এদিকে হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশে
আরও প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে। বাংলাদেশের পুলিশ এখন পর্যন্ত ৫ আসামিকে
গ্রেপ্তার করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হত্যার নির্মম ভিডিওটি ছড়িয়ে
যাওয়ার পর ক্ষোভে ফুসতে থাকে পুরো দেশ। হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি
মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে বিভিন্ন আবেদন, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করা
হচ্ছে। স্থানীয় পুলিশ প্রধান আখতার হোসেইন বার্তা সংস্থা এএএফপিকে বলেছেন,
এটা নির্মম, অত্যন্ত গর্হিত এক হত্যাকাণ্ড আর আমরা কাউকে ছাড় দেবো না।
আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ১৩ বছরের সামিউল আলম রাজনকে নির্যাতন করে হত্যা
ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ। সন্দেহভাজন একজন গ্রেপ্তার হয়েছে সৌদি আরবে।
কামরুল ইসলাম নামের ওই ব্যক্তি ঘটনার পরপরই সৌদি আরবের জেদ্দায় পালিয়ে যায়।
জেদ্দার বড় বাংলাদেশী অভিবাসী সমপ্রদায় পুলিশে খবর দেয়ার পর সৌদি
কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেপ্তার করে। রাজনকে নির্যাতন করে হত্যার অপরাধ স্বীকার
করেছে সে। রাজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর সোমবার সিলেটে ন্যায়বিচারের দাবিতে
প্রতিবাদকারীরা মানববন্ধন করে। গতকাল শহরের কেন্দ্রে আরেকটি গণসমাবেশ
আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে রাজপথে
নামেন বাংলাদেশী প্রতিবাদকারীরা। বৃটেনের মিররের শিরোনাম ছিল, বিকৃত
মানসিকতার হামলাকারীরা ১৩ বছরের বালককে পিটিয়ে হত্যার মুহূর্ত ভিডিও করেছে।
পীড়াদায়ক ওই ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে আর বাংলাদেশ জুড়ে প্রতিবাদের দাবিতে সোচ্চার
হয়ে ওঠে সবাই। ২৮ মিনিটের ওই ভিডিওতে ১৩ বছরের রাজনকে একটি পোলের সঙ্গে
বেঁধে অমানবিকভাবে নির্যাতন করা হয়। মারতে মারতে তাকে মেরে ফেলে একদল
পুরুষ। ছোট্ট বালকটিকে পাষণ্ডরা যখন লোহার খণ্ড দিয়ে মারছিল তখন পানির জন্য
আর্তচিৎকার করছিল রাজন। বারবার ক্ষমা চাইছিল ছেলেটি। মারার সময় ফেসবুকে
ভিডিওটি ছেড়ে দেয়ার কথাও আলাপ করে হামলাকারীরা যেন পুরো বিশ্ব তা দেখতে
পারে। একজন তাকে রিকশা চুরির দোষ দেয়। ছেলেটি মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত মারতে
থাকে তারা। এখন হাজারো বাংলাদেশী নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইছে।
মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনেরে সম্মানে একটি টুইটার পাতা খোলা হয়েছে।
টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভিডিও ফুটেজ এতটাই ‘মর্মপীড়াদায়ক’ যে তা
পুরোটা প্রকাশ না করাটা বেছে নিয়েছে টেলিগ্রাফ।
No comments