২০ পরিবারে নেই ঈদ আনন্দ by মুহাম্মদ হাবীবুল্লাহ হেলালী
ভিটেমাটিহীন
ছিন্নমূল মানুষের মনে নেই ঈদ আনন্দ। ঈদের সময়ে উৎসবের আয়োজন নেই
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার ছিন্নমূল ২০ পরিবারে। ঈদের দিন যতই ঘনিয়ে
আসছে উপজেলার সর্বশ্রেণীর মানুষজন কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সাধ্যমতো করছেন কেনাকাটা। কিন্তু সুরমার ভাঙনে গৃহহারা হয়ে দীর্ঘ একযুগেরও
বেশি সময় ধরে বসতি গড়ে বসবাস করা ছিন্নমূল এসকল অসহায় মানুষের মধ্যে ঈদ
বলতে আলাদা কিছু নেই। উপজেলা পরিষদের মাত্র ৫০০-৬০০ গজ দূরে
দোয়ারাবাজার-বাংলাবাজার (বৃটিশ সড়ক) সরকারি রাস্তার দু’পাশে ভাসমান
মানুষদের বসবাস। পাকা সড়কের দু’পাশে হাওর ঘেঁষে খড়কুটা দিয়ে কোন রকম মাথা
গোঁজার ঠাঁই হয়েছে দারিদ্র্যপীড়িত ছিন্নমূল ২০টি পরিবারের। আশা নিরাশার
মধ্যেই খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন তারা। পুরুষ লোকেরা দিন মজুরি, বয়স্ক
নারী-পুরুষরা ভিক্ষাবৃত্তি আর মেয়েরা অন্যের বাসাবাড়িতে ঝিইয়ের অথবা
গৃহস্থালির কাজ করে মূলত জীবিকা নির্বাহ করতে হয়।
ঈদের আর মাত্র ক’দিন বাকি থাকলেও ঈদ আনন্দ নেই তাদের। খোলা আকাশের নিচে মাথার ওপর ছেঁড়া পলিথিন বা দু’চারটা টিন দিয়ে চারদিকে কাপড় বা খড়ের বেরা দিয়ে হাওরপাড়ে ঝুঁকির মধ্যে ছাপড়া দিয়ে কষ্টময় জীবনযাপন করতে দেখা গেছে। প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে ঈদের কেনাকাটা করে ছেলেমেয়ে পরিবার নিয়ে যাতায়াত করার দৃশ্য ভাসমান পরিবারের শিশুদের মনে তাড়া দেয়। সারা দিন কাজ শেষে বাবা-মা ঘরে ফিরলে শিশুরা বলে ঈদের জামাকাপড় কিনে দিতে। কিন্তু ভাগ্যিস তাদের মা-বাবার তো সে সাধ্য নেই। এক মুঠো খাবার তুলে দিতে শ্রমজীবী মানুষদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। ঈদের দিনে অবলা শিশুদের জামাকাপড় কিনে দেবে কি করে। উপজেলা সদরের মাঝের গাঁও গ্রামের আবদুল মজিদ (৭৫)। সংসারের একমাত্র কর্তা তিনি। তার কোন ছেলে সন্তান নেই। ৪ মেয়েসহ ৬ জনের বড় পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাকে। প্রতিদিন গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে পরিবারের অন্ন যোগান দেন তিনি। তিন মেয়েকে বিয়ে দিলেও নানা কারণে পিতার সংসারেই থাকতে হচ্ছে এখন তাদের। সুরমার ভাঙনে বসতভিটা বিলীন হয়ে গেলে প্রায় একযুগ আগে সড়কের পাশ ঘেঁষে খড়কুটার ঘরে বসবাস করছেন তিনি। ছোট্ট কুঁড়েঘরে ঝাঁকাঝাঁকি করেই কোন রকম বেঁচে আছেন বয়োবৃদ্ধ আবদুল মজিদ। সরজমিন গিয়ে জানতে চাইলে অকপটে কেঁদে ফেলেন তিনি। বলেন ‘বাবারে আমরার কোন ঈদ আছেনি? সারা দিন রোজা রাখি। বাড়ি বাড়ি ভিককরি [ভিক্ষা] যা পাই খাইয়া না খাইয়া কোনমতে বাইচ্ছা আছি’। সরকারি কোন সহায়তা পান কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কোন ভাতা পাই না। মরার ভাতা পাই আমি! মামুজির মরার ফরে তাইনোর বয়স্ক ভাতা দি আর ভিক করি ছলি আর কিতা।’ একই অবস্থা নিঃসন্তান সহায় সম্বলহীন সত্তরোর্ধ্ব তাজুদ মিয়ারও। ভাঙ্গা কুঁড়েঘরে একমাত্র বয়োবৃদ্ধ স্ত্রী কে নিয়ে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। দারিদ্র্যতার কারণে প্রয়োজনীয় জামা কাপড় নেই অসহায় ওই দম্পত্তির। একচালা খড়ের ঘরের বারান্দায় রোজা রেখে লুঙ্গি পরে খালি গায়ে বসে আছেন স্ত্রীর অপেক্ষায়। রোজার দিনেও স্বস্তিতে নেই তারা। পালাবদলে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে ভিক্ষা করেন স্বামী স্ত্রী দু’জনে। ওই দিন ছিল স্ত্রীর পালা। জিজ্ঞেস করতেই নিজের ভাষায় বলতে শুরু করেন, ‘আইছ কু আমার জানো ধরিলিছে। বুড়ি ভিক্ষা খরি আইলে এখলগে ইস্তার খরমোরে বো। চাউল-ডাউল কুন্তা নাই ঘরো। আমারার কিতার ঈদ! শিশুদের জিজ্ঞেস করা হলে তারা অভিযোগের সুরেই জানায়, ঈদে তাদের দেয়া হয় না নতুন কোনো জামাকাপড়। এমনকি ঈদের দিনে তাদের ঘরে সেমাই পোলাও মাংস রান্না হয় না। কথা বলার ফাঁকে সাজেদা (০৭) সহ কয়েকজন শিশু বলে উঠে ‘ওবা আমরার ছবি নিলে ঈদের সময় জামাকাপড় কিন্যা দিবায়নি।’ অসহায় পরিবারের শিশুদের এমন আবদার সত্যি বিত্তবানদের মনে তাড়া দেবে কী!
এভাবে একসাথে বসবাস করছেন দিনমজুর আবুবকর, আরশ আলী, রহমত আলী, আলতাব আলী, মনাই মিয়া, খেছকির মাসহ আরও অনেকে। আরও কিছু দূরে ফকিরের পুলের নিকটবর্তী আরও কয়টি ছিন্নমূল ভাসমান মানুষের বসবাস। সবার পরিবারেই ৬-৭ জন করে সদস্য। দারিদ্র্যতার কারণে ছেলেমেয়েদের ভাগ্যে জুটে না লেখাপড়া। বাবা-মা কাজে বের হলে শিশুদের আর কোন কাজ থাকে না। রাস্তায় খেলাধুলা, হাওরে মাছ ধরা ব্যতীত কোন কাজ নেই এখানকার শিশুদের। একটু বয়স হলেই বেছে নিতে হয় দিনমজুরি।
ঈদের আর মাত্র ক’দিন বাকি থাকলেও ঈদ আনন্দ নেই তাদের। খোলা আকাশের নিচে মাথার ওপর ছেঁড়া পলিথিন বা দু’চারটা টিন দিয়ে চারদিকে কাপড় বা খড়ের বেরা দিয়ে হাওরপাড়ে ঝুঁকির মধ্যে ছাপড়া দিয়ে কষ্টময় জীবনযাপন করতে দেখা গেছে। প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষ ওই রাস্তা দিয়ে ঈদের কেনাকাটা করে ছেলেমেয়ে পরিবার নিয়ে যাতায়াত করার দৃশ্য ভাসমান পরিবারের শিশুদের মনে তাড়া দেয়। সারা দিন কাজ শেষে বাবা-মা ঘরে ফিরলে শিশুরা বলে ঈদের জামাকাপড় কিনে দিতে। কিন্তু ভাগ্যিস তাদের মা-বাবার তো সে সাধ্য নেই। এক মুঠো খাবার তুলে দিতে শ্রমজীবী মানুষদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। ঈদের দিনে অবলা শিশুদের জামাকাপড় কিনে দেবে কি করে। উপজেলা সদরের মাঝের গাঁও গ্রামের আবদুল মজিদ (৭৫)। সংসারের একমাত্র কর্তা তিনি। তার কোন ছেলে সন্তান নেই। ৪ মেয়েসহ ৬ জনের বড় পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতে হয় তাকে। প্রতিদিন গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে পরিবারের অন্ন যোগান দেন তিনি। তিন মেয়েকে বিয়ে দিলেও নানা কারণে পিতার সংসারেই থাকতে হচ্ছে এখন তাদের। সুরমার ভাঙনে বসতভিটা বিলীন হয়ে গেলে প্রায় একযুগ আগে সড়কের পাশ ঘেঁষে খড়কুটার ঘরে বসবাস করছেন তিনি। ছোট্ট কুঁড়েঘরে ঝাঁকাঝাঁকি করেই কোন রকম বেঁচে আছেন বয়োবৃদ্ধ আবদুল মজিদ। সরজমিন গিয়ে জানতে চাইলে অকপটে কেঁদে ফেলেন তিনি। বলেন ‘বাবারে আমরার কোন ঈদ আছেনি? সারা দিন রোজা রাখি। বাড়ি বাড়ি ভিককরি [ভিক্ষা] যা পাই খাইয়া না খাইয়া কোনমতে বাইচ্ছা আছি’। সরকারি কোন সহায়তা পান কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কোন ভাতা পাই না। মরার ভাতা পাই আমি! মামুজির মরার ফরে তাইনোর বয়স্ক ভাতা দি আর ভিক করি ছলি আর কিতা।’ একই অবস্থা নিঃসন্তান সহায় সম্বলহীন সত্তরোর্ধ্ব তাজুদ মিয়ারও। ভাঙ্গা কুঁড়েঘরে একমাত্র বয়োবৃদ্ধ স্ত্রী কে নিয়ে ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। দারিদ্র্যতার কারণে প্রয়োজনীয় জামা কাপড় নেই অসহায় ওই দম্পত্তির। একচালা খড়ের ঘরের বারান্দায় রোজা রেখে লুঙ্গি পরে খালি গায়ে বসে আছেন স্ত্রীর অপেক্ষায়। রোজার দিনেও স্বস্তিতে নেই তারা। পালাবদলে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে ভিক্ষা করেন স্বামী স্ত্রী দু’জনে। ওই দিন ছিল স্ত্রীর পালা। জিজ্ঞেস করতেই নিজের ভাষায় বলতে শুরু করেন, ‘আইছ কু আমার জানো ধরিলিছে। বুড়ি ভিক্ষা খরি আইলে এখলগে ইস্তার খরমোরে বো। চাউল-ডাউল কুন্তা নাই ঘরো। আমারার কিতার ঈদ! শিশুদের জিজ্ঞেস করা হলে তারা অভিযোগের সুরেই জানায়, ঈদে তাদের দেয়া হয় না নতুন কোনো জামাকাপড়। এমনকি ঈদের দিনে তাদের ঘরে সেমাই পোলাও মাংস রান্না হয় না। কথা বলার ফাঁকে সাজেদা (০৭) সহ কয়েকজন শিশু বলে উঠে ‘ওবা আমরার ছবি নিলে ঈদের সময় জামাকাপড় কিন্যা দিবায়নি।’ অসহায় পরিবারের শিশুদের এমন আবদার সত্যি বিত্তবানদের মনে তাড়া দেবে কী!
এভাবে একসাথে বসবাস করছেন দিনমজুর আবুবকর, আরশ আলী, রহমত আলী, আলতাব আলী, মনাই মিয়া, খেছকির মাসহ আরও অনেকে। আরও কিছু দূরে ফকিরের পুলের নিকটবর্তী আরও কয়টি ছিন্নমূল ভাসমান মানুষের বসবাস। সবার পরিবারেই ৬-৭ জন করে সদস্য। দারিদ্র্যতার কারণে ছেলেমেয়েদের ভাগ্যে জুটে না লেখাপড়া। বাবা-মা কাজে বের হলে শিশুদের আর কোন কাজ থাকে না। রাস্তায় খেলাধুলা, হাওরে মাছ ধরা ব্যতীত কোন কাজ নেই এখানকার শিশুদের। একটু বয়স হলেই বেছে নিতে হয় দিনমজুরি।
No comments