মানুষ ক্ষুব্ধ, হতবাক
১৩
বছরের শিশু শেখ মো. সামিউল আলমকে (রাজন) নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায়
ক্ষুব্ধ ও হতবাক সারা দেশ। এরই মধ্যে নির্যাতনের ভিডিও চিত্রটি সরিয়ে
নিয়েছে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ। অনেকেরই অভিযোগ, সামিউল দরিদ্র হওয়ায় পুলিশ
ঘটনাটিকে গুরুত্ব দেয়নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ক্ষুব্ধ
প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। অনেকে আবার মানুষ হিসেবে তাঁদের লজ্জার কথা জানিয়েছেন।
এঁদের একজন বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তাঁর
ফেসবুক পেজে পোস্টার হাতে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি। সেখানে লেখা
আছে, ‘শিশু নির্যাতনকে না বলুন।’
সামিউলকে মেরে লাশ গুম করার সময় স্থানীয় লোকজন একজনকে ধরে ফেলেন। অন্যরা পালিয়ে যায়। প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম সৌদি আরবে পালিয়ে গেলেও গতকাল সোমবার জেদ্দায় ধরা পড়েন। এ তথ্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন জেদ্দায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ।
৮ জুলাইয়ের এই ঘটনার পরপরই লাশ গুম করার সময় মুহিত আলম নামের একজনকে ধরে স্থানীয় জনতা পুলিশে সোপর্দ করে। মুহিতকে পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। পলাতক আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ মুহিতের নিকটাত্মীয় ইসমাইল হোসেনকে আটক করেছে। এ ছাড়া মুহিতের স্ত্রীকে গতকাল রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের তদন্ত-তদারক করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি।
পুলিশ বাদী হয়ে এ ঘটনায় সিলেট শহরের কুমারগাঁওয়ের শেখপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মুহিতসহ তাঁর সৌদি আরব ফেরত ভাই কামরুল ইসলাম (২৫), হায়দার আলী ওরফে আলী (৩৪) ও চৌকিদার ময়না ওরফে বড় ময়নার (৪৫) বিরুদ্ধে মামলা করে। লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে সামিউলের শরীরে ৬৪টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। টানা নির্যাতনের কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিশু সামিউলকে চোর অপবাদ দিয়ে কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে একটি খুঁটিতে বেঁধে পাঁচ-ছয়জন নির্যাতন চালায়। বাঁচার জন্য তার কোনো আকুতিই মন গলাতে পারেনি। একপর্যায়ে সামিউল তাদের কাছে একটু পানি খেতে চাইলে তারা পানি না দিয়ে তাকে শরীরের ঘাম খেতে বলে।
১২ জুলাই এ-সংক্রান্ত খবর প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শিশু ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলো কর্মসূচি পালন করেছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেছেন, এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে সিলেটের পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
দুই ভাইয়ের মধ্যে সামিউল বড়। সে সব্জি বিক্রি করত। বাবা শেখ মো. আজিজুর রহমান ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালক। মা লুবনা আক্তার গৃহিণী। গতকাল দুপুরে বাড়িতে গিয়ে মা লুবনাকে ছেলের পোস্টার হাতে বিলাপ করতে দেখা গেছে। বাবা বলেন, ‘আমার ছেলেরে যারা যেভাবে কষ্ট দিয়ে মেরেছে, তাদের আমি সেইভাবে মৃত্যু চাই—এ রকম বিচার হলে আমাদের কিছুটা সান্ত্বনা মিলবে।’
ক্ষয়িষ্ণু সমাজেরই চিত্র: দেশের সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, সামাজিক আচার-আচরণে বিরূপ পরিবর্তন, প্রথা নষ্ট হওয়া এবং পারস্পরিক সম্পর্কে চিড় ধরার কারণে এ ধরনের বিবেকবর্জিত ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বলেছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও আইনের শাসন না থাকায় মানুষ বর্বর হয়ে উঠছে। আইন করে খুনিদের রক্ষা করা ও খুনের ঘটনার বিচার করতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার কারণে পুরো দেশেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
সমাজবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক নাজমা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে একধরনের অরাজকতা চলছে। পারিবারিক শিক্ষা, প্রথাগুলো সেভাবে মানা হচ্ছে না। রাজনীতিতে অস্থিরতা আছে। ফলে মানুষের মধ্যে বিবেকহীনতা কাজ করছে। এ থেকে বের হয়ে আসাটা খুব একটা সহজ নয়। তবে সব ক্ষেত্রে সুষ্ঠু চর্চা করা গেলে পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, এ ঘটনাকে কোনোভাবেই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা যাবে না।
ঢাকায় ১০টি বেসরকারি সংস্থা ও জোট চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যক্তিরা গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার বিচার চেয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য দেন অ্যাকশনএইডের আবাসিক পরিচালক ফারাহ কবির। এ ছাড়া গণজাগরণ মঞ্চ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, যুবমৈত্রী, ব্লাস্ট, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, যুব ইউনিয়ন পৃথক কর্মসূচি পালন করে এবং বিবৃতিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
সামিউলকে মেরে লাশ গুম করার সময় স্থানীয় লোকজন একজনকে ধরে ফেলেন। অন্যরা পালিয়ে যায়। প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম সৌদি আরবে পালিয়ে গেলেও গতকাল সোমবার জেদ্দায় ধরা পড়েন। এ তথ্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন জেদ্দায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ।
৮ জুলাইয়ের এই ঘটনার পরপরই লাশ গুম করার সময় মুহিত আলম নামের একজনকে ধরে স্থানীয় জনতা পুলিশে সোপর্দ করে। মুহিতকে পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। পলাতক আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ মুহিতের নিকটাত্মীয় ইসমাইল হোসেনকে আটক করেছে। এ ছাড়া মুহিতের স্ত্রীকে গতকাল রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের তদন্ত-তদারক করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি।
পুলিশ বাদী হয়ে এ ঘটনায় সিলেট শহরের কুমারগাঁওয়ের শেখপাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মুহিতসহ তাঁর সৌদি আরব ফেরত ভাই কামরুল ইসলাম (২৫), হায়দার আলী ওরফে আলী (৩৪) ও চৌকিদার ময়না ওরফে বড় ময়নার (৪৫) বিরুদ্ধে মামলা করে। লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে সামিউলের শরীরে ৬৪টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। টানা নির্যাতনের কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
শিশু সামিউলকে চোর অপবাদ দিয়ে কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডে একটি খুঁটিতে বেঁধে পাঁচ-ছয়জন নির্যাতন চালায়। বাঁচার জন্য তার কোনো আকুতিই মন গলাতে পারেনি। একপর্যায়ে সামিউল তাদের কাছে একটু পানি খেতে চাইলে তারা পানি না দিয়ে তাকে শরীরের ঘাম খেতে বলে।
১২ জুলাই এ-সংক্রান্ত খবর প্রথম আলোসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ঢাকা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদী কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শিশু ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংস্থাগুলো কর্মসূচি পালন করেছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেছেন, এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে সিলেটের পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন।
দুই ভাইয়ের মধ্যে সামিউল বড়। সে সব্জি বিক্রি করত। বাবা শেখ মো. আজিজুর রহমান ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালক। মা লুবনা আক্তার গৃহিণী। গতকাল দুপুরে বাড়িতে গিয়ে মা লুবনাকে ছেলের পোস্টার হাতে বিলাপ করতে দেখা গেছে। বাবা বলেন, ‘আমার ছেলেরে যারা যেভাবে কষ্ট দিয়ে মেরেছে, তাদের আমি সেইভাবে মৃত্যু চাই—এ রকম বিচার হলে আমাদের কিছুটা সান্ত্বনা মিলবে।’
ক্ষয়িষ্ণু সমাজেরই চিত্র: দেশের সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, সামাজিক আচার-আচরণে বিরূপ পরিবর্তন, প্রথা নষ্ট হওয়া এবং পারস্পরিক সম্পর্কে চিড় ধরার কারণে এ ধরনের বিবেকবর্জিত ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে দেশের কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি বলেছেন, বিচারহীনতার সংস্কৃতি ও আইনের শাসন না থাকায় মানুষ বর্বর হয়ে উঠছে। আইন করে খুনিদের রক্ষা করা ও খুনের ঘটনার বিচার করতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করার কারণে পুরো দেশেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।
সমাজবিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক নাজমা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে একধরনের অরাজকতা চলছে। পারিবারিক শিক্ষা, প্রথাগুলো সেভাবে মানা হচ্ছে না। রাজনীতিতে অস্থিরতা আছে। ফলে মানুষের মধ্যে বিবেকহীনতা কাজ করছে। এ থেকে বের হয়ে আসাটা খুব একটা সহজ নয়। তবে সব ক্ষেত্রে সুষ্ঠু চর্চা করা গেলে পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, এ ঘটনাকে কোনোভাবেই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা যাবে না।
ঢাকায় ১০টি বেসরকারি সংস্থা ও জোট চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যক্তিরা গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার বিচার চেয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য দেন অ্যাকশনএইডের আবাসিক পরিচালক ফারাহ কবির। এ ছাড়া গণজাগরণ মঞ্চ, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, যুবমৈত্রী, ব্লাস্ট, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, যুব ইউনিয়ন পৃথক কর্মসূচি পালন করে এবং বিবৃতিতে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে।
No comments