ফখরুল মুক্ত
টানা
১৮৯ দিন কারাভোগের পর বহু নাটকীয়তা শেষে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপির
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পান
তিনি। এ সময় হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের মির্জা আলমগীর বলেন, আমি
আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি- কিছুদিনের জন্য হলেও আমি মুক্ত হয়েছি। আমি
চিকিৎসার জন্য খুব তাড়াতাড়ি দেশের বাইরে যাবো। সমগ্র দেশবাসীর কাছে আমি
দোয়া চাইছি যেন আরোগ্য লাভ করে দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে পারি। গণমাধ্যম
কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, কারান্তরীণ
অবস্থায় আমার অসুস্থতার খবর অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে জাতির সামনে তুলে
ধরেছেন- সেজন্য আপনাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমি
অত্যন্ত অসুস্থ। গত ছয় মাসে আমার প্রায় ১২ কেজি ওজন কমে গেছে। আমার
আর্টারিতে যে ব্লক রয়েছে সেটার সমস্যা আরও বেড়েছে। আইবিএস-এর সমস্যাটা
বেড়েছে। এর জন্য আমার স্ত্রী ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুরে যোগাযোগ করেছেন যেখানে
আমি আগে চিকিৎসা করিয়েছিলাম। এছাড়া আমেরিকায়ও যোগাযোগ করেছেন। যে কোন একটি
দেশে চিকিৎসার জন্য যাবো। রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসুস্থ
মাকে দেখতে যাওয়ার কথা জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, আমার মা ইউনাইটেড
হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সেখানে আমার মাকে দেখতে যাবো এবং একইসঙ্গে হৃদরোগ
বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মোমিনুজ্জামানের পরামর্শ নিবো। গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লক (৬১৯ নং রুম) থেকে
একটি হুইল চেয়ারে করে এম্বুলেন্সে ওঠেন তিনি। এসময় শতাধিক বিএনপি ও
ছাত্রদল নেতাকর্মী হাসপাতালের গেটে তাকে স্বাগত জানান। সেখান থেকে মুক্তি
পেয়ে ওই এম্বুলেন্সে করে সরাসরি ইউনাইটেড হাসপাতালে যান মির্জা আলমগীর।
এসময় তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম সঙ্গে ছিলেন। রাতে মায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের
পর ইউনাইটেড হাসপাতালের ৪০১ নং কেবিনে ভর্তি হন মির্জা আলমগীর। আজ চিকিৎসা
শেষে বাসায় ফিরতে পারেন তিনি। উল্লেখ্য, মহাজোট সরকারের আমলে ৬ দফায় ৩৩১দিন
কারাভোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। ২০১২ সালের ১৬ই মে তিনি
প্রথমবার কারাগারে যান। হরতালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানো
মামলায় আদালতে হাজির হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। সেবার ৩০দিন পর ১৪ই
জুন তিনি মুক্তি পান। ২০১২ সালের ১০ই ডিসেম্বর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয়
কার্যালয়ের সামনে থেকে দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তার করা হয় মির্জা আলমগীরকে।
হরতালে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় দীর্ঘ ৫৭ দিন কারাভোগের
পর ২০১৩ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি তিনি জামিনে মুক্তি পান। দেড় মাসের মাথায়
২০১৩ সালের ১১ই মার্চ বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি
অভিযানের সময় ১৫৭ জন নেতাকর্মীর সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তারের ১৯ ঘণ্টা পর ডিবি
কার্যালয় থেকে মুক্তি পান তিনি। ২০১৩ সালের ৭ই এপ্রিল ৭ মামলায় ঢাকার
সিএমএম কোর্টে আত্মসমর্পণ করলে তৃতীয় দফায় কারাগারে পাঠানোর ৩০দিন পর ৬ই মে
মুক্তি পান। ২০১৪ সালের ১৬ই মার্চ বাংলামোটর এলাকায় নাশকতার তিন মামলায়
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির হলে চতুর্থ দফায় কারাগারে পাঠানো
হয় মির্জা আলমগীরকে। ২৪দিন পর ১০ই এপ্রিল তিনি জামিনে মুক্তি পান। সর্বশেষ
জাতীয় প্রেস ক্লাবে দুইদিন অবরুদ্ধ থাকার পর ২০১৫ সালের ৬ই জানুয়ারি বের
হলে গেট থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। একাধিক মামলায় শেষদফায় টানা
১৮৯দিন কারাভোগের পর তিনি জামিনে মুক্তি পান। গুরুতর অসুস্থ মির্জা আলমগীর এ
নিয়ে দুইদফায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেলেন।
No comments