ওঁরাও বেতন বাড়াতে চান!
ভারতের সাংসদদের বেতন এক শ শতাংশ বাড়ানোর দাবিকে অনেকেই অযৌক্তিক বলছেন। ছবি: রয়টার্স |
ভারতের
সাংসদেরা রীতিমতো বড়লোক। তার পরও তাঁদের আছে মোটা অঙ্কের বেতনসহ ভূরি
ভূরি সুযোগ-সুবিধা। করদাতাদের অর্থে কার্যত নিখরচায় তাঁদের থাকা-খাওয়া
চলে। তবুও তাঁরা সন্তুষ্ট নন। এক লাফে এক শ শতাংশ বেতন বাড়ানোর দাবি
তাঁদের। দাবি আছে আরও। এ নিয়ে দেশটিতে চলছে তর্ক-বিতর্ক।
ভারতে প্রতি পাঁচজন নাগরিকের একজন দরিদ্র। দেশটির ৩০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। আছে আর্থিক সংকট। এমন অবস্থায় সাংসদদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এতটা বাড়ানোর দাবিকে অনেকেই অযৌক্তিক বলছেন।
তবে পাল্টা যুক্তিও আছে। এই ঘরানার লোকেরা বলছেন, ২০১০ সালের পর সাংসদদের বেতন বাড়েনি। তাঁরা সরকারি কর্মচারীদের মতো ডিএ পান না। পাঁচ বছরের ব্যবধানে বাজার আগুন। বেতনসহ অন্য সুবিধা না বাড়ালে সাংসদেরা চলবেন কী করে!
সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকার এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ভারতের বর্তমান লোকসভার সাংসদদের দরিদ্র বলার উপায় নেই। কারণ, এক বছর আগে শপথগ্রহণের সময় তাঁদের গড় সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫ কোটি রুপি। গত এক বছরে এই সংখ্যাটি সম্ভবত বেড়েছে।
২০১০ সালে ভারতের সাংসদদের বেতন-ভাতা তিন গুণ বাড়ানো হয়। তাঁদের মাসিক বেতন ১৬ হাজার রুপি থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার রুপি ৷ পার্লামেন্টে হাজিরার জন্য দিনপ্রতি দুই হাজার রুপি। অফিস-ভাতা ও নির্বাচনী এলাকার ভাতা বাবদ মাসে ৪৫ হাজার রুপি করে। বিনা মূল্যে বিমান সুবিধা, প্রথম শ্রেণির শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রেলভ্রমণ, বিনা মূল্যে আবাসনসহ অন্য অনেক সুবিধা পাচ্ছেন সাংসদেরা। তার পরও তাঁরা বলছেন, এতে চলে না!
এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি দেশটির সংসদীয় বেতন কমিটির পক্ষ থেকে সরকারকে অর্ধশতাধিক সুপারিশ দেওয়া হয়। এতে সাংসদদের বেতন শতভাগ বাড়ানোর পাশাপাশি সার্বিক বেতন-হার পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে।
১৫ সদস্যের ওই সংসদীয় কমিটির নেতা বিজেপির সাংসদ যোগী আদিত্যনাথ। কমিটির সুপারিশে সাংসদদের একটি ল্যান্ডলাইন ফোন থেকে ৫০ হাজার বিনা মূল্যে কল, বিনা মূল্যে ৫০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ, বিনা মূল্যে চার হাজার কিলোলিটার পানি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সাংসদদের দৈনিক ভাতা দুই হাজার রুপি থেকে বাড়িয়ে চার হাজার রুপি করতে বলা হয়েছে।
সংসদীয় কমিটির সুপারিশে সাবেক সাংসদদের অবসরভাতা (পেনশন) ৭৫ শতাংশ বাড়ানো এবং তাঁদের দেশের মধ্যে ২০ থেকে ২৫টি বিনা মূল্যে বিমানযাত্রার কোটা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমান সাংসদদের একজন সফরসঙ্গীকে প্রথম শ্রেণির রেল টিকিট দেওয়া, সাবেক সাংসদ ও তাঁদের স্বামী বা স্ত্রীদেরও প্রথম শ্রেণির টিকিট দেওয়া এবং সাংসদদের ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসুবিধা দেওয়ার কথাও রয়েছে সুপারিশে।
কমিটির সুপারিশগুলো সামনে আসার পর ভারতে শুরু হয় বিতর্ক। সুপারিশের পক্ষে-বিপক্ষে ওঠে যুক্তি-পাল্টাযুক্তি।
তৃণমূলের লোকসভার নেতা ও সংসদীয় বেতন কমিটির অন্যতম সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সচিব ও সাংসদের বেতনের মধ্যে ব্যবধান থাকা উচিত নয় বলে দীর্ঘদিন ধরে দাবি রয়েছে। প্রটোকল অনুযায়ী সাংসদের পদমর্যাদা সচিবের ওপরে। মন্ত্রিসভার সচিবের বেতন বর্তমানে মাসে ৮০ হাজার টাকা। একজন সাংসদের বেতন ৫০ হাজার।
কমিটির আরেক সদস্য বিজেপির সাংসদ সি পি ঠাকুর বলেছেন, সাংসদদেরও দায়দায়িত্ব থাকে। তাঁরা প্রথম শ্রেণিতে রেল সফর করলে সঙ্গে কাউকে নিতে পারেন না। এটা সমস্যার। দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। বর্তমান মাইনেতে চালানো শক্ত।
সিপিআইয়ের সাবেক সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্তর যুক্তি, মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু যতটা বেতন বাড়ানোর জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে, তা বড্ড বাড়াবাড়ি। মনে রাখতে হবে, দেশের ৩০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। দেশও আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
সাংসদদের বেতন প্রায় ১০০ শতাংশ বাড়ানোর ব্যাপারে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ সরকার খারিজ করেছে। কমিটির ৬৫টি সুপারিশের মধ্যে সরকার ১৮টি বাতিল করে জানায়, ১৫টির সঙ্গে সরকার একমত নয়। তিনটি সুপারিশ নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে। এ ছাড়া চারটি ক্ষেত্রে চলতি বিধি পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।
১৬ জুলাই কমিটি আবার বৈঠক করবে। বৈঠকে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রতিবেদন নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কোনো সরকারি প্রতিনিধি ওই বৈঠকে থাকবেন না।
ভারতে প্রতি পাঁচজন নাগরিকের একজন দরিদ্র। দেশটির ৩০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। আছে আর্থিক সংকট। এমন অবস্থায় সাংসদদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এতটা বাড়ানোর দাবিকে অনেকেই অযৌক্তিক বলছেন।
তবে পাল্টা যুক্তিও আছে। এই ঘরানার লোকেরা বলছেন, ২০১০ সালের পর সাংসদদের বেতন বাড়েনি। তাঁরা সরকারি কর্মচারীদের মতো ডিএ পান না। পাঁচ বছরের ব্যবধানে বাজার আগুন। বেতনসহ অন্য সুবিধা না বাড়ালে সাংসদেরা চলবেন কী করে!
সম্প্রতি আনন্দবাজার পত্রিকার এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ভারতের বর্তমান লোকসভার সাংসদদের দরিদ্র বলার উপায় নেই। কারণ, এক বছর আগে শপথগ্রহণের সময় তাঁদের গড় সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় ১৫ কোটি রুপি। গত এক বছরে এই সংখ্যাটি সম্ভবত বেড়েছে।
২০১০ সালে ভারতের সাংসদদের বেতন-ভাতা তিন গুণ বাড়ানো হয়। তাঁদের মাসিক বেতন ১৬ হাজার রুপি থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার রুপি ৷ পার্লামেন্টে হাজিরার জন্য দিনপ্রতি দুই হাজার রুপি। অফিস-ভাতা ও নির্বাচনী এলাকার ভাতা বাবদ মাসে ৪৫ হাজার রুপি করে। বিনা মূল্যে বিমান সুবিধা, প্রথম শ্রেণির শীতাতপনিয়ন্ত্রিত রেলভ্রমণ, বিনা মূল্যে আবাসনসহ অন্য অনেক সুবিধা পাচ্ছেন সাংসদেরা। তার পরও তাঁরা বলছেন, এতে চলে না!
এই প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি দেশটির সংসদীয় বেতন কমিটির পক্ষ থেকে সরকারকে অর্ধশতাধিক সুপারিশ দেওয়া হয়। এতে সাংসদদের বেতন শতভাগ বাড়ানোর পাশাপাশি সার্বিক বেতন-হার পর্যালোচনার কথা বলা হয়েছে।
১৫ সদস্যের ওই সংসদীয় কমিটির নেতা বিজেপির সাংসদ যোগী আদিত্যনাথ। কমিটির সুপারিশে সাংসদদের একটি ল্যান্ডলাইন ফোন থেকে ৫০ হাজার বিনা মূল্যে কল, বিনা মূল্যে ৫০ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ, বিনা মূল্যে চার হাজার কিলোলিটার পানি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সাংসদদের দৈনিক ভাতা দুই হাজার রুপি থেকে বাড়িয়ে চার হাজার রুপি করতে বলা হয়েছে।
সংসদীয় কমিটির সুপারিশে সাবেক সাংসদদের অবসরভাতা (পেনশন) ৭৫ শতাংশ বাড়ানো এবং তাঁদের দেশের মধ্যে ২০ থেকে ২৫টি বিনা মূল্যে বিমানযাত্রার কোটা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বর্তমান সাংসদদের একজন সফরসঙ্গীকে প্রথম শ্রেণির রেল টিকিট দেওয়া, সাবেক সাংসদ ও তাঁদের স্বামী বা স্ত্রীদেরও প্রথম শ্রেণির টিকিট দেওয়া এবং সাংসদদের ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসুবিধা দেওয়ার কথাও রয়েছে সুপারিশে।
কমিটির সুপারিশগুলো সামনে আসার পর ভারতে শুরু হয় বিতর্ক। সুপারিশের পক্ষে-বিপক্ষে ওঠে যুক্তি-পাল্টাযুক্তি।
তৃণমূলের লোকসভার নেতা ও সংসদীয় বেতন কমিটির অন্যতম সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সচিব ও সাংসদের বেতনের মধ্যে ব্যবধান থাকা উচিত নয় বলে দীর্ঘদিন ধরে দাবি রয়েছে। প্রটোকল অনুযায়ী সাংসদের পদমর্যাদা সচিবের ওপরে। মন্ত্রিসভার সচিবের বেতন বর্তমানে মাসে ৮০ হাজার টাকা। একজন সাংসদের বেতন ৫০ হাজার।
কমিটির আরেক সদস্য বিজেপির সাংসদ সি পি ঠাকুর বলেছেন, সাংসদদেরও দায়দায়িত্ব থাকে। তাঁরা প্রথম শ্রেণিতে রেল সফর করলে সঙ্গে কাউকে নিতে পারেন না। এটা সমস্যার। দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। বর্তমান মাইনেতে চালানো শক্ত।
সিপিআইয়ের সাবেক সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্তর যুক্তি, মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু যতটা বেতন বাড়ানোর জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে, তা বড্ড বাড়াবাড়ি। মনে রাখতে হবে, দেশের ৩০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। দেশও আর্থিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।
সাংসদদের বেতন প্রায় ১০০ শতাংশ বাড়ানোর ব্যাপারে সংসদীয় কমিটির সুপারিশ সরকার খারিজ করেছে। কমিটির ৬৫টি সুপারিশের মধ্যে সরকার ১৮টি বাতিল করে জানায়, ১৫টির সঙ্গে সরকার একমত নয়। তিনটি সুপারিশ নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে। এ ছাড়া চারটি ক্ষেত্রে চলতি বিধি পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই।
১৬ জুলাই কমিটি আবার বৈঠক করবে। বৈঠকে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রতিবেদন নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। কোনো সরকারি প্রতিনিধি ওই বৈঠকে থাকবেন না।
No comments