বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন: শরীরে ৩০০ গুলি, পরিবার নিয়ে অসহায় সুজন
এরপর ওই হাসপাতালে আহত সুজন চিকিৎসা না পেলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়, কিন্তু সেখানেও অতিরিক্ত হতাহতদের চিকিৎসার কারণে ভর্তি করা হয়নি। তারপর সেখান তাকে নিয়ে আসা হয় তার গ্রামের বাড়ি। স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারিভাবে তাকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করলেও পরিবারের উপার্জনসক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় অর্থাভাবে পথে বসতে হয় তাকে। অন্যের সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে জীবিকানির্বাহ করলেও তার খোঁজখবর কেউ নেননি বলে জানায় সুজন। এখন সে খেয়ে-না খেয়ে পরিবার নিয়ে দিনযাপন করছে। সুজন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের আকালু গ্রামের মৃত আনছের আলীর ছেলে। প্রাইমারিতে পড়ার সময় বাবাকে হারালে পরিবারের হাল ধরতে পড়াশোনা বন্ধ করে রিকশা চালানোর উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় রাজধানী ঢাকায়। রিকশা চালানোর পাশাপাশি স্থানীয় জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হন।
সুজন বলেন, জুলাই বিপ্লবের আন্দোলনে অন্যদিনের মতো ৫ই আগস্ট সকাল ৯টার দিকে বাড্ডা থানা ঘেরাও কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করি। সকাল ১০টার দিকে পুলিশ আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশ আমাদের ওপর একতরফা গুলিবর্ষণ করে। একপর্যায়ে পুলিশের ছররা গুলির ২৯৬টি স্প্লিন্টার আমার শরীরে লাগে। আমি অচেতন অবস্থায় দেয়ালের পাশে পড়ে থাকি। পরদিন সকালে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার জ্ঞান ফিরে। আমার শরীরে এখনো স্প্লিন্টার রয়েছে। আমি চলাফেরা করতে পারি না। ক্রাচের মাধ্যমে হাঁটলেও ব্যথা বেড়ে যায় ও শরীর ফুলে শক্ত হয়। কেউ খোঁজ নেয় না। এমন অবস্থায় উন্নত চিকিৎসা ও আর্থিক সহযোগিতার অনুরোধ করেন তিনি।
সুজনের স্ত্রী নূপুর বলেন, আহত হওয়ার পর থেকে সংসারে কোনো আয় নেই। এখন খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে। এদিকে সন্তানদের লেখাপড়াও বন্ধ হওয়ার পথে। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক মাস আগে উপজেলা থেকে কিছু সাহায্য পেয়েছিলাম যা আমাদের বেশ উপকার হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আহত স্বামীর চিকিৎসা ও সন্তানদের লেখাপড়া করাতে পারছি না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোছা. পপি খাতুন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এ উপজেলায় একজন নিহত ও তালিকামতে ১৬ জন আহত রয়েছে। এর বাহিরেও আহত থাকতে পারে। নিহত ও আহতদের পরিবারকে সরকারি ও ব্যক্তিভাবে সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। আহতদের মধ্যে অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সরকারিভাবে এখনো আহতের কর্মসংস্থানের কোনো নির্দেশ আসেনি। তবে, তারা যাতে কোনো সমস্যায় না পড়ে সে ব্যাপারে প্রশাসন ও সমাজসেবা কাজ করছে।
No comments