নয়া রাজনীতির অঙ্গীকার -জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ঘোষণা
ক্ষমতায়
গেলে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, উচ্চকক্ষ সংসদ গঠনসহ
৩৫ দফার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা
করেছে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বৃহত্তর প্ল্যাটফরম জাতীয়
ঐক্যফ্রন্ট।
রাজধানীর মতিঝিলে হোটেল পূর্বাণীর বলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন এই ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশতেহারে পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ছাড়া সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা না রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য সামনে রেখে প্রণয়ন করা ইশতেহারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন, দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, ৩০ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষিত বেকারদের জন্য ভাতা দিতে একটি কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার চলমান রাখা এবং মানুষের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে ইশতেহারে।
ড. কামাল হোসেন বলেন, আজ আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছি। এটা জনগণের ইশতেহার। জনগণের কল্যাণ, জনমতের ভিত্তিতে এটা তৈরি করা হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মতামত গ্রহণের ধারা অব্যাহত থাকবে।
আমরা বিশ্বাস করি ভোটের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে দেশে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে ২১ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেন, ৩৫ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ও ১৪ দফা প্রতিশ্রুতি মিলিয়ে আমাদের এই ইশতেহার। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জিতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের কল্যাণে সরকার পরিচালনা করবে। এই পরিচালনার মূলনীতি হবে ঐকমত্য, সরকারের অন্তর্ভুক্তি এবং যেকোনো রকম প্রতিহিংসা থেকে মুক্ত রাখা। তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিকানা জনগণ সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বর্ণিত এই নীতির ভিত্তিতে শুধুমাত্র নির্বাচনে জেতা দলের মানুষের নয়। এই মালিকানা থাকবে নির্বাচনে পরাজিত নেতা, কর্মী ও সমর্থকদেরও। এই রাষ্ট্র পরিচালিত হবে নির্বাচনে পরাজিতদের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমরা যেসব কাজ সম্পন্ন করবো এই ইশতেহারে সেই বিষয়গুলোকে স্থান দিয়েছি।
নতুন ধারার রাজনীতি প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতির সমন্বয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে ফ্রন্টের ইশতেহার। ৩৫ দফা প্রতিশ্রুতির উল্লেখযোগ্যগুলো হচ্ছে- প্রতিহিংসা বা জিঘাংসা নয়, জাতীয় ঐক্যই লক্ষ্য নীতি অবলম্বন করে মিথ্যা মামলা, গুম, খুন, মামলার ঘুষ বাণিজ্য ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনাসমূহ সমাধানে ‘সর্বদলীয় সত্যানুসন্ধান ও বিভেদ নিরসন কমিশন’ গঠন করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অতীতের হয়রানি মামলা সুরাহার লক্ষ্যে খোলা মনে আলোচনা করে ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সমাধান করা হবে। নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম পুরোপুরি বন্ধ, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল, রিমান্ডের নামে পুলিশ হেফাজতে শারীরিক নির্যাতন ও সাদা পোশাকে গ্রেপ্তার বন্ধ, মিথ্যা মামলায় অভিযুক্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং মিথ্যা মামলায় সহায়তাকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নারীর ওপর বাচিক কিংবা শারীরিক যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখা হবে। যৌতুক পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানবিক মর্যাদা, অধিকার, নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। তাদের ওপর যেকোনো রকম হামলার বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখবে।
ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতেহারে বলা হয়েছে, সংসদে একটি উচ্চ কক্ষ সৃষ্টি করা হবে। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ৭০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন আনা হবে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হবে। একটানা পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকা যাবে না। সংসদে ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দলের থেকে নির্বাচিত করা হবে। বিচারপতিসহ সব নিয়োগের জন্য বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে স্বাধীন কমিশন গঠন করা হবে। সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহে উল্লেখযোগ্য নারী প্রতিনিধি নিশ্চিত করা হবে। সংসদে মহিলা আসন ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হবে। তবে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের জন্য সকল রাজনৈতিক দল সংসদ নির্বাচনে ন্যূনতম বিশ শতাংশ নারীদের মনোনয়ন দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে। প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা পরীক্ষার জন্য একটি সর্বদলীয় জাতীয় কমিশন গঠন করা হবে।
সুশাসন প্রসঙ্গে ইশতেহারে বলা হয়, বর্তমানে চলমান কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করা হবে না, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ব্যয় নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতির তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনা হবে। ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে এবং সংবিধান নির্দেশিত সব দায়িত্ব পালনে ন্যায়পালকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হবে। আর্থিক খাত ব্যাংকিংখাতে লুটপাটে জড়িতদের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং ব্যাংকসমূহকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হবে।
ইশতেহারে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়েছে, পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ছাড়া সরকারি চাকরিতে বয়সের কোনো সময়সীমা থাকবে না। সরকারি চাকরিতে শুধুমাত্র অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা ছাড়া আর কোনো কোটা থাকবে না। ৩০ বয়সসীমার উপরে শিক্ষিত বেকারদের জন্য ভাতা চালু করতে একটি কমিশন গঠন করা হবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে সব সরকারি শূন্য পদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে। বেকার সমস্যার সমাধান হবে আমাদের সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের একটি। উদ্যোক্তা তরুণদের জন্য খুব কম সুদে ঋণ প্রদান করা হবে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়, কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হবে। মেধাপাচার রোধে মেধাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি যথার্থ মূল্যায়ন ও উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। দেশের সকল ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো স্বাস্থ্য ক্যাডারের একজন সরকারি কর্মকর্তার উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। গ্রামীণ জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দেবার লক্ষ্যে সকল ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এক বৎসর ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করে এক বছর প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে। ওষুধের দাম কমানো হবে।
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি নেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হস্তে দমন করবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে এসব বিষয়ে ছাত্রদের শিক্ষা পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং সমাজের সব শ্রেণির জনগণকে সচেতন ও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দেশের আলেম-ওলামাদের মাধ্যমে মোটিভেশন প্রোগ্রাম চালু করা হবে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে তাদের দাবিকৃত ৯ দফা দাবির আলোকে সড়ক আইন সংশোধন করা হবে। প্রবাসী কল্যাণ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে। স্বাধীন প্রেস কাউন্সিলের অধীনে সকল প্রকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত, মজুরি বোর্ড নিয়মিতকরণ করা হবে। মোবাইল ফোনের কলরেট ও ইন্টারনেটের খরচ কমানো হবে। দেশের প্রতিটি প্রান্তে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি নিশ্চিত করতে মোবাইল অপারেটরদের বাধ্য করা হবে। সঠিক কক্ষপথে নতুন স্যাটেলাইট পাঠানো হবে।
শিল্পায়নের জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা নিরসন করার জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা এবং আইন ও বিধিমালা সহজ করা হবে। দু’বছরের মধ্যেই গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকা করা হবে। সকল খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে। স্বাস্থ্যবীমার মাধ্যমে শ্রমিকরা মাসে ২৫০ টাকার প্রিমিয়ামের মাধ্যমে সকল চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। বয়োবৃদ্ধদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। বেসরকারি খাত থেকে সকল জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি রিভিউ করে মূল্য যৌক্তিক করা হবে। সর্বোচ্চ ১০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের বিদ্যুতের মূল্য আগামী পাঁচ বছরে বাড়বে না। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীকে অনেক বেশি শক্তিশালী করা হবে। এই খাতে জিডিপি’র অনুপাতে বাজেট আগামী ৫ বছরে ধাপে ধাপে বর্তমানের ৩ গুণ করা হবে।
বিচারবিভাগ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়, মামলার জট কমানো ও হয়রানি বন্ধের নিমিত্তে মামলার বাদী বিবাদী তিনবারের বেশি সময় নিতে চাইলে কোর্টের সময় অপরাধী পক্ষের উকিলের ফি বাবদ কোর্ট ফি ন্যূনতম জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে। বিচারপতি ও বিচারকরা প্রতিবছর নিজের এবং ঘনিষ্ঠ নিকটজনের সম্পদের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করবেন। কৃষকের স্বার্থরক্ষা ও কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে সরকারি প্রণোদনা থাকবে।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকে আবার খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রাধিকারে পরিণত করা হবে। দায়িত্বপ্রাপ্তির প্রথম দিন থেকেই মাদক নিয়ন্ত্রণকে সরকারের খুব গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের তালিকায় আনা হবে।
ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে মূলমঞ্চে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, শহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, রেজা কিবরিয়া, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে- প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ, প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ, প্রফেসর মোস্তাহিদুর রহমান, মোস্তফা জামান আব্বাসী, প্রফেসর সদরুল আমিন, প্রফেসর দিলারা চৌধুরী, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, প্রফেসর সাহিদা রফিক, প্রফেসর তাজমেরী এ ইসলাম, প্রফেসর সুকোমল বড়ুয়া, রুহুল আলম চৌধুরী, শাহজাদা মিয়া, এনামুল হক চৌধুরী, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক, আওম শফিক উল্লাহ, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, জাহেদ উর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ৭ দফা দাবি এবং ১১ দফা লক্ষ্যকে সামনে রেখে গঠিত হয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থীরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করছেন।
রাজধানীর মতিঝিলে হোটেল পূর্বাণীর বলরুমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন এই ইশতেহার ঘোষণা করেন। ইশতেহারে পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ছাড়া সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা না রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি ও ১১ দফা লক্ষ্য সামনে রেখে প্রণয়ন করা ইশতেহারে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ পরিবর্তন, দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা, ৩০ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষিত বেকারদের জন্য ভাতা দিতে একটি কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার চলমান রাখা এবং মানুষের বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে ইশতেহারে।
ড. কামাল হোসেন বলেন, আজ আমরা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছি। এটা জনগণের ইশতেহার। জনগণের কল্যাণ, জনমতের ভিত্তিতে এটা তৈরি করা হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মতামত গ্রহণের ধারা অব্যাহত থাকবে।
আমরা বিশ্বাস করি ভোটের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে দেশে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে ২১ পৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেন, ৩৫ দফা নির্বাচনী ইশতেহার ও ১৪ দফা প্রতিশ্রুতি মিলিয়ে আমাদের এই ইশতেহার। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে জিতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের কল্যাণে সরকার পরিচালনা করবে। এই পরিচালনার মূলনীতি হবে ঐকমত্য, সরকারের অন্তর্ভুক্তি এবং যেকোনো রকম প্রতিহিংসা থেকে মুক্ত রাখা। তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিকানা জনগণ সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বর্ণিত এই নীতির ভিত্তিতে শুধুমাত্র নির্বাচনে জেতা দলের মানুষের নয়। এই মালিকানা থাকবে নির্বাচনে পরাজিত নেতা, কর্মী ও সমর্থকদেরও। এই রাষ্ট্র পরিচালিত হবে নির্বাচনে পরাজিতদের মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে আমরা যেসব কাজ সম্পন্ন করবো এই ইশতেহারে সেই বিষয়গুলোকে স্থান দিয়েছি।
নতুন ধারার রাজনীতি প্রবর্তনের প্রতিশ্রুতির সমন্বয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে ফ্রন্টের ইশতেহার। ৩৫ দফা প্রতিশ্রুতির উল্লেখযোগ্যগুলো হচ্ছে- প্রতিহিংসা বা জিঘাংসা নয়, জাতীয় ঐক্যই লক্ষ্য নীতি অবলম্বন করে মিথ্যা মামলা, গুম, খুন, মামলার ঘুষ বাণিজ্য ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনাসমূহ সমাধানে ‘সর্বদলীয় সত্যানুসন্ধান ও বিভেদ নিরসন কমিশন’ গঠন করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অতীতের হয়রানি মামলা সুরাহার লক্ষ্যে খোলা মনে আলোচনা করে ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সমাধান করা হবে। নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দিয়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম পুরোপুরি বন্ধ, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল, রিমান্ডের নামে পুলিশ হেফাজতে শারীরিক নির্যাতন ও সাদা পোশাকে গ্রেপ্তার বন্ধ, মিথ্যা মামলায় অভিযুক্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং মিথ্যা মামলায় সহায়তাকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নারীর ওপর বাচিক কিংবা শারীরিক যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স দেখা হবে। যৌতুক পুরোপুরি বন্ধ করা হবে। সংখ্যালঘু এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানবিক মর্যাদা, অধিকার, নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে। তাদের ওপর যেকোনো রকম হামলার বিচার হবে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রাখবে।
ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইশতেহারে বলা হয়েছে, সংসদে একটি উচ্চ কক্ষ সৃষ্টি করা হবে। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ৭০ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন আনা হবে। প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হবে। একটানা পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকা যাবে না। সংসদে ডেপুটি স্পিকার বিরোধী দলের থেকে নির্বাচিত করা হবে। বিচারপতিসহ সব নিয়োগের জন্য বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে স্বাধীন কমিশন গঠন করা হবে। সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহে উল্লেখযোগ্য নারী প্রতিনিধি নিশ্চিত করা হবে। সংসদে মহিলা আসন ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হবে। তবে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচনের জন্য সকল রাজনৈতিক দল সংসদ নির্বাচনে ন্যূনতম বিশ শতাংশ নারীদের মনোনয়ন দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকবে। প্রাদেশিক সরকার প্রতিষ্ঠার যৌক্তিকতা পরীক্ষার জন্য একটি সর্বদলীয় জাতীয় কমিশন গঠন করা হবে।
সুশাসন প্রসঙ্গে ইশতেহারে বলা হয়, বর্তমানে চলমান কোনো উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ করা হবে না, উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর ব্যয় নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতির তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনা হবে। ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে এবং সংবিধান নির্দেশিত সব দায়িত্ব পালনে ন্যায়পালকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া হবে। আর্থিক খাত ব্যাংকিংখাতে লুটপাটে জড়িতদের কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং ব্যাংকসমূহকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হবে।
ইশতেহারে কর্মসংস্থান সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়েছে, পুলিশ ও সামরিক বাহিনী ছাড়া সরকারি চাকরিতে বয়সের কোনো সময়সীমা থাকবে না। সরকারি চাকরিতে শুধুমাত্র অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা ছাড়া আর কোনো কোটা থাকবে না। ৩০ বয়সসীমার উপরে শিক্ষিত বেকারদের জন্য ভাতা চালু করতে একটি কমিশন গঠন করা হবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে সব সরকারি শূন্য পদে নিয়োগ সম্পন্ন করা হবে। বেকার সমস্যার সমাধান হবে আমাদের সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের একটি। উদ্যোক্তা তরুণদের জন্য খুব কম সুদে ঋণ প্রদান করা হবে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়, কর্মসংস্থানকে প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল সংস্কারের জন্য কমিশন গঠন করা হবে। মেধাপাচার রোধে মেধাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি যথার্থ মূল্যায়ন ও উপযুক্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। দেশের সকল ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো স্বাস্থ্য ক্যাডারের একজন সরকারি কর্মকর্তার উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। গ্রামীণ জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দেবার লক্ষ্যে সকল ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এক বৎসর ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সার্বক্ষণিকভাবে অবস্থান করে এক বছর প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হবে। ওষুধের দাম কমানো হবে।
আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি নেয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হস্তে দমন করবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে এসব বিষয়ে ছাত্রদের শিক্ষা পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং সমাজের সব শ্রেণির জনগণকে সচেতন ও সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দেশের আলেম-ওলামাদের মাধ্যমে মোটিভেশন প্রোগ্রাম চালু করা হবে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করে তাদের দাবিকৃত ৯ দফা দাবির আলোকে সড়ক আইন সংশোধন করা হবে। প্রবাসী কল্যাণ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে। স্বাধীন প্রেস কাউন্সিলের অধীনে সকল প্রকার গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত, মজুরি বোর্ড নিয়মিতকরণ করা হবে। মোবাইল ফোনের কলরেট ও ইন্টারনেটের খরচ কমানো হবে। দেশের প্রতিটি প্রান্তে মোবাইল ইন্টারনেটের গতি নিশ্চিত করতে মোবাইল অপারেটরদের বাধ্য করা হবে। সঠিক কক্ষপথে নতুন স্যাটেলাইট পাঠানো হবে।
শিল্পায়নের জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রতা নিরসন করার জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা এবং আইন ও বিধিমালা সহজ করা হবে। দু’বছরের মধ্যেই গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকা করা হবে। সকল খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে। স্বাস্থ্যবীমার মাধ্যমে শ্রমিকরা মাসে ২৫০ টাকার প্রিমিয়ামের মাধ্যমে সকল চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। বয়োবৃদ্ধদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। বেসরকারি খাত থেকে সকল জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি রিভিউ করে মূল্য যৌক্তিক করা হবে। সর্বোচ্চ ১০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের বিদ্যুতের মূল্য আগামী পাঁচ বছরে বাড়বে না। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীকে অনেক বেশি শক্তিশালী করা হবে। এই খাতে জিডিপি’র অনুপাতে বাজেট আগামী ৫ বছরে ধাপে ধাপে বর্তমানের ৩ গুণ করা হবে।
বিচারবিভাগ সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতিতে বলা হয়, মামলার জট কমানো ও হয়রানি বন্ধের নিমিত্তে মামলার বাদী বিবাদী তিনবারের বেশি সময় নিতে চাইলে কোর্টের সময় অপরাধী পক্ষের উকিলের ফি বাবদ কোর্ট ফি ন্যূনতম জমা দিয়ে আবেদন করতে হবে। বিচারপতি ও বিচারকরা প্রতিবছর নিজের এবং ঘনিষ্ঠ নিকটজনের সম্পদের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করবেন। কৃষকের স্বার্থরক্ষা ও কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে সরকারি প্রণোদনা থাকবে।
জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণকে আবার খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রাধিকারে পরিণত করা হবে। দায়িত্বপ্রাপ্তির প্রথম দিন থেকেই মাদক নিয়ন্ত্রণকে সরকারের খুব গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকারের তালিকায় আনা হবে।
ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে মূলমঞ্চে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির আ স ম আবদুর রব, শহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, রেজা কিবরিয়া, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে- প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ, প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ, প্রফেসর মোস্তাহিদুর রহমান, মোস্তফা জামান আব্বাসী, প্রফেসর সদরুল আমিন, প্রফেসর দিলারা চৌধুরী, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, আবদুল হাই শিকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, প্রফেসর সাহিদা রফিক, প্রফেসর তাজমেরী এ ইসলাম, প্রফেসর সুকোমল বড়ুয়া, রুহুল আলম চৌধুরী, শাহজাদা মিয়া, এনামুল হক চৌধুরী, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিক, আওম শফিক উল্লাহ, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, জাহেদ উর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ৭ দফা দাবি এবং ১১ দফা লক্ষ্যকে সামনে রেখে গঠিত হয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থীরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে অংশগ্রহণ করছেন।
No comments