মন্ত্রিসভায় রদবদলের জোর গুঞ্জন দাবি খোদ আওয়ামী লীগেই by পাভেল হায়দার চৌধুরী

রকারের ভেতরে-বাইরে থেকে মন্ত্রিসভা পুনর্মূল্যায়নের দাবি উঠছে জোরেশোরে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মাঠ পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের অনেক নেতা-কর্মী মনে করছেন, মন্ত্রিসভায় রদবদল জরুরি। আর এ রদবদল আসন্ন_রয়েছে এমন গুঞ্জনও।যোগাযোগ, অর্থ, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য এবং শ্রম ও কর্মসংস্থানসহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগও যথেষ্ট। যোগাযোগসহ কোনো কোনো মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির


অভিযোগ তোলা হচ্ছে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে। তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, তারানা হালিমসহ দলীয় নেতা ও সংসদ সদস্যরাও প্রকাশ্যে ব্যর্থতার কথা বলছেন। অনেকে আবার বিক্ষুব্ধ থাকলেও মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। শেয়ারবাজার বিপর্যয়ের ফলে অর্থ; যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল এবং পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগের কারণে যোগাযোগ; তিস্তা চুক্তি ও টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের কারণে পররাষ্ট্র; আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র; দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য বাণিজ্যমন্ত্রীর ব্যর্থতার অভিযোগ এনে তাঁদের পদত্যাগের দাবি তুলছেন নেতারা। এ অবস্থায় মন্ত্রিসভায় রদবদলের সম্ভাবনার বিষয়টি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। মন্ত্রিসভার রদবদলের এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর বলে তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছেন নেতা-কর্মীরা।
সূত্র মতে, শিগগিরই মন্ত্রিসভার রদবদল হবে_এমন একটা সম্ভাবনার কথা নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আলোচনা চলছে। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহেই এটা হতে পারে, এমনও বলা হচ্ছে। কয়েকজন নবীন-প্রবীণের নাম উঠে আসছে আলোচনায়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মন্ত্রিসভার রদবদলের এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর। তবুও আমি মনে করি, মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের সময় এসেছে। এটা জরুরি হয়ে পড়েছে। যেসব মন্ত্রণালয় সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে রদবদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।' যোগাযোগসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় মন্ত্রীদের রদবদল প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, সরকারের মন্ত্রিসভা পরিবর্তনের সময় এসেছে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও অসম্পূর্ণতা রয়েছে। রদবদলের পর এগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে মন্ত্রিসভা রদবদলের এখতিয়ার সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর। তিনি প্রয়োজন মনে করলে করবেন, না হলে করবেন না। কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, 'আমার মনে হচ্ছে, শিগগিরই মন্ত্রিসভায় রদবদল হবে। কিছু কিছু নেতা হয়তো নতুন করে দায়িত্ব পাবেন।' ওবায়দুল কাদের বলেন, 'আমার অবস্থান সবসময় আমি মিডিয়ার মাধ্যমে জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে নতুন করে কিছু বলার নাই।'
এ প্রসঙ্গে মহাজোটের শরিক দল জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, সরকারের মন্ত্রিসভার আমুল সংস্কার দরকার। কারণ কাঁঠালকে কিলিয়ে আম বানানো যায় না। তিনি বলেন, জনগণ মহাজোটের রাজনীতিকে সমর্থন করে, অদক্ষ প্রশাসনকে সমর্থন করে না। এখনি দুটি কাজ সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তার একটি শাসন প্রশাসনের ভুলত্রুটি সংশোধন ও কাটিয়ে তোলা এবং অপরটি একলা চলো নীতি পরিহার করে মহাজোটকে সক্রিয় ও দৃশ্যমান করা।
এদিকে সরকারের মেয়াদের দ্বিতীয়ার্ধে এসে মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে সম্ভাব্য নেতাদের কারো কারো কিছুটা দ্বিধা আছে বলেও শোনা যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের উপদেষ্টা পরিষদ, সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, সরকারের এই সময়ে এসে গুরুদায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে তাদের মধ্যে কম- বেশি সিদ্ধান্তহীনতা কাজ করছে। তাঁদের আশঙ্কার কারণ হচ্ছে, আর মাত্র দুই বছর বাকি সরকারের। এ সময় দায়িত্ব নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হবে। দায়িত্ব নিলেও সময়স্বল্পতার কারণে দেশ ও জনগণের স্বার্থে চমক দেখানো কোনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। বরং দায়িত্ব নিলে রাজনৈতিক সুনাম নষ্ট হতে পারে। এ প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগের এ কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ প্রকারান্তরে ক্ষোভও ব্যক্ত করেন। একজন বলেন, 'যখন সময় ছিল কিছু করার তখন দায়িত্ব পাইনি। এখন দায়িত্ব না পেলেও হতাশ নই।'
মন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে দলের মধ্যে কোনো কোনো নেতার অনীহা রয়েছে কি-না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইউসুফ হোসেন বলেন, সরকারের হাতে সময় অল্প। এ স্বল্প সময়ে মন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে বৈপ্লবিক কোনো পরিবর্তন আনাও সম্ভব হবে না। তার পরও প্রধানমন্ত্রী কাউকে মন্ত্রী হওয়ার আহ্বান জানালে তাঁর পক্ষে তা অমান্য করা কঠিন।

No comments

Powered by Blogger.