চুল পড়ার নানা কারণ ও প্রতিকার by ডা. ওয়ানাইজা

১. সুমনার বয়স ২৪ বছর। মাস দুয়েক আগে সে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেছে। বর্তমানে সুস্থ শিশুর গর্বিত ও সুখী মা সুমনা। কিন্তু চুল আঁচড়াতে গেলেই মন খারাপ হয়। চিরুনির সঙ্গে উঠে আসছে গোছা গোছা চুল। মাথা প্রায় খালি হয়ে যাচ্ছে। কী করবে বুঝতে পারছে না সুমনা। এমন সমস্যা কখনো হয়নি। এর কি কোন সমাধান নেই?


২. রিমনের বয়স ১৯ বছর। এবার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। পড়ালেখা, বন্ধুবান্ধব সব মিলিয়ে রিমন খুব ভাল আছে। কিন্তু ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার পর বড় বোন বলল রিমনের মাথার চুল নাকি কমে যাচ্ছে। ব্যাপারটি রিমন নিজেও লক্ষ্য করেছে। কিন্তু পাত্তা দেয়নি। বোনের কথা শুনে ভাল করে খেয়াল করল এবং তার মনে আশঙ্কা জাগল যে এভাবে চুল পরতে থাকলে মাথায় টাক হতে বেশি সময় লাগবে না। রিমনের মনে প্রশ্ন এখন সে কী করবে?
৩. আশফাকের বয়স ২৫ বছর। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্র। পড়ালেখায় ভীষণ চাপ, ভাল রেজাল্ট করতেই হবে। অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস ছিল। ভাল রেজাল্ট করতেই হবে। পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে চুলের যত্ন নেয়া। অনার্স পরীক্ষার সময় থেকেই চুল কিছুটা পাতলা হয়ে যাচ্ছে আশফাকের। তারপর থেকেই চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে নানা রকম পণ্য চুলে ব্যবহার করে চলেছে আশফাক। সহযোগীদের পরামর্শেও নানা কিছু চুলে ব্যবহার করে যাচ্ছে। কিন্তু ফল হচ্ছে উল্টো। এখন চুল খুব কমে যাচ্ছে। এর সমাধান আছে কি?
৪. রেজার বয়স ৩২ বছর। ব্যবসায়ী। নানা কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। নিজের দিকে খেয়াল রাখা সম্ভব নয়। যাই হোক পরিবারের অনুরোধে গত সপ্তাহে বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে হয় রেজাকে। পাত্রী পক্ষকে সঠিক বয়স জানানোর পরও তারা আশঙ্কা করেন বয়স বেশি রেজার। এক পর্যায়ে তারা জানান, পাত্রের মাথায় চুল কম। ভীষণ হতাশ হন রেজা। সঙ্কল্প করে চুল পড়া রোধ করতেই হবে কিন্তু কিভাবে?
সুমনা, রিমন, আশফাক ও রেজার সমস্যার কথা জানা গেল। চার জনেরই চুল পড়া সমস্যা। কিন্তু চারজনই এর সমাধান চান।
প্রথমে আসা যাক সুমনার কথায়। সন্তানের প্রসবোত্তর সময়ে অনেক মহিলাই এমন বিরক্তিকর ঘটনার সম্মুখীন। নানা রকম শরীরবৃত্তীয় পরিবর্তনের কারণে এ সময় চুল পড়ে। এ সময় প্রয়োজন চুলের সঠিক যতœ। তবে খুব বেশি চুল পড়তে থাকলে চিকিৎকের নির্দেশ মেনে চলা প্রয়োজন। কারণ মাথা একবার ফাঁকা হয়ে গেলে চিকিৎসা করা কঠিন। তাই এ ব্যাপারে লক্ষ্য রাখবেন। রিমনের সমস্যার ব্যাপারে লক্ষ্য করবেন সে খুলনায় যাওয়ার পর তার চুলের সমস্যা হচ্ছে। এটি হয় স্থান পরিবর্তন করলে পানির কারণে। একেক জায়গার পানিতে মিনারেল পরিমাণ একেক রকম থাকে। এর প্রভাব চুলের জন্য ক্ষতিকর হলে তখন চুল পড়তে শুরু করে। এ ক্ষেত্রে কিছুদিন পুকুরের পানি কিংবা সিদ্ধ পানি চুল ধোয়ার কাজে ব্যবহার করা ভাল। কিন্তু চুল পড়া প্রতিরোধ করতে এ অবস্থায় সঠিক যতœ প্রয়োজন। অনেক সময় চুলের গোড়া শক্ত করতে ওষুধও দেয়া যেতে পারে। আশফাক চুলের যতœ নিজের মতো করে বলে বলা হয়েছে। কিন্তু সেই যতœ যথাযথ হয় না। আশফাক নানা রকম চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অবৈজ্ঞানিক কিছু ওষুধপত্র ব্যবহার করেছে। একে চুল আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পড়ালেখার চাপে ও মানসিক চাপের কারণে তার চুল পড়তে পারে কিন্তু সঠিক চিকিৎসা না হওয়াতে তা বেড়ে গেছে। সব শেষে রেজার কথায় আসি। রেজার খুব সম্ভব এ্যান্ড্রোজেনিক এ্যালোপিসিয়া হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে লক্ষ্য করছে না। তারও চুলের সঠিক যতœ হচ্ছে না। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এ্যান্ড্রোজেনিক এ্যালোপিসিয়া বর্তমানে রোধ করা সম্ভব।
সুমনা, রিমন, আশফাক ও রেজা সবার ক্ষেত্রেই সঠিক চুলের যতেœর কথা বলা হয়েছে। চুল সঠিক শ্যাম্পু দিয়ে ঠেকায়, তেল দেয়া, আঁচড়ানো এসবই সঠিক যতেœর মধ্যে পড়ে। যারা প্রতিদিন ঘরের বাইরে বের হন তাদের এক-দুই দিন অন্তর চুল শ্যাম্পু করা প্রয়োজন। চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। বিজ্ঞাপনের চটকে ভুলে ব্যবহার করবেন না। খুশকির জন্য এ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন। তবে দীর্ঘদিন এ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়। ভেজা চুল আঁচড়াবেন না বা বেশি টানাটানি না করাই ভাল। খুব টেনে চুল বাঁধাও ঠিক না, ভেজা চুল বাঁধবেন না। অনেকে মনে করেন চুল আঁচড়ালে চুল পড়ে কিংবা শ্যাম্পু করলে বেশি চুল পড়ে। এটি ভুল ধারণা। চুল যেটি পড়ার পড়বেই। সেটি হয় তো সে সময় হাতে উঠে আসে। এর জন্য আঁচড়ানো বা শ্যাম্পু করা বন্ধ করা হাস্যকর। শ্যাম্পু না করলে চুল পরিষ্কার থাকবে না আর চুল পরিষ্কার না থাকলে পড়বেই। আপনি বাইরে থেকে এসে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে দেখুন কী কালো ময়লা উঠবে। বর্তমানে পরিবেশ দূষণের কারণে ধুলাবালি ধোঁয়া ইত্যাদিও চুলের ক্ষতি করে। বর্তমানের গবেষণায় চুল পড়া রোধে ও চুল গজাতে সাহায্য করার জন্য নানা রকম ওষুধপত্র আবিষ্কার হয়েছে। চিকিৎসকরা পরামর্শ ও নিদের্শমতো এসব ওষুধ ব্যবহার করে অনেকেই ফল পাচ্ছেন। তবে একটা কথা হচ্ছে চুল পড়া প্রতিরোধে চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী। এসব চিকিৎসায় প্রথমে চুল পড়া বন্ধ করে। তারপর নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে। কিন্তু ওই যে কথাটি চিকিৎসাকালীন মনে রাখতে হবে যে চিকিৎসাটি দীর্ঘমেয়াদী। অনেকে ঘন ঘন চিকিৎসক পাল্টিয়ে ভাল ফল পেতে চান। একটু ধৈর্য ধরে চিকিৎসা নিলে ভাল ফল পাবেন। কিছু ওষুধ চলে ব্যবহার করার, কিছু খাওয়ার ওষুধ এবং চুলের নিয়ম সবকিছুই খুব জরুরী। অনেকে সব ওষুধ না ব্যবহার করে দু’একটি ব্যবহার করে ফল পেতে চান। এটা কখনও সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদী সঠিক চিকিৎসায় চুল পড়া রোধ করা সম্ভব। তাই চুল পড়লে হতাশ হবেন না। সঠিক চিকিৎসা নিন।

1 comment:

  1. এমন কি কখনও ঘটেছে, “চুল ঝরে পড়ছে? কী করি?” অথবা, আপনি সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখলেন বালিশের উপর কিছু চুল পড়ে রয়েছে? কিংবা, আপনার চিরুনিতে আগের চাইতে বেশি চুল দেখা যাচ্ছে? এমনটাতো কিছুদিন পরপরই হতে দেখা যায়, তাই না? চুল ঝরে পড়া সমস্যাটা নতুন কিছু নয়, আর চুল পড়ারও একটা নির্দিষ্ট সীমা আছে। আমাদের খাদ্যাভ্যাস, চালচলনের উপরও এটা অনেকাংশে নির্ভর করে চুল ঝরে পড়ার পিছনে। আমাদের জেনে বা না জেনে এমন কিছু ভুল হয়ে যায় যার কারণে চুল ঝরে পড়া বৃদ্ধি পায়। চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক চুল পড়ার কারণ

    ReplyDelete

Powered by Blogger.