কিডনির সমস্যা by ডা. মোসাদ্দেক আহমদ

কি ব্যাপার মুখটা ফোলা ফোলা লাগছে কেন? বিশেষ করে চোখের পাতাটা। ওমা! পায়ের পাতাটাও যেন একটু ফোলা। এমনটি চিত্র হরহামেশা দেখা যায়। ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার জিজ্ঞেস করবেন প্রস্রাবের রং ও পরিমাণ কি? গলায় কোন ব্যথা অথবা টনসিল বেড়েছে কিনা? এরপর রোগীকে পরীৰা করা, রোগীর রক্তচাপ কত মেপে দেখা।
পা টিপে তার ফোলার পরিমাণ দেখা। সর্বশেষ কিছু পরীৰা করানো। হঁ্যা, এমন কিছু হলে ডাক্তাররা মনে করেন এটা কিডনি সংক্রানত্ম রোগ। তবে অন্য কোন রোগ যে নয় এমন দিব্যি কেউ দিতে পারবে না। যাই হোক কিডনি সংক্রানত্ম এমন রোগকে আমরা মষড়সবৎঁষড়হঢ়যৎরঃরং বলি। এটা কিডনির এক ধরনের প্রদাহজনিত রোগ। তা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। সাধারণ কারণগুলো লিপিবদ্ধ করলে এমন দাঁড়ায়_গলায় বা চামড়ায় এক ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ, কখনও কখনও মৌমাছির হুল থেকে, ডায়াবেটিস, এসএলই (ঝখঊ) রোগ, ওষুধ। তবে অধিকাংশ সময় সঠিকভাবে আমরা কারণ জানি না।
যা আগেই বলেছিলাম সাধারণত মুখ বা পা ফোলা, কম অথচা চা রঙের প্রস্রাব, কখনও কখনও প্রস্রাবে ফেনা হঠাৎ করে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া। প্রস্রাব আর রক্ত পরীৰা করেই রোগটা নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। সাধারণত এদের প্রস্রাবে বেশি পরিমাণ আমিষের উপস্থিতি দেখা যায়। সেই সঙ্গে রক্তের লোহিত কণিকার উপস্থিতিও। যেহেতু রোগটা বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে এবং এর চিকিৎসা পদ্ধতিও বিভিন্নভাবে করা হয়, তাই কখনও কখনও কিডনি বায়োপসি (ইরড়ঢ়ংু) করতে হয়, যাতে করে সঠিক কি ধরনের রোগ তা নির্ণয় করা যায়। কিডনি বায়োপসি তেমন কোন জটিল অপারেশন না। রোগীর পিঠের কিছুটা অংশ অবশ করে একটি লম্বা সুঁই ঢুকিয়ে কিডনি থেকে একেবারেই সামান্য টিসু্য নিয়ে আসা। যা পরে অণুবীৰণ যন্ত্র দিয়ে পরীৰা করে দেখা হয়।
এর পরিণতি (চৎড়মহড়ংরং) বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। কখনও সাময়িক যা কিছু সময় পর নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়। একটা অংশ লম্বা সময় ধরে চলতে থাকে এক সময় কিডনি তার কার্যৰমতা হারিয়ে ফেলে। আরেক ধরনের রোগ আছে যা দ্রম্নত কিডনির কার্যৰমতাকে নষ্ট করে দেয়।
অনেক সময় রোগটা এত নীরবে ধীরে ধীরে কিডনিকে ৰতিগ্রসত্ম করে যে রোগী টেরই পায় না। এক সময় রোগীর কিডনি দুর্বল হয়ে গেলে যে উপসর্গ দেখা যায় তা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়। তার উপসর্গ হতে পারে_ ওজন কমা, অরম্নচি, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা, মাথাব্যথা, গা চুলকানো, হিককাফ, প্রস্রাব কমে যাওয়া, গায়ের রং কালো হয়ে যাওয়া, রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি। সময়মতো রোগ নিণর্ীত হলে সঠিক চিকিৎসা রোগীকে সুস্থ করে তোলে। অনেক সময় রোগের গতিকে মন্থর করে দেয়া হয়। যাতে রোগী অনেকদিন সুস্থ থাকতে পারে।
এখানে উপসর্গের চিকিৎসা ভাল ভূমিকা রাখে। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা অত্যনত্ম প্রয়োজনীয়, কখনও কখনও শরীরে পানি কমাতে উরঁৎবঃরপং ব্যবহার করা হয়। রোগীকে পরিমিত পানি, লবণ ও আমিষ দেয়া হয়। কোন কোন ৰেত্রে পড়ৎঃরপড়ংঃবৎড়রফ এবং রসসঁহড় ংঁঢ়ৎবংরাব
সামন্য ভূমিকা রাখে। তবে কিছু কিছু ওষুধ যেমন গোল্ড, পারদ, ব্যথার ওষুধ ব্যবহার না করা সমীচীন। উপরোলিস্নখিত উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে একজন কিডনি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া একানত্ম প্রয়োজন। কারণ সময়োপযোগী চিকিৎসা অনেক ৰেত্রে রোগ নিরাময় বা তার প্রসার বন্ধ করতে পারে।

কিডনির স্থায়ী রোগ -তার ব্যবস্থাপত্র

কিডনির স্বাভাবিক কার্যকারিতা যখন হ্রাস পায় এবং তিন মাসের মধ্যে তা পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে না পারে তখন তাকে বলা হয় পযৎড়হরপ শরফহবু ফরংবধংব বা কিডনির স্থায়ী রোগ। এই রোগে কিডনি তার কর্মৰমতা দিন দিন হারাতে থাকে এবং এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয় যখন জীবনের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। তখন রোগীকে বাঁচাতে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজনের প্রায়োজন হয়। যেহেতু এ ধরনের রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করা যায় না তাই চিকিৎসকের উদ্দেশ্য থাকে যতদিন পর্যনত্ম কিডনির কর্মৰমতাকে স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা পায়। এ উদ্দেশ্যে নিম্নবর্ণিত পদৰেপগুলো নেয়া হয়।
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কিডনির রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। এদের নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। ব্যথার ওষুধ (ঘঝঅওউ) সর্বতোভাবে পরিহার করা।
ক্যালসিয়াম হাড়ের অন্যতম উপাদান। ভিটামিন ডি ক্যালসিয়ামের যোগানদাতা। অসুস্থ কিডনি ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে না বলে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ দেহ থেকে কমে যায়। নিয়মিত উপাদান দুটো রোগীকে খেতে হয়। এরিথ্রোপরোটিন একটি হরমোন। যা লোহার সঙ্গে মিশে দেহের রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। দুর্বল কিডনি পরিমাণ মতো তা তৈরি করতে পারে না। যার কারণে রোগীর রক্ত অনেক কমে যায়। হরমোনটি নিয়মিত গ্রহণ করলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়। রোগী অনেকটা সুস্থ বোধ করে।
দেহ ভা-ারে আমিষ বিভাজনের পর নানাবিধ উচ্ছিষ্টের সঙ্গে অমস্নজাতীয় উপাদানও তৈরি হয়। অসুস্থ কিডনি সে অমস্ন বের করতে পারে না। ফলে দেহে নানা উপসর্গের সৃষ্টি হয়। ৰার জাতীয় ওষুধের মাধ্যমে তা দূর করা হয়। কোন কোন কিডনি রোগে বিশেষ করে ডায়াবেটিস জনিত রোগে প্রস্রাবের সঙ্গে অতিরিক্ত আমিষ যায়। যা কিডনির সমূহ ৰতি করে থাকে। ওষুধের মাধ্যমে এর নিয়ন্ত্রণ অপরিহার্য। এ রোগের নিয়ন্ত্রণে দৈনিক খাদ্য তালিকায়ও পরিবর্তন আনতে হয়। কেন এ পরিবর্তন।
আগেই উলেস্নখ করা হয়েছে আমিষ বিভাজনের উচ্ছিষ্টাংশ দুর্বল কিডনি দেহ থেকে সম্পূর্ণ বের করতে পারে না। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত আমিষ রোগীর কিডনির ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে। সাধারণত কেজি প্রতি ০.৭ গ্রাম আমিষ দেয়া হয়। এর মানে ৭০ কিলোগ্রামের একজন রোগী দৈনিক ৫০ গ্রাম আমিষ খাবে। ডায়াটিশিয়ান এ ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
লবণ দেহের পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। কিডনি দেহের লবণ নিয়ন্ত্রণ করে। দুর্বল কিডনি এই নিয়ন্ত্রণ ৰমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে দেহে পানি ও লবণ উভয় জমতে থাকে। রোগীর দেহের অবস্থা অনুযায়ী তার প্রয়োজনীয় পানি লবণ নির্ধারণ করা হয়। যেসব খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকে, যেমন-টিন জাতীয় খাদ্য, ঝধষঃবফ ভড়ড়ফ, ভধংঃ ভড়ড়ফ এসব পরিহার করা উচিৎ। রোগীকে স্মরণ রাখতে হবে চা, কফি, পানীয় এমনকি বিভিন্ন ফলেও প্রচুর পরিমাণ পানি থাকে। সেটুকু হিসেবে আনতে হবে। কিডনি রোগের শুরম্নতেই যদিও পটাশিয়ামের মাত্রা কম থাকে পরের দিকে এর মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। তাই যে সব ফলে এর মাত্রা বেশি যেমন : কলা, কমলা, আম, খেজুর ইত্যাদি পরিহার করা উচিত। আপেল, নাশপতি এ ধরনের ফলে পটাশিয়াম কম থাকে। এতে সব ব্যবস্থা নেয়ার পরও ক্রমান্বয়ে কিডনির কার্যৰমতা কমতে কমতে যখন ১০ থেকে ১৫ ভাগ অবশিষ্ট থাকে তখনই চিকিৎসক ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজনের সিদ্ধানত্ম নেন।
কনসালটেন্ট নেফ্রোলজিস্ট
স্কয়ার হাসপাতাল, পান্থপথ, ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.