রশিদুলকে জঙ্গীরাই খুন করেছে, গোয়েন্দারা নিশ্চিত- আটক জামাল-মিজানের তথ্য ॥ আজ কোর্টে তোলা হচ্ছে by গাফফার খান চৌধুরী

 জঙ্গী রশিদুল খুনের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত জামালের সঙ্গে শীর্ষ জঙ্গী (ফাঁসিতে মৃতু্য) শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানিসহ শীর্ষ জঙ্গীদের সম্পর্ক ছিল। বহুবার জামাল জেএমবির শীর্ষ জঙ্গীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
জেএমবিতে জামালের অবস্থান ছিল খুবই মজবুত। জামাল কোন সাধারণ মানের জেএমবি সদস্য নয়। শীর্ষ জঙ্গীদের নির্দেশে দেশের বহু জেলায় জামাল জেএমবি সদস্য সংগ্রহে সফর করেছে। গ্রেফতারকৃত অপরজন মিজানও জেএমবি সদস্য বলে অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দারা। জামালই নিহত জঙ্গীর রশিদুলকে ইমামতির চাকরি দিয়েছিল। টানা চার দিনের জিজ্ঞাসাবাদে জামাল ও মিজান চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য দিয়েছে গোয়েন্দাদের। আজ তাদের আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে।
মামলার তদনত্ম সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, জামাল বহুবার শায়খ আব্দুর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এছাড়া একাধিকবার বাংলা ভাই ও জেএমবির সামরিক শাখার সাবেক কমান্ডার আতাউর রহমান সানির সঙ্গেও গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছে জামাল। শীর্ষ জঙ্গীদের নির্দেশেই জামাল জেএমবির সদস্য সংগ্রহ করতে দেশের এ প্রানত্মর থেকে অন্য প্রানত্মর ছুটে গেছেন। জামাল জেএমবির অনেক বিষয় সম্পর্কে জানেন। জেএমবিতে ৩ ক্যাটাগরিতে লোক নিয়োগ করা হয়ে থাকে। যারা মেধাবী ও মিশুক প্রকৃতির তাদের দাওয়াতি কাফেলায় যুক্ত করা হয়ে থাকে। জেএমবির এ কাফেলাটি বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে সফর করে। প্রথমে মুসলিস্নদের মধ্যে যারা বেশি ধর্মভীরম্ন তাদের টার্গেট করা হয়।
ধর্ম ভীরম্ন যুবক বয়সী মুসলিস্নরা থাকে জেএমবির মূল টার্গেটে। এছাড়া অত্যধিক ধর্মভীরম্ন বয়স্কদেরও দলে টানা হয়ে থাকে। বয়স্ক সদস্যদের দাওয়াতি কার্যক্রম চালানোর জন্য দলে টানা হয়। বয়স্কদের মধ্যে যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল ও সমাজে প্রভাবশালী তাদের বিশেষ কদর করা হয়ে থাকে। দলের বিপদে এসব সদস্যের কাছ থেকে যাতে আর্থিক ও আশ্রয় সাহায্য পাওয়া যায় এজন্য বয়স্কদের দলে টানা হয়। যুবকদের মধ্যে যারা মেধাবী ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন তাদের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ হিসেবে দলে রিক্রুট করা হয়ে থাকে। এছাড়া যারা অত্যধিক সাহসী তাদের দেয়া হয় অপারেশনের দায়িত্বে। বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা মাঝেমধ্যে বড় বড় অপারেশনও করে থাকে। অপারেশন কাফেলার সদস্যদেরও প্রযুক্তিগত জ্ঞান দেয়া হয়। অপারেশন সফলভাবে শেষ করতে এই ব্যবস্থা।
জামাল শীর্ষ জঙ্গীদের নির্দেশে জেএমবির সদস্য সংগ্রহ করতে রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি জেলায় সফর করেছে। সফরের ফাঁকে ফাঁকে শায়খ আব্দুর রহমান, বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানিসহ শীর্ষ জঙ্গীদের সঙ্গে তার গোপন বৈঠক হয়েছে। সেসব বৈঠকে কি নির্দেশ ছিল সে সম্পর্কে কোন কিছু স্বীকার করেনি জামাল। ২০০১ সালে জামাল ও রশিদুল একসঙ্গে জেএমবিতে যোগ দেয়। তবে জামালের দাবি বর্তমানে তার সঙ্গে জেএমবির কোন সমর্্পক নেই। শুধু জামাল নয়, তার দু'ভাইয়ের সঙ্গেও জেএমবির যোগাযোগ থাকতে পারে।
অন্যদিকে এ মামলায় গ্রেফতারকৃত অপরজন মিজানের সঙ্গে জেএমবির সম্পর্কের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা। মিজান কড়িহাটি মসজিদে ইমামতির চাকরি করতো। ২০০৮ সালে মিজান রশিদুলকে ইমামতির নিজের চাকরিটি দিয়ে দেয়। এজন্য স্থানীয়রা আপত্তি করলে মিজান মুসলিস্নদের আশ্বসত্ম করে জানায়, রশিদুল খুবই ভাল ইমাম। আমরা একই মতাদর্শের মানুষ। কোন অসুবিধা নেই। এরপর থেকে রশিদুল কড়িহাটি মসজিদে ইমামতি করে আসছিল। মিজানের দেয়া এমন তথ্যে সন্দেহ দানা বাঁধছে।
তদনত্মকারী সূত্র জানায়, জঙ্গীরাই যে জঙ্গী রশিদুলকে খুন করেছে এ বিষয়টি অনেকটাই নিশ্চিত। এমনকি খুনটি পরিকল্পিত। রশিদুলকে জেএমবিতে ফেরত নিতে দীর্ঘ সময় ধরে জেএমবি দলীয়ভাবে চেষ্টা করেছে। রশিদুল কোনক্রমেই রাজি হয়নি। পরে রশিদুলকে জেএমবি ভাল না লাগলে অন্যকোন সংগঠনে যোগ দেয়ার প্রসত্মাবও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু রশিদুল তাতেও রাজি না হওয়ায় দলীয়ভাবে রশিদুলকে খুনের সিদ্ধানত্ম হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ১ ফেব্রম্নয়ারি উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরে দিন দুপুরে রশিদুলকে প্রকাশ দিবালোকে শত শত মানুষের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। যাওয়ার সময় বোমা ফাটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করে হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে রশিদুলের স্ত্রী আলিফ নূর বাদী হয়ে আল আমীন, আকাশ ও নাদিম নামে ৩ জনের বিরম্নদ্ধে রাজধানীর উত্তরা থানায় মামলা দায়ের করেন।

No comments

Powered by Blogger.