রেজ্জাকুলকে ফের রিমান্ডে আনা হচ্ছে- ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা

চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্রের চালানের সঙ্গে জড়িত ছিল পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র। চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সংরৰিত জেটিতে অস্ত্র খালাস করে তা গনত্মব্যে পেঁৗছে দেয়ার তদারকিতেও ছিলেন বিগত জোট সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
সরাসরি ভূমিকায় ছিলেন রাষ্ট্রীয় দুই গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ের বেশ ক'জন কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমানের আদালতে গত শনিবার গভীর রাত পর্যনত্ম দেয়া জবানবন্দীতে এ তথ্য দিয়েছেন মামলার প্রধান আসামী হাফিজুর রহমান। তবে ১৬৪ ধারায় প্রদত্ত দ্বিতীয় দফা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতেও বেরিয়ে আসেনি অস্ত্র বহনকারী জাহাজের নাম। এদিকে, হাফিজের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে কারাগারে আটক এনএসআইর সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দারকে আবারও রিমান্ডে আনা হচ্ছে। আজ সোমবার আদালতে সিআইডির রিমান্ড আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। আবেদন মঞ্জুর হলে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে ঢাকায় টিএফআই সেলে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমানের আদালতে শনিবার বিকেল ৫টা থেকে রাত পৌনে পৌনে ১টা পর্যনত্ম প্রায় আটঘন্টা জবানবন্দী দেন এ আসামি। বিচারক মোট ৪৩ পৃষ্ঠায় হাফিজের এ জবানবন্দী রেকর্ড করেন। এর আগে প্রধান আসামি হাফিজুর রহমান অস্ত্র আটক মামলায় জবানবন্দী প্রদান করেছিলেন। দ্বিতীয় দফায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন অস্ত্র চোরাচালান মামলায়।
আদালতের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা যায়, জবানবন্দীতে হাফিজ অত্যনত্ম খোলামেলা বক্তব্য দিয়েছেন। বলেছেন- অস্ত্রগুলো সরকারের জেনেই তিনি খালাসের ঠিকাদারী নিয়েছিলেন। পরে ঘটনাস্থলে চট্টগ্রামের তৎকালীন ডিসি (পোর্ট) আবদুলস্নাহহেল বাকি এবং এসি (পোর্ট) মাহমুদুর রহমানের ভূমিকার কারণে তিনি বুঝতে পারেন, অস্ত্রগুলো উলফার। এর সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এবং ডিজিএফআই। যেহেতু সরকারের দায়িত্বশীল এ দুটি সংস্থার লোকজন সর্বৰণিক তদারকিতে ছিলেন সেহেতু তিনি ধারণা করেছিলেন এ অস্ত্র রাষ্ট্রের। ২০০৫ সালে গ্রেফতারের পর প্রথম জিজ্ঞাসাবাদেও তিনি এসব তথ্য দিয়েছিলেন। কিন্তু উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তারা তখন তাঁকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, এসব কথা বললে তুই মরবি।
হাফিজুর রহমান তার জবানবন্দীতে আরও জানান, রাতের আঁধারে অস্ত্র বহনকারী জাহাজটিকে পথ দেখাতে নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে আলো দিয়ে সাহায্য করা হয়েছে। প্রথমে এ চালান খালাসের চিনত্মা ছিল চট্টগ্রাম বন্দরে। কিন্তু সেখানে সমস্যা হবে মনে করে নেয়া হয় সিইউএফএল জেটিতে। তিনি নিজেকে স্রেফ একজন শ্রমিক সরবরাহকারী বলে দাবি করেন।
তৎকালীন সরকারের কোন মন্ত্রী জড়িত ছিলেন কিনা এ প্রসঙ্গে হাফিজ জানান, এর সঙ্গে পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র জড়িত থাকতে পারে। তবে সরাসরি খালাস প্রক্রিয়ায় ছিল দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা। তবে সংস্থা দুটি কাদের নির্দেশনায় কাজ করেছে তা তার জানা নেই। আর অস্ত্র বহনকারী জাহাজ দেখলেও অন্ধকারের জন্য তিনি জাহাজটির নাম দেখেননি।
তদনত্মকারী সংস্থা সিআইডি সূত্রে জানা যায়, হাফিজের জবানবন্দীতে ঘুরেফিরে এসেছে এনএসআই ও ডিজিএফআই'র নাম। অস্ত্র খালাসে জড়িত থাকার কথা তিনি অস্বীকার করেননি। তবে তাঁর দাবি_ অস্ত্রগুলো যে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার ছিল তা তিনি জানতেন না। শুধু তাই নয়, পণ্যগুলো যে অস্ত্র ছিল তাও তিনি জানতেন না।
এদিকে, গ্রেফতারকৃত আসামি ও সন্দেহভাজনদের জবানবন্দীতে বার বার একই ধরনের বক্তব্য আসায় সিআইডির তদনত্মকাজ ঘুরপাক খাচ্ছে মূলত দুই গোয়েন্দা সংস্থার অর্ধ ডজন কর্মকর্তার মধ্যে। গোয়েন্দা সংস্থার গ্রেফতারকৃত ৫ কর্মকর্তার মধ্যে ৪ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিলেও দফায় দফায় রিমান্ডে নিয়েও ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী নেয়া সম্ভব হয়নি তৎকালীন ডিজিএফআই পরিচালক (পরবতর্ী সময়ে এনএসআই ডিজি) মেজর জেনারেল (অব) রেজ্জাকুল হায়দারের। শীর্ষ পর্যায়ের এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা বিগত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্র তারেক রহমান এবং হাওয়া ভবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। টিএফআই সেলে দু্থদফায় জিজ্ঞাসাবাদের পরও তিনি মুখ খোলেননি এ ব্যাপারে। হাফিজের কাছ থেকে বেশকিছু গুরম্নত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ায় এসব বিষয়ে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে রেজ্জাকুল হায়দারকে।

No comments

Powered by Blogger.