শিশুর ঘর- শিপন কোড়াইয়া
ঘর আমাদের সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয়। শিশুর জন্য তো বটেই। চেষ্টা করলেই শিশুর মনের মতো করে তার ঘর সাজানো সম্ভব। সবার পৰে সম্ভব না হলেও নিজেদের ঘরেই শিশুর জন্য যতটুকু সম্ভব ততটুকুই সাজিয়ে দিন।
শিশুর ঘর সাজানোর আগে পরিকল্পনা করে নিন। প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এবং অন্যান্য জিনিস একসঙ্গে করম্নন। ঘরের আয়তন বুঝে ও শিশুর প্রয়োজন এবং সুবিধার কথা বিবেচনা করে সাজাতে হবে। শিশুর ঘর সাজানোর সময় তার নিরাপত্তার কথাটি মাথায় রাখুন। কারণ নিরাপদ ঘরই আসলে আরামদায়ক সাজানো ঘরে। শিশুরা সাধারণত চঞ্চল হয়, তাই শুধু শিশুর ঘর নয় পুরো বাসার ইলেক্ট্রিক সিস্টেম নতুন করে সাজান। কোন তার বাইরে বা মেঝেয় যেন না থাকে। নতুবা যে কোন সময় বিপদ ঘটতে পারে।আসবাবপত্র : স্কুলগামী শিশুদের জন্য নিচু খাটের ব্যবস্থাই ভাল। অন্যান্য আসবাব যেমন পড়াশোনার জন্য টেবিল-চেয়ার টেবিল ল্যাম্প। আর শিশুর পোশাক, খেলনা ইত্যাদি রাখার জন্য একটি কাবার্ডও দরকার। এতে শিশুর গুছিয়ে থাকার অভ্যেসও তৈরি হয়ে যায়। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কাবার্ডটি যেন শিশুর নাগালের মধ্যে হয়। সেটি যেন সে সহজেই খুলতে ও বন্ধ করতে পারে। দিতে পারেন ছোট একটি বুক সেলফ। পড়াশোনা শেষে সে নিজেই বইপত্র সাজিয়ে রাখবে। তাকে সাজিয়ে রাখবেন ছড়া, কবিতা, রূপকথা ও কাটর্ুনের কিছু বই। অবসরে বইগুলো পড়ে তার মানসিক বৃদ্ধি লাভ হবে। সম্ভব হলে একটি কম্পিউটারও দিন। কারণ সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাকে চলতে হবে। পৃথিবীর সব খোঁজখবর তাকে রাখতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহারও তাকে জানতে হবে। শিশুকে উপহার দিন মজার মজার গেমস, মীনা এবং বারবি কাটর্ুন। চমৎকার মুভিও উপহার দিয়ে ঘর সাজাতে পারেন। দেয়ালের সঙ্গে রাখতে পারেন ওয়েল ডেকোরেটেড একটি আয়না। যেটি হবে আকর্ষণীয় ও নিরাপদ। উঁচুতে রাখতে পারেন তার পছন্দমতো একটি ঘড়ি। এ ছাড়া ঘরে রাখতে পারেন রকিং চেয়ার বা রকিং ঘোড়া, হাতি, খেলনা জাতীয় কার বা পেস্নন। শিশুর ঘরটি সবসময় থাকতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। ঘরের এক কোণে রেখে দিন ময়লার ঝুড়ি। তাহলে সে ঘর ময়লা করবে না।
ঘরের বর্ণিলতা : শিশুর ঘরের রং খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ। শিশুর ঘর যদি তার পছন্দের রঙে সাজিয়ে দেয়া যায় তাহলে সে নিজেই আনন্দে মুগ্ধ হয়ে যাবে। শিশুদের ঘরে ঝকঝকে সাদার পরিবর্তে অফ-হোয়াইট, পিংক, খুব নরম হলুদ এমনকি লাল রংও ব্যবহার করা যেতে পারে। দেয়ালের কিছুটা অংশ অন্য রঙের বর্ডার টেনে ভিন্নতা আনতে পারেন। দেয়ালে বিভিন্ন চিত্র যেমন, গাছ, ফুল, কাটর্ুন, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ছবি ও রূপকথার চরিত্রগুলো এঁকে দেয়া যেতে পারে। ঘরের ছাদটাকে আকাশ বানিয়ে দিতে পারেন। দেয়ালে বিভিন্ন গল্প, উক্তি বা কবিতার লাইন লিখে আর্ট করতে পারেন। পড়ার টেবিলের সামনের দেয়ালে বর্ণমালাগুলো বিভিন্ন রঙে এবং তার সঙ্গে মিল রেখে ছবি এঁকে দিন। দরজাটাকে গুহার দ্বারা বানিয়ে দিন। দেখবেন শিশুর ঘরই হবে তার পৃথিবী। শিশুর ঘরের আসবাবপত্রেও রঙের ভিন্নতা আনুন। কাবার্ডটি লাল রঙের হলে আরও বেশি আকর্ষণীয় হবে। ঘরের বিছানার ছাদর। ঘরের পর্দা এগুলো যেন ওর জন্য আকর্ষণীয় হয়। ঘর যেন সামঞ্জস্যপূর্ণ ও ছন্দময় হয়।
আলোর ভুবন : শিশুর ঘরে আলোর ব্যবহারও খুব গুরম্নত্বপূর্ণ। কারণ বর্তমানে শহরে শিশুদের বেশিরভাগ সময়টাই দেয়া উচিত যে ঘরে প্রচুর আলো-বাতাস আসে। ধুলোবালি কম ঢোকে। শিশুর পড়ার টেবিল যেদিকে থাকবে সেদিকে উজ্জ্বল সাদা আলো দেয়া ভাল। ঘরের বিভিন্ন কোণে স্পট লাইট বা ওয়ার্ম ফোকাস লাইট ব্যবহার করলে দেখবেন পুরো ঘরের আবেদনই পাল্টে গেছে। শিশুর ঘরে রাতে ছোট অল্প আলোর জন্য হাল্কা নীল আলোই সবচেয়ে ভাল। এই আলোর ওপর কভার দিলে আরও ভাল হয়। বাজারে সুন্দর লাইট কভার পাওয়া যায়। যেমন-প্রাকৃতিক দৃশ্য, সমুদ্র, ফুল বা বিভিন্ন নক্সার। এ ছাড়া কাপড় ও কাগজের বিভিন্ন লাইট শেডও পাওয়া যায়।
কোথায় পাবেন কেমন দামে : শিশুর ঘরের বিভিন্ন আসবাব পান্থপথ, গুলশান মার্কেটগুলোতে ভাল পাবেন। দাম পড়বে ৩০০০-৯০০০-এর মধ্যে। বিছানার চাদর, পর্দা নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোডের দোকানগুলোতে সাধ্যের মধ্যে পেয়ে যাবেন। একটু দেখেশুনে শিশুর আসবাবপত্র কিনুন। রেডিমেডের পরিবর্তে অর্ডার দিয়ে তৈরি করালে ভাল, মনমতো ও প্রয়োজনমতো হবে। ফোরের জন্য কার্পেট পাট জাতীয় না দিয়ে মাদুর জাতীয় দিলেই ভাল হয়। পাতলা চটের উল দিয়ে আপনি নিজেও নকশা করে সুন্দর মাদুর বানিয়ে দিতে পারেন। দেখেশুনে কিনে নিন একটা পাপোশ। কয়েকটি ময়লা পরিষ্কার করার ব্রাশ কিনে শিশুকে শিখিয়ে দিন কিভাবে ময়লা পরিষ্কার রাখতে পারবে। আর এভাবেই ঘরটাকে সাজিয়ে দিন শিশুর স্বপ্নপুরী।
No comments