আওয়ামী লীগ কখনোই '৭২-এর সংবিধানে ফিরে যেতে পারবে না মওদুদ

আওয়ামী লীগ কখনোই ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে ফিরে যেতে পারবে না বলে মনত্মব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এমপি।
তিনি বলেন, বিশেষ ৰমতা আইনের আওতায় বিনাবিচারে আটক এবং জরম্নরী অবস্থা জারির ব্যবস্থা মূল সংবিধানে ছিল না। সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে এ দু'টি আইন চালু করা হয়েছে। মূল সংবিধানে ফিরে যেতে হলে এ দু'আইন তুলে নিতে হবে। সাহস থাকলে আওয়ামী লীগ তা করে দেখাক।
শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ মওলানা ভাসানী মিলনায়তনে বিএনপি ঘরানার সংগঠন চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ আয়োজিত "সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল, '৭২-এর সংবিধান ও বাংলাদেশের বর্তমান বাসত্মবতা" শীর্ষক আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। একইসঙ্গে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মনিরপেৰতার বিষয় ছিল না। পঞ্চম সংশোধনী বিষয়ে আপীল বিভাগ এখনও পূর্ণাঙ্গ রায় দেয়নি উলেস্নখ করে তিনি বলেন, আদালত কি রায় দেবে জানি না। কিন্তু এ বিষয়ে চূড়ানত্ম রায় দেবে জনগণ। জনগণের আদালতেই বিষয়টির চূড়ানত্ম নিষ্পত্তি হবে। জিয়ার লাশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যকে কুরম্নচিপূর্ণ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আমি নিজে জিয়ার লাশ দেখেছি। তাঁর বুকে গুলি লেগেছিল, কিন্তু মুখাবয়ব ঠিকই ছিল। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এমএ হান্নানের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শ্যামা ওবায়েদসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
সভায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সংবিধানের কোন ব্যাখ্যা প্রয়োজন হলে অথবা সংবিধান নিয়ে কোন তর্ক-বিতর্ক উঠলে লিভ দেয়া হয়। অর্থাৎ পূর্ণাঙ্গ শুনানি হয়। কিন্তু পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরম্নদ্ধে আপীল আবেদন খারিজ করে দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। অর্থাৎ আমাদের লিভ দেয়া হলো না। এটিকে বিরল ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করে মওদুদ বলেন, লিভ না দেয়ার ৰমতাও সর্বোচ্চ আদালতের রয়েছে। কিন্তু আমরা আশা করেছিলাম, যেহেতু বিষয়টি রাজনৈতিক, স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল, সেহেতু পূর্ণাঙ্গ শুনানি করেই রায় দেয়া হবে। তিনি বলেন, আদালত কি রায় দেবে জানি না, তবে আমরা এখনও মনে করি এ বিষয়ে চূড়ানত্ম সিদ্ধানত্ম দেবে জনগণ। জনগণের আদালতেই বিষয়টির নিষ্পত্তি হবে। মওদুদ বলেন, আদালত আপীল খারিজের পাশাপাশি বলেছেন, হাইকোর্টের রায় পর্যালোচনা করা হবে এবং কিছু সংশোধনী আনা হবে। আমরা আশা করব, আপীল বিভাগে আমরা যেসব যুক্তি তুলে ধরেছি, সেসব যুক্তির প্রেৰাপটে আদালত নিরপেৰ ও স্বাধীনভাবে রায় দেবে। তবে লিভ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানি করে বিষয়টির নিষ্পত্তি করা উচিত ছিল বলে মনত্মব্য করেন সাবেক এ আইনমন্ত্রী। তবে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে এত তাড়াহুড়ার প্রয়োজন ছিল না উলেস্নখ করে তিনি বলেন, এ বিষয়ে দুই মাস পর রায় হলেও কোন ৰতি হতো না। এ্যাটর্নি জেনারেল উদ্দেশ্যমূলকভাবে এ বিষয়ে আদালতকে চাপ প্রয়োগ করেছেন_ অভিযোগ করে তিনি এ্যাটর্নি জেনারেলের ভূমিকার সমালোচনা করেন। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, সংবিধান পরিবর্তনের জন্য সংসদে প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা সরকারের আছে। সরকার সংবিধান সংশোধন করতে চাইলে সংসদেই তা করতে পারে। কিন্তু সরকার তা না করে আদালতের মাধ্যমে করতে চাচ্ছে বলে তিনি মনত্মব্য করেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের সমালোচনা করে বলেন, হাইকোর্টের রায়ে জিয়ার ৰমতাগ্রহণকে অবৈধ উলেস্নখ করে বলা হয়েছে, জিয়া জোর করে ৰমতা নিয়েছেন। কিন্তু এটা সত্য নয়। জিয়া ৰমতা দখল করেননি। জিয়াকে ৰমতায় বসানো হয়েছে। আবার হাইকোর্ট পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করেছেন কিন্তু জিয়া গণতন্ত্রে ফিরে আসতে যেসব সংশোধনী এনেছেন তা বহাল থাকবে বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। আর এসব বৈষম্যই আমরা আপীল বিভাগে তুলে ধরেছিলাম। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধর্মনিরপেৰতা ছিল না মনত্মব্য করে বলেন, ১৯৫৪ সালের ২১ দফা, '৬৬ সালের ৬ দফা, '৬৯ সালে ছাত্রদের ১১ দফার কোনটাতেই ধর্মনিরপেৰতার বিষয় ছিল না। এমনকি আমাদের স্বাধীনতার মূল ভিত্তি মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের 'স্বাধীনতার সনদ'-এও ধর্মনিরপেৰতার বিষয়টি লেখা নেই।
যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, শেখ মুজিব ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক। সাড়ে সাত কোটি মানুষের আশা- আকাঙ্ৰার প্রতীক। যার জন্য এ দেশের আপামর মানুষ রোজা রেখেছেন, নামাজ পড়েছেন। সেই শেখ মুজিবই '৭২-এর সংবিধানে প্রথম পরিবর্তন আনেন। তিনি বর্তমানে বিচার বিভাগীয় সন্ত্রাসকে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাস হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের মধ্য দিয়ে জাতির বিবেককে আহত করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.