একানত্ম সাৰাতকারে এইচএম এরশাদ

ৰমতাগ্রহণের এক বছর পূর্ণ করেছে মহাজোট সরকার। সরকারের অন্যতম অংশীদার জাতীয় পার্টি। মহাজোটে থেকে জাতীয় সংসদে ২৯ আসনের প্রতিনিধিত্ব এ দলটির। যার নেতৃত্বে আছেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
যিনি সাবেক সেনাপ্রধান। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। প্রায় নয় বছর ছিলেন দেশের দুর্দ- প্রতাপশালী রাষ্ট্রকর্তা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট গঠন করে জাতীয় পার্টি। বিজয় নিশ্চিত করতে মহাজোটের পৰ থেকে দেয়া হয় নানা প্রতিশ্রম্নতি। তিনটি আসনে জয় লাভ করেন এরশাদ। ইতোমধ্যে সরকারের পেরিয়ে গেছে এক বছর। মহাজোটের অন্যতম শরিক হিসেবে কিভাবে দেখেন সরকারের এক বছর? তা জানতেই জনকণ্ঠ মুখোমুখি হয় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের। প্রায় এক ঘণ্টার সাৰাতকারে উঠে এসেছে নানা বিষয়। কথা বলেছেন, সরকারের সফলতা, ব্যর্থতা ও করণীয় প্রসঙ্গে। এসেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজিসহ অনেক কিছু। বিরোধী দলের সমালোচনা, আন্দোলনের হুমকি, সংসদ বর্জন, সরকারের ভারত সফরে অর্জন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ উন্নয়নে করণীয় নিয়েও কথা বলেছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবন, শেষ ইচ্ছা, অপূর্ণতা, আগামী নির্বাচন নিয়েও খোলামেলা কথা বলেছেন সাবেক এ রাষ্ট্রপ্রধান। কথা বলেছেন ১৪ দল ও মহাজোট নিয়েও। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুনর্বাসনের অভিযোগের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন তিনি। মহাজোট সরকারের আরও কত সময় ৰমতায় থাকা উচিত এমন ধারণাও দিয়েছেন। জাতীয় পার্টিকে কোথায় নিতে চান তিনি সে কথাও বলেছেন সাৰাতকারে। দলকে সংগঠিত করার নানা উদ্যোগের কথাও জানিয়েছেন। বিভিন্ন সেক্টরে করণীয় নিয়ে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন এরশাদ। তাঁর সেই ব্যতিক্রমী সাৰাতকার গ্রহণ করেছেন দৈনিক জনকণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি উত্তম চক্রবর্তী ও স্টাফ রিপোর্টার রাজন ভট্টাচার্য। ছবি তুলেছেন আমাদের আলোকচিত্রী শেখ মামুন।
নিম্নে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের সাৰাতকারের পুরো বিবরণ দেয়া হলো।

উত্তম চক্রবর্তী : মহাজোট সরকারের এক বছরের মূল্যায়ন?
এরশাদ : তুলনামূলক বিবেচনায় বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের চেয়ে মহাজোট সরকারের গত এক বছরে সাফল্য অনেক। দুর্নীতি কমে এসেছে। শীর্ষ দুর্নীতিগ্রসত্ম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের বদনাম এখন আর আগের মতো নেই। দুর্নীতিগ্রসত্ম দেশের পরিচিতি থেকে মুক্তি মিলছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। দু'দেশের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের পথ সুগম হয়েছে। কোপেনহেগেন সম্মেলনে পরিবেশসংক্রানত্ম বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সারা পৃথিবীর মানুষ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর জোরালো বক্তব্যের পর এখন বিশ্ববাসীর দৃষ্টি বাংলাদেশের দিকে। আমরা উপকৃত হয়েছি। ইতোমধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনরোধে কাজ করার জন্য আমরা আর্থিক সাহায্য পেয়েছি। এখন থেকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে নিজেদের রৰা করতে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। সরকার ৰমতায় আসার আগে যে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিল, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, সারে ভর্তুকি, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন গত এক বছরে তার সবকিছুই অর্জন সম্ভব হয়েছে। কৃষি কাজে ভতর্ুকি দেয়ার কারণে কৃষি উৎপাদিত সব পণ্যের দাম কমেছে। এ সবকিছুই সরকারের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী কৃষিৰেত্রে সরকারের সুপরিকল্পনা ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সব দিক বিবেচনা করলে মহাজোট সরকারের গত এক বছর ছিল সার্থকতার বছর। এক কথায় বলা যেতে পারে গত এক বছর বিগত সরকারের চেয়ে উন্নতমানের সরকার ছিল। ছিল সার্থকতার বছর। বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। ব্যর্থতার চেয়ে সফলতার পালস্না ভারি।
উত্তম চক্রবর্তী : সরকারের এক বছরে সফলতা-ব্যর্থতা?
এরশাদ : মহাজোট সরকারের এক বছরে দেশে একটি রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তন লৰ্য করা যাচ্ছে। দেশজুড়ে শানত্মিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে। সংঘাতের রাজনীতি নেই। এ অবস্থা চলমান থাকলে নির্বাচনী ইশতেহার বাসত্মবায়ন সম্ভব হবে। ব্যর্থতার দিক বিবেচনা করলে ২/১টি জায়গায় সরকারের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী কঠোর হাতে সন্ত্রাস দমনে উদ্যোগ নিয়েছেন। সন্ত্রাস কিছুটা কমে আসলেও টেন্ডার ও চাঁদাবাজি কমেনি। জিনিসপত্রের দাম আগে কমলেও আবারও বাড়তে শুরম্ন করেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণেও উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জিনিসপত্রের দাম কমাতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যাতে সবকিছুই সহনীয় পর্যায়ে থাকে। চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের পৰ থেকে নেয়া হয়েছে রেশনিং ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে নির্বাচনের প্রতিশ্রম্নতি রৰার চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার। আশা করি আগামীতেও এর ধারাবাহিকতা থাকবে। টেন্ডার-চাঁদাবাজির দিকে সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিত। এ দু'টি কাজ দমন করতে পারেনি সরকার। আমি মনে করি সরকারের দুর্বল পয়েন্ট এ দু'টিই। তাছাড়া ৰমতায় আসার পরপরই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল পর্যায়ে আসে। কিন্তু আবারও তা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। সরকার এ ব্যাপারে আবারও পদৰেপ নিয়েছে। আশা করি পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে আসবে। তাছাড়া মহাজোট সরকারের এক বছরে দেশে কোন হরতাল ছিল না; ছিল না সংঘাত। সংঘর্ষের রাজনীতি চোখে পড়েনি। শানত্মিতে রাজনীতি করা সম্ভব হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল।

রাজন ভট্টাচার্য : প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে দ্বিপাৰিক চুক্তির প্রেৰিতে দেশ বিক্রির অভিযোগ তুলেছে বিএনপি। এর প্রেৰিতে আপনার বক্তব্য?
এরশাদ : দেশ বিক্রি হলো কোথায়? সংসদে এসে এ কথা বলুক বিরোধী দল। কারণ দেশ তো গয়না নয়। যে চাইলেই বিক্রি করে দেয়া যায়। ভারতের সঙ্গে একটা যৌথ ইশতেহার স্বাৰর হয়েছে। এর মানে ভারত সরকার উত্থাপিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে রাজি এবং আলোচনা করলে আমরা হয়ত একটা সুফল পাব। আমি মনে করি, ভারতের সঙ্গে আলোচনা একটা বিরাট ধরনের ব্রেক থ্রো ঘটেছে। যা উন্নয়নের মাইলফলক রচনা করতে পারে। আনত্মর্জাতিক সমুদ্রসীমা নির্ধারণ ও তিসত্মার পানি বণ্টনের বিষয়টি এখনও সুরাহা হয়নি। এছাড়া উত্থাপিত আরও কয়েকটি বিষয় আলোচনা ছাড়া সমাধান হবে না। এখন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যে, এসব বিষয় নিয়ে বিসত্মারিত আলোচনা হতে পারে। আলোচনা হলে আমার মনে হয় ভারত আমাদের পজিটিভলি সাহায্য করবে। কারণ ভারতের সে রকম মানসিকতা আমি লৰ্য করেছি।

রাজন ভট্টাচার্য : এ ব্যাপারে বিএনপি-জামায়াতসহ ইসলামী দলগুলো আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। আপনি কি মনে করেন?
এরশাদ : আন্দোলন করতে হলে পয়েন্ট দরকার। আন্দোলন করার জন্য একটা ৰেত্র প্রয়োজন। আমার কথা হলো কি নিয়ে আন্দোলন করবে বিএনপি? চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জিনিসপত্রের দাম ছিল আকাশছোঁয়া। বর্তমান সরকার ৰমতায় আসার পর জিনিসপত্রের দাম কমেছিল। এখন যদিও কিছুটা বেড়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের পৰ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই আমাকে এ কথা বলেছেন। ইতোমধ্যে রেশনিং সিস্টেম চালু করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিএনপির সময় ঘটেছিল চরম অবনতি। এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। যতটুকু ঘাটতি আছে তা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। বলতে গেলে বিএনপি সরকারের আমলে পাঁচ বছর একটা অরাজকতার মধ্যে ছিলাম। সেখান থেকে দেশকে তুলে আনা কঠিন কাজ। এর পরেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তা করেছেন। কোন অনিশ্চয়তা নেই। কাল কি হবে? কি হতে পারে? এমন কোন পরিস্থিতি নেই। মানুষের মনে শানত্মি আছে। মোটামুটি প্রশাসন চলছে। সব দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। সংসদ চলছে। মানুষের মনে ফিরে এসেছে আস্থা। তাহলে আন্দোলন কেন? দেশ বিক্রির অভিযোগে আন্দোলন সম্ভব নয়। ভারতের সঙ্গে এখনও কোন চুক্তি স্বাৰর হয়নি। যে আমাদের মূল্যবান কিছু চলে গেছে বা যেতে বসেছে। এর কিছুই হয়নি। এখনও সবকিছুই আমাদের হাতে। আমরা শুধু বসার জন্য চুক্তি করেছি। এর মধ্যে আছে তিসত্মার পানি, কোন্ কোন্ পণ্য ভারতে বিনাশুল্কে যেতে পারে, দ্বিপাৰিক সম্পর্কোন্নয়ন, সমুদ্রসীমা নির্ধারণসহ বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে। ভারতের সহযোগিতা ছাড়া বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করতে না পারলে অনেক জটিলতাই থেকে যাবে। তাছাড়া বিএনপি পোর্ট ব্যবহারের বিরোধিতা করছে। আমার কথা হলো অন্য দেশ পোর্ট ব্যবহার করতে পারলে ভারতের ব্যবহারের ৰেত্রে অসুবিধা কোথায়? পোর্টের ব্যবহার যত বাড়বে তত দেশের আর্থিক আয় বাড়বে। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নজির আছে, অন্য দেশকে পোর্ট ব্যবহারের অনুমতি দেয়ায় সে দেশের পুরো অর্থনীতি পাল্টে যাবার।
রাজন ভট্টাচার্য : নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতি অনুযায়ী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি কোন্ পর্যায়ে?
এরশাদ : যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতি ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার শেষ হয়েছে। এখন আমার মনে হয় সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরম্ন করবে। সরকারও বলছে যুদ্ধারাধীদের বিচারের কাজ শুরম্নর বিষয়ে। আমি আইনমন্ত্রীর কাছে বার বার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরম্ন করার কথা শুনেছি। তিনি বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই। কথা হলো কিভাবে করবেন, কেমন করে করবেন, কারা যুদ্ধাপরাধী আমরা সে বিষয়টি জানি না। তবে সরকারের বিভিন্ন তরফ থেকে এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে; তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। আমি মনে করি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আগেই হওয়া উচিত ছিল। তবে বর্তমান সরকারের আমলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ আছে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে পারবে কিনা? সন্দেহের কারণ হলো, কারা যুদ্ধাপরাধী, তাদের বিরম্নদ্ধে যথেষ্ট সাৰী-প্রমাণ আছে কিনা? সেজন্য মানুষের মনে সন্দেহ থাকতে পারে। তবে সরকার যেহেতু এ ব্যাপারে বদ্ধপরিকর_ফলে আমার মনে হয়, বিচার হওয়ার সম্ভাবনাও যথেষ্ট। আমার ধারণা নেই বিচারের জন্য সাৰী কতটা আছে। ১৯৭১ সালে খবরের কাগজে যুদ্ধাপরাধের মতো অনেক ঘটনাই প্রকাশিত হয়েছে। বিচারের জন্য খবরের কাগজের কাটিং যথেষ্ট কিনা আমার ধারণা নেই। সেজন্য মনে সন্দেহ হয় বিচার করতে পারবে কিনা। তবে এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান খুব পজিটিভ মনে হয়। তারা বিচার করবেই। এতে মনে হয় সরকারের কাছে অপরাধীদের ব্যাপারে যথেষ্ট প্রমাণসহ তথ্য থাকতে পারে। যার মাধ্যমে প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীদের প্রমাণ করতে সরকার সৰম হবে।
উত্তম চক্রবর্তী : বিচার করতে গিয়ে বিরোধী দলের কেউ অভিযুক্ত হয়ে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার চেষ্টা করতে পারে। এ প্রেৰাপটে আপনার মতামত?
এরশাদ : বিচারে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিরোধী দলের পৰ থেকে কেউ অভিযুক্ত হলে আন্দোলনের সৃষ্টি হতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কোন বিষয় নয়। তবে অভিযুক্ত হয়ে আন্দোলনে নামলে তা দৃঢ় হবে না। মানুষ গ্রহণ করবে না। কেননা সবাই যদি বলে তিনি যুদ্ধাপরাধী, আদালতে প্রমাণ হয় তা হলে আন্দোলনের কি আছে। আমি মনে করি এ বিষয়ে তাদের আন্দোলনের পয়েন্ট মানুষ গ্রহণ করবে না। বিচার হলে অভিযুক্ত ব্যক্তি দলকে নিয়ে কিছু করতে পারবে না।

রাজন ভট্টাচার্য : ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টির দূরত্ব আছে কি না?
এরশাদ : ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টির কোন টানাপোড়েন নেই; নেই বিরোধ। তবে ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সরাসরি কোন যোগাযোগ নেই। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে জাতীয় পার্টির যোগাযোগ। ১৪ দলের সঙ্গে সরাসরি কোন যোগাযোগ নেই এ কথা সত্য। তবে তারা মহাজোটে আছে। অতএব ১৪ দলের সঙ্গে আমাদের কোন বিরোধ নেই। ১৪ দলের সঙ্গে মতবিরোধের কোন উপায় নেই; হওয়া উচিতও নয়। যেহেতু আমাদের লৰ্য একটাই_ সুষ্ঠুভাবে দেশ পরিচালনা করা; মহাজোটের দেয়া প্রতিশ্রম্নতি পালন করা। কারও সঙ্গে বিরোধ নয়। আমরা সে লৰ্যকে সামনে রেখে একযোগে কাজ করে যাচ্ছি। ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টির দূরত্ব কমাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাই যথেষ্ট। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ডেকে একসঙ্গে বসালে দূরত্ব আর থাকে না। যে কোন বিষয়ে আমরা একসঙ্গে আলোচনা করতে পারি। সবার মতামত তুলে ধরতে পারি। তখন আর কোন দূরত্ব থাকে না। সবাই এক হয়ে যাই। যেহেতু লৰ্য একটাই_ সমস্যা সমাধান করে দেশটাকে সুন্দরভাবে চালানো। তাই মহাজোট নেত্রী ইচ্ছা করলেই এর সমাধান দিতে পারেন। প্রধানমন্ত্রীই একমাত্র একসঙ্গে বসার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারেন। ইতোমধ্যে সে প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়েছে। আশা করি তা অব্যাহত থাকবে।
রাজন ভট্টাচার্য : বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার বিষয়ে আপনার মনত্মব্য?
এরশাদ : বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ায় আমি সনুত্মষ্ট। জাতির জনক হত্যাকা-ের রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে গোটা জাতি আজ দায়মুক্ত হলো। স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার কাজ শেষ হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী কোন হসত্মৰেপ করেননি। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার শুরম্ন করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ নানা প্রতিবন্ধকতা দূর করে বিচার কাজ শুরম্ন হয়। বিচার নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। সকল হত্যাকা-ের বিচার হওয়া উচিত। তাই মানুষ বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণ করেছে। তাছাড়া বড় কথা হলো, বিচার সম্পন্ন করতে স্পেশাল কোন ট্রাইবু্যনাল গঠন করা হয়নি। এখানেই প্রমাণিত হয় বিচার প্রক্রিয়া পুরোপুরি স্বচ্ছ ছিল। তাছাড়া সরকারের পৰ থেকে বিচার বিভাগের ওপর কোন প্রকার চাপ সৃষ্টি করা হয়নি। আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। আদালতের এ রায় বিচার বিভাগের ওপর মানুষের আস্থা আরও বাড়িয়ে তুলবে।
উত্তম চক্রবর্তী : রাষ্ট্রপতি ছিলেন। মহাজোট সরকারে রাষ্ট্রপতি হওয়ার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেছিলেন আপনি। পাননি। এ বিবেচনায় আপনার জীবনের অপূর্ণতা?
এরশাদ : জীবনের অপূর্ণতা দলকে শক্তিশালী করতে না পারা। দলকে শক্তিশালী করার মধ্য দিয়ে অপূর্ণতা পূরণ করতে চাই। এটাই আমার শেষ ইচ্ছা। তাই লৰ্য পূরণে নানামুখী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করি সফল হব। আমার মৃতু্যর পর জাতীয় পার্টির পৰ থেকে যেন জন্ম ও মৃতু্যদিবস পালন করা হয়। দলকে সে অবস্থানে রেখে যেতে চাই। বঙ্গবন্ধু ও জিয়া নেই। প্রতিবছর তাঁদের মৃতু্য ও জন্মদিন দলের পৰ থেকে পালন করা হচ্ছে। আমি সে অবস্থানে দলকে রেখে যেতে চাই। যেন মৃতু্যর পর দলের নেতাকর্মীরা নানা আয়োজনে আমাকে স্মরণ করে। আমি যতদিন আছি দলকে শক্তিশালী করার প্রয়াস চালিয়ে যাব; যাতে করে মহাজোটের হাতকে শক্তিশালী করতে পারি।
উত্তম চক্রবর্তী : জরম্নরী অবস্থার নামে সেনাবাহিনী ৰমতা নিলে দেশ পিছিয়ে যায়? জরম্নরী অবস্থার নামে ৰমতা গ্রহণের ব্যাপারে আপনার অবস্থান?
এরশাদ : নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে প্রেৰাপটে জরম্নরী অবস্থা জারি হয়েছিল সেটা আমার মনে হয় যৌক্তিক ছিল। নির্বাচনী ফলাফল চার দলের পৰে নিতে এক কোটি ৪০ লাখ ভুয়া ভোটার করা হয়। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব ছিল না। সেদিক বিবেচনা করে বলব, জরম্নরী অবস্থা ও ১/১১-এর ভূমিকা আমাদের দেশকে বড় ধরনের বিপর্যয়ের হাত থেকে রৰা করেছিল। বিএনপি অভিযোগ করলেও ১/১১ আওয়ামী লীগের সৃষ্টি নয়। বিএনপি ১/১১-এর জন্য দায়ী। কারণ নির্বাচনের আগে ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করে বিএনপি। আওয়ামী লীগ নয়, জাতীয় পার্টিও নয়। কেন করেছিল? নির্বাচনে জয়ী হতেই জাল ভোটার তৈরি করে তারা। উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগের নতুন পদ সৃষ্টি করেছিল তারাই। আগে এসব পদ ছিল না। উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন কর্মকর্তা যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছিল; তারা সবাই ছিল ছাত্রশিবির কর্মী। বিএনপির কারণেই ১/১১ ও জরম্নরী অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। তারা নির্বাচনের মাধ্যমে বিরোধী দলকে পরাজিত করতে ছেয়েছিল। সর্বৰেত্রেই ছিল দলীয়করণের প্রভাব। এমন পরিবেশ সৃষ্টি করার কারণেই ১/১১ আসতে বাধ্য হয়েছিল। তাছাড়া চারদলীয় জোট রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টা করেছিল। এটা কোন সময় হতে পারে না। অর্থাৎ তারা সব দিকেই চেষ্টা করেছিল নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও ৰমতায় আসার। এমন ব্যবস্থা করেছিল নির্বাচনে বিরোধী দলের জয়ী হওয়ার কোন উপায় থাকবে না। পাবলিক সার্ভিস কমিশনে বিএনপির অযোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। বিএনপি হলেই তারা চাকরি পেয়েছিল। বাংলাদেশের প্রশাসনকে ২০/৩০ বছরের জন্য ধ্বংস করেছে বিএনপি।
রাজন ভট্টাচার্য : বিরোধী দলের অভিযোগ, বর্তমান সরকার সেনা সমর্থনে ৰমতায় এসেছে। বেনিফিসিয়ারি সরকার বলেও অভিযোগ করা হয়। এ অভিযোগের প্রেৰিতে আপনার বক্তব্য?
এরশাদ : বেনিফিসিয়ারি আমরা কেউ নই। বেনিফিসিয়ারি দেশের জনগণ। যে ছকের নির্বাচন আয়োজন করা হয়েছিল সেভাবে নির্বাচন হলে আবারও ৰমতায় আসত চারদলীয় জোট। আবারও লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হতো। বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাচার হতো। এ অবস্থা থেকে দেশ রৰা পেয়েছে। এজন্য আমি বলি জনগণ উপকৃত হয়েছে। অাঁতাত করে আমরা ৰমতায় আসিনি। তারা আবারও ৰমতায় এলে জনগণের দুর্ভোগের শেষ ছিল না। মহাজোট সরকার ৰমতায় আসায় জনগণ উপকৃত হয়েছে। আশা করি জনস্বার্থে কাজ করে যাবে সরকার।
উত্তম চক্রবর্তী : তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন নিয়ে আপনার মতামত?
এরশাদ : আমি সব সময়ই তত্তা্ববধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরোধিতা করে আসছি। এক কথা বার বার বলে আসছি, পৃথিবীর কোথাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রচলন নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা মানেই রাজনীতিবিদদের কপালে বিরাট একটা কলঙ্কের তিলক। এ তিলক ও কলঙ্ক যত তাড়াতাড়ি মুছে ফেলা যায় ততই গণতন্ত্র সুষ্ঠু পথে চালিত হতে পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কোন প্রয়োজন নেই। পাশর্্ববর্তী দেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রচলন নেই। আমরা গণতন্ত্রের কথা বলছি অথচ নিজেদের ওপর আস্থা রাখতে পারছি না_ এভাবে তো গণতন্ত্র চলতে পারে না। রাজনীতিবিদ দিয়ে আমরা দেশ চালাতে পারি। তবে নির্বাচনের জন্য রাজনীতিবিদদের ওপর আস্থা না রাখতে পারলে তারা দেশ চালাবে কি করে? পৃথিবীতে আমরা প্রতিষ্ঠিত করছি, রাজনৈতিক নেতাদের হাতে নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচনের ব্যাপারে নেতাদের বিশ্বাস করা যাবে না। অর্থাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠান সুষ্ঠু করতে দেশের রাজনীতিবিদরা যোগ্য নয়। রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে যদি নির্বাচন সুষ্ঠু করা না যায়, তাহলে সুষ্ঠুভাবে আমরা দেশ চালাব কি করে? অতএব তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চিরকালের জন্য শেষ হওয়া উচিত। যে কোন মূল্যে এ ব্যবস্থা মুছে দিতে হবে। আমাদের দেশেও এর প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।
রাজন ভট্টাচার্য : মহাজোটের ঐক্য অটুট রেখে আগামী নির্বাচন নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
এরশাদ : দেশের স্বার্থে আমাদের আবার ৰমতায় আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সাল পর্যনত্ম কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন। চলছে ২০১০ সাল । আরও ১০ বছর ৰমতায় থাকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তা সম্ভব। কারণ আমাদের সরকারের বিরম্নদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। মন্ত্রীরা স্বচ্ছভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের বিরম্নদ্ধেও কোন দুর্নীতির অভিযোগ নেই; লুটপাট নেই। এটা সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। একটা লুটেরা রাজত্ব আমরা অতিক্রম করে চলে আসছি। এখন যেখানে লুটপাট নেই; মন্ত্রীদের বিরম্নদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নেই এবং দেশের মানুষ শানত্মিতে থাকলে অবশ্যই ২০২১ সাল পর্যনত্ম মহাজোট ৰমতায় থাকবে। তবে সরকারের কর্মকা-ে সচেতন থাকতে হবে। বিরোধী দল যেন সরকারের কর্মকা- নিয়ে কোন ইসু্য সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
উত্তম চক্রবর্তী : আগামীতে জাপার একক নির্বাচনের শক্তি অর্জনের নেপথ্য কারণ?
এরশাদ : আমি এককভাবে নির্বাচন করার কথা বলিনি। মহাজোটে থেকে নির্বাচন করার কথা বলেছি। মোট কথা হলো, মহাজোটে দুর্বল নয়; শক্তিশালী পার্টনার হয়ে থাকতে চাই। জাতীয় পার্টি দুর্বল হলে মহাজোট শক্তিশালী হবে না। মহাজোটকে সাহায্য করতে পারব না। তাই শক্তি অর্জন করতে চাই সর্বৰেত্রে। যাতে করে মহাজোট আরও শক্তিশালী হয়। আমরা শক্তিশালী হলে সফলতা অনেক আসবে। যেসব এলাকায় বিরোধী দলের আসন আছে সেখানে আমরা শক্তি অর্জন করতে পারলে বিরোধী দলের অনেক আসন তো নিয়েও আসতে পারি। জাতীয় পার্টি শক্তিশালী হলে মহাজোট শক্তিশালী হবে। উদ্দেশ্য এটাই। আমরা সত্যিকার অর্থে একটা শক্তিশালী দলে রূপ নিতে পারলে মহাজোটকে আরও শক্তিশালী করতে পারি। আওয়ামী লীগের এককভাবে নির্বাচন করার শক্তি আছে। তারা ৩০০ নয়, প্রয়োজনে তিন হাজার প্রার্থী দিতে পারবে। এর পরেও তারা জোট করেছে। জোটের রাজনীতি এখন সর্বৰেত্রে প্রচলিত আছে। এজন্যই আমরা জোট করে এগিয়ে যেতে চাই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন জোটভুক্ত রাজনীতির প্রচলন।
উত্তম চক্রবর্তী : তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নিতে উদ্যোগ সম্পর্কে বলুন?
এরশাদ : জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে কেন্দ্রীয়ভাবে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের প্রত্যেক জেলা উপজেলা পর্যায়ে কাউন্সিল হচ্ছে। প্রথম বারের মতো নির্বাচিত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এতে দলের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়বে; আসবে যোগ্য নেতৃত্ব। তাছাড়া আমরা যেখানে যাই সাধারণ মানুষের বক্তব্য_ জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা আছে। কিন্তু যোগ্য প্রার্থী নেই। এ কারণে নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফলাফল আসে না জাতীয় পার্টির পৰে। আবার অনেক এলাকা আছে যেখানে জাতীয় পার্টির যোগ্য প্রার্থী থাকলেও সমর্থক কিংবা ভোট চাওয়ার লোক নেই। দলকে সংগঠিত করতে এসব বিষয় আমরা গুরম্নত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। তাছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে যেতে প্রথম বারের মতো ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হচ্ছে। প্রতি ইউনিয়নে নয়টি করে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা ঘরে ঘরে জাতীয় পার্টিকে পেঁৗছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। কারণ মহাজোটের পৰে যে দলেরই প্রার্থী হোক না কেন, জাতীয় পার্টির পৰে যেন কর্মী বাহিনী ব্যাপকভাবে কাজ করতে পারে। ইতোমধ্যে দেশের ৩৮টি জেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে ২২ জেলায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও যুব সংহতি, ছাত্র সমাজ, শ্রমিক পার্টিসহ জাতীয় পার্টির ছাত্রসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনগুলো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
রাজন ভট্টাচার্য : ১/১১ পর জাতীয় রাজনীতিতে কাঙ্ৰিত পরিবর্তন কতটুকু?
এরশাদ : বড় দুঃখের কথা। রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তনের জন্য ১/১১ যে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছিল তা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। বলা চলে পুরো সুযোগটাই ব্যর্থ হয়েছে। রাজনীতিতে নতুন গুণগত পরিবর্তন আনা যেত। রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করা যেত। কিন্তু কিছুই হয়নি। পুরনো আদলেই চলছে রাজনীতি। অর্থাৎ বিরোধী দল সংসদে আসবে না। তারা বাইরে থাকবে। এটা সুষ্ঠু রাজনীতির পরিচায়ক নয়। বিরোধী দল সরকারের অংশ। তাদের কর্তব্য সংসদে গিয়ে জনগণের কথা বলা। সরকারের ভুলত্রম্নটি জনগণের সামনে তুলে ধরা। তাহলে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর চুলচেরা বিশেস্নষণ ও আলোচনা হয়। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয়, বিরোধী দল সংসদে আসছে না। বাইরে থেকে সরকারের সমালোচনা করছে। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে দেশে ফেরার পর বিএনপির পৰ থেকে বলা হয়েছে সফর পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ব্যাখ্যা নেই। সংসদে এসে এ কথা বললে জনগণ জানতে পারত কেন সফর ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু বাইরে থেকে নানা কথা বলা হচ্ছে। মোট কথা হলো প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজনৈতিক সংস্কৃতির কোন পরিবর্তন হলো না। মানুষের মধ্যেও তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি।
উত্তম চক্রবর্তী : মহাজোটে মূল্যায়ন ও পাওয়া-না পাওয়ার বেদনা আছে কি না?
এরশাদ : আমার জীবনে পাওয়ার কিছুই বাকি নেই। আমার হারানো সম্মান ফিরে পেয়েছি। মানুষের ভালবাসা ফিরে পেয়েছি। জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি নয় বছর। এর চেয়ে বড় সম্মান তো আমাকে আর কেউ দিতে পারবে না। সে সম্মান আমি এখনও সমাজের কাছে পাই। সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে যেখানেই যাই মানুষ আমাকে সেভাবেই সম্মান করে। আমার বসার ব্যবস্থা সেভাবেই করা হয়। তাই এই বয়সে পাওয়ার আর কিছু নেই। চাওয়ারও কিছু নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী যদি মনে করেন আমাকে দিয়ে দেশের বিশেষ কোন উপকার হতে পারে তাহলে দায়িত্ব দিতে পারেন। দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। ব্যক্তিগতভাবে আমার চাওয়ার কিছু নেই।
রাজন ভট্টাচার্য : ভিশন-২০২১ বাসত্মবায়নে জাতীয় পার্টির ভূমিকা ?
এরশাদ : দেশে এখন শানত্মিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিবেশ যদি বজায় রাখা যায় তাহলে প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সাল পর্যনত্ম যে প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন তা বাসত্মবায়ন সম্ভব বলে আমি মনে করি। আমরা মহাজোটের একটা বৃহৎ অংশ। যৌথভাবে নির্বাচনী নানা প্রতিশ্রম্নতি দেয়া হয়েছে মানুষকে। দেশের স্র্বােথ আমরা কাজ করছি। ১৪ দল তথা মহাজোট সরকারের উদ্দেশ্য একটাই জনকল্যাণে কাজ করা। দেশের স্বার্থ রৰা করা। উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। তথ্যপ্রযুক্তি সম্পন্ন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে এমন প্রত্যাশা আজ দেশের মানুষের। সে লৰ্যকে সামনে রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সরকারকে বিভিন্ন কর্মকা-ে সহযোগিতা করে আসছি। প্রধানমন্ত্রী সহযোগিতা চাইলে আমি প্রস্তুত। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রম্নতি বাসত্মবায়নে জাতীয় পার্টি সবের্াতভাবে সহযোগিতা করবে। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফর শেষে দেশে ফেরার পর আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে আমাকে ডাকা হয়। জাতীয় পার্টির পৰে আমি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হই। ভিশন-২০২১ বাসত্মবায়নে জাতীয় পার্টির পৰ থেকে সহযোগিতা করে যাব।
উত্তম চক্রবর্তী : মহাজোটের শরিকদের সঙ্গে সরকারের ভুলত্রম্নটি ও কর্মকা- নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনা করা প্রয়োজন মনে করেন কিনা?
এরশাদ : এটা তোমার একার কথা নয়; অনেকের কথা এটা। সেই কারণে প্রধানমন্ত্রী যখন ভারত সফর শেষে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলন করেন তখন আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেদিন থেকেই শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রৰার সূচনা হয়েছে। তারপর জ্যোতি বসু যখন মারা গেলেন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমরা কলকাতা গেলাম। প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে তখন মহাজোট নেতাদের নিয়ে কলকাতা যান। অর্থাৎ জনগণের মনে যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল তা অনুভব করতে পেরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেভাবেই তিনি অগ্রসর হচ্ছেন। এখন মহাজোটকে সাথে নিয়েই চলছেন প্রধানমন্ত্রী।
উত্তম চক্রবর্তী : জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ উন্নয়নে সরকারের কি ধরনের পদৰেপ নেয়া প্রয়োজন?
এরশাদ : প্রতি মিনিটে দেশে সাতটি শিশু জন্ম নিচ্ছে। এর মধ্যে মারা যাচ্ছে দু'টি। থাকছে পাঁচটি। দিনে ৭/৮ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে। দেশে জমির পরিমাণ কম। খাদ্য উৎপাদন বাড়লে কত বাড়ানো সম্ভব? পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মাত্রাতিরিক্ত জন্মহার বন্ধের নজির আছে। আমাদের দেশে সরকারী উদ্যোগে এ ব্যাপারে পদৰেপ নিলে সুফল আসবে। এজন্য সরকারের দৃষ্টি দেয়া জরম্নরী। চেষ্টা করলে জন্মনিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ এনজিওদের হাতে ছেড়ে দিলে হবে না। সরকারী উদ্যোগে বিভিন্ন কাজ হাতে নিতে হবে। সরকারপ্রধানের প্রতিদিন এ বিষয়ে পরিসংখ্যান নেয়া উচিত। জন্মনিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম উপজেলা পর্যায়ে জোরদার করা প্রয়োজন। তাছাড়া উপজেলাকেন্দ্রিক তালিকা তৈরি করতে হবে। তালিকায় থাকবে প্রতিদিন কয়টি শিশু জন্ম নিচ্ছে, কত মারা যাচ্ছে, কতজন বিবাহযোগ্যসহ সার্বিক তথ্য। প্রতি সপ্তাহে বা মাসে এসব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে জানানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে। এছাড়া বিনামূল্যে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী বিতরণের কোন বিকল্প নেই। জন্মনিয়ন্ত্রণের প্রথম পদৰেপ এটি হতে পারে।
নানা কারণে আমাদের দেশের পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের ৰেত্রে আমাদের অনেক অবদান আছে। কারণ আমরা বনায়ন ধ্বংস করে ফেলেছি। ২৫ ভাগের মধ্যে মাত্র আট ভাগ বন আছে আমাদের দেশে। করাতকলগুলোতে অসংখ্য কচি কচি গাছ পড়ে থাকার দৃশ্য চোখে পড়ে। তা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেই। ধ্বংসের দিকে সুন্দরবন। অবাধে গাছ চুরি হচ্ছে সুন্দরবন থেকে। পাচার কচ্ছে কাঠ। এজন্য সুন্দরবনের প্রতি সরকারের কঠোর দৃষ্টি দেয়া উচিত। না হলে সত্যিকারভাবে পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা আমাদের দেশে প্রকট আকার ধারণ করবে। পরিবেশ বিপর্যয়ের আরেক কারণ ইটের ভাঁটি। প্রতিবছর দেশে ২০০ কোটি ইট তৈরি হচ্ছে। এক কোটি ইট করতে ৭০ বিঘা জমির উর্বর মাটি প্রয়োজন হয়। প্রতিটি ভাঁটির ২১০০ ফারেনহাইট উত্তাপ ছড়ায়। ধোঁয়ায় ফসল নষ্ট হচ্ছে। আইনে নিষিদ্ধ হলেও কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট। উজাড় করা হচ্ছে বন। তাছাড়া একবার যেখানে ইটের ভাঁটি হয় সেখানে আর ফসল উৎপাদন হয় না। এসব কারণে আসত্মে আসত্মে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। পৃথিবীর কোন দেশেই ইট দিয়ে বাড়ি নির্মাণের রেওয়াজ নেই। সিমেন্ট দিয়ে বস্নক করে অথবা পাথর দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করা হয় অনেক দেশে। সরকারী উদ্যোগে ইটের ভাঁটি বন্ধ করে দেয়া উচিত। সিমেন্ট দিয়ে বাড়ি করার জন্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
উপকূল রৰায় বনায়ন জরম্নরী। এতে ঝড়ের প্রকোপ গাছের ওপর দিয়ে যাবে। মাটির বাঁধ থাকে না। তবুও এর প্রয়োজন আছে। পাঁচ বছরের জন্য সরকারীভাবে আইন করে গাছ কাটা বন্ধ করা উচিত। অপ্রাপ্ত বয়স্ক কোন গাছ কাটা যাবে না। তাছাড়া বিশেষ প্রয়োজনে গাছ কাটতে হলে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। গাছ কাটা মানুষ হত্যার অপরাধের সমান; সরকারীভাবে এমন কঠোর আইন তৈরি করতে হবে। তাহলে গাছ কাটা বন্ধ হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবাধে গাছ কাটার রেওয়াজ নেই। তাছাড়া বিশেষ কোন প্রয়োজন ছাড়া কেউ গাছ কাটে না।
রাজন ভট্টাচার্য : কথা আছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের যারা পুনর্বাসনসহ সহযোগিতা করেছিলেন তাদের মধ্যে আপনিও একজন। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য?
এরশাদ : আমি যখন ৰমতা গ্রহণ করি তখন বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের অনেকেই চাকরিতে ছিল। ছিল ইনডেমনিটি এ্যাক্ট। সংসদে আমাদের ১৫১টি আসন ছিল। আমাদের একক মেজরিটি ছিল না। ঘাটতি ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ৰেত্রেও। আমরা ইমডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিলের চেষ্টা করেও শেষ পর্যনত্ম সফল হতে পারিনি। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ ৰমতায় আসার পর ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করার পৰে আমরা রায় দিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগ যখন আমাদের সঙ্গে সংসদে ছিল তখন তাদের পৰে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরম্ন করার বিষয়ে কোন দাবি ছিল না। খুনীদের চাকরি দেয়ার বিষয়টি নিয়েও কোন আলোচনা হয়নি। এর প্রেৰিতে আমি বলব, আগের ধারাবাহিকতা রৰা করেছি। যেহেতু কোন দাবি আমার কাছে আসেনি এ কারণে সেদিকে কোন দৃষ্টি আমি দেইনি। মূলত কথা হচ্ছে দাবি না থাকার কারণে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুনর্বাসনের ধারাবাহিকতা আমি রৰা করেছি।

No comments

Powered by Blogger.