ভাল বন্ধুত্বের রেসিপি- রেজাউল করিম খোকন
বন্ধু এমন একটি শব্দ যার মর্মার্থ ভাষায় প্রকাশ করতে গেলে নানা সীমাবদ্ধতা অনুভব করি আমরা। এ জগত-সংসারে বন্ধুত্বের মায়াজালে আমরা যারা আবদ্ধ তারা এ সম্পর্কটাকে যেভাবে অনুভব করি, ঠিক সেভাবে ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না।
শব্দের অলঙ্কারে বন্ধুত্বকে অলঙ্কৃৃত করতে গেলে বলতে হয় বন্ধুত্ব হচ্ছে আবেগ, ভালবাসা, উচ্ছ্বাস, শেয়ারিং-কেয়ারিংয়ের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এমন একটি সম্পর্ক যাকে বয়স আর সময়ের ফ্রেমে বন্দী করা যায় না। তবে যে কোন সম্পর্কই তৈরি, বিকাশ এবং টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন হয় আনত্মরিকতা। তা না হলে সেই বন্ধুত্বের সম্পর্কে চিড় ধরতে খুব বেশি সময় লাগে না। বন্ধুত্বের েেত্রও এ কথাটি শতভাগ সত্যি। সঠিক বন্ধু খুঁজে পাওয়াটাও কঠিন। বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে ভুল বন্ধু নির্বাচনের চরম মূল্য দিতে হতে পারে।বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে আপনাকে নানা কৌশল অবলম্বন করতে হবে। বন্ধুত্বের সম্পর্কে তিক্ততার পরিবেশ পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকেও গভীর মনোযোগ দিতে হবে। এখানে সঠিক বন্ধু নির্বাচন এবং বন্ধুত্ব অটুট রাখার কিছু টিপস তুলে ধরা হলো।
বন্ধু হবে কেমন
বন্ধু মানেই তো দু'টি প্রাণ এক হৃদয় অর্থাৎ দু'জনের কথাবার্তা, আচার-আচরণ, চিনত্ম-ভাবনার জগতটাই যেন এক ও অভিন্ন।
মনের সব কথা যাকে নির্দ্বিধায় বলা যায়; জীবনে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা কিংবা মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছা, স্বপ্নগুলো যার সাথে শেয়ার করা যায় সে-ই তো বন্ধু।
বন্ধুত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে বন্ধুর প্রতি সহানুভূতিশীল নয় বরং সহানুভূতিশীল হওয়া। বন্ধুর আনন্দকে ঠিক নিজের আনন্দ আর বন্ধুর দুঃখ-বিষাদ-বেদনাকে নিজের দুঃখ-বেদনা হিসেবে অনুভব করাই তো বন্ধুত্বের লণ।
চোখ বন্ধ করে যার কথা আর কাজকর্ম বিশ্বাস করা যায়, যার ওপর যখন তখন পুরোদমে নির্ভর করা যায় সেই তো আসল বন্ধু।
বন্ধুত্বে ফাটল সৃষ্টি হয় কখন
মনে করম্নন, আপনার বন্ধু আপনার সাথে তার সুখ-দুঃখের খুঁটিনাটি বিষয় শেয়ার করছে, কিন্তু আপনি তার সাথে এ ব্যাপারগুলো কোনভাবেই শেয়ার করছেন না। যখন আপনার বন্ধু ব্যাপারটি উপলব্ধি করতে পারবে তখনই আপনাদের মাঝে একটি অদৃশ্য দূরত্ব সৃষ্টি হবে।
আপনি হয়ত বন্ধুর ভাল চান। কিন্তু আপনার বন্ধু আপনার চেয়ে আরও ভাল অবস্থানে যাক, এটা আবার সহ্য করতে পারেন না। আপনি মনের অজানত্মেই হয়ত বন্ধুটিকে হিংসা করছেন। আর এই হিংসাই আপনাদের বন্ধুত্বকে নষ্ট করে দিতে যথেষ্ট।
স্বার্থের বশবতর্ী হয়ে বন্ধুত্বকে বলি দেয়ার উদাহরণ আমাদের চারপাশে হরহামেশা দেখা যায়। নিজের প্রয়োজন বা স্বার্থের কাছে বন্ধুত্ব যখন মস্নান হয়ে যায় তখন এ সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হওয়াটাই তো স্বাভাবিক।
যে বন্ধুটি আপনাকে বিশ্বাস করে টাকা-পয়সা ধার দিল, বিপদে যে বন্ধুটি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল, সেই বন্ধুটিকে এখন আপনি এড়িয়ে চলছেন। কোথাও তার সাথে দেখা হলে এমন ভাব করছেন_ তাকে এর আগে কোথাও দেখেননি। এ েেত্র আপনি কেবল আপনার বন্ধুর সাথে প্রতারণা করছেন বললে কম বলা হবে। বরং আপনি 'বন্ধুত্ব' সম্পর্কটার সাথেই প্রতারণা করছেন বলতে হবে।
বন্ধুত্ব অটুট রাখতে হলে
বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে সবার আগে যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে তা হলো বন্ধুদের সাথে যোগাযোগটা সব সময় বজায় রাখা। বন্ধুদের জন্য কিছুটা সময় বের করে তাদের সাথে মন খুলে আড্ডা দেয়া। এর মাধ্যমে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ক্রমেই আরও গাঢ় হবে।
বন্ধুর কাছে মন খুলে সবকিছু খুলে বলার মতা আপনাকে অর্জন করতে হবে। অর্থাৎ মনের সব কথা খুলে বলার েেত্র আপনাকে অনেক বেশি উদার হতে হবে। কোনোরকম লুকোচুরি করবেন না।
বন্ধু আপনার প্রতিযোগী নয়, বরং সহযোগী। বন্ধুর সাফল্যে আনন্দিত হওয়ার চেষ্টা করম্নন এবং এ সাফল্যকে নিজের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করম্নন।
বন্ধুর আনন্দের দিনগুলোতে যেমন তার পাশে ছিলেন তেমনিভাবে তার দুঃখ বা বিপদের মুহূর্তগুলোতে আরও বেশি করে বন্ধুর সাহচর্যে থাকার চেষ্টা করম্নন।
স্বার্থ যেন বন্ধুত্বে বাধা হয়ে না দাঁড়ায় সেদিকে সব সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার। ব্যক্তিগত ুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করে বন্ধুত্বের মতো বৃহৎ স্বার্থকে রার ব্যাপারে বেশি গুরম্নত্ব দিতে হবে। আর এইটি হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
বন্ধুর প্রতি আপনার আনত্মরিকতার প্রকাশ ঘটান নানাভাবে। এ জন্য দামী উপহার, ব্যয়বহুল লাঞ্চ কিংবা ডিনারের প্রয়োজন নেই। সাধারণ কিছু ব্যাপারও অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে যদি তাতে আনত্মরিকতার পরিপূর্ণ ছোঁয়া থাকে।
No comments