জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিতর্ক by এমএ খালেক

বিশ্বব্যাংক সমপ্রতি বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। 'গেস্নাবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টাস ২০১০' শীর্ষক এই প্রতিবেদনে চলতি পঞ্জিকা বছর এবং আগামী বছরে বিশ্বের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি কেমন হবে সে সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়েছে।
এতে উলেস্নখ করা হয়েছে যে, চীন ও ভারতসহ কোনো কোনো দেশ বিশ্ব মন্দা কাটিয়ে উঠতে শুরম্ন করলেও ২০১০ সালের পুরোটাই মন্দার আবহেই কাটাতে হবে বিশ্ব অর্থনীতিকে। এতে বলা হয়, ২০০৯ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২.২০ শতাংশ। এবার তা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে ২.৭০ শতাংশ হতে পারে। তাই চলতি বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা কেটে যাবে তা আশা করা যায় না। আনত্মর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতে, ৩ শতাংশের নিচে যে কোনো প্রবৃদ্ধিই হচ্ছে মন্দা। কাজেই চলতি বছর বিশ্ব মন্দা কেটে যাবে বলে যারা মনে করছে তাদের কিছুটা হলেও হতাশ হতে হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাস্টিন লিন বলেন, বর্তমান প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০১১ সালের শেষ নাগাদ বিশ্ব জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.২০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালেও বিশ্ব অর্থনৈতিক পুনরম্নদ্ধারে নেতৃত্ব দেবে উন্নয়নশীল দেশগুলো। এ বছর উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৫.২০ শতাংশ। আগামী ২০১১ সালে তা ৫.৮০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। এতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্ব জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে সবার শীর্ষে থাকবে চীন। চলতি এবং আগামী বছর চীনের প্রবৃদ্ধির হার ৯ শতাংশের ওপরে থাকবে। আর ভারতের প্রবৃদ্ধির হার থাকবে ৭.৫০ শতাংশ। এতে আরও বলা হয়, বিশ্ব মন্দা বিশ্বের অনত্মত ৬ কোটি ৪০ লাখ মানুষকে নতুন করে চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিয়েছে। এ বছর আরও ৯ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যেতে পারে। কিন্তু চীনের অস্বাভাবিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন বিশ্বব্যাংকের এই পূর্বাভাসকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ইতোমধ্যেই জানা গেছে, ২০০৯ সালে চীন 'ডাবল ডিজিট' প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চীন যেভাবে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে তাতে এটা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, আগামীতে বিশ্ব অর্থনীতিতে চীন নেতৃত্ব দিতে চলেছে। এ প্রসঙ্গে একটি আনত্মর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান কুকারস ওয়াটার হাউসের একটি মনত্মব্য স্মরণ করা যেতে পারে। কিছুদিন আগে প্রতিষ্ঠানটি তাদের এক প্রতিবেদনে উলেস্নখ করেছিল যে, আগামী ২০৫০ সালে চীন অর্থনৈতিক শক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করে যাবে। তারাই বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দেবে। প্রতিষ্ঠানটির বক্তব্য যে মোটেও বিভ্রানত্মিকর বা ভ্রানত্ম নয়, চীন তা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করতে পেরেছে। আগামীতে চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্বদানের মতো যোগ্যতা অর্জন করবে এটা নিশ্চিত করেই বলা যেতে পারে। বিশ্বব্যাংকের প্রপেণ অনেক সময়ই সঠিক বলে প্রতীয়মান হয় না। কাজেই অনেকেই বিশ্বব্যাংকের প্রপেণকে গুরম্নত্ব প্রদান করতে চান না। তারপরও বিশ্বব্যাংক নানা ইসু্যতে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করতে চায়। বিশেষ করে দরিদ্র দেশের েেত্র তারা বরাবরই অভিভাবকসূলভ আচরণ করতে অভ্যসত্ম। বিশ্ব ব্যাংক বা আইএমএফ-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর আচরণ দেশ ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। তারা দরিদ্র দেশের েেত্র মাতব্বরি করলেও উন্নত দেশের েেত্র নতজানু নীতি গ্রহণ করে। তাই দেখা যায়, আমাদের মতো দেশ যখন একটি ল্যাট্রিন তৈরি করতে যায়, তখন বিশ্ব ব্যাংক বা এ ধরনের দাতা সংস্থাগুলো সেই ল্যাট্রিনের দরজা কোন দিকে হবে তা বাতলে দেয়। কিন্তু একই ধরনের ল্যাট্রিন যদি কোনো উন্নত দেশ বা একটা শক্তিশালী দেশ তৈরি করতে যায় তখন দাতারা নিশ্চুপ থাকে। এটাই বাসত্মবতা। দরিদ্র দেশগুলো কোন েেত্র পরামর্শ চায় বা না চায় দাতারা পরামর্শ দেবেই। তারা উপযাচক হয়ে এমন অনেক কথা বলে যার কোন বাসত্মবতা থাকে না। তারা বাংলাদেশের েেত্র মাঝে মাঝেই এমন সব প্রপেণ করে থাকে যা কোনভাবেই বাসত্মবতা পায় না।
সমপ্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে নেতিবাচক পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ চলতি অর্থবছরে কোনোভাবেই ৫.৫০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি নিয়েও তারা এমন মনত্মব্য করেছিল। তারা বলেছিল, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার 'ডাবল ডিজিট' ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিশ্বব্যাংকের মনত্মব্যের প্রেেিত বিষয়টি দু'টি নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে মনত্মব্য করেছে অর্থমন্ত্রী তাৎণিকভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেছেন, এর আগেও বিশ্বব্যাংক আমাদের দেশের অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে নানা মনত্মব্য এবং প্রপেণ করেছে যার বেশির ভাগই সত্যি বলে প্রতীয়মান হয়নি। যেমন, গত অর্থ বছরে তারা বলেছিল, বাংলাদেশ কোনভাবেই সাড়ে ৪ হতে ৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না কিন্তু তাদের সেই পূর্বাভাস সত্যি হয়নি। বাংলাদেশ গত বছর ৫.৯০ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তাদের এবারের পূর্বাভাসও সঠিক বলে প্রতীয়মান হবে না। অর্থমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, অর্থনীতির বর্তমান ধারা বহমান থাকলে চলতি অর্থবছরে কোনভাবেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে নামবে না। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে উন্নীত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ ১৯৯৫ সাল হতে ২০০৫ সাল পর্যনত্ম গড়ে ৫.৩০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এতে আরও বলা হয়, ২০০৬-০৭, ২০০৭-০৮ এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ যথাক্রমে ৬.৪০ শতাংশ, ৬.২০ শতাংশ এবং ৫.৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তবে ২০০৯-১০ এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে থাকবে। এতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে ৫.৫০ শতাংশ এবং আগামী বছর তা ৫.৮০ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিগণ মনে করছেন, বিশ্বব্যাংকের প্রপেণ মোটেও সঠিক নয়। তারা যে প্রপেণ করেছে তা মিথ্যে প্রমাণিত হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি, চলতি অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার কোনভাবেই ৬ শতাংশের নিচে হবে না। অর্থবছরের ৬ মাস চলে গেছে। আমাদের অর্থনীতির প্রধান সূচকগুলো ইতিবাচক। বিশ্ব মন্দার প্রভাব থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি। এমন অনুকূল পরিস্থিতিতে কোনভাবেই প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে হবে না। আমি বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস মানি না। উলেস্নখ্য, বাংলাদেশের অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচকই উর্ধমুখী রয়েছে। বিশ্বব্যাপী মন্দা সত্ত্বেও প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিটেন্সের পরিমাণ দিন দিনই বাড়ছে। চলতি অর্থবছরে রেমিটেন্স প্রবাহ বর্তমান ধরায় বাড়তে থাকলে বছর শেষে রেমিটেন্স ১২শ' কোটি মার্কিন ডলার অতিক্রম করে যেতে পারে। ইতোমধ্যেই দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ প্রথমবারের মতো ১০০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত রেমিটেন্সই মূলত রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। চলতি অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির যে গতি প্রকৃতি ল্য করা যাচ্ছে তাতে মনে হয় বিশ্বব্যাংকের প্রপেণ মোটেও গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। বরং অর্থমন্ত্রী যে বলেছেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে নামবে না সেটাই বরং সঠিক হবে। কিন্তু অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে শুধু জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ালেই চলে না। আরও অনেক কিছু করতে হয়। আমরা সেেেত্র কতটা প্রস্তুত তাও বিবেচনার রাখতে হবে।
বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি 'ডাবল ডিজিট' অতিক্রম করতে পারে। অর্থাৎ দশ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি ঘটতে পারে। কিন্তু সরকার মনে করছে, বিশ্বব্যাংকের এই প্রপেণও সঠিক নয়। কারণ মূল্যস্ফীতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় ষাণ্মসিকের জন্য জাতীয় মুদ্রানীতি ঘোষণাকালে বলেছেন, কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি হবে না। উলেস্নখ্য, আমাদের দেশের অর্থনীতিতে খাদ্য খাত বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। যে কোনভাবেই হোক যদি খাদ্য উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যায় তাহলে মূল্যস্ফীতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। চলতি অর্থবছরে কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে যেভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে তাতে নিশ্চিত করেই বলা যায়, যদি কোন দৈব-দুর্বিপাক না ঘটে তা হলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবার পর্যায়ে চলে যাবে। সে অবস্থায় মূল্যস্ফীতি খুব একটা বৃদ্ধির আশঙ্কা নেই। কিন্তু এবার বোধহয় অন্য কারণে দেশে মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশ সামপ্রতিক সময়ে উচ্চ হারে রেমিটেন্স আয় করেছে। এই রেমিটেন্সের কারণেই মূলত বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। আমরা রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নিয়ে উলস্নসিত হচ্ছি। কিন্তু রেকর্ড রিজার্ভ সব সময় একটি দেশের জন্য মঙ্গলজনক নাও হতে পারে। অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, উচ্চ মাত্রায় বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ এবং বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ একটি দেশের জন্য সবচেয়ে উৎসাহব্যঞ্জক অবস্থা। এমনকি প্রচুর বিনিয়োগ এবং নিম্ন রিজার্ভও কোনো দেশের জন্য মঙ্গলজনক প্রতীয়মান হতে পারে। কিন্তু বিনিয়োগ শূন্য পরিস্থিতিতে উচ্চ রিজার্ভ কখনই একটি দেশের জন্য মঙ্গলজনক বিবেচিত হয় না। আমাদের দেশে বর্তমানে অনেকটা বিনিয়োগ শূন্য উচ্চ রিজার্ভের অবস্থাই বিরাজ করছে। দেশে প্রচুর পরিমাণ রেমিটেন্স আসছে কিন্তু কাঙ্ৰিত মাত্রায় বিনিয়োগ হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রিজার্ভ রাড়ছে। এ অবস্থা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। বর্তমানের বিনিয়োগ শূন্যতা মানেই আগামীতে উৎপাদন হ্রাসের লণ। সরকার নানাভাবে বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে কিন্তু বিনিয়োগকারীরা সেভাবে সাড়া দিচ্ছে না। এ অবস্থা কিছুটা হলেও নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন, আগত উচ্চ মাত্রায় রেমিটেন্স যদি সঠিক পথে বিনিয়োগ করা না যায় তাহলে দেশে অবশ্যই মূল্যস্ফীতি ঘটতে পারে। কারণ প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্থানীয় বেনিফিসিয়ারিরা তাদের বৈদেশিক মুদ্রা স্থানীয় মুদ্রায় কনভার্ট করে নিজেদের চাহিদা পূরণ করবে। এমন কি এই কষ্টার্জিত অর্থ তারা ভোগ বিলাসে ব্যয় করতে পারে। এতে কিছু মানুষের হাতে অতিরিক্ত অর্থাগম ঘটবে। ফলে স্থানীয়ভাবে মূল্যস্ফীতি ঘটতে পারে। দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর মতো পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। আনত্মর্জাতিক বাজারে ফুড আইটেমের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। তাই আমাদের এ বিষয়ে সচেতন হওয়া দরকার। ভারত এবং ফিলিপিন্সের মতো চাল রফতানিকারক দেশও এ বছর চাল রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, থাইল্যান্ডের মতো দেশ চাল আমদানি করছে। এটা ভবিষ্যত সঙ্কট মোকাবেলার জন্যই করা হচ্ছে। আগামীতে বিশ্ব বাজারে চালের মূল্য আরও অনেকটা বেড়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ সীমিত পরিমাণে হলেও চাল আমদানি করে। তাই আমাদের এখনই জরম্নরীভিত্তিতে চাল আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে। যেহেতু প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ রয়েছে এই রিজার্ভ ব্যবহার করে চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। যদি আমদানিকৃত চাল দ্বারা নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি মূল্যবৃদ্ধি পেলে বিদেশেও রফতানি করা যেতে পারে। একটি দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ থাকলেই তাকে সনত্মোষজনক রিজার্ভ বলা হয়। বাংলাদেশের বর্তমান রিজার্ভ দিয়ে প্রায় ৭/৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যায়। তাই এই উদ্বৃত্ত রিজার্ভ দিয়ে খুব সহজেই চাল আমদানি করে সম্ভাব্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
আমাদের দেশের জন্য এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য যত ধরনের উপকরণ আছে তা ব্যবহার করা। ব্যাংক ঋণের সুদেও হার কমানোর পাশাপাশি ঋণ প্রাপ্তি সহজীকরণ করা দরকার। বর্তমানে ব্যাংকগুলো উদ্বৃত্ত তারল্যের সমস্যা মোকাবেলা করছে। তাই ইচ্ছে করলেই ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে।
এমনকি প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্থানীয় বেনিফিসিয়ারিদের নানা ধরনের সুযোগসুবিধা প্রদান করে হলেও বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলতে হবে। এ েেত্র শেয়ারবাজার হতে পারে একটি চমৎকার বিনিয়োগ ত্রে। বর্তমানে কোন কোম্পানির আইপিওতে বিনিয়োগকারীদের যে কোটা আছে তা বাড়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া প্রবাসীদের স্থানীয় বেনিফিসিয়ারিদের নানা সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসা যেতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, এ মুহূর্তে দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে না পারলে ভবিষ্যত উৎপাদন কার্যক্রম বিঘি্নত হবে। একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। তাই বিনিয়োগ বাড়ানোর কোন বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.