পস্নাস্টিক শিল্প : একটি উদীয়মান সম্ভাবনা

পস্নাস্টিক কাঠের বিকল্প হিসেবে যার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। গৃহস্থালি কাজে, ফার্নিচার, নির্মাণ শিল্পের বিভিন্ন উপকরণ খেলনা এমনকি ওষুধ শিল্পের মতো জরম্নরী কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে পস্নাস্টিক পণ্য, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে।
এর ফলে বিদেশী পণ্যের ওপর নির্ভরতা যেমন কমছে, সাশ্রয় হচ্ছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। পাশাপাশি সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থান ও শিল্পায়ন। বর্তমানে পস্নাস্টিক শিল্প খাতে নিয়োজিত জনবলের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। পস্নাস্টিক শিল্প একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। দেশের দারিদ্র্য বিমোচন, রফতানি আয়সহ সার্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এর গুরম্নত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রতিবছর প্রায় চার হাজার কোটি টাকার পস্নাস্টিক পণ্য উৎপাদিত হয়। অভ্যনত্মরীণ চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত পস্নাস্টিক পণ্যের প্রায় ১০ শতাংশ বিদেশে রফতানি হচ্ছে। অথচ একসময় বাংলাদেশ বিদেশ থেকে পস্নাস্টিক পণ্য আমদানি করত। ২০০৬-০৭ রাজস্ব বছরে প্রায় ১৬৩৬.৭৬ কোটি টাকার পস্নাস্টিক পণ্য রফতানি করা হয়। আর জিডিপিতে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে পস্নাস্টিক শিল্পের অবদান ছিল এক শতাংশ। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে যা বৃদ্ধি পাবে এবং এ খাত অন্যতম বৃহৎ রফতানি খাতে পরিণত হবে বলে মনে করেন সংশিস্নষ্টরা। বাংলাদেশে পস্নাস্টিক পণ্য রফতানি মূলত গার্মেন্টসের প্যাকেজিং শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। ফলে পস্নাস্টিকের হ্যাঙ্গার, পলিব্যাগ, শপিং ব্যাগ রফতানির পরিমাণ বেশি। এছাড়া খেলনা, পস্নাস্টিকের ক্রোকারিজ, কম্পিউটার এক্সেসরিজসহ বিভিন্ন পস্নাস্টিক পণ্যের রফতানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে তৈরি পস্নাস্টিক পণ্য ইউরোপ, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, নেপাল, ভুটান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে।
পস্নাস্টিক পণ্য উৎপাদনকারী ও রফতানিকারকদের সংগঠনের (বিপিজিএমইএ) হিসেব অনুযায়ী, দেশে তিন হাজারের বেশি পস্নাস্টিক শিল্প কারখানা আছে। এর মধ্যে প্রায় দুই হাজারের বেশি ৰুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের অনত্মভর্ুক্ত, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।
পস্নাস্টিক শিল্পমালিকদের মতে, এই শিল্পের প্রধান সমস্যা বন্ডের আওতায় ব্যাংক গ্যারান্টি আরোপ। যা অন্য কোন শিল্প খাতে নেই। তাছাড়া এ খাত সরকারের নগদ সহায়তা থেকেও বঞ্চিত। আবার পরিবেশগত দিক বিবেচনা করলে, পস্নাস্টিকের রিসাইকিং প্রয়োজন। রিসাইকিং ব্যয়বহুল বিধায় শিল্পমালিকরা উপরিউক্ত সমস্যা সমাধানে সরকারী সহযোগিতা কামনা করেন। এছাড়া একটি আধুনিক পস্নাস্টিক শিল্পনগর গড়ে তুলতে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এ জন্য বিসিকের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকও করা হয়েছিল। কিন্তু পরে আর বিষয়টি এগোয়নি। এ ব্যাপারেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন শিল্পমালিকরা।
বাংলাদেশ পস্নাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রফতানিকারক সমিতির সভাপতি ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, পণ্যমান উন্নয়ন, নতুন নতুন আকর্ষণীয় পণ্য উদ্ভাবন এবং বিশ্ব বাজারে সম্প্রসারণের মাধ্যমে রফতানি কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারলে বাংলাদেশের পস্নাস্টিক খাত দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে সরকারের আনত্মরিক সহযোগিতা প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
আনত্মর্জাতিক পর্যায়ে পণ্যের বাজার স্থাপন ও শিল্পের বিকাশে আনত্মর্জাতিক মেলার গুরম্নত্ব অপরিসীম। বিদেশে পস্নাস্টিক পণ্যের নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি ও সম্প্রসারণের লৰ্যে বিপিজিএমইএ ২৫-২৮ জানুয়ারি ৬ষ্ঠ বারের মতো আয়োজন করে "আনত্মর্জাতিক পস্নাস্টিক মেলা ২০১০"। ঢাকার বঙ্গবন্ধু আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চার দিনব্যাপী এ মেলায় চীন, ভারত, পাকিসত্মান, তাইওয়ান, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়াসহ ১৪টি দেশের ৩৫০ প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। পস্নাস্টিক শিল্পের আধুনিক যন্ত্রপাতি, এই শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল, উৎপাদিত পণ্য ও সেবা সবই ছিল এ আয়োজনে।
শেখ মোশাররফ সেন্টু

No comments

Powered by Blogger.