ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানির কার্যক্রম শুরু হচ্ছে by কাওসার রহমান
ভারত থেকে বিদু্যত আমদানির কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এ ব্যাপারে আলোচনা করতে আগামী ১৭ ফেব্রম্নয়ারি ভারতের বিদু্যত সচিব আসছেন বাংলাদেশ সফরে। ওই আলোচনার প্রেক্ষিতে ভারত-বাংলাদেশ ট্রান্সমিশন লাইন স্থাপনের দরপত্র আহ্বানের কাজ শুরু হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দুই দেশের মধ্যে স্বারিত সমঝোতায় ওই দেশ থেকে বিদু্যত আমদানির বিষয়টি ঠাঁই পেয়েছে। তারই আলোকে সরকার ভারত থেকে বিদু্যত আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে ২৫০ মেগাওয়াট বিদু্যত আমদানির সমঝোতা হলেও এক হাজার মেগাওয়াট মতার বিদু্যত সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আর ৫০০ মেগাওয়াট মতার বিদু্যত উপকেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে সম্মত হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাংক আট শ' কোটি রম্নপী অর্থায়ন করতে পারে।জানা যায়, ভারত থেকে বিদু্যত আমদানির ব্যাপারে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শুরম্ন হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে এদেশের অংশ সার্ভে করে গেছে। ভারতীয় প্রতিনিধি দলের পর জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ভারতীয় অংশে গিয়ে সার্ভে করে এসেছে। দুই দেশের প্রতিনিধিদের সার্ভের পর যৌথ সার্ভে করা হবে। এ সার্ভের জন্য দুই দেশের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভারতের বিদু্যত সচিবের সফরের পর দুই দেশের যৌথ কমিটি সার্ভের কাজ শুরম্ন করবে।
বিদু্যত আমদানির বিষয়ে আলোচনা করতে ভারতের বিদু্যত সচিব আগামী ১৭ ফেব্রম্নয়ারি বাংলাদেশ সফরে আসবেন। ওই সফরেই বিদু্যত আমদানির বিষয়টি এবং দরদাম চূড়ানত্ম হবে। এ ল্যে বাংলাদেশের বিদু্যত সচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ভারতীয় বিদু্যত সচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসবে। আগামী ১৮ ও ১৯ ফেব্রম্নয়ারি এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। ওই আলোচনায়ই ভারত বাংলাদেশে বিদু্যত বিক্রির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রসত্মাব দেবে। বিদু্যত সচিব পর্যায়ের বৈঠকেই সবকিছু চূড়ানত্ম করা হবে।
বাংলাদেশ বিদু্যত উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদু্যতের দাম নিয়ে ভারতের সঙ্গে এখনও কোন কথা হয়নি। ভারতীয় বিদু্যত সচিবের বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। ভারতে প্রতি ইউনিট বিদু্যত দুই রম্নপী ৫০ পয়সা থেকে দুই রম্নপী ৬০ পয়সা রম্নপী। সেেেত্র ভারত থেকে আমদানিকৃত প্রতি ইউনিট বিদু্যতের দাম চার থেকে পাঁচ টাকা পড়তে পারে, যা ডিজেল বা ফার্নেস অয়েল থেকে বিদু্যত উৎপাদন খরচের চেয়ে অনেক কম। ফার্নেস অয়েলে বিদু্যত উৎপাদন করতে প্রতি ইউনিটের খরচ পড়ে আট টাকা এবং ডিজেলের মাধ্যমে বিদু্যত উৎপাদন করতে খরচ পড়ে ১৬ থেকে ১৮ টাকা। বিদু্যত আমদানির েেত্র প্রতি ইউনিট বিদু্যতের মূল্যের পাশাপাশি সঞ্চালন লাইনের ফিও দিতে হতে পারে। প্রাথমিকভাবে ভারত বাংলাদেশকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদু্যত দিতে সম্মত হয়েছে। এর চেয়ে বেশি বিদু্যত কিনতে চাইলে বিদু্যতের দাম আরও বাড়তে পারে।
বাংলাদেশে বিদু্যতের চাহিদা অনেক, কিন্তু উৎপাদন কম। ফলে ঘাটতি অনেক বেশি। বিদু্যতের অভাবে শিল্পোৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণেই ভারতের বিদু্যত বিক্রির প্রসত্মাব বাংলাদেশ সাদরে গ্রহণ করবে।
জানা যায়, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ভারত থেকে বিদু্যত আমদানির সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করবে। বাংলাদেশের ভেড়ামারা দিয়ে ভারত থেকে বিদু্যত আমদানি করা হবে। এজন্য ভারতীয় অংশে ৪০০ কেভির ৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করতে হবে। আর বাংলাদেশ অংশে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করতে হবে ৪০০ কেভির ৪৫ কিলোমিটার। ইতোমধ্যে পিজিসিবির মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ভারতে গিয়ে এ লাইন নির্মাণের কারিগরি দিক দেখে এসেছে। ওই প্রতিনিধি দলের রিপোর্টের ভিত্তিতে বাংলাদেশ অংশে ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের দরপত্র প্রণয়নের কাজ চলছে। বাংলাদেশ অংশে বিদু্যতের সঞ্চালন লাইন ও বিদু্যত উপকেন্দ্র নির্মাণে খরচ পড়বে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।
সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রসঙ্গে পিজিসিবির এক কর্মকর্তা জানান, পিজিসিবি শুধু বিদু্যত আমদানির ব্যাপারে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করবে আর বিদু্যত ক্রয় করবে বিদু্যত উন্নয়ন বোর্ড। বাংলাদেশ অংশে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দরপত্র আহ্বান করে কার্যাদেশ প্রদানের পর সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করতে ২৪ মাস বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। তবে যেহেতু বাংলাদেশের বিদু্যতের খুব প্রয়োজন এবং সরকার আনত্মরিকভাবে চাইছে ভারত থেকে বিদু্যত আমদানি করতে। তাই যে করেই হোক ২৪ মাসের মধ্যে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের কাজ শেষ করা হবে। তবে দরপত্র আহ্বান করতে কত দিন সময় লাগবে তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। কারণ বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে। ফলে দরপত্রের দলিল বিশ্বব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিদু্যত সচিব আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, ভারত থেকে বিদু্যত আমদানির গ্রিড লাইন নির্মাণের ব্যাপারে যৌথ কারিগরি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা ওই গ্রিড লাইন নির্মাণের ব্যাপারে সমীা চালাবে। এ বিদু্যত আমদানির করতে ভারতীয় অংশে ৮৫ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশ অংশে ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন লাইন বসাতে হবে। ওই সঞ্চালন লাইন হবে ৪০০ কেভির। ভবিষ্যতে যাতে আরও বেশি বিদু্যত আমদানি করা যায় সে বিষয়টি মাথায় রেখেই এ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। এ কারণে শুধু বাংলাদেশ অংশের সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করতেই এক হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। আর এ প্রক্রিয়ায় বিদু্যত আসতে দুই বছর সময় লেগে যাবে। এজন্য ফেব্রম্নয়ারি মাসেই দরপত্র আহ্বান করা হবে।
জানা যায়, বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এ আঞ্চলিক বিদু্যত গ্রিড নির্মাণে অর্থায়ন করতে রাজি হয়েছে। অর্থ নেয়ার ব্যাপারে সরকার উভয় সংস্থার সঙ্গে কথা বলবে। যার শর্ত ও সুদের হার কম হবে তার কাছ থেকেই ঋণ নেয়া হবে। জ্বালানি খাতে আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তোলার জন্য বিশ্বব্যাংক দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরের সময় ওই দেশ বাংলাদেশকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদু্যত দিতে সম্মত হয়েছে। ভবিষ্যতে এ বিদু্যতের পরিমাণ বাড়তে পারে। নেপাল এবং ভুটান থেকেও বিদু্যত আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এ কারণেই হাজার মেগাওয়াট বিদু্যত পরিবহনে সম সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে।
No comments