মহানগর আওয়ামী লীগ অবশেষে মায়া দায়িত্ব ফিরে পেলেন

 ৰমতায় আসার ১৪ মাস পর হারানো দায়িত্ব ফিরে পেলেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম। রবিবার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির সভায় আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামকে ভারমুক্ত করে মায়াকে একক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাশা অনুযায়ী রবিবার অনুষ্ঠিত নগর আওয়ামী লীগের সভায় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে সাধারণ সম্পাদকের পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব ফিরিয়ে দেন দলের সাধারণ সম্পাদক এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তাঁর এই ঘোষণায় দীর্ঘদিন ধরে চলায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদটি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান হলো। সাধারণ সম্পাদক থাকতেও এতদিন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা আইন প্রতিমন্ত্রী স্বপদে অর্থাৎ সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে ফিরে গেলেন। আজ থেকে নগর আওয়ামী লীগ পরিচালিত হবে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার নেতৃত্বে।
রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামরম্নল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে পুনর্বহাল করেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এ সময়ে দায়িত্ব পাওয়া ও বিদায়ী দুই নেতার হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন। করতালি ও একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় বাইরে উপস্থিত নেতা-কমর্ীদের আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
দেশে জরম্নরী অবস্থার সময় সরকারের দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলায় নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া আত্মগোপনে চলে যান। জরম্নরী অবস্থার পুরোটা সময় তিনি ছিলেন আত্মগোপনে। এ অবস্থায় নগর আওয়ামী লীগকে সচল রাখতে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট কামরম্নল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে মহাবিজয় নিয়ে ৰমতায় আসার পর মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া প্রকাশ্য রাজনীতি শুরম্ন করলেও এককভাবে সাধারণ সম্পাদকের পদ ফেরত পাননি।
সংগঠনের গঠনতন্ত্রে সাধারণ সম্পাদক থাকতে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের কোন অসত্মিত্ব না থাকলেও এই ১৪টি মাস ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবেই দায়িত্ব পালন করেছেন আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরম্নল ইসলাম। মূল সাধারণ সম্পাদক কে_ এ নিয়ে এতদিন নগর কমিটির নেতাকমর্ীরা যেমন ছিলেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে, তেমনি পদ পালন নিয়ে মায়া-কামরম্নল নামে নগর কমিটির দু'টি গ্রম্নপের অসত্মিত্বও প্রকাশ্য রূপ নেয়। নগর কমিটির বিরোধ মিটাতেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী এ ঘোষণা দেয়া হয়। তবে বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে মুখ খুলতে রাজি হননি সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ।
স্বপদে ফিরে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, 'পুরনো দায়িত্ব ফিরে পেয়ে আমি খুশি হয়েছি। তবে এ পদে আমি আগেও ছিলাম, এখনও আছি। বন্ধু কামরম্নল (আইন প্রতিমন্ত্রী কামরম্নল ইসলাম) আমাকে শুধু সহযোগিতা করেছেন।' তিনি বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সকলের সহযোগিতা পেয়েছি। আগামীতেও সকলের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে কামনা করি। নগরের কাউন্সিল, সদস্য সংগ্রহ ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে তিনি জানান। একক দায়িত্ব ফিরে পাওয়ায় তিনি শেখ হাসিনাসহ সকল নেতাকমর্ীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
ভারমুক্ত হওয়া আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরম্নল ইসলাম তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী এখন থেকে নগরের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করবেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এমএ আজিজ ও মায়ার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে নগর আওয়ামী লীগ। সাধারণ সম্পাদক থাকা অবস্থায় ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব পালন সংক্রানত্ম এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা একটা জটিলতা। তবে শেখ হাসিনার সিদ্ধানত্ম অনুযায়ী পদে থেকে দায়িত্ব পালন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জটিলতা শেষ হয়েছে। নগর কমিটিতে তাঁর অবস্থান কোথায় হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নগরের রাজনীতিতে আছি, তবে কোন পদে আছি জানি না।
সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী কে হবেন_ এ প্রসঙ্গে এ্যাডভোকেট কামরম্নল ইসলাম বলেন, সভানেত্রী (শেখ হাসিনা) যাঁকে প্রার্থী ঘোষণা করবেন নগর আওয়ামী লীগ তার প েকাজ করবে। নগরের সম্মেলনের সর্বাত্মক প্রস্তুতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তারিখ নির্ধারণ করলে সম্মেলন করা হবে। কিছু দিনের মধ্যে সদস্য সংগ্রহ অভিযানও শুরম্ন করা হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এমএ আজিজের সভাপতিত্বে সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধানত্ম নেয়া হয়। সভায় কেন্দ্র্রীয় আওয়ামী লীগের প থেকে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ছাড়াও সাংগঠনিক সম্পাদক এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম অংশ নেন। নগর নেতাদের মধ্যে কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, ফয়েজউদ্দিন মিয়া, মুকুল চৌধুরী, শেখ বজলুর রহমান, ডা. এইচবিএম ইকবাল, হাজী সেলিম, আওলাদ হোসেন, শাহে আলম মুরাদ, সালাউদ্দিন বাদল, আসলামুল হক আসলাম এমপিসহ বেশিরভাগ নেতা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.