এবার মাঠে নেমেছে ছাত্রদল- বকরের মৃতু্য by রিয়াদুল করিম
আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিৰার পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করছে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এবার তারা ছাত্রলীগের সংঘাত ও বকর হত্যাকে কাজে লাগাতে চাইছে।
এ ইসু্যকে সামনে এনে এ হত্যার বিচার দাবিতে আজ রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ধর্মঘট পালনের ঘোষণা দিয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে সকল পরীৰা ও কাস যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। বকরের মৃতু্যর দিন থেকেই হত্যার বিচার দাবিতে ক্যাম্পাসে সাধারণ শিৰার্থী ও বামপন্থী বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলন করে আসছে। তবে তারা এখন পর্যনত্ম ক্যাম্পাসে শিৰার পরিবেশ বিনষ্টকারী কোন কর্মসূচী গ্রহণ করেনি। সকলেই এ হত্যাকা-ের বিচার চায়। কিন্তু তা শিৰার পরিবেশ নষ্ট করে নয়।অন্যদিকে ছাত্রদল হঠাৎ করেই বকর হত্যার বিচারসহ ৬ দফা দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। তবে বকর হত্যার বিচার দাবি তাদের প্রথম দফা নয়, দ্বিতীয় দফা দাবি। তাদের প্রধান দাবি সংগঠনের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকুর ওপর হামলাকারীদের বিচার ও শাসত্মি! ১১ ফেব্রম্নয়ারির মধ্যে তাদের দাবি বাসত্মবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে লাগাতার ধর্মঘটে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি। গত ১৭ জানুয়ারি ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে রক্তৰয়ী সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন টুকু। তবে সংগঠনটির দাবি ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা চালিয়েছিল।
বিদ্রোহী পদবঞ্চিতদের হাতে প্রহৃত হয়ে ক্যাম্পাস ছাড়ার পর থেকে তারা এখন পর্যনত্ম ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেনি টুকু-আলিম ও তাদের সমর্থকরা। বিদ্রোহীরাই ক্যাম্পাসে নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে। আজ ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়ে তা সফল করতে ক্যাম্পাসে আসার প্রস্তুতি নিয়েছে ছাত্রদল (টুকু-আলিম)। অন্যদিকে ছাত্রদলের বিদ্রোহীরাও সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেবে বলে জানিয়েছে। সেৰেত্রে দু'পৰ আবার মুখোমুখি হলে ক্যাম্পাসে আবারও বড় ধরনের সংঘর্ষ ঘটতে পারে।
সংশিস্নষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বর্তমান সরকার ৰমতাসীন হওয়ার পর থেকেই ছাত্রদল ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে নানা ছুতা খুঁজে আসছে। কিন্তু শক্ত কোন ইসু্য দাঁড় করতে পারেনি। নিজেরা গোলাগুলি করে তার জন্য ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দায়ী করে গত মাসের ১৯ ও ২১ তারিখ তারা ক্যাম্পাসে ধর্মঘট পালন করে। তাদের পরিকল্পনা ছিল লাগাতার ধর্মঘটসহ আন্দোলন কর্মসূচী দিয়ে ক্যাম্পাস অচল করে দেয়া। কিন্তু সাধারণ শিৰার্থীদের নূ্যনতম সমর্থন লাভ করতে না পেরে তারা পিছপা হতে বাধ্য হয়। তাদের ডাকা সেই দু'দিনের ধর্মঘটে কাশ কিছুটা ব্যাহত হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সব পরীৰাই অনুষ্ঠিত হয়। সব কার্যক্রমও ছিল স্বাভাবিক। এ অবস্থায় তখন তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
সূত্র জানায়, এবার তারা ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছে। তা হলো লাশের রাজনীতি। বকরের মৃতু্যকে পূঁজি করে তারা এবার আন্দোলন জমাতে চাইছে। গত এক ফেব্রম্নয়ারি রাতে ছাত্রলীগের দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষ চলাকালে আহত হন ইসলামের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আবুবকর ছিদ্দিক। একদিন পর ঢাকা মেডিক্যালে তার মৃতু্য হয়। এ হত্যাকা-ের সঙ্গে ছাত্রদলের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা জড়িত আছেন_এমন গুঞ্জনও ক্যাম্পাসে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তার মৃতু্যকে 'হত্যাকা-' বলে অবহিত করেছেন। তবে কার বা কিসের আঘাতে তার মৃতু্য হয়েছে তা নিয়ে রয়েছে নানা ধূম্রজাল। সংশিস্নষ্টরা মনে করছেন, একটি বিশেষ মহলের ইশারায় পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকা- ঘটানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়কে অশানত্ম করার উদ্দেশ্যে। সংশিস্নষ্ট সূত্র জানায়, ছাত্রদল প্রথমে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি পর্যবেৰণ করেছে। ছাত্রদল ভেবেছিল বকরের মৃতু্যতে আপনা আপনিই ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। কিন্তু তা হয়নি। সবাই আন্দোলন করছে নিয়মতান্ত্রিকভাবে। আর এ কারণেই এবার মাঠে নামছে ছাত্রদল। যখন সাধারণ শিৰার্থীরা বকর হত্যার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে আসছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপৰ হত্যাকা- তদনত্মে কাজ শুরম্ন করেছে, ঠিক সে সময়েই আবারও ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। অথচ বকরের মৃতু্যর পর এ ক'দিনে একটি বিবৃতি দেয়া আর মৃতু্যর দু'দিন পর সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করা ছাড়া কোন কর্মসূচী পালন করেনি সংগঠনটি। কারণ তখন তারা নিশ্চুপ থেকে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছেন, এ হত্যাকা-ের সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক না কেন তা খুঁজে বের করে দোষীদের বিচার করা হবে। কোন রাজনৈতিক রং লাগতে দেয়া হবে না। তদনত্ম কমিটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোউপাচার্য অধ্যাপক হারম্নন-অর-রশীদও অনুরূপ কথা বলেছেন।
এ অবস্থায় ছাত্রদল ধর্মঘটের ডাক দেয়ার পর থেকে সাধারণ শিৰার্থীদের অনেকেই বলছেন, আমরা সবাই হত্যার রাজনীতির ঘোরতর বিপৰে। সে সঙ্গে শিৰার পরিবেশ নষ্ট করারও বিপৰে। আমরা সবাই বকরের হত্যার বিচার চায়। সেজন্য নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনও চলছে। কিন্তু রাজনীতি না করে যে বকরকে জীবন দিতে হয়েছে রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে, সে বকরের হত্যাকা- নিয়ে কাউকে রাজনীতি করে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতেও দেব না। ধর্মঘট হচ্ছে আন্দোলনের চূড়ানত্ম পর্যায়ের কর্মসূচী। অথচ ছাত্রদল শুরম্নতেই সে কর্মসূচী ঘোষণা করেছে।
No comments