শাবিকে কেন্দ্র করে সিলেটে ফের সংগঠিত হচ্ছে হিযবুত তাহরির- দু'দিনে ৫ জঙ্গী আটক

সিলেট অফিস সিলেটে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীর মূলঘাঁটি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি)। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে তারা আবারও সংগঠিত হচ্ছে। গত দু' দিনে ধরা পড়েছে এ সংগঠনের ৫ সদস্য।
তারা সকলেই শাবি ছাত্র । বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে এবার তারা মাঠে নেমেছে ভিন্ন নামে । সংগঠনটি অনেকটা প্রকাশ্যেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এক রাতে নগরীর দেয়ালগুলো পোস্টার দিয়ে ছেয়ে ফেলে তারা ইতোমধ্যে জানান দিয়েছে তাদের শক্তি-সামর্থ্য ও সাংগঠনিক তৎপরতা । শাবিকে ঘিরেই সিলেটে যাত্রা শুরম্ন করেছিল হিযবুত তাহরীর। ঐ সময় শাবির কয়েক শিকসহ বেশ কিছু ছাত্র সম্পৃক্ত ছিল সংগঠনটির সঙ্গে। সিলেট নগরীর আম্বরখানার বরকতিয়া সুপার মার্কেটে থাকা একটি কার্যালয়ের মাধ্যমে চলছিল সংগঠনের কার্যক্রম। বিগত জোট সরকারের সময় হযরত শাহজালাল (রহ) মাজারে বোমা হামলার ঘটনার পর হিযবুত তাহরীরের বিরম্নদ্ধে জঙ্গী সংশিস্নষ্টতার অভিযোগ ওঠে। এ সময় পুলিশ অভিযান চালিয়ে হিযবুত তাহরীরের অফিস সিলগালা করে। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সদস্যদের বাসা বাড়িতে চলে সংগঠনের গোপন তৎপরতা । ২০০৯ সালের শেষ দিকে হিযবুত তাহরীর সভা-সেমিনারের মাধ্যমে সিলেটে তাদের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করার উদ্যোগ নেয়। ওই বছরের ৩ আগস্ট নগরীর ফাজিলচিসত্মের রেইনবো গেস্ট হাউসের কনফারেন্স হলে আয়োজন করে 'খিলাফত উম্মাহর এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়' শীর্ষক সেমিনারের। ঘটা করে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সাংবাদিক ছাড়াও সিলেটের বিভিন্ন পেশার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের দাওয়াত করা হয়েছিল। ওই সেমিনারে হিযবুত তাহরীরের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে মো. শফিকুর রহমান, প্রকৌশলী জামাল ইকবাল, মামুনুর রশীদ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া একই বছরের ১৮ নভেম্বর একই স্থানে 'দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যত' শীর্ষক আলোচনাসভার আয়োজন করে তারা । ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগ নেতা ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের ওপর বোমা হামলার পর সরকার হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর সিলেটে হিযবুত তাহরীর সম্বন্ধে খোঁজখবর নিতে থাকে গোয়েন্দা সংস্থা। তাদের বিভিন্ন কর্মস্থলে হানা দিতে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী । ফলে কয়েক দিন সিলেটে হিযবুত তাহরীর সদস্যরা গা-ঢাকা দেয়। কিছুদিন পূর্বে একই রাতে নগরীর গুরম্নত্বপূর্ণ স্থানের দেয়াল সেঁটে দেয় তারা হিযবুত তাহরীরের পোস্টারে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এটা সম্ভব হলো এ নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছিল সচেতন মহলে। গত মাসে 'ইয়ুথ ফর চেঞ্জ, সাস্ট' নামে তারা কার্যক্রম শুরম্ন করে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর দরগা মসজিদের সামনে এই সংগঠনের নামে একটি লিফলেট বিতরণকালে এ সংগঠনের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আটককৃতরা হচ্ছে শাবির পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১ম সেমিস্টারের ছাত্র ফরহাদ শফি চৌধুরী ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১ম সেমিস্টারের ছাত্র মাহফুজ রহমান। তাদের কাছ থেকে পুলিশ ৬০/৭০টি লিফলেট উদ্ধার করেছে। আটককৃতরা জানিয়েছে, তারা তিন বছর ধরে হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। শনিবার তাদের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এদিকে পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন ফরহাদ ও মাহফুজের দেয়া তথ্য মতে শনিবার সকালে আবারও অভিযান চালায় পুলিশ। আটক করে শাবির আরও ৩ ছাত্রকে। তারাও হিযবুত তাহরীরের সদস্য । আটককৃতরা হলো শাবি ছাত্র মোঃ তাহসীন জামান, শাহাদ হোসেন টিটু ও আবু তাহের রম্নবেল। সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, আটককৃতরা হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। শাবি ছাড়াও নগরীর সুবিদবাজার, ফাজিল চিশ্ত ও হাউজিং এস্টেট এলাকায় হিজুবত তাহরীরের কার্যক্রম এখনও অব্যাহত রয়েছে বলে সূত্র জানায়।

No comments

Powered by Blogger.