অব্যবস্থাপনার উদ্বোধন
প্রি-শো বলে কিছুই হলো না। মূল অনুষ্ঠান শুরু হলো নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা পর। এর বাইরেও ছড়িয়ে থাকল বিশৃঙ্খলা ও পরিকল্পনাহীনতার ছাপ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে কাল দ্বিতীয় বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মন কাড়ার পরিবর্তে দর্শকদের ‘দুয়ো’ই শুনল বেশি।
বিসিবি অবশ্য ধন্যবাদ দিতে পারে টিকিট বিক্রির স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাকটিভ সার্ভিসেস আর মাঠে না আসা দর্শকদের। টিকিটের দাম অনেক চড়া হওয়াতেই তো বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের গ্যালারি অর্ধেকের বেশি ফাঁকা থাকল! ভরল না অনুষ্ঠান শুরুর ঘণ্টা দুয়েক পর গেট খুলে দেওয়ার পরও। তাতেও দর্শকদের ‘দুয়ো’ ধ্বনিটা খুব জোরালো হতে পারেনি। তবে সাধ্যমতো সবাই চেষ্টা করেছেন।সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের প্রধান আফজালুর রহমান ও বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসানের সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর বিপিএলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। সঙ্গে সঙ্গেই আতশবাজি আলো ছড়াল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের আকাশে। তবে সে আলোও অব্যবস্থাপনার অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া অনুষ্ঠানটাকে আলোকিত করতে পারল না।
অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ভারতীয় শিল্পী সুনিধি চৌহান, বলিউডের তারকা জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ ও পাকিস্তানের সংগীতশিল্পী আতিফ আসলাম—আয়োজকদের পক্ষ থেকে এ রকমই প্রচার ছিল। অনুষ্ঠানের প্রায় দুই ঘণ্টা হয়ে যাওয়ার পরও তাঁদের কাউকে মঞ্চে আসতে না দেখে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, জ্যাকুলিন এলেও তখনো নাকি ঢাকাতেই এসে পৌঁছাননি সুনিধি ও আতিফ। রাত আটটার একটু পর থেকে মঞ্চে আর কোনো পরিবেশনাই হচ্ছিল না। আধা ঘণ্টারও বেশি সময় পর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গেম অনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন গাঙ্গুলী টেলিফোনে বললেন, ‘ওরা সবাই ট্রাফিক জ্যামে আটকে ছিল। এখন সবাই একসঙ্গে ঢুকে পড়েছে। এক্ষুনি অনুষ্ঠান শুরু হবে।’ রাত নয়টায় জেমসের গান দিয়ে আবারও শুরু হয় অনুষ্ঠান। বিপিএলের সদস্যসচিব ইসমাইল হায়দার মল্লিক তখনই নিশ্চিত করেন, ‘আতিফ আসলাম আর জ্যাকুলিন এসেছেন। একটু পরই মঞ্চে উঠবেন তাঁরা।’ শেষ পর্যন্ত আতিফ আসলামও উঠেছেন মঞ্চে, গানও গাইলেন কয়েকটা। কিন্তু রাত প্রায় ১১টা বেজে যাওয়ায় গ্যালারি ততক্ষণে আরও ফাঁকা। আর সুনিধি চৌহান আসেনইনি।
শুরুতে ছিল রুনা লায়লা আর মমতাজের গান। রুনা লায়লার ‘শিল্পী আমি শিল্পী’ দিয়ে শুরু হয়ে মমতাজের ‘নান্টু ঘটকে’ এই পর্ব শেষ। এই দুই শিল্পীর গান দর্শক উপভোগ করেছে বলেই মনে হলো। এরপর সাত ফ্র্যাঞ্চাইজির সাতটি বিভাগকে প্রতিনিধিত্ব করে হলো সাতটি গান, সঙ্গে আঞ্চলিক নৃত্য পরিবেশনা।
আগের দিন গেম অন থেকে সরবরাহ করা অনুষ্ঠানসূচির সঙ্গে অনেক কিছুই মেলেনি। যাঁদের নিয়ে টুর্নামেন্ট, সেই খেলোয়াড়দেরই বড় একটা অংশ থাকল অনুপস্থিত। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের অভিযোগ, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যে খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণে একটি পর্ব আছে, সেটাই জানানো হয়নি তাদের। অনুষ্ঠানের ঘণ্টা দুয়েক আগে ই-মেইল আর টেলিফোনে মাঠে আসতে বলা হলেও দেওয়া হয়নি টিকিট বা অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড। তার পরও মঞ্চের অনেক দূরে কিছু সময়ের জন্য চিটাগং কিংসের খেলোয়াড়দের একটা জটলা গেছে। তবে আর কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির খেলোয়াড়দের দেখা যায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির ক্ষুব্ধ মালিক বললেন, ‘আমিও বিপিএলের অংশ। তাই টুর্নামেন্ট নিয়ে নেতিবাচক কিছু বলতে চাই না। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না গিয়ে আমরা নীরব প্রতিবাদ করলাম। নইলে এই অব্যবস্থাপনা চলতেই থাকবে।’
No comments