প্রসঙ্গ ইসলাম- ইসালে সওয়াব মহফিল- অধ্যাপক by হাসান আবদুল কাইয়ূম
প্রিয় নবী সরকারে দোআলম নূরে মুজাস্্সম খাতামুন্্ নাবীয়ীন হযরত
মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লামের প্রতি যে
সালাত ও সালাম পেশ করা হয় তাকেই বলা হয় দরূদ শরীফ।
দরূদ শরীফ পাঠ করার
মধ্যে রয়েছে অজস্র সওয়াব। আল্লাহ জাল্লা শানুহু নবীর প্রতি সালাত ও সালাম
পেশ করার জোর তাকীদ দিয়েছেন। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে : নিশ্চয়ই আল্লাহ ও
তাঁর ফেরেশ্্তাগণ নবীর প্রতি দরূদ পেশ করেন। ওহে তোমরা যারা ইমান এনেছো,
তোমরা তাঁর প্রতি সালাত পেশ কর এবং তাঁকে যথাযথ সম্মানের সাথে সালাম জানাও।
(সূরা আহ্্যাব : আয়াত ৫৬)। এই আয়াতে কারীমার আলোকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়
নবীর প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করা অবশ্য কর্তব্য (ওয়াজিব)।প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নাম মুবারক কিংবা তাঁর গুণবাচক কোনো শব্দ বললে কিংবা লিখলে তাঁর প্রতি সালাত ও সালাম পাঠ করা কিংবা লেখা অবশ্য কর্তব্য হয়ে যায়। এ ব্যাপারে সকল মযহাবই ঐকমত্য পোষণ করেছেন। ইমামে আযম হযরত আবূ হানীফা রহমাতুল্লাহি ‘আলায়হি, হযরত ইমাম মালিক (রহ,)সহ বেশির ভাগ ফকীহ ও মুজতাহিদ দরূদ শরীফ পাঠ করাকে ওয়াজিব বলেছেন। সালাতের বৈঠকে কেউ যদি তাশাহহুদ না পড়ে তার সালাত (নামায) বরবাদ হয়ে যাবে।
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : সেই ব্যক্তি অপমানিত হোক, যার সামনে আমার নাম উচ্চারণ করা হলে দরূদ পাঠ করে না। (তিরমিযী শরীফ)। হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : সেই ব্যক্তি কৃপণ যার সামনে আমার নাম উচ্চারিত হলো অথচ আমার প্রতি সালাত (দরূদ) প্রেরণ করলো না। হযরত আনাস রাদিআল্লাহু তা‘আলা আন্্হু থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত রাসূলুল্লাহ্্ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : কেউ যদি আমার প্রতি একবার দরূদ প্রেরণ করে আল্লাহ তার প্রতি দশবার রহমত প্রেরণ করেন এবং তার দশটি গোনাহ মাফ করে দেন এবং তার দশটি মর্তবা বুলন্দ করে দেন। (আহমদ)।
হযরত আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত রসূলুল্লাহ্্ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : কেউ যদি আমার ওপর একবার সালাত (দরূদ) পাঠ করে তার প্রতি আল্লাহ দশবার রহমত বর্ষণ করেন। (মুসলিম শরিফ)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাদিআল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত একখানা হাদিসে আছে যে, হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি আমার অতি নিকটে থাকবে যে ব্যক্তি আমার প্রতি অধিক দরূদ পাঠ করে। (তিরমিযী শরীফ)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদ রাদিআল্লাহ তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত অন্য একখানা হাদিসে আছে যে, হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : আল্লাহর কিছু ফেরেশতা আছেন যাঁরা যমীনে বিচরণ করেন এবং আমার উম্মতের পাঠানো সালাম আমার নিকটে পৌঁছিয়ে দেন। (নাসায়ী ও দারিমী।)
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আছে যে, হযরত রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : কেউ আমার প্রতি সালাম প্রেরণ করলে আমি তার সালামের জবাব দেই। (আবূ দাউদ)।
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণিত একখানা হাদীসে আছে যে, দু‘আ আসমান ও যমীনের মধ্যস্থলে লটকানো অবস্থায় থাকে, সেখান থেকে তা উর্ধগামী হয় না যতক্ষণ না প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লামের দরূদ পাঠ করা হয়। (তিরমিযী শরীফ)
দরূদ শরীফের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য অনেক। তাই তো আমরা দেখি আযানে, নামাযের বৈঠকে, জানাযার নামাযে, দুই ঈদের নামাযে দু‘আর শেষে, জুমু‘আর নামাযে, জুমু‘আর খুত্বায়, বিয়ের খুত্বায় ইত্যাদি সবখানে দরূদ শরীফ রয়েছে। যারা দরূদ শরীফ পাঠ করে না তারা উচ্চ সম্মান ও মর্যাদা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
ঈদে মীলাদুন্নবী আসে বেশি বেশি দরূদ শরীফ পাঠ করার তাকীদ নিয়ে। মীলাদ মহফিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান যাতে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জীবনী ও আদর্শ আলোচিত হয় এবং সম্মিলিতভাবে সমবেত কণ্ঠে দরূদ শরীফ পাঠ করা হয় এবং তাঁর পৃথিবীতে আবির্ভাবের বিবরণ তুলে ধরার পর দাঁড়িয়ে সুললিত উচ্চারণে সুমধুর স্বরে পাঠ করা হয় : ইয়া নবী ‘সালামু ‘আলায়কা, ইয়া রসূল! সালামু ‘আলায়কা, ইয়া হাবীব সালামু ‘আলায়কা, সালাওয়াতুল্লাহি ‘আলায়কা হে নবী! আপনার প্রতি সালাম, হে রাসূল! আপনার প্রতি সালাম! হে হাবীব! আপনার প্রতি সালাম, আল্লাহর অনুগ্রহ সব আপনার প্রতি। যতবার প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লামের নাম মুবারক আসে এতবার দরূদ শরীফ পাঠ করা অবশ্য কর্তব্য। তাই তো লক্ষ্য করা যায়, সব হাদীস গ্রন্থে কিংবা যে সমস্ত গ্রন্থে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লামের নাম মুবারক রয়েছে তাতে প্রতিবার সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম লেখা রয়েছে।
প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ জগতজুড়ে আযানে আশ্্হাদু আল লাইলাহা ইল্লাল্লাহু বলার পরে উচ্চারিত হয় আশ্্হাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ। আল্লাহ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : ওয়া রাফা‘আনা লাকা যিক্্রাক (হে রসূল) আমি আপনার খ্যাতিকে সমুন্নত করেছি। (সূরা ইন্ইশরাহ্্ : আয়াত ৪)।
লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা.), সাবেক পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
No comments