সিন্ডিকেটের কারসাজি ॥ বাড়ছে চাল তেল ও ডালের দাম
ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে বাড়ছে চাল, ভোজ্যতেল এবং ডালের দাম। কেজিতে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে ৫ টাকা। কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে সুপার পামঅয়েলের দাম। এক লাফে ১৬ টাকা বাড়ার পর আরও ২ টাকা দাম বাড়ল সয়াবিন তেলের।
বেশি দাম বাড়ার পরও ফের ধীরে ধীরে বাড়ছে ডালের দাম। ভরা মৌসুমে প্রতিকেজি আলুর বিপরীতে গুনতে হচ্ছে ৩০ টাকা। কোন কারণ ছাড়া এসব পণ্যের দাম বাড়ায় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মিলমালিক এবং চাতালমালিক ও আড়তদারদের কারসাজিতে বাড়ছে চালের দাম।খোদ খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দাম বাড়ার পেছনে মিলমালিক ও আড়তদাররা দায়ী। নানা ধরনের অজুহাত সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। এজন্য এখনই সরকারের দ্রব্যমূল্য মনিটরিং টিমের তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন। তাদের মতে, চালের বড় বাজার কুষ্টিয়া এবং রাজশাহীতে যত ঘাপলা! ওই দুই জায়গার ব্যবসায়ীরা সারাদেশের চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তাই ওসব জায়গায় সরকারের নজরদারি বাড়ানো উচিত। আর ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিরতার পেছনে মিলারদের কারসাজি রয়েছে। মিলাররা দাম বাড়ানোর কৌশল হিসেবে চাহিদা মতো তেলের সরবরাহ নিশ্চিত করছে না।
সূত্র মতে, বিভিন্ন অপকৌশল ও অজুহাত সৃষ্টি করে বাড়ানো হচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম। কৃত্রিম সঙ্কটের কারণে ভোগ্যপণ্যের বাজারে দেখা দিয়েছে অস্থিরতা। অতিপ্রয়োজনীয় চাল, ভোজ্যতেল এবং ডালের দাম বাড়ার পেছনে কোন যৌক্তিক কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ধানের বাম্পার ফলন, মজুদ এবং সরবরাহ রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে কমছে ভোজ্যতেলের দাম। আর ডালের উৎপাদন ও আমদানি পরিস্থিতি রয়েছে ভাল অবস্থায়। কিন্তু তারপরও এসব পণ্য ক্রয়ে স্বস্তি নেই সাধারণ মানুষের। বাড়তি দাম দিয়েই কিনতে হচ্ছে। তবে নিত্যপণ্য চিনি ও আটার বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। ভোক্তাদের আশঙ্কা হয়ত এ দুটি পণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট চক্র ঢুকে পড়তে পারে। কারণ ইতোমধ্যে চিনি নিয়ে দেশে বহু কেলেঙ্কারি হয়েছে।
কাপ্তানবাজারের এক চাল ব্যবসায়ী জনকণ্ঠকে বলেন, সব ধরনের চালের দাম বাড়তির দিকে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম। প্রতিমণ চালে ২০০-২৫০ টাকা বেশি নিচ্ছে আড়তমালিকরা। অথচ এ সময় চালের দাম বাড়ার কোন যৌক্তিক কারণ নেই।
এ সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম। মানভেদে কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৮ টাকায়। নাজিরশাইল চালের দাম ৪২-৪৮ টাকার মধ্যে স্থিতিশীল থাকলেও নিম্নআয়ের মানুষের গুটি ও পারি চাল বাড়ছে ১-২ টাকা করে। প্রতিকেজি গুটি চাল ২৮-৩০ এবং মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ২৫-২৮ টাকায়। প্রতিকেজি সয়াবিন তেলের দাম ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সুপার পামঅয়েল তেলের ১০ টাকা বেড়েছে কেজিতে। এক্ষেত্রে প্রতিকেজি তেল কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৯০ টাকা। পামঅয়েল কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। রাজধানীর কাপ্তানবাজারে রূপচাঁদা ২ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ২৬৮-২৭০ এবং ৫ লিটারের ক্যান বিক্রি হচ্ছে ৬৭০ টাকায়। অন্যান্য ব্র্যান্ডের তেল একটু কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
মসুর ডাল দেশী এবং নেপালী ক্যাঙ্গার মানভেদে ১৪২-১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাড়ামহল্লায় খুচরা পর্যায়ে ডালের দাম ১৫০ টাকা পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। এছাড়া তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত মসুর ডাল মানভেদে বিক্রি করা হচ্ছে প্রতিকেজি ৮০-৮৫ টাকা। প্রতিকেজি খোলা আটা কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৩৪ টাকা। পেঁয়াজের দাম নিয়ে ইতোপূর্বে কারসাজি হলেও বর্তমানে দাম স্থিতিশীল রয়েছে। মানভেদে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকায়। তবে পেঁয়াজ ওঠার মৌসুমে দাম আরও কমা উচিত বলে মনে করছেন ভোক্তারা। ডিমের দাম কিছুটা হ্রাস পেলেও ব্রয়লার মুরগির দাম একটু বেড়েছে। প্রতিহালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৩৮ এবং প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি পেতে ক্রেতাকে ১৪৫-১৫০ দিতে হচ্ছে।
এছাড়া গত বছরের পুরো সময় শাকসবজির বাজার অস্থিতিশীল ছিল। নতুন বছরেও শাকসবজির দাম কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। শীতকালীন শাকসবজির উৎপাদন, সরবরাহ ভাল হওয়ার পরও দাম কমছে না। এখনও পাইকারি এবং খুচরা বাজারের দামের পার্থক্য কমিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
সাপ্তাহিক বাজার করতে এসে সবজির বাজারেই ভোক্তারা সবচেয়ে বেশি বিরক্ত। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সবজির দাম বেশি হলেও চাষীদের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
No comments