অভিমানে অবসরে যাচ্ছেন দেলোয়ার!

 বড় অভিমান নিয়েই রাজনীতি থেকে অবসরে যাচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন! রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে তেরো দিন চিকিৎসাধীন থেকে রবিবার মধ্য রাতে তাঁর সিঙ্গাপুর যাওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা নেয়ার কথা রয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর বিএনপির অভ্যনত্মরীণ কোন্দলের জের ধরে ২৮ জানুয়ারি ডেমরা আসনের সাবেক এমপি সালাহউদ্দিন আহমেদকে (দৌড় সালাউদ্দিন) বহিষ্কার করেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। বিষয়টি কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি মহাসচিব। কিন্তু খালেদা জিয়াও সিদ্ধানত্মে অনড় থাকায় গত দশ দিনে দেলোয়ার দলের কোন কর্মসূচীতে অংশ নেননি। খালেদা জিয়াও বারডেমে যাননি দেলোয়ারকে দেখতে। দেলোয়ারের বর্তমান শারীরিক অবস্থার চেয়ে তুলনামূলক খারাপ শারীরিক অবস্থা নিয়েও এর আগে মহাসচিব দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন- দাবি করে সূত্র জানায়, চেয়ারপার্সন এবং মহাসচিবের দ্বন্দ্বে অন্য সিনিয়র নেতারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন। এ বিষয়ে মুখ খুললে ঝামেলা হতে পারে বিবেচনায় কেউ কোন মনত্মব্য করতে রাজি নন।
সূত্র জানায়, মহানগর বিএনপিতে অভ্যনত্মরীণ কোন্দল অনেক পুরনো বিষয়। দীর্ঘদিন ধরেই মহানগরের দু'টি গ্রম্নপের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন মহানগর বিএনপির দুই সাবেক সভাপতি মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকা। নেতৃত্ব, আধিপত্য, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে এই দু'টি গ্রম্নপ মুখোমুখী অবস্থানে থাকায় দুই বছরেরও অধিক সময় ধরে দেশের রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকা মহানগরে বিএনপির কমিটি নেই। তবে দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব নতুন মাত্রা পায় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খোন্দকার দেলোয়ার বিএনপির মহাসচিবের দায়িত্ব পাবার পর। মহাসচিবের দায়িত্ব পাবার কয়েকদিন পরেই খোকার নেতৃত্বাধীন মহানগর কমিটি ভেঙ্গে দেয় দেলোয়ার। এরপর থেকেই মির্জা আব্বাসকে সমর্থন দিতে থাকে মহাসচিব। জাতীয় নির্বাচনের পরে দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর কমিটি ঘোষণা দেবার কথা থাকলেও দ্বন্দ্বের কারণে এখনও তা সম্ভব হয়নি। জানা যায়, জাতীয় কাউন্সিলের আগেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খোকাকে সভাপতি করে মহানগর কমিটি চূড়ানত্ম করেন। তিনি কমিটি ঘোষনা দেয়ারও নির্দেশ দেন। কিন্তু মহাসচিব দেলোয়ার মির্জা আব্বাসের পৰ নিয়ে কমিটি ঘোষণা না দিকে বাধ্য করেন চেয়ারপার্সনকে। কিন্তু চেয়ারপার্সন সিদ্ধানত্মে অনড় থাকলে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন মহাসচিব। আগে জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে আব্বাসকে নীতিনির্ধারণী পদ দেবার পর তিনি কমিটি ঘোষণা করার পরামর্শ দেন। এ প্রেৰিতে খালেদা জিয়া মহাসচিবের পরামর্শ মেনে নিয়ে কমিটি ঘোষণা স্থগিত করেন। পরে জাতীয় কাউন্সিলে আব্বাসকে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে নিয়োগ দেন চেয়ার পার্সন। এরপর কমিটি ঘোষণা করতে চাইলে আবারও বাধা হয়ে দাঁড়ান মহাসচিব। মির্জা আব্বাস সমর্থকরা ডেমরা আসনের সাবেক এমপি সালাহউদ্দিনকে দিয়ে খোকার বিরম্নদ্ধে কলকাঠি নাড়তে থাকেন। আব্বাস সমর্থকরা খোকাকে সংস্কারপন্থী আখ্যা দিয়ে তাকে মহানগরের সভাপতি বানালে বিশৃঙ্খলার হুমকি দেন। মহাসচিবও তাদের সঙ্গে সুর মেলান, যা কিছুতেই মানতে পারেননি চেয়ারপার্সন। এমতাবস্থায় খোকাকে ২৭ জানুয়ারি রাজধানীর মুক্তাঙ্গনে মহানগর বিএনপির পৰে সমাবেশের আয়োজন করতে বলেন দলের চেয়ারপার্সন। আব্বাস সমর্থকদেরও সমাবেশে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন চেয়ারপার্সন। কিন্তু মহাসচিব আগেই বিষয়টি আঁচ করতে পেরে সমাবেশে অনুপস্থিত থাকার সুবিধার্থে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হন। পাশাপাশি ২৭ জানুয়ারির সমাবেশে আব্বাসসহ তার সমর্থকরা সমাবেশে না গিয়ে থানায় থানায় বিৰোভ মিছিল করার চেষ্টা করেন। এতে প্রচ- ৰুব্ধ হন বিএনপি চেয়ারপার্সন। পরের দিনই দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দৌড় সালাউদ্দিনকে বহিস্কার করেন তিনি। চেয়ারপার্সনের সিদ্ধানত্মে মনোৰুণ্ন হন মহাসচিব। মহাসচিব দৌড় সালাউদ্দিনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য চেয়ারপার্সনের কাছে বার বার অনুরোধ করেন। কিন্তু চেয়ারপার্সন মহাসচিবের অনুরোধে সাড়া দেননি। এ প্রেৰিতে মহাসচিব আর দায়িত্ব পালন না করারও হুমকি দেন। কিন্তু এতেও সাড়া দেননি চেয়ারপার্সন। সূত্র জানায়, চেয়ারপার্সন শুধু ঢাকা মহানগর নয়, সারাদেশেই দলের অভ্যনত্মরীণ কোন্দলের জন্য মহাসচিবের সক্রিয় ভূমিকা থাকার প্রমাণ পাওয়ায় অসনত্মোষ প্রকাশ করেন। খোন্দকার দেলোয়ার আর মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করম্নক, তা চানও না চেয়ারপার্সন। দলীয় কার্যক্রম থেকে দূরে থাকতেই মহাসচিব বারডেমে ভর্তি হয়েছেন- এমন তথ্য থেকেই চেয়ারপার্সন বারডেমে যাননি। মহাসচিবের অসুস্থতার কথা বলা হলেও গত কয়েকদিনে বিএনপির সিনিয়র কোন নেতারও বারডেমে যাওয়ার কথা শোনা যায়নি। এমতাবস্থায় রবিবার রাতে সিঙ্গাপুর যাবার কথা মহাসচিবের। দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া না হলেও তাকে যে চেয়ারপার্সন দায়িত্বে দেখতে চান না- বিষয়টি টের পেয়েই মহাসচিব কাউকে কিছু না জানিয়েই সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বড় অভিমানেই দলের দুঃসময়ের কা-ারি হিসেবে পরিচিতি পাওয়া খোন্দকার দেলোয়ার রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন বলে মনত্মব্য করেছেন দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। আর এবার মহাসচিবের সিঙ্গাপুর যাত্রার মধ্যদিয়েই দেলোয়ারের রাজনৈতিক জীবনের যবনিকা ঘটবে বলে তাঁদের ধারণা।

No comments

Powered by Blogger.