বিপুল ভোটে জাবেদ নির্বাচিত by মহসিন চৌধুরী

চট্টগ্রাম-১২ (আনোয়ারা-পশ্চিম পটিয়া) উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন গণফোরামের উজ্জ্বল ভৌমিক।
বৃহস্পতিবার শান্তিপূর্ণ ও নিরুত্তাপ পরিবেশে এ উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গত অক্টোবরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুজ্জামানের পিতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুতে শূন্য হওয়া এ আসনের নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যেও ছিল অনেকটা গা-ছাড়া ভাব। তার পরও অসম এ লড়াইয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন একেবারে সহজেই। আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়ী হওয়ার এ ফল পাওয়া গেছে কেন্দ্রগুলোর ফলাফলের পরিসংখ্যান থেকে।
এদিকে রাত ৮টায় চট্টগ্রাম-১২ আসনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার খোরশেদ আলম বেসরকারীভাবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। আনোয়ারা উপজেলায় নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়। এ সময় তিনি দুই প্রার্থী জাবেদ ও উজ্জ্বলের প্রাপ্ত ভোট উল্লেখ করেন। আসনের মোট ৯০টি কেন্দ্রে নৌকা প্রতীক নিয়ে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ পেয়েছেন ১ লাখ ২৪ হাজার ৯৬৪ ভোট। অন্যদিকে, তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী গণফোরামের সূর্য প্রতীক নিয়ে উজ্জ্বল ভৌমিক পেয়েছেন ১ হাজার ৮৪৬ ভোট। জাবেদ তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে ১ লাখ ২৩ হাজার ১১৮ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। উল্লেখ্য, আসনটিতে মোট ভোটার সংখ্যা আড়াই লাখ।
সকাল থেকে নির্বাচনী এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় খুব বেশি উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল না সাধারণ ভোটারদের মাঝে। এমনিতেই শীত আর কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল, তার ওপর রয়েছে অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতা। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এ ভোটে অংশ নেয়নি। তাই ভোটারদের মাঝে দলীয় প্রার্থীকে জেতানোর জন্য যে উৎসবমুখর তৎপরতা থাকার কথা ছিল তা ছিল না বললেই চলে। কারণ আগে থেকেই নৌকা প্রতীকের জয় নিশ্চিত এটাই ছিল সবার ধারণা।
এ আসনের প্রয়াত এমপি এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত এ উপনির্বাচনে তারই জ্যেষ্ঠ পুত্র ও আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইফুজ্জামান অনেকটা ফাঁকা মাঠে গোল দিলেন বলে স্থানীয় লোকজনের অভিমত। দিনের প্রথমভাগে দলীয় কর্মীদের মাঝে লক্ষণীয় তৎপরতা না থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটারশূন্য কেন্দ্রগুলোতে উপস্থিতি মোটামুটি বাড়তে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই সম্পন্ন হয়েছে আনোয়ারায় উপনির্বাচন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের নিজের কেন্দ্র হাইলধর বশরুজ্জামান প্রাথমিক বিদ্যালয়। সকাল আটটায় এ কেন্দ্রটিতে ভোটগ্রহণ শুরু হলেও জাবেদ নিজেই উপস্থিত হন সকাল পৌনে ৯টার দিকে। এ সময় পর্যন্ত হাতেগোনা কিছু ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। আনোয়ারা এবং পশ্চিম পটিয়ার দুটি উপজেলার ৯০টি কেন্দ্রে সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রায় অভিন্ন ছিল ভোটারদের উপস্থিতি। শীত এবং কুয়াশা তখনও কাটেনি। গ্রামের দোকানপাট এবং আড্ডাস্থল ছিল নীরব। কিন্তু ৯০ কেন্দ্রের ছয় শতাধিক বুথে পোলিং অফিসার এবং প্রিসাইডিং অফিসাররা প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছিলেন ভোট গ্রহণের জন্য। বহু কেন্দ্রে সকালের প্রথম দুই ঘণ্টায় ভোটার খুঁজে পাওয়া ছিল রীতিমতো দুষ্কর। নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মীদের তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরবর্তী এ আসনটির অধিকাংশ এলাকায় ভোটারদের তেমন আগ্রহ ছিল না। অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণেই মূলত উৎসাহ-উদ্দীপনায় ভাটা পড়ে।
নৌকা প্রতীকের সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন উদীয়মান সূর্য প্রতীকের উজ্জ্বল ভৌমিক। গত নির্বাচনেও উজ্জ্বল ভৌমিক গণফোরামের দলীয় টিকেটে নির্বাচন করেছিলেন। সে সময় তাঁর নিজ কেন্দ্রে প্রাপ্ত ভোট ছিল মাত্র ৭। তাই এ প্রার্থী নিয়ে কোন মহলেই কানাঘুষা ছিল না। মূলত নিয়ম রক্ষার নির্বাচন হয়ে দাঁড়ায় জাবেদের জন্য। তার পরও গত কয়েকদিনে পুরো নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়ান চট্টগ্রামের সবচেয়ে তরুণ এ এমপি প্রার্থী।
জাবেদ নিজের ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের আগ্রহী করতে গিয়ে স্বীকার করেন উপনির্বাচন বরাবরই কিছুটা উৎসবহীন হয়ে থাকে। আখতারুজ্জামান বাবুর মতো একজন নেতার মৃত্যুর পর এ নির্বাচন আনোয়ারাবাসীর মনে উৎসব বিরাজ করার কথা নয়। তার পরও এখানকার মানুষ বাবুর প্রতি ভালবাসার টানে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোট কেন্দ্রে ছুটে আসবেন বলে জাবেদ আশা প্রকাশ করেন। সকাল ৯টায় নিজের কেন্দ্রে ভোটারদের উৎসাহিতকরণে ড্যামি মহড়া দেয়ার পর তিনি ছুটে যান বিভিন্ন কেন্দ্রে। প্রথম ঘণ্টায় ভোটারদের নাজুক উপস্থিতির জন্য তিনি দ্রুত দলীয় কর্মীদের সজাগ করে দিতে থাকেন। এর পরই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের কেন্দ্র অভিমুখী প্রবণতা শুরু হয়।
এদিকে দুপুর পর্যন্ত আনোয়ারা এবং পশ্চিম পটিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করে দেখা যায়, ভোটারদের চেয়ে কর্মী সমর্থক এবং নিরাপত্তা কর্মীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। কিছু কিছু কেন্দ্রে ভোট গণনার হার ছিল একেবারেই নগণ্য। আবার দলীয় কর্মী অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে নানাভাবেই ভোটার আনার প্রবণতা ছিল। কোথাও কোথাও একই ব্যক্তি বার বার ভোট দেয়ার কথাও জানা গেছে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কোন এজেন্ট না থাকায় চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ ছিল না। তবে কোন ভোটই জাল হিসেবে চিহ্নিত হয়নি। গণফোরাম প্রার্থী উজ্জ্বলকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি ক’টি কেন্দ্রে তার এজেন্ট রয়েছে তা জানাতে পারেননি।

No comments

Powered by Blogger.