বাজেট বাসত্মবায়নের তিন মাসের চিত্র সংসদে তুলে ধরা হবে- অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা

সংসদ রিপোর্টার বছর শেষে বাজেট অধিবেশনে নয়, প্রতি তিন মাসের বাজেট বাসত্মবায়নের অগ্রগতি সংসদে পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সে অনুযায়ী চলতি অধিবেশনেই মহাজোট সরকারের প্রথম তিন মাসের বাজেট বাসত্মবায়নের পূর্ণ চিত্র সংসদে উত্থাপন করা হবে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে এ ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী। বর্তমান সরকার ৰমতায় আসার পর প্রথম বাজেট পেশকালেই প্রতি তিন মাসের বাজেট বাসত্মবায়নের অগ্রগতির রিপোর্ট সংসদে পেশ করার ব্যাপারে একটি আইন পাস করা হয়। অতীতে কোনদিন বাজেট বাসত্মবায়নের অগ্রগতি নিয়ে ত্রৈমাসিক রিপোর্ট প্রদানের ঘটনা এই প্রথম। প্রশ্নোত্তরপর্বে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের নবেম্বর পর্যনত্ম পাঁচ মাসে উন্নয়ন ব্যয় হয়েছে ২৩ শতাংশ। এডিপি বাসত্মবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরে তিনি জানান, ওই সময়ের মধ্যে রাজস্ব আয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা এবং মোট উন্নয়ন ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৯শ' কোটি ৬২ লাখ টাকা। এ সময়ের মধ্যে মাত্র চারটি দেশ থেকে প্রবাসীরা ২ হাজার ৪৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে।
সংসদ সদস্য খান টিপু সুলতানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, প্রতিটি পরিবারের অনত্মত একজনের কর্মসংস্থান করতে সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের চারটি উপজেলা বরগুনা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গোপালগঞ্জে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে ন্যাশনাল সার্ভিস প্রকল্প বাসত্মবায়নাধীন রয়েছে।
সরকারী দলের সংসদ সদস্য শফিকুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, প্রবাসীদের কল্যাণ, তাদের প্রেরিত অর্থের সদ্ব্যবহার ও বিনিয়োগ সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকার বেশ কিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রবাসীদের মালিকানা দিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক স্থাপনের বিষয়ে একটি বিশেষ কমিটি কাজ করছে। প্রবাসীদের জন্য এটি ছাড়াও আরও দু'একটি ব্যাংক স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
সংসদ সদস্য মঞ্জুর কাদের কোরাইশীর অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, কৃষিঋণের বেশিরভাগই হচ্ছে ৰুদ্রঋণ। এ বছর কৃষকদের অবস্থা খুবই ভাল। তাই কৃষকরা তাদের পুরনো ঋণ পর্যনত্ম পরিশোধ করতে পেরেছে। বিগত বছরে এ সময়ে কৃষকদের কাছ থেকে মাত্র হাজার কোটি টাকা আদায় হলেও চলতি বছরের এ পর্যনত্ম ৪ হাজার ৪৯ কোটি টাকা কৃষিঋণ আদায় হয়েছে। তিনি জানান, দাতাদেশ ও সাহায্য সংস্থা থেকে বর্তমানে প্রায় ৬ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রম্নতি পাইপলাইনে রয়েছে।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের লৰ্যে ঘোষিত রূপকল্প-২০২১-এর আলোকে ২০১০-২১ মেয়াদে একটি প্রেৰিত পরিকল্পনা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। রূপকল্প-২০২১ বাসত্মবায়নের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে দারিদ্র্য নিরসন কৌশলপত্র চূড়ানত্ম করা হয়েছে এবং ২০১০-১৫ মেয়াদের একটি পাঁচশালা পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ শুরম্ন করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মজিবুল হকের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, চলতি অর্থবছরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দাতাদেশ হতে অনুদান বাবদ ৩৭২ দশমিক ১৩ মার্কিন ডলার এবং ঋণ বাবদ ১ হাজার ১৬৬ দশমিক ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রম্নতি পাওয়া গেছে। এছাড়া ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে (২০০৯ সালের জুলাই থেকে নবেম্বর) উন্নয়ন সহযোগী ও দাতাদেশ থেকে ঋণ বাবদ ১ হাজার ৪৬ দশমিক ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং অনুদান বাবদ ১৩৩ দশমিক ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ডিসবার্সমেন্ট পাওয়া গেছে।
মোল্যা জালালউদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আবদুল মুহিত জানান, চলতি অর্থবছরে চারটি দেশ থেকে প্রবাসীরা ২ হাজার ৪৯০ দশমিক শূন্য ৩ মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুর থেকে ৭৯ দশমিক ৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, মালয়েশিয়া থেকে ২২৯ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন, সৌদি আরব থেকে ১ হাজার ৩৯২ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন এবং আবুধাবি থেকে ৭৮৮ দশমিক শূন্য ৫ মিলিয়ন মাকির্ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
সংরৰিত নারী আসনের সংসদ সদস্য তহুরা আলীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৰতিগ্রসত্ম ব্যবসায়ীদের ডাইন পেমেন্ট ছাড়া ঋণ পুনর্তফসিল করার সুযোগ দেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরের ৫ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। সরকারের রূপকল্প-২০১০ অনুযায়ী ২০১৩ সাল নাগাদ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা আছে।

No comments

Powered by Blogger.