শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি-শাওনলালের বাড়িতে রাজাকার ক্যাম্প স্থাপন করেন আলীম

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে আবদুল আলীমের হুমকিতে ভয়ে দেশ ছেড়েছিলেন জয়পুরহাটের ব্যবসায়ী শাওনলাল বাজলা। দেশ ছাড়ার পর তাঁর বাড়ি, দোকান ও গদিঘর দখল করে সেগুলোতে শান্তি কমিটি ও রাজাকারদের কার্যালয় এবং প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন করেন আলীম। পরে একটিতে তিনি পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প করতে সহযোগিতা করেন।


বিএনপির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগের বিষয়ে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রানা দাশগুপ্ত গতকাল মঙ্গলবার এসব কথা বলেন। বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ গতকাল এই শুনানি শুরু হয়েছে। আলীম ট্রাইব্যুনালে হাজির ছিলেন। তাঁর জামিনের মেয়াদ ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছেন ট্রাইব্যুনাল-২। সেদিন নতুন করে আলীমের জামিনের আবেদনের শুনানি হবে।
শুনানিতে রানা দাশগুপ্ত বলেন, জয়পুরহাটের সদর রোডে মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী শাওনলালের বাড়ি ছিল আলীমের বাড়ির কাছেই। একাত্তরের ২১ এপ্রিল শাওনলালের বাড়ি দখল করা হয়। বাড়ি দখলের পর পাকিস্তানি সেনারা শাওনলালের পাঁচ লাখ টাকার পাটে আগুন ধরিয়ে দেয়। আরও পাঁচ লাখ টাকার পাট বিক্রি করে ওই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। তাঁর ভক্সওয়াগন গাড়িতে আলীম ও পাকিস্তানি সেনারা ঘুরে বেড়াত। এ ঘটনায় আলীমের বিরুদ্ধে দেশত্যাগে বাধ্য করা ও পাকিস্তানি সেনাদের অপকর্মে সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
কৌঁসুলি আরও বলেন, একাত্তরের ২০ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীরা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেরুদ্দীন চৌধুরীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের পর আগুন ধরিয়ে দেয়। আলীম এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে ট্রাইব্যুনাল-২-এর কার্যক্রম শুরু হলে আলীমের জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর ও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে শুনানি ছয় সপ্তাহ মুলতবির আরজি জানান আসামি পক্ষের আইনজীবী তারিকুল ইসলাম। মুলতবি আবেদনের বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষ।
জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনাল-২ বলেন, ট্রাইব্যুনাল-১ আলীমকে জামিন দিয়েছেন। এই ট্রাইব্যুনাল স্বতন্ত্র। তাই জামিনের জন্য তাঁকে এই ট্রাইব্যুনালে নতুন করে আবেদন করতে হবে। ২৯ এপ্রিল জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করে ট্রাইব্যুনাল বলেন, ওই দিন পর্যন্ত তিনি জামিনে থাকবেন।
মুলতবির আবেদনের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, আসামিপক্ষ ২৯ এপ্রিল শুনানি করবে। ওই দিন পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ না হলে আসামিপক্ষের জন্য নতুন দিন নির্ধারণ করা হবে।
গত বছর ২৭ মার্চ মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আলীমকে জয়পুরহাট শহরে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ৩১ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-১ তাঁকে শারীরিক অসুস্থতার জন্য জামিন দেন। এরপর থেকে তিনি রাজধানীর বনানীতে ছেলের বাসায় আছেন। গতকালও তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে হুইল চেয়ারে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। ১৬ এপ্রিল তাঁর বিরুদ্ধে মামলাটি ট্রাইব্যুনাল-২-এ স্থানান্তর করেন ট্রাইব্যুনাল-১। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুততর করতে ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ প্রাণ হারান। সম্ভ্রম হারান দুই লাখ নারী। মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.