বাজেট অধিবেশন-বিরোধী দলের অংশগ্রহণ জরুরি

সংসদ অধিবেশন বসছে আজ। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশেষ করে বিরোধী দলের পাঁচজন এমপি কারাগারে থাকা অবস্থায় অধিবেশনটি বসার কারণে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। ইতিমধ্যে অবশ্য বিরোধী দলের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, দলীয় এমপিদের কারাগারে রেখে তারা এই অধিবেশনে যোগ নাও দিতে পারে।


যে কারণেই হোক, বিরোধী দল এবারও অধিবেশনে যোগ না দিলে সংসদ আগের মতোই নিষ্প্রাণ থাকবে_এটা বোঝা যায়। আর বাজেট উপস্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে বিরোধী দলের অনুপস্থিতি সরকারের ত্রুটিমুক্ত হওয়ার পথকে রুদ্ধ করবে। কারণ সাধারণত সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা ভুলত্রুটিগুলো নিয়ে আলোচনা করা থেকে বিরত থাকেন। অন্যদিকে জনদাবির প্রতিফলনও ঘটে কম। যে কারণে বাজেট অধিবেশনটি একপেশে হয়ে পড়তে পারে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭ জুন সংসদে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। আলোচনা ও প্রয়োজনীয় সংশোধনী শেষে তা ২৮ জুন অনুমোদন হওয়ার কথা। মহাজোট সরকারের চতুর্থ বাজেট এটি। বাজেট উপস্থাপন ও অনুমোদন ছাড়াও আগে উপস্থাপিত ১৩টি বিলও পাস হবে চলতি অধিবেশনে। সংসদীয় কমিটিগুলোও বিভিন্ন বিল পর্যালোচনা করে তৈরি করে রেখেছে। ফলে বিরোধী দল সংসদে যোগদান না করলেও বিল পাসে বিলম্ব হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
আগামী এক বছরের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের আভাস পাওয়া যাবে বাজেট অধিবেশন চলাকালেই। স্বাভাবিক কারণেই এই অধিবেশনের গুরুত্ব অনেক। পুরো বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও নাগরিক জীবনব্যবস্থার ব্যয়নির্দেশিকা এই অধিবেশন থেকে নির্ধারিত হয় বলে সাধারণ মানুষও বাজেট অধিবেশনের প্রতি আকৃষ্ট থাকে বেশি। মহাজোট সরকারের জন্যও এই বাজেট অধিক গুরুত্ববহ। কারণ তাদের মেয়াদকালের মধ্যে আরেকটি বাজেট ঘোষণা করা হলেও সেটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করে যেতে পারবে না তারা। ফলে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য এই বাজেটে বরাদ্দ থেকে অর্থ নিয়েই তাদের কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় এই সরকারের জন্য আসন্ন বাজেট হবে তাদের সাফল্য-ব্যর্থতা নিরূপণেরও মাপকাঠি।
বিশাল অঙ্কের বাজেট হবে এবার_এমন আভাস ইতিমধ্যে পাওয়া গেছে। এবারও হয়তো বাজেট ঘোষণার পরপর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিরোধী দল বাজেটের সমালোচনা করবে। কিন্তু তার চেয়ে অধিকতর প্রয়োজন হচ্ছে, সংসদে গিয়ে বাজেটের ত্রুটিগুলো ধরে দেওয়া এবং সংশোধনের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উত্থাপন করা। বিরোধী দল সেই দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবে_এটা প্রত্যাশিত। একই সঙ্গে সরকারেরও উচিত বিরোধী দলকে সংসদে ফিরিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা। পাশাপাশি বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্যদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.