শেখ হাসিনার পাবনার সভাতেও জনজোয়ার- প্রধানমন্ত্রী নৌকায় ভোট চাইলেন
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাখো জনতার কাছে আগামী
নির্বাচনে নৌকামার্কা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ
ক্ষমতায় গেলে জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়।
আর বিএনপি ক্ষমতায় গেলে সন্ত্রাসী,
জঙ্গীবাদ উত্থানসহ লুটপাটের রাজত্ব কায়েম হয়। আওয়ামী লীগ আমলে উন্নয়নের
জোয়ার বয়ে যাওয়ার কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে দল
মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে সে দলের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ক্ষুধা
দারিদ্র্যমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা। প্রধানমন্ত্রী শনিবার
দুপুরে সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে বিশাল জনসমুদ্রে প্রধান অতিথির বক্তব্য
রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা সরকারী এডওয়ার্ড কলেজের জনসভায় ২০০৮ সালে নির্বাচনে পাবনার ৫টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে নির্বাচিত করায় পাবনাবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে আরও বলেন, ৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এসে পাবনায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ বেশ কয়েকজনকে হত্যা, লুটপাট করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আর আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে মহাজোট সরকার সন্ত্রাসী জঙ্গীবাদ দমন করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন ছিল, ১৯৭৫ সালে তাঁকে সপরিবারে ও জেলখানায় ৪ নেতা হত্যার পর সবকিছু ভূলুণ্ঠিত হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের পর ঘাতক আলবদর রাজাকারদের বিচার শুরু করেন। ১১ হাজার আলবদর রাজাকার জেলে পোরা হয়। সে সময় অনেক ঘাতক রাজাকার বিদেশে পালিয়ে যায়। ’৭৫-এর পর জিয়া ক্ষমতায় এসে এ বিচার বন্ধ করে দেন। শুধু তাই নয়, জিয়া স্বাধীনতার চেতনা ভূ-লুণ্ঠিত করে ’৭১-এর ঘাতকদের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী করে পাকিস্তানী ভাবধারায় দেশকে নিয়ে যান।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে বেলা ১২টায় হেলিকপ্টারযোগে বেড়ায় অবতরণ শেষে বেড়া ডিগ্রী কলেজ মাঠে ৫শ’ ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৭০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট ও ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়া পৌরসভার নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন। এখানে শুধু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থাকলেও তা বিশাল জনসভায় পরিণত হয়। এ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ওয়াদা প্রায় সবই পূরণ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেত্রি তাদের বাঁচানোর জন্য জ্বালাও-পোড়াও আর মানুষ হত্যা শুরু করেছেন। বিএনপির দুটি গুণ, দুর্নীতি আর মানুষ খুন। এরা যতই চেষ্টা করুক যুদ্ধাপরাধী কেউ রেহাই পাবে না। পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকের সভাপতিত্বে উক্ত জনসভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য ড. মির্জা আব্দুল জলিল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছাইফ উদ্দিন শেখন, মোঃ চয়ন ইসলাম এমপি, সাবেক উপমন্ত্রী হাসিবুর রহমান স্বপন উপস্থিত ছিলেন এইচ,টি ইমাম, মৎস্যসম্পদমন্ত্রী মোঃ আব্দুল লতিফ বিশ্বাস প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধকালের রাজাকার আলবদর বাহিনীপ্রধান মতিউর রহমান নিজামীকে পরাস্ত করে পাবনা-১ আসনে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করেছেন, এজন্য আপনাদের জানাই অভিবাদন। বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের সরকার বিনামূল্যে বই বিতরণ করছে। প্রতিটি ইউনিয়নে সেবা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যে সব গরিব মেধাবী ছাত্র টাকাপয়সার অভাবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারছেনা আমাদের সরকার তাদের বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এছাড়া ও কৃষি খাতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। ছিন্নমূল মানুষদের জায়গা এবং ঘর করে দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট চেয়ে বলেন, পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে এই এলাকায় ব্যপক উন্নয়ন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩টা ৪০ মিনিটে সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি কলেজ মাঠের নৌকাসদৃশ বিশাল মঞ্চের পেছনে স্থাপিত ১শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫০০ বেডের পাবনা মেডিক্যাল কলেজ, ১শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাঙ্গুড়া-নওগাঁ সড়ক, পাবনা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি ভবন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ভবন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর ভিত্তিপ্রস্তর, ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ভবন, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর ডিজিটাল পদ্ধতিতে উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী ৪টা ৪ মিনিটে বিশাল নৌকা সজ্জিত মঞ্চে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় সকাল থেকেই বিভিন্ন উপজেলার গ্রামগঞ্জ থেকে মিছিলের স্রোত আসতে শুরু করে। বেলা ১টার মধ্যেই সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ মাঠ মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বেলা যতই বাড়ছিল মানুষের স্রোত ততই উপচে পড়ছিল। দুপুর ২টার দিকে সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে মিছিলের স্রোত জায়গা না পাওয়ায় রাস্তার ওপর অবস্থান নিতে থাকে। প্রিয় নেত্রীকে দেখতে আসা হাজার হাজার মানুষ জনসভা কেন্দ্র থেকে ডাকবাংলো মোড় ও শহরের আব্দুল হামিদ সড়ক পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে মাইকে বক্তব্য শুনতে থাকে। শেখ হাসিনা যখন বক্তব্য দিতে শুরু করেন তখন জনতা দাঁড়ানোর সুযোগ না পেয়ে ডিগ্রী কলেজ, রথ খোলা মোড় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ও কলেজের বিভিন্ন ভবন ও গাছে চড়ে নেত্রীর বক্তব্য শোনেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেগ পেতে হয়। জনসভায় উপস্থিত প্রবীণদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর এ জনসমাবেশ ’৭২ সালের বঙ্গবন্ধুর পাবনার জনসভাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সে সময় বঙ্গবন্ধু পাবনা স্টেডিয়ামে এলে লাখ লাখ মানুষ একনজর তাঁকে দেখতে যেভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল, ঠিক সেভাবেই যেন লাখ লাখ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় উপস্থিত হয়। গ্রামগঞ্জের হাজার হাজার মানুষ গাড়ি না পেয়ে ভোরবেলায় হেঁটে অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হয়। মানুষের চাপে শহরের হোটেল রেস্তোরাঁতেও খাবার শূন্য হয়ে পড়ে। ১২টার দিকে মিছিলে মিছিলে পাবনা শহর প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। শহরের অলিগলি যেদিকে তাকাই যেন মিছিল আর মিছিল। পাবনায় স্মরণকালের ইতিহাসে এমন জনসমুদ্র আর মানুষ দেখেনি বলেও অনেকেই জানান। জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই জনসমাবেশ দুপুর দেড়টায় শুরু হয়। পবিত্র কোরান, গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেল পাঠের মাধ্যমে এ সমাবেশ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪টা ৪ মিনিটে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। বক্তব্যে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্নের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী হরতাল অবরোধসহ বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করলেও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে পারবেন না। বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রীর উদ্দেশে আরও বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি কালো টাকা অর্জনসহ এতিমদের টাকা পর্যন্ত চুরি করেছেন। তাঁর এক ছেলে আমেরিকায়, আরেক ছেলে সিঙ্গাপুরে টাকা পাচার করেছেন। সে টাকা আমরা ফিরিয়ে এনেছি। তিনি এখন বড় বড় কথা বলেন। তিনি ছেলেকে কি শিক্ষা দিয়েছেন বলেও প্রশ্ন রাখেন। তিনি ছেলেদের বোমা মারা, চুরির ডিগ্রী শিখিয়েছেন। আর আমরা চাই আমাদের ছেলেরা সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ মানুষের সেবায় নিয়োজিত হোক। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর সভাপতিত্বে এ বিশাল জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ, পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) একে খন্দকার, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স এমপি, মকবুল হোসেন এমপি, পাবনা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদ মাস্টার, জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বদু, যুবলীগ কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির রানা, সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন পিয়াল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহমেদ শরীফ ডাবলু, জেলা যুবলীগ সভাপতি শরীফ উদ্দিন প্রধান, জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান টিপু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি লায়েব উদ্দিন লাভলু, কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, পাবনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তসলিম হাসান সুমন প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর ৩৩ মিনিটের ভাষণে ৪ বছরের উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়নে বিশ্বাস করে তাই শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে ২৬ হাজার ২শ’ প্রাইমারী স্কুল জাতীয়করণ করেছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে ২৭ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে। ছাত্রীদের উপবৃত্তি দিচ্ছি। দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করলেও বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন, হাসপাতালের বেড সংখ্যা বৃদ্ধি, নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীতকরণসহ মাতৃত্বকালীন ভাতা দিয়ে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে।
মহাজোট আমলে প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ও রিজার্ভ বেড়ে গেছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ’৯৬ সালে ৪০ লাখ টন যে খাদ্য ঘাটতি ছিল ১৯৯৮ সালে তা পূরণ করে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিলাম। কৃষি ভর্তুকি, কৃষকদের ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বর্গা চাষীদের কৃষি ঋণ, গরিব চাষীদের বিনাসুদে ঋণ দেয়াসহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। গরিবদের বিনা পয়সায় ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে আমরা খাবার সরবরাহ করেছি। আমাদের লক্ষ্য হলো প্রত্যেকটি মানুষ যেন দু’বেলা খেতে পারে সে কাজই করেছি। প্রতিটি মানুষ যাতে ঘরে বাস করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা দিয়ে আমরা সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের আমলে দারিদ্র্য ১০ ভাগ কমেছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মহাজোট আমলে ৪ লাখ মানুষকে চাকরি দিয়েছি। যুব সমাজ যাতে জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে কর্মসংস্থান করতে পারে এজন্য ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা করেছি। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বঙ্গবন্ধু আইন করে চিহ্নিত করেছিলেন। সেই সমুদ্র সীমা নিয়ে বিএনপি আমলে কেউ কিছু করেনি। আমরাই মামলার মাধ্যমে ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩৩ কিলোমিটার সমুদ্র আমরা উদ্ধার করেছি। আমাদের সাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বিশ্বাস করে না, তাই ৫ হাজার ৫শ’ ১০টি ইউপি, উপজেলা ও পৌর নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপির আমলেও নির্বাচন মানেই ছিল হত্যা, সিল মারা, ভোটকেন্দ্র দখল করা। আর আমরা জনগণের সাংবিধানিক ক্ষমতা ফিরিয়ে এনেছি। তার কারণ হচ্ছে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলতে চাই। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম পাবনার দৃশ্যমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের আর কোন কিছু চাওয়ার নেই। শুধু একটিই চাওয়া যুদ্ধাপরাধী ঘাতকদের দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা। তিনি আরও বলেন, আমেরিকাসহ সমগ্র বিশ্ব যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে সমর্থন করছে, তখন খালেদা জিয়া নিশ্চুপ থেকে পক্ষান্তরে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করেছেন। তিনি আগামী নির্বাচনে পাবনার ৫টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য জনগণের কাছে আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী ৫টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় ফিরে যান। প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ ১৪ বছর পর পাবনায় আগমন উপলক্ষে শহরে অসংখ্য নৌকাসদৃশ তোরণ, ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়। পাবনা ছাড়াও নাটোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ থেকে বিপুল সংখ্যক লোক উপস্থিত হন। জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, তাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি লোক উপস্থিত হয়েছে। এটা তাদের কাছে অবাক লাগছে।
শেখ হাসিনা সরকারী এডওয়ার্ড কলেজের জনসভায় ২০০৮ সালে নির্বাচনে পাবনার ৫টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে নির্বাচিত করায় পাবনাবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে আরও বলেন, ৪ দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এসে পাবনায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ বেশ কয়েকজনকে হত্যা, লুটপাট করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। আর আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হয়ে মহাজোট সরকার সন্ত্রাসী জঙ্গীবাদ দমন করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধি করেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন ছিল, ১৯৭৫ সালে তাঁকে সপরিবারে ও জেলখানায় ৪ নেতা হত্যার পর সবকিছু ভূলুণ্ঠিত হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের পর ঘাতক আলবদর রাজাকারদের বিচার শুরু করেন। ১১ হাজার আলবদর রাজাকার জেলে পোরা হয়। সে সময় অনেক ঘাতক রাজাকার বিদেশে পালিয়ে যায়। ’৭৫-এর পর জিয়া ক্ষমতায় এসে এ বিচার বন্ধ করে দেন। শুধু তাই নয়, জিয়া স্বাধীনতার চেতনা ভূ-লুণ্ঠিত করে ’৭১-এর ঘাতকদের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী করে পাকিস্তানী ভাবধারায় দেশকে নিয়ে যান।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে বেলা ১২টায় হেলিকপ্টারযোগে বেড়ায় অবতরণ শেষে বেড়া ডিগ্রী কলেজ মাঠে ৫শ’ ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৭০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্ট ও ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়া পৌরসভার নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেন। এখানে শুধু উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থাকলেও তা বিশাল জনসভায় পরিণত হয়। এ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ওয়াদা প্রায় সবই পূরণ হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদলীয় নেত্রি তাদের বাঁচানোর জন্য জ্বালাও-পোড়াও আর মানুষ হত্যা শুরু করেছেন। বিএনপির দুটি গুণ, দুর্নীতি আর মানুষ খুন। এরা যতই চেষ্টা করুক যুদ্ধাপরাধী কেউ রেহাই পাবে না। পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আলহাজ এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকের সভাপতিত্বে উক্ত জনসভায় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য ড. মির্জা আব্দুল জলিল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছাইফ উদ্দিন শেখন, মোঃ চয়ন ইসলাম এমপি, সাবেক উপমন্ত্রী হাসিবুর রহমান স্বপন উপস্থিত ছিলেন এইচ,টি ইমাম, মৎস্যসম্পদমন্ত্রী মোঃ আব্দুল লতিফ বিশ্বাস প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধকালের রাজাকার আলবদর বাহিনীপ্রধান মতিউর রহমান নিজামীকে পরাস্ত করে পাবনা-১ আসনে স্বাধীনতার পক্ষ শক্তি নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করেছেন, এজন্য আপনাদের জানাই অভিবাদন। বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের সরকার বিনামূল্যে বই বিতরণ করছে। প্রতিটি ইউনিয়নে সেবা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যে সব গরিব মেধাবী ছাত্র টাকাপয়সার অভাবে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারছেনা আমাদের সরকার তাদের বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এছাড়া ও কৃষি খাতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। ছিন্নমূল মানুষদের জায়গা এবং ঘর করে দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট চেয়ে বলেন, পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে এই এলাকায় ব্যপক উন্নয়ন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩টা ৪০ মিনিটে সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে উপস্থিত হন। এ সময় তিনি কলেজ মাঠের নৌকাসদৃশ বিশাল মঞ্চের পেছনে স্থাপিত ১শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫০০ বেডের পাবনা মেডিক্যাল কলেজ, ১শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাঙ্গুড়া-নওগাঁ সড়ক, পাবনা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবন, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি ভবন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ভবন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর ভিত্তিপ্রস্তর, ঈশ্বরদী-ঢালারচর রেলপথ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ভবন, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর ডিজিটাল পদ্ধতিতে উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী ৪টা ৪ মিনিটে বিশাল নৌকা সজ্জিত মঞ্চে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় সকাল থেকেই বিভিন্ন উপজেলার গ্রামগঞ্জ থেকে মিছিলের স্রোত আসতে শুরু করে। বেলা ১টার মধ্যেই সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ মাঠ মানুষের উপচেপড়া ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বেলা যতই বাড়ছিল মানুষের স্রোত ততই উপচে পড়ছিল। দুপুর ২টার দিকে সরকারী এডওয়ার্ড কলেজ মাঠে মিছিলের স্রোত জায়গা না পাওয়ায় রাস্তার ওপর অবস্থান নিতে থাকে। প্রিয় নেত্রীকে দেখতে আসা হাজার হাজার মানুষ জনসভা কেন্দ্র থেকে ডাকবাংলো মোড় ও শহরের আব্দুল হামিদ সড়ক পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে মাইকে বক্তব্য শুনতে থাকে। শেখ হাসিনা যখন বক্তব্য দিতে শুরু করেন তখন জনতা দাঁড়ানোর সুযোগ না পেয়ে ডিগ্রী কলেজ, রথ খোলা মোড় পর্যন্ত দাঁড়িয়ে ও কলেজের বিভিন্ন ভবন ও গাছে চড়ে নেত্রীর বক্তব্য শোনেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেগ পেতে হয়। জনসভায় উপস্থিত প্রবীণদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর এ জনসমাবেশ ’৭২ সালের বঙ্গবন্ধুর পাবনার জনসভাকে স্মরণ করিয়ে দেয়। সে সময় বঙ্গবন্ধু পাবনা স্টেডিয়ামে এলে লাখ লাখ মানুষ একনজর তাঁকে দেখতে যেভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল, ঠিক সেভাবেই যেন লাখ লাখ মানুষ প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় উপস্থিত হয়। গ্রামগঞ্জের হাজার হাজার মানুষ গাড়ি না পেয়ে ভোরবেলায় হেঁটে অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হয়। মানুষের চাপে শহরের হোটেল রেস্তোরাঁতেও খাবার শূন্য হয়ে পড়ে। ১২টার দিকে মিছিলে মিছিলে পাবনা শহর প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। শহরের অলিগলি যেদিকে তাকাই যেন মিছিল আর মিছিল। পাবনায় স্মরণকালের ইতিহাসে এমন জনসমুদ্র আর মানুষ দেখেনি বলেও অনেকেই জানান। জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এই জনসমাবেশ দুপুর দেড়টায় শুরু হয়। পবিত্র কোরান, গীতা, ত্রিপিটক, বাইবেল পাঠের মাধ্যমে এ সমাবেশ শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪টা ৪ মিনিটে তাঁর বক্তব্য শুরু করেন। বক্তব্যে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্নের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, বিরোধীদলীয় নেত্রী হরতাল অবরোধসহ বাস থেকে যাত্রী নামিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করলেও যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে পারবেন না। বাংলার মাটিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রীর উদ্দেশে আরও বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে দুর্নীতি কালো টাকা অর্জনসহ এতিমদের টাকা পর্যন্ত চুরি করেছেন। তাঁর এক ছেলে আমেরিকায়, আরেক ছেলে সিঙ্গাপুরে টাকা পাচার করেছেন। সে টাকা আমরা ফিরিয়ে এনেছি। তিনি এখন বড় বড় কথা বলেন। তিনি ছেলেকে কি শিক্ষা দিয়েছেন বলেও প্রশ্ন রাখেন। তিনি ছেলেদের বোমা মারা, চুরির ডিগ্রী শিখিয়েছেন। আর আমরা চাই আমাদের ছেলেরা সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ মানুষের সেবায় নিয়োজিত হোক। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর সভাপতিত্বে এ বিশাল জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব উল আলম হানিফ, পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) একে খন্দকার, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আফম রুহুল হক, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, পাটমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স এমপি, মকবুল হোসেন এমপি, পাবনা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল হামিদ মাস্টার, জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, আওয়ামী লীগের উপকমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম বদু, যুবলীগ কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির রানা, সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হাসান শাহীন, যুক্তরাষ্ট্র ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন পিয়াল, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহমেদ শরীফ ডাবলু, জেলা যুবলীগ সভাপতি শরীফ উদ্দিন প্রধান, জেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক রাকিব হাসান টিপু, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি লায়েব উদ্দিন লাভলু, কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, পাবনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তসলিম হাসান সুমন প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর ৩৩ মিনিটের ভাষণে ৪ বছরের উন্নয়নের বর্ণনা দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়নে বিশ্বাস করে তাই শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে ২৬ হাজার ২শ’ প্রাইমারী স্কুল জাতীয়করণ করেছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে ২৭ কোটি বই বিতরণ করা হয়েছে। ছাত্রীদের উপবৃত্তি দিচ্ছি। দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করলেও বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দিয়েছিল। মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন, হাসপাতালের বেড সংখ্যা বৃদ্ধি, নার্সদের দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীতকরণসহ মাতৃত্বকালীন ভাতা দিয়ে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার সচেষ্ট রয়েছে।
মহাজোট আমলে প্রবৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় ও রিজার্ভ বেড়ে গেছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ’৯৬ সালে ৪০ লাখ টন যে খাদ্য ঘাটতি ছিল ১৯৯৮ সালে তা পূরণ করে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছিলাম। কৃষি ভর্তুকি, কৃষকদের ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বর্গা চাষীদের কৃষি ঋণ, গরিব চাষীদের বিনাসুদে ঋণ দেয়াসহ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। গরিবদের বিনা পয়সায় ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে আমরা খাবার সরবরাহ করেছি। আমাদের লক্ষ্য হলো প্রত্যেকটি মানুষ যেন দু’বেলা খেতে পারে সে কাজই করেছি। প্রতিটি মানুষ যাতে ঘরে বাস করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্য নিরাপদ বাসস্থানের ব্যবস্থা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা দিয়ে আমরা সামাজিক নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের আমলে দারিদ্র্য ১০ ভাগ কমেছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মহাজোট আমলে ৪ লাখ মানুষকে চাকরি দিয়েছি। যুব সমাজ যাতে জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে কর্মসংস্থান করতে পারে এজন্য ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা করেছি। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বঙ্গবন্ধু আইন করে চিহ্নিত করেছিলেন। সেই সমুদ্র সীমা নিয়ে বিএনপি আমলে কেউ কিছু করেনি। আমরাই মামলার মাধ্যমে ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩৩ কিলোমিটার সমুদ্র আমরা উদ্ধার করেছি। আমাদের সাবলম্বী হওয়ার লক্ষ্যে একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বিশ্বাস করে না, তাই ৫ হাজার ৫শ’ ১০টি ইউপি, উপজেলা ও পৌর নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপির আমলেও নির্বাচন মানেই ছিল হত্যা, সিল মারা, ভোটকেন্দ্র দখল করা। আর আমরা জনগণের সাংবিধানিক ক্ষমতা ফিরিয়ে এনেছি। তার কারণ হচ্ছে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়ে তুলতে চাই। আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলা। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম পাবনার দৃশ্যমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের আর কোন কিছু চাওয়ার নেই। শুধু একটিই চাওয়া যুদ্ধাপরাধী ঘাতকদের দ্রুত বিচার সম্পন্ন করা। তিনি আরও বলেন, আমেরিকাসহ সমগ্র বিশ্ব যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে সমর্থন করছে, তখন খালেদা জিয়া নিশ্চুপ থেকে পক্ষান্তরে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করেছেন। তিনি আগামী নির্বাচনে পাবনার ৫টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিজয়ী করার জন্য জনগণের কাছে আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী ৫টার দিকে হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় ফিরে যান। প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ ১৪ বছর পর পাবনায় আগমন উপলক্ষে শহরে অসংখ্য নৌকাসদৃশ তোরণ, ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়। পাবনা ছাড়াও নাটোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ থেকে বিপুল সংখ্যক লোক উপস্থিত হন। জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, তাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি লোক উপস্থিত হয়েছে। এটা তাদের কাছে অবাক লাগছে।
No comments