কৃষি খাতে ঋণ-বিদেশি ব্যাংকও ভূমিকা রাখুক
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান খাত কৃষি। শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নয়, কর্মসংস্থানের জন্যও এ খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। এ খাতে যুক্ত রয়েছেন কোটি কোটি মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত কৃষক।
অনেক ভূমিহীনও বর্গাচাষ ও দিনমজুর হিসেবে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করেন কৃষিকাজের মাধ্যমে। কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ প্রদান করা হচ্ছে অনেক বছর ধরে। এর ফলে মহাজনী ঋণের ওপর নির্ভরতা কমেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে, বিদেশি ব্যাংকগুলো আমাদের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এ খাতে ঋণ জোগাতে উৎসাহ দেখাচ্ছে না। রোববার সমকালে 'কৃষিঋণ বিতরণে বিদেশি ব্যাংকগুলোর অনীহা' শিরোনামের খবরে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে তফসিলি ব্যাংকগুলোর জন্য কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশি ব্যাংকগুলো প্রথম ৯ মাসে বিতরণ করেছে ৩২৪ কোটি টাকা, শতকরা হিসাবে যা মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাড়ে চার শতাংশ। অন্যদিকে সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে মোট ঋণের ৬০ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ১৮ শতাংশ। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের তিন ভাগের দুই ভাগই রয়েছে দেশীয় বেসরকারি ব্যাংক ও বিদেশি ব্যাংকগুলোর নিয়ন্ত্রণে। বেসরকারি দেশীয় ব্যাংকগুলো এককভাবেই প্রায় ৬০ শতাংশ আমানত নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থনীতির প্রধান খাতে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো পর্যাপ্ত মাত্রায় ঋণ জোগাবে না, এটা মেনে নেওয়া যায় না। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য ব্যাংকিং খাত থেকে অর্থের প্রবাহ বাড়াতেই হবে। এ খাত চাঙ্গা হলে সার্বিকভাবে অর্থনীতিই লাভবান হবে। আর অর্থনীতি গতিশীল হলে ব্যাংকিং ব্যবসাও বাড়বে। বিদেশি ব্যাংকগুলোকে এ বাস্তবতা উপলব্ধির পাশাপাশি আমাদের অর্থনীতির অগ্রাধিকারের প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে। এসব ব্যাংকের শাখা গ্রামাঞ্চলে আদৌ নেই। কিন্তু বুথ স্থাপন কিংবা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ঋণ বিতরণে কোনো সমস্যা নেই। প্রয়োজনে তারা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তাও নিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকও এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করবে বলে আমরা আশা করব।
No comments