এরশাদের সরকারবিরোধিতা সরকার অনুমোদিত! by সেলিম জাহিদ
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ কয়েক মাস ধরে সরকারবিরোধী যেসব বক্তৃতা দিচ্ছেন, তা সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে অনুমোদিত। জাপা ও সরকারি দলের একাধিক সূত্র পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলেছে, সরকারবিরোধী জনমতের সুবিধা যাতে একতরফা বিএনপি না পায়, সে জন্য এরশাদকে মাঠে নামানো হয়েছে।
এর মাধ্যমে বিএনপিকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে মনস্তাত্ত্বিক চাপে ফেলা যাবে বলে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাপাপ্রধান এরশাদ সরকারি দলের সঙ্গে এ ‘বোঝাপড়ার বিরোধিতার কৌশল’-এর কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘আমরা কারও অনুমতি নিইনি, কারও সঙ্গে আলোচনাও করিনি।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘উনারা (আওয়ামী লীগ) কি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে কর্মসূচি দেন?’
অবশ্য এরশাদ স্বীকার করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়ে তাঁর কয়েকবার আলোচনা হয়েছে।
জাপার গুরুত্বপূর্ণ একজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, ভারতের টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের বিরুদ্ধে এবং তিস্তা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি সরকারসহ সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই পালন করে জাপা। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে, এ দুই বিষয়ে ভারতবিরোধী যে জনমত তৈরি হয়েছে, তাকে একচেটিয়া বিএনপির দিকে যেতে না দেওয়া এবং তাতে ভাগ বসানো। পাশাপাশি এর মাধ্যমে জাপাকে আগামী নির্বাচনে বিএনপি না এলে তার বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা তো আছেই।
গত ৬ ডিসেম্বর ঢাকার গাজীপুর চৌরাস্তায় জাপার জনসভায় এরশাদ হঠাৎ করেই ভারতের টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী লংমার্চ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এর কয়েক দিন আগে এরশাদ ভারত সফর করেন। ফলে এ কর্মসূচির ব্যাপারে ভারতের সায় আছে বলে জাপার কোনো কোনো কেন্দ্রীয় নেতা মনে করছেন।
ভারতের সম্মতি নিয়ে ভারতবিরোধী কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘এমন তো হয় না। কর্মসূচি নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করি না। আমরা বাংলাদেশের স্বার্থে নিজের থেকে কর্মসূচি দিয়েছি।’
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য জানান, অর্থনৈতিক অবস্থা ও শেয়ারবাজার-পরিস্থিতিসহ আরও কিছু বিষয়ে ভবিষ্যতে একই ধরনের ভূমিকায় দেখা যেতে পারে জাপাকে।
দলের আরেকটি সূত্র জানায়, বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এরশাদ তাঁর এ সরকারবিরোধিতায় এক ঢিলে দুই পাখি মারারও সুযোগ রেখেছেন। কোনো কারণে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সরকারের প্রতিকূলে চলে গেলে, এরশাদ সে ক্ষেত্রেও একটা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা চালাতে পারেন। তিনি বলবেন, তাঁরা আগেই সরকারের কাছ থেকে দূরে সরে এসেছেন।
গত বুধবার তিস্তা ব্যারাজ হেলিপ্যাড মাঠের জনসভায় এরশাদ সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, সময় হলেই ‘অ্যাটাক’ করা হবে। মন্ত্রিসভায় নিজ দলের প্রতিনিধি রেখে সরকারকে ‘অ্যাটাক’ করার ঘোষণা সম্পর্কে জানতে চাইলে এরশাদ কোনো মন্তব্য করেননি।
তাহলে কি দলের প্রতিনিধি শিগগিরই মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসছেন—এ প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘আপাতত না। আমরা আরও কিছুদিন দেখতে চাচ্ছি।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে, এটা ধরে নিয়ে এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এরশাদ।
দলটির একাধিক সূত্র জানায়, জাপার নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করা না হলে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করতে পারে। তখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে বেরিয়ে জাপা এককভাবে নির্বাচন করে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসার সুযোগ নিতে চায়। এ জন্য এককভাবে ভোট করার কথাও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বলে আসছেন এরশাদ।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে এরশাদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচন হলে করব। তাতে কে এল, কে না এল; জাতীয় পার্টি তা দেখবে না।’
No comments