ভারতের ঋণের পাঁচ প্রকল্প বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত by রাহীদ এজাজ ও জাহাঙ্গীর শাহ
ভারতের ১০০ কোটি ডলারের ঋণে পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কঠিন শর্তের কারণে প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও তা কার্যকর করা যাচ্ছে না। প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে ভারত। তবে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান চান ভারতীয় ঋণেই প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ১০০ কোটি ডলারের ঋণে ২১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৩টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে ভারত। এর মধ্যে আটটির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। পাঁচটি প্রকল্প বাদ দিয়ে ওই অর্থ দিয়ে নতুন প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে। বাদ যাওয়া প্রকল্পগুলো হলো: নৌ মন্ত্রণালয়ের জন্য ছয়টি খননযন্ত্র কেনা, রেলওয়ের জন্য ২৬৪টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ ও দুটি ব্রডগেজ পরিদর্শন কোচ কেনা, ১২৫টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ কেনা এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) আধুনিকীকরণ প্রকল্প।
গত ২০ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভারতীয় ঋণের শর্ত কঠিন ও বাস্তবায়ন জটিলতার কারণে প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়া হবে। বৈঠকে নৌ, শিল্প ও রেল মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোই চায়, প্রকল্পগুলো ভারতীয় ঋণের প্রকল্পের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হোক।
ওই বৈঠকের আগের দিন, অর্থাৎ ১৯ জানুয়ারি ইআরডির সঙ্গে বৈঠকে প্রকল্পের শর্ত শিথিল করতে মৌখিকভাবে রাজি হয়েছে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক। কিন্তু এক্সিম ব্যাংক এখনো এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এক্সিম ব্যাংক ঋণের শর্ত শিথিলের বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি বৈঠকে বসার কথা বলেছিল। এ ছাড়া লিখিতভাবে শর্ত শিথিলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চিঠি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও এতে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
কিন্তু গত ২৯ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে লেখা এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান প্রকল্পগুলো বাদ না দেওয়ার সুপারিশ করেন। চিঠিতে তিনি বলেন, ভারতের শর্তাবলি কঠিন—এই বক্তব্যটি প্রধানত প্রচারণামূলক, বাস্তব তথ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে মনে হয় না। তাঁর মতে, ভারতীয় ঋণ ব্যবহার সম্পর্কে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথম থেকেই অনীহা প্রকাশ করেছে। তা ছাড়া ভারতীয় ঋণের শর্তাবলি অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় ঋণের তুলনায় নমনীয় বলেও তিনি মনে করেন।
চিঠিতে পাঁচটি প্রকল্প সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তাঁর নিজস্ব মত দিয়েছেন। আর প্রকল্পগুলো সম্পর্কে সিদ্ধান্ত, ভারতীয় পক্ষের মত আর প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রকল্পগুলোর একটি তুলনামূলক চিত্র তৈরি করেছে ইআরডি।
ড. মসিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভারত এরই মধ্যে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করেছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হতে পারে। চিঠিতে অর্থমন্ত্রীকে তিনি সে পরামর্শই দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে দুটি বিষয় আছে। যেসব প্রকল্প প্রত্যাহারের কথা বলা হচ্ছে, মন্ত্রণালয়গুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে এগুলো করার আদৌ দরকার নেই। আরেকটা হতে পারে, ভারতীয় টাকায় প্রকল্প করব না, করব দেশীয় টাকায়। অন্তত দ্বিতীয়টি যেন না হয়।’ শর্ত শিথিলে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের মৌখিক কথার কোনো মূল্য নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ছয়টি খননযন্ত্র কেনা: ড্রেজার কিনতে দুই দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। দ্বিতীয় দফার দরপত্র খোলা হয় ১৯ জানুয়ারি। আগামী মার্চের মধ্যে সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। ভারতীয় পক্ষ চুক্তির মূল শর্ত হিসেবে ৮৫ শতাংশ পণ্য বা সেবা কেনার বাধ্যবাধকতা শিথিল করতেও সম্মত। আর আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে দরপত্রের মূল্য বাজারমূল্যের চেয়ে ৫০-৬০ শতাংশ বেশি হওয়ায় প্রকল্পটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা তাঁর চিঠিতে বলেন, ‘আমার ধারণা, ড্রেজারের জন্য কোনো টেন্ডার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকৃত তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।’
বিএসটিআই আধুনিকীকরণ: বিএসটিআই অভিযোগ করে আসছে যে, প্রকল্পের আওতায় ভারত যে পণ্য বা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে তা বিএসটিআইয়ের বর্তমান কাঠামোর সঙ্গে মানানসই নয়। এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই প্রকল্পটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণী মহলের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিষয়টির সুরাহা করার দায়িত্ব ছেড়ে দেয় ভারত।
কিন্তু মসিউর রহমান তাঁর চিঠিতে বলেন, ‘বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ ভারত থেকে আমদানি করতে প্রথম থেকেই অনীহা দেখায়। (ভারত আমাদের কিছুই দেবে না!)’ তিনি প্রকল্পটি প্রত্যাহার না করার সুপারিশ করে বলেন, অন্য কোনো উৎস থেকে আমদানি করতে হলে সময় লাগবে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে (ভারতে রপ্তানি বৃদ্ধি) এবং বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতির ওপর চাপ পড়বে।
মিটারগেজ রেলওয়ের কোচ কেনা: দুই দফায় দরপত্র আহ্বান করা হলেও প্রথম দফায় কেউ অংশ নেয়নি। দ্বিতীয় দফার দরপত্র খোলা হয় গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর। এখন কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। তবে ভারত এখন মিটারগেজ কোচ তৈরি করে না—এমন প্রেক্ষাপটে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে প্রকল্পটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা তাঁর চিঠিতে বলেন, ভারত মিটারগেজ কোচ সরবরাহের অনানুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইআরডিকে ভারত জানিয়েছে, এই প্রকল্পটি এখনো তাদের ঋণের তালিকাভুক্ত প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
১২৫টি ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ: এই প্রকল্পটিতে ১২৫টি ব্রডগেজ শীতাতপনিয়ন্ত্রণবিহীন কোচ সংগ্রহের প্রকল্প। কিন্তু ভারত এখন এ ধরনের কোচ তৈরি করে না। তাই ভারতের পক্ষ থেকে ১২৫টি নন-এসি কোচের পরিবর্তে ৭০টি এসি কোচ সংগ্রহের নতুন প্রকল্প তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়। এমন প্রেক্ষাপটে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে প্রকল্পটি বাদ দিয়ে এসি কোচ কেনার প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।
মসিউর রহমান চিঠিতে উল্লেখ করেন, যমুনার অপর পারে ব্রডগেজ লাইনের জন্য এসি কোচ নেই বললেই চলে। সরকারি বা বেসরকারি বিমান যায় না; বাসই একমাত্র ভরসা। অন্য কোনো যুক্তি থাকলেও দেশের উত্তরাংশের যাতায়াতব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য অধিকসংখ্যক এসি কোচ চালু করা বিবেচনার দাবি রাখে। এ ছাড়া খুলনা-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস চালু করতে সরকার সম্মত হয়েছে। এ জন্য অতিরিক্ত এসি কোচের দরকার হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের ১০০ কোটি ডলারের ঋণে ২১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৩টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে ভারত। বাকি আটটি প্রকল্পে কেনাকাটাসংক্রান্ত জটিলতায় এত দিন কোনো অগ্রগতি হয়নি। পাঁচটি প্রকল্প বাদ দিয়ে ওই অর্থ দিয়ে নতুন প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
গত ২০ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভারতীয় ঋণের শর্ত কঠিন ও বাস্তবায়ন জটিলতার কারণে প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়া হবে। বৈঠকে নৌ, শিল্প ও রেল মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোই চায়, প্রকল্পগুলো ভারতীয় ঋণের প্রকল্পের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হোক।
ওই বৈঠকের আগের দিন, অর্থাৎ ১৯ জানুয়ারি ইআরডির সঙ্গে বৈঠকে প্রকল্পের শর্ত শিথিল করতে মৌখিকভাবে রাজি হয়েছে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক। কিন্তু এক্সিম ব্যাংক এখনো এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এক্সিম ব্যাংক ঋণের শর্ত শিথিলের বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি বৈঠকে বসার কথা বলেছিল। এ ছাড়া লিখিতভাবে শর্ত শিথিলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের চিঠি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও এতে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
কিন্তু গত ২৯ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে লেখা এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান প্রকল্পগুলো বাদ না দেওয়ার সুপারিশ করেন। চিঠিতে তিনি বলেন, ভারতের শর্তাবলি কঠিন—এই বক্তব্যটি প্রধানত প্রচারণামূলক, বাস্তব তথ্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে মনে হয় না। তাঁর মতে, ভারতীয় ঋণ ব্যবহার সম্পর্কে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথম থেকেই অনীহা প্রকাশ করেছে। তা ছাড়া ভারতীয় ঋণের শর্তাবলি অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় ঋণের তুলনায় নমনীয় বলেও তিনি মনে করেন।
চিঠিতে পাঁচটি প্রকল্প সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তাঁর নিজস্ব মত দিয়েছেন। আর প্রকল্পগুলো সম্পর্কে সিদ্ধান্ত, ভারতীয় পক্ষের মত আর প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রকল্পগুলোর একটি তুলনামূলক চিত্র তৈরি করেছে ইআরডি।
ড. মসিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভারত এরই মধ্যে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করেছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হতে পারে। চিঠিতে অর্থমন্ত্রীকে তিনি সে পরামর্শই দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে দুটি বিষয় আছে। যেসব প্রকল্প প্রত্যাহারের কথা বলা হচ্ছে, মন্ত্রণালয়গুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে এগুলো করার আদৌ দরকার নেই। আরেকটা হতে পারে, ভারতীয় টাকায় প্রকল্প করব না, করব দেশীয় টাকায়। অন্তত দ্বিতীয়টি যেন না হয়।’ শর্ত শিথিলে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের মৌখিক কথার কোনো মূল্য নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ছয়টি খননযন্ত্র কেনা: ড্রেজার কিনতে দুই দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। দ্বিতীয় দফার দরপত্র খোলা হয় ১৯ জানুয়ারি। আগামী মার্চের মধ্যে সামগ্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা রয়েছে। ভারতীয় পক্ষ চুক্তির মূল শর্ত হিসেবে ৮৫ শতাংশ পণ্য বা সেবা কেনার বাধ্যবাধকতা শিথিল করতেও সম্মত। আর আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে দরপত্রের মূল্য বাজারমূল্যের চেয়ে ৫০-৬০ শতাংশ বেশি হওয়ায় প্রকল্পটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।
প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা তাঁর চিঠিতে বলেন, ‘আমার ধারণা, ড্রেজারের জন্য কোনো টেন্ডার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়নি এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকৃত তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।’
বিএসটিআই আধুনিকীকরণ: বিএসটিআই অভিযোগ করে আসছে যে, প্রকল্পের আওতায় ভারত যে পণ্য বা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করবে তা বিএসটিআইয়ের বর্তমান কাঠামোর সঙ্গে মানানসই নয়। এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই প্রকল্পটি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণী মহলের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিষয়টির সুরাহা করার দায়িত্ব ছেড়ে দেয় ভারত।
কিন্তু মসিউর রহমান তাঁর চিঠিতে বলেন, ‘বিএসটিআই কর্তৃপক্ষ ভারত থেকে আমদানি করতে প্রথম থেকেই অনীহা দেখায়। (ভারত আমাদের কিছুই দেবে না!)’ তিনি প্রকল্পটি প্রত্যাহার না করার সুপারিশ করে বলেন, অন্য কোনো উৎস থেকে আমদানি করতে হলে সময় লাগবে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে (ভারতে রপ্তানি বৃদ্ধি) এবং বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতির ওপর চাপ পড়বে।
মিটারগেজ রেলওয়ের কোচ কেনা: দুই দফায় দরপত্র আহ্বান করা হলেও প্রথম দফায় কেউ অংশ নেয়নি। দ্বিতীয় দফার দরপত্র খোলা হয় গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর। এখন কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। তবে ভারত এখন মিটারগেজ কোচ তৈরি করে না—এমন প্রেক্ষাপটে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে প্রকল্পটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিকবিষয়ক উপদেষ্টা তাঁর চিঠিতে বলেন, ভারত মিটারগেজ কোচ সরবরাহের অনানুষ্ঠানিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ইআরডিকে ভারত জানিয়েছে, এই প্রকল্পটি এখনো তাদের ঋণের তালিকাভুক্ত প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
১২৫টি ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ: এই প্রকল্পটিতে ১২৫টি ব্রডগেজ শীতাতপনিয়ন্ত্রণবিহীন কোচ সংগ্রহের প্রকল্প। কিন্তু ভারত এখন এ ধরনের কোচ তৈরি করে না। তাই ভারতের পক্ষ থেকে ১২৫টি নন-এসি কোচের পরিবর্তে ৭০টি এসি কোচ সংগ্রহের নতুন প্রকল্প তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয়। এমন প্রেক্ষাপটে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে প্রকল্পটি বাদ দিয়ে এসি কোচ কেনার প্রকল্প তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।
মসিউর রহমান চিঠিতে উল্লেখ করেন, যমুনার অপর পারে ব্রডগেজ লাইনের জন্য এসি কোচ নেই বললেই চলে। সরকারি বা বেসরকারি বিমান যায় না; বাসই একমাত্র ভরসা। অন্য কোনো যুক্তি থাকলেও দেশের উত্তরাংশের যাতায়াতব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য অধিকসংখ্যক এসি কোচ চালু করা বিবেচনার দাবি রাখে। এ ছাড়া খুলনা-কলকাতা ট্রেন সার্ভিস চালু করতে সরকার সম্মত হয়েছে। এ জন্য অতিরিক্ত এসি কোচের দরকার হবে।
চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের ১০০ কোটি ডলারের ঋণে ২১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৩টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে ভারত। বাকি আটটি প্রকল্পে কেনাকাটাসংক্রান্ত জটিলতায় এত দিন কোনো অগ্রগতি হয়নি। পাঁচটি প্রকল্প বাদ দিয়ে ওই অর্থ দিয়ে নতুন প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
No comments