শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়-আতঙ্ক ছড়াচ্ছে শিবির, মুঠোফোনে হুমকি by শরিফুল হাসান ও মিসবাহ উদ্দিন
শিবিরের ধর্মঘট চলছে। কেউ ক্লাসে যাবেন না। এমনকি পরীক্ষাতেও না। কেউ ক্লাসে গেলেই কোপানো হবে। দরকার হলে চিনে রাখা হবে, পরে অ্যাকশন নেওয়া হবে।’ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুঠোফোনে কয়েক দিন ধরে এ ধরনের খুদেবার্তা পাঠানো হচ্ছে। অনেককে আবার দেওয়া হচ্ছে সরাসরি হুমকি। ক্লাস ও পরীক্ষা না নিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে শিক্ষকদের।
জনপ্রিয় লেখক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের প্রধান মুহম্মদ জাফর ইকবালকেও মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে। শিবিরের এসব হুমকিতে ছড়িয়ে পড়ছে আতঙ্ক। তবে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক আনোয়ারুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি কমিটি করেছে। এ ছাড়া ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত রাখলেও আজ রোববার থেকে ক্লাস করতে চায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় গত পাঁচ বছরে এক দিনও বন্ধ ছিল না। ফলে সেশনজটও ছিল না। কিন্তু এখন শিবিরের ধর্মঘটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমন সেশনজট ফিরে আসার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট দূর করেছিলাম। এখন যখন দেখি ক্লাস হচ্ছে না, আমার কষ্ট হয়। ক্লাস ও পরীক্ষা না নেওয়ার জন্য আমাকে এখন মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি এসবকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। এর আগেও আমাকে এমন হুমকি দেওয়া হয়েছে। এখন আমি বললে হয়তো আমার ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে আসবে। কিন্তু কোনো একটা অঘটন ঘটলে কে দায় নেবে? এক ছাত্রকে কোপানো হয়েছে। সে আবার হাঁটতে পারবে কি না চিকিৎসকেরা সন্দেহ করছেন। তারা তো নিয়মতান্ত্রিকভাবে কিছু করছে না। তবে আমি চাই, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসুক। আবার ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হোক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিমাদ্রী শেখর রায় বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে আমরাও জেনেছি। যেসব নম্বর থেকে এসব হুমকি দেওয়া হচ্ছে, আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাচ্ছি। কিন্তু অধিকাংশ নম্বরের কোনো নিবন্ধন নেই। আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি, কারা এসব হুমকি দিচ্ছে।’
গত ১১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার পর থেকে শিবির হলছাড়া। ওই ঘটনার পর তিন দফা দাবিতে ১৫ জানুয়ারি থেকে ক্যাম্পাসে ধর্মঘট ডেকেছে ছাত্রশিবির।
তবে হুমকি উপেক্ষা করে অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোতে ছাত্রশিবির চোরাগোপ্তা হামলা চালায়। এতে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র হোসাইন জামিল আহত হয়ে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ছাড়া নগরের টুকেরবাজারের জাঙ্গালিয়া এলাকায় অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বদরুল আলমকে কোপায় শিবির। তাঁকেও ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ছাড়া আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য কয়েক দিন আগে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে একটি গুলি ছুড়ে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায় শিবিরের ক্যাডার গাজী নাসির। সার্বিক পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার একাডেমিক কাউন্সিল বৈঠক করে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে আজ রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চলবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের অভিযোগ, হলগুলোতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ চায় শিবির। আর সেটি করতে পারছে না বলেই তারা ধর্মঘট করছে, নানাজনকে হুমকি দিচ্ছে।
হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মুজাহিদ রুমী বলেন, ‘আমরা ক্ষতিপূরণ, হামলাকারীদের শাস্তি এবং হলে সহাবস্থানের তিন দফা দাবি জানিয়েছি। এই দাবি মানা না হলে ধর্মঘট চলবে।’
ধর্মঘট নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আফজাল হোসেন বলেন, ‘সেশনজটমুক্ত ক্যাম্পাস দেখে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন ধর্মঘটের কারণে পরীক্ষা হচ্ছে না। সেশনজটের আশঙ্কায় আছি আমরা।’
শিবিরের প্রতিবাদ: গতকাল শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘শিক্ষক-কর্মকর্তারা নিয়মিত চাঁদা দেন শিবিরকে’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের প্রচার সম্পাদক। সংক্ষিপ্ত এই প্রতিবাদে বলা হয়, পরিকল্পিতভাবে কিছু খালি রসিদে নাম ব্যবহার ও ভুয়া দলিল তৈরির মাধ্যমে সম্মানিত ও দায়িত্বশীল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও বিভিন্ন ফোরামের নাম বসানো হয়েছে, যা খুবই হতাশাজনক ও বিস্ময়কর।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: শিবিরের বিভিন্ন কক্ষ থেকে উদ্ধার করা চাঁদা আদায়ের শত শত রসিদ ও মুড়ি প্রথম আলোর কাছে আছে। এসব মুড়িতে শিবিরের নেতাদের স্বাক্ষরও আছে। আর অনেক শিক্ষক চাঁদা দেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় গত পাঁচ বছরে এক দিনও বন্ধ ছিল না। ফলে সেশনজটও ছিল না। কিন্তু এখন শিবিরের ধর্মঘটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমন সেশনজট ফিরে আসার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজট দূর করেছিলাম। এখন যখন দেখি ক্লাস হচ্ছে না, আমার কষ্ট হয়। ক্লাস ও পরীক্ষা না নেওয়ার জন্য আমাকে এখন মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমি এসবকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। এর আগেও আমাকে এমন হুমকি দেওয়া হয়েছে। এখন আমি বললে হয়তো আমার ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসে আসবে। কিন্তু কোনো একটা অঘটন ঘটলে কে দায় নেবে? এক ছাত্রকে কোপানো হয়েছে। সে আবার হাঁটতে পারবে কি না চিকিৎসকেরা সন্দেহ করছেন। তারা তো নিয়মতান্ত্রিকভাবে কিছু করছে না। তবে আমি চাই, শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসুক। আবার ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হোক।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিমাদ্রী শেখর রায় বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে আমরাও জেনেছি। যেসব নম্বর থেকে এসব হুমকি দেওয়া হচ্ছে, আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাচ্ছি। কিন্তু অধিকাংশ নম্বরের কোনো নিবন্ধন নেই। আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি, কারা এসব হুমকি দিচ্ছে।’
গত ১১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার পর থেকে শিবির হলছাড়া। ওই ঘটনার পর তিন দফা দাবিতে ১৫ জানুয়ারি থেকে ক্যাম্পাসে ধর্মঘট ডেকেছে ছাত্রশিবির।
তবে হুমকি উপেক্ষা করে অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলোতে ছাত্রশিবির চোরাগোপ্তা হামলা চালায়। এতে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র হোসাইন জামিল আহত হয়ে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ছাড়া নগরের টুকেরবাজারের জাঙ্গালিয়া এলাকায় অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বদরুল আলমকে কোপায় শিবির। তাঁকেও ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ছাড়া আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য কয়েক দিন আগে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে একটি গুলি ছুড়ে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায় শিবিরের ক্যাডার গাজী নাসির। সার্বিক পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার একাডেমিক কাউন্সিল বৈঠক করে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে আজ রোববার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস চলবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের অভিযোগ, হলগুলোতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ চায় শিবির। আর সেটি করতে পারছে না বলেই তারা ধর্মঘট করছে, নানাজনকে হুমকি দিচ্ছে।
হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মুজাহিদ রুমী বলেন, ‘আমরা ক্ষতিপূরণ, হামলাকারীদের শাস্তি এবং হলে সহাবস্থানের তিন দফা দাবি জানিয়েছি। এই দাবি মানা না হলে ধর্মঘট চলবে।’
ধর্মঘট নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আফজাল হোসেন বলেন, ‘সেশনজটমুক্ত ক্যাম্পাস দেখে ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু এখন ধর্মঘটের কারণে পরীক্ষা হচ্ছে না। সেশনজটের আশঙ্কায় আছি আমরা।’
শিবিরের প্রতিবাদ: গতকাল শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত ‘শিক্ষক-কর্মকর্তারা নিয়মিত চাঁদা দেন শিবিরকে’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের প্রচার সম্পাদক। সংক্ষিপ্ত এই প্রতিবাদে বলা হয়, পরিকল্পিতভাবে কিছু খালি রসিদে নাম ব্যবহার ও ভুয়া দলিল তৈরির মাধ্যমে সম্মানিত ও দায়িত্বশীল শিক্ষক, কর্মকর্তা ও বিভিন্ন ফোরামের নাম বসানো হয়েছে, যা খুবই হতাশাজনক ও বিস্ময়কর।
প্রতিবেদকের বক্তব্য: শিবিরের বিভিন্ন কক্ষ থেকে উদ্ধার করা চাঁদা আদায়ের শত শত রসিদ ও মুড়ি প্রথম আলোর কাছে আছে। এসব মুড়িতে শিবিরের নেতাদের স্বাক্ষরও আছে। আর অনেক শিক্ষক চাঁদা দেওয়ার কথা স্বীকারও করেছেন।
No comments