প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা ও ভাষা আন্দোলন by সরদার সিরাজুল ইসলাম
দৈনিক আজাদ ২৮ ও ২৯ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাভাষা
ও পাকিস্তান’ এবং ‘বাংলা ভাষার অপমান’ শীর্ষক দুটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে
গণপরিষদে বাংলাভাষার বিরোধিতার তীব্র নিন্দা জানায়।
অবিভক্ত বাংলার সর্বশেষ মুখ্যমন্ত্রী শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলকতা থেকে এক
বিবৃতিতে বলেন, “কোন বিশেষ গ্রুপের ভাষার প্রতি হস্তক্ষেপ কিংবা তাহার
পরিবর্তনের চেষ্টা করা হইলে সেই চেষ্টার বিরুদ্ধে গভীর প্রতিবাদ উত্থাপিত
হওয়াই স্বাভাবিক। ৫ কোটি লোকের ভাষা সম্পর্কে তো কথাই নাই। পূর্ব পাকিস্তান
এমনকি সমগ্র পাকিস্তানে বাংলা ভাষার স্থান আমার নিকট অতি গুরুত্বপূর্ণ।
“শহীদ সোহরাওয়ার্দী পূর্ব পাকিস্তানে উর্দু ও পশ্চিম পাকিস্তানে বাংলাকে
দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে শিক্ষা দেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।”
গণপরিষদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে বরিশাল মুসলিম ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বিরাট জনসভায় সভাপতিত্ব করেন ছদরুদ্দিন। বক্তব্য রাখেন এস, ডব্লিউ লকিয়তুলাহ, আখতারউদ্দিন, অনিল দাশ চৌধুরী প্রমুখ। বি, এম, কলেজেও ছাত্রলীগের উদ্যোগে বিরাট প্রতিবাদ সভা হয়। হাশেম আলী খানের সভাপতিত্বে টাউন হলে অপর একটি সভায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা এবং বিনা খেসারতে জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ দাবি জানানো হয়। এছাড়া, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, নওগাঁ, খুলনা, দিনাজপুর, মুন্সীগঞ্জসহ সমগ্র পূর্ববাংলায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৯ ফেব্রুয়ারি সমগ্র পূর্বপাকিস্তানে প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়। সেদিন ঢাকায় এক বিরাট মিছিল সেক্রেটারিয়েটের দিকে যায়। পুলিশ ছাত্র জনতাকে লাঠিচার্জ করে। ১৯৪৮ সালের ১ মার্চে শেখ মুজিবুর রহমান, অধ্যাপক আবুল কাসেম, নঈমুদ্দিন আহম্মদ, আবদুল রহমান চৌধুরী ঢাকায় এক বিবৃতিতে বলেন, “তমুদ্দুন মজলিসের রাষ্ট্রভাষা সাব কমিটির এক যুক্ত অধিবেশনের এক সিদ্ধান্ত অনুসারে ১১ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে সর্বত্র সাধারণ ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত কর্মপন্থা যথাসময়ে প্রচারিত হবে। ইতোমধ্যে আমরা পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত দেশপ্রেমিক জননেতা ছাত্র ও যুবকর্মীগণকে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি ধর্মঘটকে সফল করার জন্য তারা যেন এখন থেকে প্রস্তুত থাকেন। গণতান্ত্রিক পূর্ব পাকিস্তানের যে স্বপ্ন আমরা এতকাল দেখে এসেছি, যে গণরাষ্ট্রের জন্য পাকিস্তানের জনগণ, তরুণগণ ও ছাত্র বন্ধুরা অপূর্ব ত্যাগ স্বীকার করেছেন, আজ কতিপয় স্বার্থান্বেষীর অকৃতকার্যতায় সে স্বপ্নের ভিত্তিমূল কেঁপে উঠেছে। আমরা পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ও যুব সমাজের কাছে আবেদন জানিয়ে বলি, ওঠো, জাগো, এই ষড়যন্ত্র তোমাদের নিজ শক্তিবলে চুরমার করে দাও। দেশব্যাপী এমন আন্দোলন গড়ে তোলো যার ফলে বাংলাকে অচিরে আমাদের রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করতে সরকার বাধ্য হন। খোদার ফজলে আমাদের ভবিষ্যত আমাদের হাতে, এই বিশ্বাস নিয়ে আমাদের অগ্রসর হতে হবে। আজ এখানে কোন দলাদলির প্রশ্ন নাই। আজ গোটা জাতিই বিপন্ন। তাই উক্ত কর্মপন্থা গ্রহণ করার জন্য আমরা সকল সম্প্রদায় ও দলের নেতাদের আবেদন জানাচ্ছি। একই দিন পূর্ববঙ্গ সরকার এক প্রেসনোটে” ঘোষণা করে: রাষ্ট্রের শত্রুরা পূর্ববাংলার মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। জনগণকে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে যে, “কোনরূপ গোলযোগ হলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন।”
২ মার্চ পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও তমুদ্দুন মজলিশের যৌথ উদ্যোগে ফজলুল হক হলে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের একসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমরুদ্দিন আহম্মদ। আলোচনায় অংশ নেন রণেশ দাশগুপ্ত, আজিজ আহম্মদ, অজিতগুহ, আবুল কাসেম, সরদার ফজলুল করিম, শামসুদ্দিন আহম্মদ, কাজী গোলাম মাহবুব, নঈমুদ্দিন আহম্মদ, তফাজ্জল আলী, আলী আহম্মেদ, মহীউদ্দিন, আনোয়ারা খাতুন, শামসুল আলম, শওকত আলী, আব্দুল আউয়াল, মোঃ তোয়াহা, অলি আহাদ, শামসুল হক, লিলি খান, শহীদুল্লা কায়সার, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ। সভায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সর্বদলীয় পরিষদ পুনর্গঠিত হয়। উল্লেখ্য, প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রথম আহ্বায়ক এ, এস, এম নুরুল হক ভূইয়া ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করেছিলেন। দ্বিতীয় রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মনোনীত হন শামসুল আলম। ছাত্রলীগ, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, তমুদ্দুন মজলিশ, সলিমুল্লাহ হল ও ফজলুল হক হল ইত্যাদি ছাত্রাবাসের প্রত্যেকটি সংস্থা থেকে দুজন করে প্রতিনিধি নিয়ে পরিষদের নতুন কমিটি গঠিত হয়।
৮ মার্চ সিলেটে তমুদ্দুন মজলিশের সিলেট জেলা মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন আহূত একটি জনসভা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘উর্দু পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হোক’, সেøাগানধারীদের দ্বারা ভ-ুল হয়। তাদের আক্রমণে আহত হন সভার উদ্যোক্তা মাহমুদ আলী, নও বেলাল সম্পাদক মোহাম্মদ আজরফ, দেওয়ান অহিদুর রেজা, সিলেট জেলা মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন সভাপতি আবদুস সামাদ প্রমুখ। এই ঘটনার জের হিসেবে দু-মাসের জন্য সভা-শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সিলেটের জনসাধারণের মধ্যে বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক প্রতিরোধের যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। ঢাকায়ও ১১ মার্চের সাধারণ ধর্মঘটকে বানচাল করার জন্য সরকারী তৎপরতা অব্যাহত থাকে।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের পূর্ব বাংলা ভাষা তথা স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম স্মরণীয় দিন। ২৮ ফেব্রুয়ারি তমুদ্দুন মজলিশ ও পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ যৌথ সভায় ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করে এবং অন্যান্য সংগঠনও তা সমর্থন করে। ১০ মার্চ রাতে ফজলুল হক হলে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ফজলুল হক হল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা দিনটি পালনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ব্যাপক প্রস্তুতির পরে ১১ মার্চ সকাল থেকে ছাত্ররা রাস্তায় পিকেটিং শুরু করে। সরকারও ধর্মঘট বানচাল করতে তৎপর। রাজপথে নেমে আসে পুলিশ বিভাগের আইজি জাকির হোসেন, ডেপুটি আইজি ওবায়দুলাহ, সিটি এসপি চ্যাথাম, পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট গফুর। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। ছাত্ররা ইডেন বিল্ডিংস্থ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং-এর সামনে সেøাগান দিয়ে অফিস বর্জন করার অনুরোধ জানিয়ে পিকেটিং করেন। শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, আঃ অদুদু প্রমুখ পিকেটিং করে সেক্রেটারিয়েটের এক নম্বর গেটে। অপর ২নং গেটে ছিলেন কাজী গোলাম মাহবুব বরকত প্রমুখ। এছাড়া আব্দুল মোমেন, আব্দুল মতিন, আঃ মালেক উকিল পিকেটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। পিকেটিং অবস্থায় ছাত্রদের ওপর পুলিশ নির্যাতন চালায়। এ সময় শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, কাজী গোলাম মাহবুব, শওকত আলী প্রমুখ ৬৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আহত হন অনেকে, যার মধ্যে ছিলেন অলি আহাদ, আবুল কাসেম। (ক্রমশ.)
গণপরিষদের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ২৭ ফেব্রুয়ারি জেলা ছাত্রলীগের উদ্যোগে বরিশাল মুসলিম ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বিরাট জনসভায় সভাপতিত্ব করেন ছদরুদ্দিন। বক্তব্য রাখেন এস, ডব্লিউ লকিয়তুলাহ, আখতারউদ্দিন, অনিল দাশ চৌধুরী প্রমুখ। বি, এম, কলেজেও ছাত্রলীগের উদ্যোগে বিরাট প্রতিবাদ সভা হয়। হাশেম আলী খানের সভাপতিত্বে টাউন হলে অপর একটি সভায় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা এবং বিনা খেসারতে জমিদারী প্রথার উচ্ছেদ দাবি জানানো হয়। এছাড়া, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, নওগাঁ, খুলনা, দিনাজপুর, মুন্সীগঞ্জসহ সমগ্র পূর্ববাংলায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৯ ফেব্রুয়ারি সমগ্র পূর্বপাকিস্তানে প্রতিবাদ দিবস পালিত হয়। সেদিন ঢাকায় এক বিরাট মিছিল সেক্রেটারিয়েটের দিকে যায়। পুলিশ ছাত্র জনতাকে লাঠিচার্জ করে। ১৯৪৮ সালের ১ মার্চে শেখ মুজিবুর রহমান, অধ্যাপক আবুল কাসেম, নঈমুদ্দিন আহম্মদ, আবদুল রহমান চৌধুরী ঢাকায় এক বিবৃতিতে বলেন, “তমুদ্দুন মজলিসের রাষ্ট্রভাষা সাব কমিটির এক যুক্ত অধিবেশনের এক সিদ্ধান্ত অনুসারে ১১ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানে সর্বত্র সাধারণ ধর্মঘট ঘোষণা করা হয়েছে। এ সম্পর্কে বিস্তারিত কর্মপন্থা যথাসময়ে প্রচারিত হবে। ইতোমধ্যে আমরা পূর্ব পাকিস্তানের সমস্ত দেশপ্রেমিক জননেতা ছাত্র ও যুবকর্মীগণকে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি ধর্মঘটকে সফল করার জন্য তারা যেন এখন থেকে প্রস্তুত থাকেন। গণতান্ত্রিক পূর্ব পাকিস্তানের যে স্বপ্ন আমরা এতকাল দেখে এসেছি, যে গণরাষ্ট্রের জন্য পাকিস্তানের জনগণ, তরুণগণ ও ছাত্র বন্ধুরা অপূর্ব ত্যাগ স্বীকার করেছেন, আজ কতিপয় স্বার্থান্বেষীর অকৃতকার্যতায় সে স্বপ্নের ভিত্তিমূল কেঁপে উঠেছে। আমরা পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ও যুব সমাজের কাছে আবেদন জানিয়ে বলি, ওঠো, জাগো, এই ষড়যন্ত্র তোমাদের নিজ শক্তিবলে চুরমার করে দাও। দেশব্যাপী এমন আন্দোলন গড়ে তোলো যার ফলে বাংলাকে অচিরে আমাদের রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করতে সরকার বাধ্য হন। খোদার ফজলে আমাদের ভবিষ্যত আমাদের হাতে, এই বিশ্বাস নিয়ে আমাদের অগ্রসর হতে হবে। আজ এখানে কোন দলাদলির প্রশ্ন নাই। আজ গোটা জাতিই বিপন্ন। তাই উক্ত কর্মপন্থা গ্রহণ করার জন্য আমরা সকল সম্প্রদায় ও দলের নেতাদের আবেদন জানাচ্ছি। একই দিন পূর্ববঙ্গ সরকার এক প্রেসনোটে” ঘোষণা করে: রাষ্ট্রের শত্রুরা পূর্ববাংলার মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। জনগণকে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছে যে, “কোনরূপ গোলযোগ হলে সরকার কঠোর ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন।”
২ মার্চ পূর্বপাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, বিভিন্ন ছাত্রাবাস ও তমুদ্দুন মজলিশের যৌথ উদ্যোগে ফজলুল হক হলে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মীদের একসভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমরুদ্দিন আহম্মদ। আলোচনায় অংশ নেন রণেশ দাশগুপ্ত, আজিজ আহম্মদ, অজিতগুহ, আবুল কাসেম, সরদার ফজলুল করিম, শামসুদ্দিন আহম্মদ, কাজী গোলাম মাহবুব, নঈমুদ্দিন আহম্মদ, তফাজ্জল আলী, আলী আহম্মেদ, মহীউদ্দিন, আনোয়ারা খাতুন, শামসুল আলম, শওকত আলী, আব্দুল আউয়াল, মোঃ তোয়াহা, অলি আহাদ, শামসুল হক, লিলি খান, শহীদুল্লা কায়সার, তাজউদ্দীন আহমদ প্রমুখ। সভায় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ নামে একটি সর্বদলীয় পরিষদ পুনর্গঠিত হয়। উল্লেখ্য, প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের প্রথম আহ্বায়ক এ, এস, এম নুরুল হক ভূইয়া ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগ করেছিলেন। দ্বিতীয় রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মনোনীত হন শামসুল আলম। ছাত্রলীগ, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, তমুদ্দুন মজলিশ, সলিমুল্লাহ হল ও ফজলুল হক হল ইত্যাদি ছাত্রাবাসের প্রত্যেকটি সংস্থা থেকে দুজন করে প্রতিনিধি নিয়ে পরিষদের নতুন কমিটি গঠিত হয়।
৮ মার্চ সিলেটে তমুদ্দুন মজলিশের সিলেট জেলা মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন আহূত একটি জনসভা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘উর্দু পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হোক’, সেøাগানধারীদের দ্বারা ভ-ুল হয়। তাদের আক্রমণে আহত হন সভার উদ্যোক্তা মাহমুদ আলী, নও বেলাল সম্পাদক মোহাম্মদ আজরফ, দেওয়ান অহিদুর রেজা, সিলেট জেলা মুসলিম ছাত্র ফেডারেশন সভাপতি আবদুস সামাদ প্রমুখ। এই ঘটনার জের হিসেবে দু-মাসের জন্য সভা-শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়। তবে সিলেটের জনসাধারণের মধ্যে বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক প্রতিরোধের যথেষ্ট পরিচয় পাওয়া যায়। ঢাকায়ও ১১ মার্চের সাধারণ ধর্মঘটকে বানচাল করার জন্য সরকারী তৎপরতা অব্যাহত থাকে।
১৯৪৮ সালের ১১ মার্চের পূর্ব বাংলা ভাষা তথা স্বাধিকার আন্দোলনের অন্যতম স্মরণীয় দিন। ২৮ ফেব্রুয়ারি তমুদ্দুন মজলিশ ও পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ যৌথ সভায় ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করে এবং অন্যান্য সংগঠনও তা সমর্থন করে। ১০ মার্চ রাতে ফজলুল হক হলে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ফজলুল হক হল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা দিনটি পালনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ভূমিকা ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ব্যাপক প্রস্তুতির পরে ১১ মার্চ সকাল থেকে ছাত্ররা রাস্তায় পিকেটিং শুরু করে। সরকারও ধর্মঘট বানচাল করতে তৎপর। রাজপথে নেমে আসে পুলিশ বিভাগের আইজি জাকির হোসেন, ডেপুটি আইজি ওবায়দুলাহ, সিটি এসপি চ্যাথাম, পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট গফুর। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। ছাত্ররা ইডেন বিল্ডিংস্থ সেক্রেটারিয়েট বিল্ডিং-এর সামনে সেøাগান দিয়ে অফিস বর্জন করার অনুরোধ জানিয়ে পিকেটিং করেন। শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, আঃ অদুদু প্রমুখ পিকেটিং করে সেক্রেটারিয়েটের এক নম্বর গেটে। অপর ২নং গেটে ছিলেন কাজী গোলাম মাহবুব বরকত প্রমুখ। এছাড়া আব্দুল মোমেন, আব্দুল মতিন, আঃ মালেক উকিল পিকেটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। পিকেটিং অবস্থায় ছাত্রদের ওপর পুলিশ নির্যাতন চালায়। এ সময় শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদ, কাজী গোলাম মাহবুব, শওকত আলী প্রমুখ ৬৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আহত হন অনেকে, যার মধ্যে ছিলেন অলি আহাদ, আবুল কাসেম। (ক্রমশ.)
No comments