কণ্ঠ বাদ্যযন্ত্র নূপুরের ঝঙ্কারে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উসব শুরু- সংস্কৃতি সংবাদ
এমনিতেই সুরের অনুরণন সঙ্গীতপ্রেমীর মনে ছড়ায় প্রশান্তি। বিশুদ্ধ হয় অন্তরাত্মা। আর সেটা যদি হয় শাস্ত্রীয়সঙ্গীত তবে মাত্রাটা যেন আরও বেড়ে যায়। সোমবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমী আয়োজিত উচ্চাঙ্গসঙ্গীত উৎসবের প্রথম দিনে যেন সে দৃশ্যের দেখা মিলল।
একাডেমীর উদ্যোগে সঙ্গীত ও নৃত্য বিভাগের ব্যবস্থাপনায় শুরু তিন দিনের এ শাস্ত্রীয় গানের উৎসব। চলবে বুধবার পর্যন্ত।সন্ধ্যায় একাডেমীর জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে উৎসবের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ মোবারক হোসেন খান ও নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান। একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সঙ্গীত ও নৃত্য বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল কাদের তালুকদার।
উদ্বোধনী আলোচনা শেষে শুরু হয় রাগ-রাগিনীর খেলা। কণ্ঠ, বাদ্যযন্ত্র আর নূপুরের ঝঙ্কার এক হয়ে ভেসে বেড়ায় মিলনায়তনজুড়ে। শুরুতেই শাহাদাৎ হোসেন খানে সরোদে ওঠে অনাবিল সুর। তাঁর সঙ্গে একই পরিবেশনায় সেতার ও সরোদ বাজান আফসানা খান ও রুনা খান। এ ত্রয়ীর সেতার ও সরোদে পরিবেশিত হয় রাগ মিশ্র জিলাপ কাফি। শায়লা তাসমিন লঘু শাস্ত্রীয়সঙ্গীতে পরিবেশন করেন রাগ চৈতি ও ভজন। রিনাত ফৌজিয়ার সেতারে ধ্বনিত হয় রাগ মোহনকোষের সুর। অসিত রায় হিন্দোলে ধ্রুপদ রাগ পরিবেশন করেন। রোমানা আজাদ মিতুল নূপুরের ঝঙ্কার তুলে অভিব্যক্তির সঙ্গে মুদ্রার প্রকাশে ভরতনাট্যমে আলারিপু নৃত্য পরিবেশন করেন। মুনমুন আহমেদ কত্থক নৃত্য পরিবেশন করেন। ওড়িশি নৃত্য উপস্থাপন করেন ফারহানা চৌধুরী বেবী, হেনা হোসেন ও রেশমা জামান প্রিয়া। পণ্ডিত শিবনাথ দাস বাঁশিতে তোলেন রাগ-রাগিনীর সুর। কণ্ঠসঙ্গীতে খেয়াল পরিবেশন করেন লুভা নাহিদ চৌধুরী। এ ছাড়াও ফকির শহিদুল ইসলাম সেতার বাজিয়ে শোনান। জুটি বেঁধে কত্থক নৃত্য করেন রেজওয়ানুল হক ও কচি রহমান।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের আগে বিকেলে একাডেমীর জাতীয় নাট্যশালা সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে উচ্চাঙ্গসঙ্গীত চর্চা: সঙ্কট ও সম্ভাবনা শীর্ষক সেমিনার। এ পর্বে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। বক্তব্য রাখেন সুজিত মোস্তফা ও লায়লা হাসান। সভাপতিত্ব করেন একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। আজ ও কাল একাডেমীর সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে সন্ধ্যা ৬টায় বসবে উচ্চাঙ্গের এ গানের আসর।
আবৃত্তি প্রযোজনা ‘বাংলা নামের দেশ’ ॥ সোমবার সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হলো স্বরচিত্র চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্রের ‘বাংলা নামে দেশ’ শীর্ষক আবৃত্তি প্রযোজনা। সুফিয়া কামাল কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। সংগঠনের পরিচালক মাহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহ্কামউল্লাহ ও কবি ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন।
১৭টি কবিতা নিয়ে সাজানো হয় প্রযোজনাটি। কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে দিরওয়ালের ‘যুদ্ধে যাওয়ার গল্প’, আসাদ চৌধুরীর ‘তোমাদের যা বলার ছিলো’, ‘বারবারা বিদলার কে’ ও ‘রিপোর্ট ১৯৭১’, মনিরুজ্জামানের ‘সহজে নয়’ ও ‘জার্নাল ১৯৭১’, নির্মলেন্দু গুণের ‘প্রথম অতিথি’, ‘উচ্চারণগুলি শোকের’ ও ‘স্বাধীনতা শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’, কাজী জহিরুল ইসলামের ‘মুক্তিযুদ্ধ’, মহাদেব সাহার ‘নিজস্ব এ্যালবাম’, ফজল সাহাবুদ্দিনের ‘এপ্রিলের একটি দিন ১৯৭১’, আশরাফুল আলমের ‘রণাঙ্গনের চিঠি’, হুমায়ূন আযাদের ‘মুক্তিযোদ্ধার প্রতি’, মারুফ রায়হানের ‘সবুজ শাড়িতে লাল রক্তের ছোপ’, আবু হেনা মোস্তফা কামালের ‘ছবি’ এবং শামসুর রাহমানের ‘অভিশাপ দিচ্ছি’। প্রযোজনাটিতে অংশ নেন ডেইজী, বৃষ্টি, আসিফ, রায়হান, শাম্মী, মামুন, শাওন, সাবিহা, নাজমুন, রাজু ও রাজেশ।
মুক্তি ও স্বাধীনতার কবিতা গ্রন্থের প্রকাশনা ॥ কামাল চৌধুরী এ দেশের কবিতাঙ্গনে বিশিষ্ট একজন কবি। তাঁর কবিতায় সময়ের উত্তাপ, মুক্তিযুদ্ধের মর্ম ও চেতনা বিশ্বস্ততার সঙ্গে প্রতিফলিত হচ্ছে। সোমবার ছিল এ কবির ৫৬তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সন্ধ্যায় বেঙ্গল শিল্পালয়ে কবির বন্ধু, সুহৃদ, শিল্পী ও লেখকদের এক প্রীতি সম্মেলনের আয়োজন করে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স প্রকাশিত কামাল চৌধুরীর ‘মুক্তি ও স্বাধীনতার কবিতা’ শীর্ষক কাব্য গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
No comments